• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬২ | মার্চ ২০১৬ | কবিতা
    Share
  • গুচ্ছকবিতা : প্রণব বসুরায়


    সারিগান

    মনন কৃপণ আজ, তাই হাত ফাঁকা
    চিদাকাশ যা দেখায় তাই থাক আঁকা

    বট ঝুরি নেমে যায় মাটির শরীরে
    তদ্রূপ আমিও যাই তোমার গভীরে

    শিহরণ টের পাও, দামামা বুকেতে?
    এসো তবে স্নান সারি গোপন কুয়োতে ...

    আমাদের সারিগান লোক মুখে ফেরে
    যারা চায় নিয়ে যাক নিজেদের ঘরে ...

    চাঁদহীন আকাশেতে চাঁদের উদয়
    জ্যোৎস্নার অবকাশে কেটে যায় ভয়

    রাতের সেলাই কল (১৬)

    যথেষ্ট অন্ন সাজিয়ে
    আমায় বসতে দাও নি সে আসনে
    বরং দরজা-পাহারায় জুড়ে দিলে ...
    আমার পরনে তখন ফিটফাট পোষাক ...

    কেউই আসেনি, শুধু কয়েকটি ছায়া সরে গেল
    আমি তবু, টুলেতেই বসে

    তখন জন্মদিনের ঘন্টা বাজতে শুরু করেছে
    টর্চের আলো ইতিউতি উঠছে জ্বলে
    গন্ধক পোড়াচ্ছে কেউ নিকট দূরেই
    তুমি বিরিয়ানী রান্না করে
    ভাগ ভাগ ঢাকা দিয়ে রাখলে ...

    কয়েকটি ছায়া সরে সরে যায়
    আমি তাও, টুলেতেই বসে

    ছায়ার শরীর নিয়ে যদি কেউ আসে
    রাতের সেলাই কল চিনে নেবে ঠিক

    তাণ্ডব

    দুটি বোহেমিয়ান শব্দ মুখোমুখি চলে এলে
    মেঘেতে ফাটল ধরে ...
    ওড়ে হাওয়া, এলোমেলা
    অদূরে বৃষ্টি পড়ে

    এরপর চুম্বনের তাণ্ডবে
    কেঁপে যায় আকাশ পাতাল

    একে যদি অশালীন বলো
    যাও তুমি নীহারিকা দেশে
    পতাকা নাড়িয়ে তোমায় বিদায় জানাবো

    তুমি সব জান, প্রভু

    আজ দেখি তুমি সহজ শাস্তি দিলে
    পা বেঁধে গেল কচুরিপানার ঝাঁকে
    আমার পোষাক রেখেছিলে গাছে তুলে
    বন্দরে তুমি গিয়েছিলে এক ফাঁকে

    আকাশ কখনও জরিপ করি নি আমি
    উড়িয়েছি ঘুড়ি, সুতোয় দিয়েছি ছাড়
    সেই ঘুড়িগুলি বিশেষ বাহারি, দামী
    গোমতীর জলে হাঁস করে পারাপার

    বন্দরে গিয়ে বিশেষ সওদা করলে
    ঝুলি ভরে গেল ময়ূর পালক সাজে
    সমাপ্ত হলে ফেরত আসতে চাইলে
    কী কারণে যেন সব লেগে গেল বাজে

    ব্যখ্যা-অতীত কখন কিছুই বলিনি
    তেমন বাক্য শিখিনিও কোনকালে
    ফিরে এসে তুমি এক ফাঁকে কমলিনী
    আমাকে ঢাকলে ঘরনীর বল্কলে ...

    এমন কখনও হয়েছিল নাকি, কভু
    তুমি সব জান তুমি সব জান, প্রভু

    বীজতলা

    সরে যাচ্ছিলাম, বিপজ্জনক ভাবে সরে যাচ্ছিলাম
    দ্রাঘিমার এক অংশ থেকে অন্য ভাগে
    আড়াল থেকে উঠে আসে ছবির পাহাড়
    সেই সূক্ষ্ম ছায়াবেলা ও ভানুমতির খেল
    স্পর্ধার আঙুল তোলে আজ
    করজোড়ে তাকে বলি, ক্ষমা ক’রো
    আমি পারি নি দিতে কমলা ও আঙুরের ক্ষেত
    অনেক কষ্টে শুধু বীজতলা আগলে রেখেছি
    এই ভেবে, যদি কেউ চাষ দেয় সেখানে কখনও!

    এ কথাও জানি দূর বন্দর থেকে জাহাজ ছেড়েছে
    এক দক্ষ যাদুকর আসছে এখানে—
    তার ঝুলিতে আশ্চর্য দুলিয়া, শীত রোদ নিয়ন্ত্রিত
    সে দেবে সাগরের ঢেউ, স্ফটিকের মালা

    বসার জন্যে তাকে একটু জায়গা দিও
    কিছু অন্ন আর শর্করা রেখো হাতের কাছেই

    ঘোড়া

    ছটফটে ঘোড়াটা আজ দানাপানি পায় নি
    অনেকটা পাথুরে পথ পার হয়ে এলো
    তার খুরের শব্দ জ্যামিতিক ভাবে ধাক্কা খেয়ে
    পাহাড়ের রাস্তায় গড়িয়ে নেমেছে--

    ওই অনতিদূরে আস্তাবল, সেদিকে না গিয়ে
    ঘোড়া চায় অচেনা আনপথে যেতে ...
    মুখ তুলে চায়--যেন সে সম্রাট
    যেন সে একাই পুরুষ, বাকি সব
    তাহার রমণী!

    রমণীরা দুধ দিতে সতত প্রস্তুত
    এ তথ্য জেনেও ঘোড়া চায় নি খাবার ...
    অল্প বিশ্রামের পর সে চলে যাবে আরও--
    খট খট শব্দ তার পিছনে পিছনে ...

    ঘোড়াটিকে আদর ও খাদ্য দিয়ে স্টেবলে ঢোকাও
    অন্যথায় সারারাত

    তাঁবুর বাইরে বসে চাঁদকে খাবে ...

    স্বাক্ষর

    যে বিপুল আনন্দ চারপাশে বেজে ওঠে
    তার প্রতিটি স্পন্দন আমি এ দেহে ধারণ করি

    সূর্য ও মর্তে প্রদক্ষিণ করে
    মানুষ ও নদীর কাছে বলে দিই

    শস্যদানার মধ্যে প্রোথিত করি সেই বার্তা
    পতাকায় এঁকে দিই তোমার ঠোঁট
    আর্ন্তজালে ছড়িয়ে দিই দশ আঙুলের ছাপ

    আর প্রকাশ্যে
    চুম্বন করে তোমার স্তনের ওপর
    রেখে যাই আমার স্বাক্ষর ...

    লেট আস

    এসো তুমি চব্বিশ জানুয়ারি, বসো কেদারায়
    তোমার গায়ে মালিন্য জমলো কিভাবে তার জবাব
    সেন্ট্রিদল দেবে।
    তোমাকে বসিয়ে আজ কুচকাওয়াজের ব্যবস্থা,
    বিউগল, বৃষ্টির মতো ঝরে পড়া পাপড়ি সমূহ
    তোপধ্বনি ও মাথার ওপর উড়ে যাওয়া সামরিক বায়ুযান।
    এই রমণীয় শৈত্য অভিবাদন জানাতে অপেক্ষা করছে,
    একরাশ জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ হয়েছে ক্যাম্প ফায়ারের
    এ সবই তোমার অনারে,
    দাউ মাই লর্ড, টোয়েন্টিফোর্থ জানুয়ারি ...

    উপহারে তুমি যা যা চাও সব নাও
    পৃথিবীর সমস্ত ভাণ্ডার আজ খুলে রেখেছি
    বুলেটপ্রুফ গাড়ি তোমার পাহারায়--
    সন্ধের শাঁখ বেজে উঠেছে তোমার মঙ্গলে
    এ্যান্ড অল কনসার্ট তোমাকেই ডেডিকেটেড

    এসো, আজ শুরু করি স্যুপ দিয়ে
    আর শেষে সার্ভড হোক প্রিয় ডেসার্ট ...
    লেট আস সীট টুগ্যেদার



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণ - অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments