• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৫৯ | এপ্রিল ২০১৫ | কবিতা
    Share
  • চারটি কবিতা : নিরুপম চক্রবর্তী


    প্রতিবিম্ব

    বাগানে ফুটিয়া ছিলো অবহেলা
    কেহ তারে ভালোবাসা বলে ছিঁড়িয়া লইয়া গেছে।
    সে বুঝি নিমিত্ত মাত্র:
    অলৌকিক বর্ণমালারাজি
    নিজেরা সজ্জিত হয়, অবলুপ্ত কবিতার স্মৃতি
    ছড়ায়ে আকাশ জুড়ে।
    সব শব্দ নিরুদ্দেশ, তাহাদের পরিত্যক্ত প্রতিধ্বনি গুলি
    বাজিছে কাহারে খুঁজে, এ শহরে অনাদরে
    নিজস্ব উচ্ছ্বাসে;
    যেখানে মানুষ নাই, মানুষের প্রতিবিম্ব ভাসে।।


    ভাসান

    সমস্ত কবিতা তার নিজস্ব ভাসানে ভেসে যায়
    কেউ স্মিত, ক্ষিপ্ত কেউ, কেউ কেউ ইতিপূর্বে মৃত
    অতীব প্রাচীন কিংবা আধুনিক পুনরাধুনিক
    তীব্র হিংস্র ঘূর্ণি ঢেউ সব কিছু টেনে নিয়ে যায়।

    অবয়বহীন কেউ তবু যেন ছুঁয়েছে হঠাৎ
    হঠাৎ বাসবে ভালো বলেছিলো, তারপরে ভুলে গেছে সব
    প্রতিশ্রুতি অঙ্গীকার –- অজানা ভাষার কিছু অচেনা শব্দ ঝরে গেলে
    দুরাশায় বেজে বেজে থেমে গেলে মসৃণ হাসিটি
    তবু কেউ অকারণে একদিন খুঁজেছে আমায়।

    কবিতাবিহীন এই রাত আজ আমার অধীন
    অট্টহাস্য হেসে যায় কংকালেরা বেহালা বাজিয়ে
    শবদেহ খুঁটে খেতে উড়ে এলে বিদগ্ধ শকুন
    থেকেছে বিদেহী কেউ এই রাতে আমার নিঃস্পন্দ হাত ধরে।

    আমার নিজস্ব কোনো গান নেই বিপন্ন শহরে।।


    বেস্কিড পাহাড়ের ভার্জিন মেরি

    এই সেই নীরবতা বেস্কিড পাহাড়ে একদা
    তাহারে কাঁদায়েছিলো সুদূর পোল্যান্ড দেশে
    ক্রিনিসা নামক নগরীতে।
    এই সেই নীরবতা রক্তক্ষয়ে আবিল অশুচি
    তাহারে ডাকিয়াছিলো বরফে পিচ্ছিল শুঁড়িপথে।
    তাহার ঈশ্বর নাই, তবুও সে অকাতরে অনুতাপহীন
    কোনও পিছুটানে বুঝি মায়ামন্ত্রে ফিরিতে চাহিয়াছিলো
    ক্রমশ তোমার কাছে
    গিরিবর্ত্মে, হে বিষণ্ণা কুমারী প্রতিমা
    সমাচ্ছন্না নির্মম তুষারে।
    তুমি জানো আরও কটি প্রত্যাশিত পদস্খলন
    তাহারে আনিয়া দিবে পদপ্রান্তে তব আজ
    দিব্যমূর্তি তুষার ললনা ওহে
    সপুষ্প শোভিতা!


    কি অসহ্য নীরবতা
    কি অসহ্য মারণ স্তব্ধতা
    চরণে জড়ায়ে তার আসমুদ্র পৃথিবীর ধূলী
    প্রবল তুষারে তবু ফিরিয়া আসিছে কেহ
    বিপদসংকুল এই পার্বত্য অঞ্চলে।
    কী নামে ইহারে ডাকো, ওহে সতী বিবস্বতী?
    ইহারে কি ভালোবাসা বলে?


    নীল গ্রহ

    নীল গ্রহে নীল নদ আকাশে নীলচে তারা ফোটে
    নীলাভ মানুষ হাঁটে নীলরঙা শহরেতে
    নীল হাসি নীল দিনে নীলরঙা কিশোরীর নীল জানলায়।
    নীল মানুষের গান শুনতে চেয়েছে কারা
    নীলাভ আকাশ ভরা নীল রোদে নীলাভ পাড়ায়
    নীলাকাশে নীল গান নীল দিনে থমকে দাঁড়ায়।

    নীল গ্রহ খুঁজে পায়, কেউ পায় কেউ কেউ পায়
    নীল জলে তারা দ্যাখে নীলরঙা হাঙরেরা সাঁতরে বেড়ায়।
    বিদায়ের হাত নাড়ে নীল নারী নীল নদে
    নীল গ্রহ মুছে যায় নীল কান্নায়!


    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments