• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৫৫ | অক্টোবর ২০১৩ | ভ্রমণকাহিনি, প্রকৃতি, বাকিসব
    Share
  • মিলাম হিমবাহের দিকে : আদিত্য পাল


    কুমাওঁ হিমালয়ে পাশাপাশি চারটি উপত্যকা গড়ে উঠেছিল চারটি নদীকে কেন্দ্র করে। পিণ্ডারী, সরযূ, রামগঙ্গা ও গৌরীগঙ্গা - এই চারটি উপত্যকার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল গৌরীগঙ্গা বা জোহর উপত্যকা। গৌরীগঙ্গার উৎস মিলাম হিমবাহ যাওয়ার রাস্তায় যে আধা-পরিত্যক্ত গ্রামগুলোর ওপর দিয়ে যেতে হয়, তার পারিপাট্য, বিস্তার ও বিন্যাস দেখে মনে জেগে ওঠে পুরোনো ইতিহাস। বিশেষতঃ মার্তোলি, বুরফু, বিলজু, গন্নাঘর, পাচু এবং সর্বোপরি এই ট্রেকপথের শেষ গ্রাম মিলাম-এ পৌঁছে একসময়ে এ-অঞ্চলে স্বচ্ছলতা যে ছিল তা বেশ বুঝতে পারা যায়। মিলাম গ্রামের অবস্থান উচ্চ জোহর উপত্যকায় - তিব্বত সীমানার খুব কাছে। আর একসময়ে চিনের সঙ্গে খুব ভালো যোগাযোগ ছিল এই পথ ধরে। প্রধানতঃ তিব্বতের সঙ্গে নুন বাণিজ্য হত এই পথ ধরে, এছাড়াও অন্যান্য জিনিসেরও বাণিজ্য চলত। ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধ শুরু হল আর ধীরে ধীরে বন্ধ হ'তে থাকল সমস্ত বাণিজ্যপাট এবং সঙ্গে সঙ্গে ওইসব গ্রামগুলোর জৌলুষ কমতে শুরু করে। সেই অন্ধকার সময়ে মানুষজন জীবিকার সন্ধানে নিচে নামতে শুরু করে, শহরের দিকে চলে আসতে শুরু করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে। ২০০২ সালে প্রথমবার যখন এই পথে গেছিলাম তখনই এক শূন্যতা ছিল। পরে ২০১২ সালে আবার ওই পথে গিয়ে জায়গাটা ধ্বংসস্তূপের মত লাগল। এবারে মিলাম গ্রামের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হল খণ্ডহরের মধ্যে দিয়ে হাঁটছি।


    মিলাম গ্রামের জেলের গেট
    কি অপূর্ব কাঠের কারুকাজ করা আছে দেখলাম মিলামের জেলের চৌকাঠে, আরো কয়েকটা বাড়িতে। সামান্য কিছুই অবশিষ্ট আছে, বাকি সব লুটপাট হয়ে গিয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। আরেকটা খুব উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, এইসব গ্রামের ঘরবাড়ি মূলতঃ পাথরের তৈরি এবং এদের ছাদ স্লেট পাথর বা সমগোত্রীয় পাথর সাজিয়ে তৈরি করা। ধূসর পাথরের তৈরি ঘরবাড়িগুলো এতটাই পাহাড়ের ঢালের সঙ্গে মিলেমিশে যায় যে দূর থেকে ঠিক বোঝা যায়না যে ওখানে কোনো গ্রাম আছে। গাড়োয়ালের দুনাগিরি গ্রামও অনেকটা একইরকম। আরো একটা বৈশিষ্ট্য হল মার্তোলি থেকে শুরু করে উচ্চ জোহর উপত্যকায় যেসব গ্রাম আছে তাদের নামকরণ হয়েছে, যে গোষ্ঠী ওখানে থাকত তাদেরই নামে। শোনা যায় যে মার্তোলিয়ারা থাকত মার্তোলি গ্রামে, বা বুরফেল গোষ্ঠী থাকত বুরফুতে। কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয় পথে যেতে যেতে, ভীষণ সম্ভ্রান্ত তাদের আচার ব্যবহার। ওদের কাছ থেকে জানতে পারি যে কয়েকমাস ওরা ওই গ্রামে গিয়ে বসবাস করে চাষবাস, পশুপালন করবে, তারপর নিচে নেমে যাবে। আর বাকি সময়টা ফাঁকা পড়ে থাকবে পুরো গ্রাম।


    জিমিঘাট
    ধুলো উড়িয়ে আমাদের জিপ এসে থামল জিমিঘাটের কাছে। মালপত্র নামিয়ে নিলাম। দেবেন্দ্র ঘোড়া নিয়ে অপেক্ষা করছিল ওখানে। মালপত্র গুছিয়ে তুলে দেওয়া হল দুটো ঘোড়ার পিঠে। আমরা ঢাল বেয়ে নামতে শুরু করলাম, আর ঘোড়া নিয়ে দেবেন্দ্র চলল একটু ঘুরপথে, একেবারে জিমিঘাট গিয়ে মিলিত হবে। আধঘন্টা-চল্লিশ মিনিট ধরে একটা খাড়াই ঢাল বেয়ে নেমে এলাম জিমিঘাট। প্রখর রোদে খুব কষ্ট হচ্ছিল, একটা দোকানে ছাওয়ায় এসে বসলাম। এক বৃদ্ধ দম্পতি দোকান চালায় - পাওয়া যায় সেদ্ধ ছোলা, ডিম সেদ্ধ আর চা। সবাই এসে বিশ্রাম নেয় আর সেদ্ধ ছোলা খায়। কিছুটা সময় পর দেবেন্দ্রও চলে এল আর আমরা একসঙ্গে হাঁটা শুরু করে দিলাম। সেদিন বেশি হাঁটব না, লিলাম (১৮১০ মি.) গিয়ে থেকে যাব। দুপুর দুপুরই লিলাম পৌঁছলাম। গ্রামের পোস্ট অফিস ছাড়িয়ে কিছুটা এগোলেই পি. ডবলু. ডি-র গেষ্টহাউস। ওখানে বুকিং পেয়ে গেলাম। গাছে ঘেরা চাতাল, কাঠের দুটো ঘর। পাশেই গৌরীগঙ্গা অনেক নিচে বয়ে চলেছে, ওপাড়ে পাহাড়ের ঢালে ছবির মতো সুন্দর গ্রাম পাতোঁ। পাতোঁ গ্রামের বাড়িগুলোর ছাদে রোদ পড়ে চক্‌চক্‌ করছিল। সময় কেটে যায় চারদিক দেখতে দেখতে। দুপুরবেলা ম্যাগি খাওয়া হ'ল, তারপর রাতে কি কি রান্না হবে দেখে নিয়ে সেগুলো বের করে রেখে দেওয়া হল। বারবারই গাছের ছায়ায় বসতে ভীষণ ভালো লাগছিল। ঘর থেকে চেয়ারগুলো বের করে ছায়ায় এসে বসলাম সবাই মিলে। আমাদের মধ্যে দুজন চলে গেল আই. টি. বি. পি.-র অফিসে। মুন্সিয়ারি থেকে আনা অনুমতি দেখিয়ে ওদের খাতায় নাম লিখে দিয়ে আসে। বিকেলবেলা ওদের ক্যাম্পের দু-তিনজন বাঙালি ছেলে আমাদের ডেরায় আড্ডা দিতে এলো। ওরা বাঙালি পেয়ে মন খুলে গল্প করতে লাগল। এরপর এলেন পাতোঁ স্কুলের হেডমাস্টারমশাই। সবাই মিলে নানান কথায় সময় কেটে যায়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে, আর ধীরে ধীরে আমরাও ব্যস্ত হয়ে পড়ি রাতের রান্নায়।


    বুগডিয়ারের পথে
    পরদিন সকালে হাঁটা শুরু করলাম। সকাল থেকে আকাশ কখনো পরিষ্কার, কখনো মেঘলা। চড়াই উৎরাই মেশানো পথ, ঘন গাছগাছালির মধ্যে দিয়ে পথ এগিয়ে চলে গৌরীগঙ্গার উজানে। রূপসিবাগার ছাড়িয়ে দু-তিনটি বড় ঝরনা পেরোলাম। তারপর রাস্তা নেমে এলো একেবারে গৌরীগঙ্গার ধারে। স্যাক নামিয়ে বিশ্রাম নিই। একটা পাথরে ঠেস দিয়ে দেখতে লাগলাম গৌরীগঙ্গা কি প্রবল পরাক্রমে ছুটে আসছে ফেনিল উচ্ছ্বাসে। সম্মোহিত করে দেয়, নড়তে দেয়না। দেবেন্দ্র ঠিক সময়ে এসে না ডাকলে আমরা কতক্ষণ যে বসে থাকতাম কে জানে। একটু এগিয়েই পৌঁছলাম রেলগাড়ি বা রড়গাড়ি। আগে যখন এসেছিলাম তখন এখানে একটা চালু হোটেল ছিল। সরু বাঁশের তৈরি হোটেল, খাওয়া-দাওয়া-থাকা সবই চলত রমরমিয়ে। এখন হোটেলের খালি কাঠামোটাই পড়ে আছে - প্রাণপাখিটা উড়ে গেছে। তারপরেই একটা নতুন ব্রিজ তৈরি হয়েছে। ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে খেয়ে নিলাম, তারপর খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম বুগডিয়ারের দিকে। শেষ এক কিলোমিটার রাস্তা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় করেই পৌঁছলাম বুগডিয়ার (২৪৫০ মি.)। ওখানেও পি. ডবলু. ডি.-র বাংলো খালি পেয়ে গেলাম। দেবেন্দ্র আগেই মালপত্র নামিয়ে দিয়েছে বারান্দায়। পৌঁছানোর ঘন্টাখানেকের মধ্যে শুরু হল প্রচণ্ড বৃষ্টি। স্টোভ ধরিয়ে চা বসিয়ে দিলাম। মুড়ি, চানাচুর আর চা - দারুণ মানিয়ে গেল আবহাওয়ার সঙ্গে, কিন্তু বৃষ্টির দাপট দেখে মনে একরাশ উৎকণ্ঠা রয়ে গেল। রাতে প্রায় ৮টা নাগাদ বৃষ্টি থেমে গেল আর আকাশও পরিষ্কার হতে লাগল। বেশ নিশ্চিন্ত মনে আমরা সবাই শুতে গেলাম।


    নাহারদেবী
    পরদিন বেশ ভোর ভোর উঠে পড়ে পোটিং নালার ধারে এসে দাঁড়ালাম। সতত মুখরিত পোটিং নালা যেন সব বাধা ভেঙে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে গৌরীগঙ্গার দিকে, তাকে থামায় কার সাধ্য। এই পোটিং নালা ধরে ওপরের দিকে উঠে গেলে পোঁছানো যায় কাগুন্দি ভেল খাল। খাল অর্থাৎ গিরিবর্ত্ম পেরিয়ে নামিক হিমবাহে নামা সম্ভব। ওই নামিক হিমবাহ থেকেই জন্ম নিয়েছে রামগঙ্গা নদী। ঘরে ফিরে আসি, মালপত্র গুছিয়ে, আই. টি. বি. পি.-র অফিসে হাজিরা দিয়ে আমরা হাঁটা শুরু করে দিলাম। রোদ ঝকমকে আকাশ, পাথরে পাথরে উপচে পড়ছে ঝলমলে হাসি - সব কিছুর মধ্যে দিয়ে তরতরিয়ে এগিয়ে চললাম। অল্প কিছুক্ষণ হাঁটার পৌঁছে গেলাম নাহারদেবী (২৫০০ মি.)। খুব সমতল জায়গা, প্রায় নদীবক্ষের পাশ দিয়েই রাস্তা। যত এগিয়ে যাই তত অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি দুদিকের খাড়াই পাহাড়ের ঢালে — মাঝখানে তরঙ্গ মুখর গৌরীগঙ্গা। কি বিস্ময়কর ভাবে সোজা সোজা খাড়া পাথরের দেওয়াল — যতদূর দেখা যায় ততদূরই ওইরকম, গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়নের ছবির সঙ্গে মিলে যায়। জিমিঘাট, লিলাম থেকে রিলকোটের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর জায়গা নাহারদেবী। একটানা গভীর নদীখাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে নাহারদেবীতে পৌঁছে যেন মুক্ত বাতাস মেলে। প্রকৃতির যাদু কাঠির ছোঁওয়ায় যেন তৈরি হয়েছে এক স্বপ্নের জায়গা। বিহ্বলতা কাটিয়ে আবার চলতে শুরু করি। এরপর চড়াই পথে মাপাং (৩১০০ মি.), লাসপাগুড়ি পেরিয়ে গেলাম। লাসপাগুড়ির পর থেকে গৌরীগঙ্গা প্রশস্ত হয়ে গেছে। আরো খানিকটা পথ এগিয়ে গৌরীগঙ্গার ওপর পাড়ে একফালি সবুজ তৃণভূমির মধ্যে কয়েকটা কালো কালো বিন্দু যেন নড়ে উঠল। দাঁড়িয়ে পড়লাম, ভালো করে ঠাহর করে দেখি - এতো তিনটি কালো ভালুক (হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার) - দুটো বাচ্চা ও একজন সম্ভবতঃ মা-ভালুক। প্রদ্যুতমামার ক্যামেরায় চোখ রাখতে আরো পরিষ্কার হল ওদের ক্রিয়াকলাপ। রিলকোট পৌঁছতে তখন আর অল্প সময়ই লাগবে, তাই দাঁড়িয়ে থাকি অনেকক্ষণ।

    রিলকোট
    রিলকোটের (৩২০০ মি.) কাছে এসে গৌরীগঙ্গা আরো চওড়া হয়ে গেছে। হঠাৎ মনে হল সব কিছু যেন প্রসারিত হয়ে গেল — দূরে তুষার শিখর দেখতে পেলাম। সেদিন রাতের জন্য একটা বাড়ির দোতলায় ঠাঁই মিলল।


    মার্তোলি গ্রামের পথে
    নতুন সকাল। প্রথমে যাব মার্তোলি গ্রাম। ওখানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে একেবারে দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে এগিয়ে যাব মিলামের পথে। রাস্তা খুব সুন্দর, অল্প অল্প চড়াই পথ। সবুজ ঢালে ছোট ছোট হলুদ, বেগুনি ফুলগুলো শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে। দূর থেকে নজরে আসে সাজানো মার্তোলি গ্রাম (৩৭২০ মি.)। ধূসর পাথর সাজিয়ে সাজিয়ে ঘরবাড়ি। পিছনে ঝকঝক করছে নীল আকাশ, অপূর্ব এক ক্যানভাস সৃষ্টি হয়েছে। সারা গ্রামে দু-এক ঘরেই লোকজন আছে, বাকি পুরোটাই খালি, পরিত্যক্ত।

    মার্তোলি গ্রাম
    লোকজন আছে আর খাবারের বন্দোবস্ত হবে এমন একটা বাড়িতে মালপত্র নামিয়ে রাখলাম আমরা। ওদেরকে দুপুরের খাবার তৈরি করতে বলে আমরা সবুজে মোড়া ঢাল বেয়ে উঠতে আরম্ভ করলাম। আকাশে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে, আমরাও ধীর পায়ে এগিয়ে চললাম নন্দাদেবীর মন্দিরের দিকে। মার্তোলির নন্দা-মায়ের মন্দির থেকে নন্দাদেবী শৃঙ্গদ্বয় দেখা যায়, কিন্তু আকাশের যা মতিগতি তাতে আদৌ নন্দাদেবী (৭৮১৬ মি.) ও নন্দাদেবী পূর্ব (৭৪৩৪ মি.) দেখতে পাবো কিনা সন্দেহ। মন্দিরে পৌঁছে ধূপ, লজেন্স, প্রণামী — দেবীর সামনে রেখে পুজো দিলাম।

    মার্তোলি গ্রামের নন্দাদেবী মন্দির
    মন্দিরটি খুব ছোট, কিন্তু কি অপরূপ শান্তি ও পবিত্রতা বিরাজ করছে তা বলার নয়। সেখান থেকে শৃঙ্গ দুটি দেখা যায়, কিন্তু সেখানেই যত রাজ্যের মেঘ ভিড় করে রয়েছে, মাঝে মাঝে হাওয়া দেয় আর আমরা আশা নিয়ে অপেক্ষা করে থাকি কখন দেখতে পাবো। আমাদের ওরা হতাশ করেনি, মেঘগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে ভেসে গেল — আর চোখের সামনে ভেসে উঠল দুটো ত্রিভুজাকার তুষারশিখর। একটি নন্দাদেবী প্রধান, অন্যটি নন্দাদেবী পূর্ব - নন্দা ও সুনন্দা। যতক্ষণ না মেঘ এসে আবার ঢেকে দেয় আমরা তাকিয়ে ছিলাম। মেঘ অবশ্য চলেও এলো, ঢেকে দিল শৃঙ্গদ্বয়কে।


    নন্দাদেবী প্রধান ও নন্দাদেবী পূর্ব
    নন্দাদেবী যেদিকে দেখা যাচ্ছিল ওইদিক বরাবর গেলে নন্দাদেবী পূর্ব ও নন্দাকোট শৃঙ্গের মূলশিবির তৈরি করা হয়। মার্তোলি গ্রাম থেকে রাস্তা চলে যাবে লোয়াং গাড ধরে নাসপানপট্টি, নিথলথর পেরিয়ে একেবারে বেসক্যাম্পে। সেই রাস্তা উঠে গেছে দেখতে পেলাম। আমরা গ্রামের দিকে নামতে শুরু করলাম। পৌঁছে হাত-মুখ ধুয়ে খেতে বসলাম। দোতলায় খাওয়ার বন্দোবস্ত হল - গরম গরম খাবার আমরা পরম তৃপ্তিতে খেলাম। তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে স্যাক কাঁধে নিয়ে হাঁটা শুরু হল। গ্রাম থেকে বেরিয়েই কঠিন উৎরাই পথে নেমে এলাম নদীর ধারে। এ পথে খুব ধুলো আর বেলা একটা বা দুটোর পর থেকে শুরু হয় প্রবল গতিতে হাওয়া। এগিয়ে যাই বুরফু (৩২১২ মি.) গ্রামের দিকে, ওখানেই থাকব। গৌরীগঙ্গার ডানপাড় ধরে হাঁটছি, বুরফু নদীর বাঁদিকে। ব্রিজ পেরিয়ে নদীর বাঁ-পাড় ধরেই এগোতে হবে মিলামের দিকে। ব্রিজের কাছে এ পাড়েই একটা অস্থায়ী দোকান। আমরা দেখলাম, ওখানে রান্না করা যাবে, শোওয়াও যাবে ফলে মালপত্র নামিয়ে দোকানের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম। রাস্তায় খবর নিয়েছিলাম যে বুরফু গ্রামে তখন কোনো লোক নেই, তাই সেই দোকানে আমাদের রাতের আস্তানা ঠিক করাটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।

    খুব ভোরবেলা বেরোলাম। ব্রিজ পেরিয়ে নদীকে বাঁদিকে রেখে হাঁটা শুরু করলাম। বুরফু গ্রামের পরপরই বিলজু গ্রাম, আয়তনে বুরফু-র থেকে অনেক ছোট।


    নন্দাদেবী প্রধান ও নন্দাদেবী পূর্ব, পাচুনালা, গন্নাঘর এবং পাচু গ্রাম
    এখানে আই. টি. বি. পি চওড়া রাস্তা বানাচ্ছে হয়ত কয়েকবছর পর থেকে গাড়ি চলবে রিলকোট থেকে মিলাম অবধি। সেদিন রাস্তায় চড়াই-উৎরাই সামান্যই ছিল। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর বিলজু গাম (৩৩৪০ মি.) দেখা যায়, আর গ্রামের পাশ দিয়ে রাস্তা চলেছে মিলামের উদ্দেশ্যে। কয়েকটা বাঁক ঘুরতেই বাঁদিকে চোখ যায়, আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই। নন্দাদেবী ও নন্দাদেবী পূর্ব দৃশ্যমান। এ যেন সাক্ষাৎ দেবীদর্শন। অপর পাড়ে পাচুনালা নেমে এসে আছড়ে পড়ছে গৌরীগঙ্গার বুকে। পাচু নালার দু-পাড়ে দুটি গ্রাম দেখা যাচ্ছে - ডানপাড়ে গন্নাঘর এবং বাঁ-পাড়ে পাচু গ্রাম। ওই নালার উৎপত্তি পাচু হিমবাহ থেকে, একেবারে নন্দাদেবী (পূর্ব)-র পায়ের কাছ থেকে। ছোট্ট উপত্যকার শেষে মাথা তুলে রয়েছে তুষারধবল শৃঙ্গদ্বয়। স্যাক নামিয়ে রাখি, চোখের পলক পড়ে না, বিহ্বল হয়ে পড়ি আমরা। দুচোখ মেলে দেখে নিচ্ছি দেবী নন্দাকে, এ মুহূর্ত ভোলার নয়, ভাষায় প্রকাশ করার নয়। আমাদের যেন হাত ধরে নিয়ে যায় কল্পনা আর রোমাঞ্চের জগতে, যেখানে বিষাদ নেই, আছে শুধু আনন্দময় মুহূর্ত, আর পরম শান্তি। স্মৃতিভাণ্ডারে নন্দাদেবীর জাদুময় উপস্থিতি সব সময়েই ভীষণ সুখের। ওখানে অনেকক্ষণ কাটিয়ে ফেলি, চলে যেতে ইচ্ছা হয় না। ক্যামেরায় অনেক ছবি তোলা হয় নন্দাদেবীকে সাক্ষী রেখে। তারপর এগিয়ে গেলাম মিলাম গ্রামের দিকে। বেলা গড়িয়ে গেছে অনেকটা, ফলে তাড়াতাড়ি পা চালালাম। কিছুদূর এগিয়ে চোখে পড়ল স্বচ্ছ ফেনিল নীল রঙা এক নদী এসে মিশেছে গৌরীগঙ্গায়। নদীটি তিব্বত থেকে আসছে, নাম - গোয়াঙ্খা নালা। মিলাম গ্রামের পানীয় জল আসে এই নালা থেকেই। মিলাম (৩৫৭৫ মি.) গ্রামে ঢোকার আগেই পি. ডবলু. ডি-র বাংলো, ওখানে জায়গা পাওয়া গেল। অদূরেই আই. টি. বি. পি-ক্যাম্প, ওটাকে অবশ্য ক্যাম্প না বলে মিলিটারি গ্রাম বলাই ভালো। দেবেন্দ্র স্টোভ ধরিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। চা বানানো হল, তারপর খানিক বিশ্রাম নিয়ে মিলিটারি ক্যাম্পে গেলাম নাম নথিভুক্ত করতে। ওখানে অনেকের সঙ্গে পরিচয় হল - ওদের সঙ্গে গল্পগুজব করে ফিরে এলাম আমাদের আস্তানায়। সেই নীলরঙা নদী - গোয়াঙ্খা নালা - তারই পাশ দিয়ে রাস্তা চলেছে উনতাধূরা-র দিকে। ওই পথে পাহাড়ের গায়ে গায়ে অনেক বাঙ্কার তৈরি করা আছে। অতন্দ্র পাহারার ব্যবস্থা রয়েছে কারণ মিলাম থেকে চিন সীমানা দু' দিনেই পৌঁছানো যায়।


    হরদেওল দেখা যাচ্ছে মিলামের পথে
    ভোর পাঁচটা, উঠে পড়লাম, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিই মিলাম হিমবাহ দেখতে যাব বলে। গতদিনের মত আকাশ পরিষ্কার নেই। মেঘলা আকাশের ফাঁকফোকর দিয়ে হরদেওল ও ত্রিশূলী শৃঙ্গদ্বয় দেখা যায়, তাও বেশিক্ষণ নয়। ধূসর, কালচে ধূসর মেঘের আবরণে ঢাকা পড়ে যায় তুষারশৃঙ্গরা। এগিয়ে যাই হিমবাহের দিকে। প্রায় সমতল মিলাম গ্রামের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পক্ষীরাজে চেপে ভেসে যাই অতীতে, প্রায় ৫০/৬০ বছর আগে, যখন এখানে রমরমিয়ে চলত তিব্বতের সঙ্গে ব্যবসা, তখন পরিবারগুলোতে উপচে পড়ত স্বচ্ছলতা। আজ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে মনটা বিষণ্ণতায় ভরে ওঠে। দু-একটা ঘর ছাড়া পুরো মিলাম গ্রাম এখন পরিত্যক্ত।


    মিলাম হিমবাহ, গৌরীগঙ্গার উৎসমুখ
    সবুজ গাছগাছালিরা চলে গেছে সেই রিলকোট থেকে; হিমবাহের পথ রুক্ষ পাথুরে, ধূসর রঙের। মিলাম গ্রাম থেকে হিমবাহ ৫ কিলোমিটার পথ, আমরা ধীরেসুস্থে এগিয়ে চললাম। সেদিন মিলামেই থাকব ফলে কোনো তাড়াহুড়ো ছিলনা। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই পৌঁছলাম হিমবাহের কাছে। হরদেওল ও ত্রিশূলী শৃঙ্গদ্বয় থেকে জন্ম নিয়েছে বিশালাকার মিলাম হিমবাহ। বাদামী ধূসর বরফের দেওয়াল, তার নিচে ছোট্ট অর্ধবৃত্তাকার উৎসমুখ থেকে বেরিয়ে আসছে গৌরীগঙ্গা। হিমবাহের প্রান্তীয় গ্রাবরেখার ডানপাশ থেকে বেরিয়ে আসা আরেক স্রোতধারাও পুষ্ট করেছে গৌরীগঙ্গাকে। পুরোনো উৎসমুখের যতটা সামনে যাওয়া যায়, গেলাম। বোল্ডার ও পলি জমে আছে আর উৎসমুখ থেকে জল বেরিয়ে একটা পুকুরের মত তৈরি হয়েছে। হিমবাহের ওপর দিয়ে রাস্তা চলে গেছে সুরয কুণ্ডের দিকে। আকাশ পরিষ্কার হলই না, ফলে তুষারশৃঙ্গরাজি দৃশ্যমান হল না, আমরা এক পরম প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হলাম। অনেকটা সময় বসে থাকি, আশায় আশায় থাকি যদি আকাশ একটু পরিষ্কার হয়, কিন্তু বৃথাই আমাদের বসে থাকা। ফিরে চলি গ্রামের দিকে। মনের মধ্যে একটা অজানা উত্তেজনা তৈরি হয়, গ্রামের মধ্যে আবার হাঁটব ভেবে। মাঝপথে একটা সমতল জায়গায় বসে বিস্কুট জল খেয়ে আবার হাঁটা দিলাম মিলামের পথে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে মিলাম গ্রাম।

    পরিত্যক্ত মিলাম গ্রাম
    কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রামের ভিতর ঢুকে পড়ি, এ-গলি সে-গলি তে হেঁটে বেড়াই, অজানা আকর্ষণে আমাদের টেনে নিয়ে যায় একোনা থেকে ও কোনা। মানুষের স্বর শোনা যাচ্ছে মনে হয়, যেন সিনেমার ফ্ল্যাশব্যাকের মত ভেসে ওঠে অতীত মিলাম গ্রামের মানুষের হাঁটাচলা, কথা বলা এবং প্রাণচঞ্চলতা। কখনো সেই ছায়াছবি সবাক হয়ে ওঠে, কখনো বা নির্বাক বলে ভ্রম হয়। এইরকম অতীত ও বর্তমানে যাতায়াত করতে করতে ফিরে এলাম গেস্ট হাউসে। গেস্ট হাউসের ভিতরে বা আশেপাশে কোনো জলের ব্যবস্থা নেই, সব জল আনতে হবে মিলিটারি ক্যাম্প থেকে। আমরা তৈরি হয়ে নিলাম একেবারে সারাদিনের জল নিয়ে আসব বলে। ওরা আমাদের চা খাওয়ালো, গল্পে গল্পে সময়টা ভালোই কেটে গেল, আর তার ফাঁকেই আমরা জল ভরে নিয়েছিলাম। আজ ছুটি, হাঁটা হবে না, তাই ভালোমন্দ খাওয়া হবে ঠিক হয়। নানান পদ রান্না হয়েছিল দুপুরবেলা।

    পরিত্যক্ত মিলাম গ্রাম
    বিকেলবেলা আবার একবার মিলাম গ্রামের দিকে বেড়াতে গেলাম। তারপর সন্ধ্যা নামার মুখেই ফিরে এলাম বাংলোতে।

    পরদিন ভোরে আকাশ পরিষ্কার থাকলে ভেবেছিলাম আরেকবার মিলাম হিমবাহের দিকে যাব, কিন্তু তার আর উপায় নেই। আকাশ আগের দিনের মতই খারাপ। ফলে, আমরা তৈরি হয়ে নিলাম নিচে নামব বলে। হাঁটা শুরু করে দিলাম। মাথায় তখন ঘুরছে যদি বিলজু থেকে আরেকবার নন্দাদেবী শৃঙ্গদ্বয় দেখতে পাই। আমাদের পরম সৌভাগ্য যে আমরা দেখতে পেয়েছিলাম। তবে সেদিনের মত পরিষ্কার নয়। নন্দাদেবীকে শেষ বিদায় জানিয়ে নেমে চললাম নিচের দিকে। চেনা রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাই বুরফু। তারপর ব্রিজ পেরিয়ে মার্তোলির রাস্তায় না গিয়ে নিচের এক রাস্তা ধরে সোজা গিয়ে পৌঁছলাম রিলকোট। বিশ্রাম ও দুপুরের খাওয়া ওখানেই সারলাম। ঘড়িতে তখন সবে একটা বাজে, তাই আমরা আরো এগিয়ে যাব ঠিক করলাম। যেদিন রিলকোট এসেছিলাম সেইদিনের মত ফেরার সময়েও আমরা ভালুক দেখতে পেলাম - কাছাকাছি ওই জায়গাতেই। সত্যিই স্মরণীয় হয়ে রইল এই যাত্রা। আমরা নেমে চললাম নিচের দিকে। লাসপাগুড়ি, মাপাং পেরিয়ে, একেবারে নাহারদেবীর কাছে একটা অস্থায়ী দোকান। খাওয়া দাওয়া সবই পাওয়া যায়। রাতে ওখানেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হল আমাদের।

    পরদিন সকালবেলা একটু দেরী করেই বেরোলাম। আবার সেই অনিন্দ্যসুন্দর অথচ ভয়ঙ্কর খাড়া দেওয়ালের মাঝ দিয়ে রাস্তা। গৌরীগঙ্গার উত্তাল জলোচ্ছ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে আমরা নাহারদেবীকে বিদায় জানালাম। নিচে নেমে চলি, ক্রমশঃ বুগডিয়ারের বসতি, আই. টি. বি. পি-র ক্যাম্প নজরে চলে আসে। এইভাবে বুগডিয়ার পৌঁছে গোবিন্দ্‌-এর দোকানে দুপুরের খাওয়া সারলাম। তারপর খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে, জঙ্গলপথ ধরে এগিয়ে যাই নিচের দিকে। রড়গাড়ি পেরিয়ে যখন রূপসিবাগার পৌঁছলাম তখন দিনের আলো কমতে শুরু করেছে। আমরাও আর না এগিয়ে রূপসিবাগারের একটি মাত্র দোকানে রাতের থাকার ব্যবস্থা করে ফেললাম। খোলা দোকান, বাইরে পাথরে ঠেস দিয়ে গল্প করতে করতেই সময়টা সুন্দর কেটে গিয়েছিল। পুরো জায়গাটাই গাছে গাছে ঘেরা আর চাঁদের আলোয় রূপসিবাগার আরো যেন রূপসী হয়ে উঠল। প্রত্যেকদিন যেন নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হচ্ছিলাম, মণিকোঠায় ভরে উঠছিল কত অনুভূতি, কত বিচিত্র শব্দ, কত বিচিত্র দৃশ্য আর কত যে প্রাণ-স্পন্দন ধ্বনিত হতে থাকছিল তা বলার নয়।

    রাত কাটল। খোলা দোকান, তাই ঘুম ভাঙল অন্ধকার থাকতেই। উঠে পড়লাম। উষার অস্ফুট আলোয় প্রকৃতিকে অনুভব করা সেদিন এক পরম প্রাপ্তি। পাখিদের উড়ে যাওয়া, গাছে গাছে হাওয়ার লাফালাফি - এসব দেখতে দেখতে নিঃশব্দে সকাল এসে যায়। রোদ আসে চারপাশে, আর আমরাও তৈরি হয়ে নিই ফিরে যাওয়ার জন্য। সুন্দর রাস্তা ধরে পৌঁছলাম নিলাম। তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে নেমে এলাম একেবারে জিমিঘাট। চড়চড়ে রোদ উঠেছে, প্রখর তাপে আমাদের হালত খারাপ হয়ে গেল। কোনোমতে জিপের রাস্তায় এসে পড়লাম। ঘর্মাক্ত দেহে সমস্ত ক্লান্তি এসে ভিড় করেছে। জিমিঘাট থেকে সুরেশকে ফোন করা হয়েছিল। সুরেশ কিছুক্ষণের মধ্যেই জিপ নিয়ে হাজির। আমাদের পৌঁছে মুন্সিয়ারী। মালপত্র নামিয়ে দিয়ে দেবেন্দ্র ঘোড়া দুটোকে ওর ভাইপো-র সঙ্গে গ্রামে পাঠিয়ে দিল আর ও চলল আমাদের সঙ্গে মুন্সিয়ারী।


    মুন্সিয়ারী
    পাণ্ডে লজে যে ঘরে যাওয়ার সময় ছিলাম, সেটা ফাঁকাই ছিল, ঢুকে পড়লাম। স্নান সেরে নিয়ে দৌড়লাম ধামীর হোটেলে। মুন্সিয়ারী-তে এসে ধামীর হোটেলে না খেলে মনে হয় কি একটা যেন বাকি রয়ে গেল। সদাহাস্যময় ধামী ও তার স্ত্রী। এমন সদানন্দ দম্পতি খুব কমই দেখা যায়। ধামীর স্ত্রীর এমন আতিথেয়তা যে ভোলার নয়। কি যে যত্ন করে খাওয়ালো। চলে যেতে ইচ্ছে করে না ওদের ছেড়ে, মনে হয় মিলে মিশে যাই ওদের সঙ্গে, ওদের জীবনধারার সঙ্গে - কাটিয়ে দিই বাকিটা জীবন। সত্যিই যখন ফিরে যাই নিজের ঘরের টানে, তখন মনে হয় আমার আরেক স্বপ্নের ঘর ছেড়ে চললাম আমার যন্ত্রের দেশে।


    মুন্সিয়ারী থেকে মিলাম হিমবাহ পর্যন্ত যাওয়ার ট্রেকিং ম্যাপ :



    স্কেল অনুযায়ী নয়। সৌজন্য : রতনলাল বিশ্বাস


    অলংকরণ (Artwork) : ছবিঃ লেখক
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments