কবিতার ব্যবচ্ছেদে যারা বিষণ্ণ হন আমি সেই দলে নই। আমি মনে করিনা যে একটি সফল কবিতার রসানুভূতি এমন একটি বায়বীয় ব্যাপার যে তাকে পেঁয়াজের খোসার মতো ক্রমান্বয়ে ছাড়িয়ে গেলে পরিশেষে স্রেফ শূন্যতা পড়ে থাকবে। আমি এও বিশ্বাস করি যে একটি কবিতার মর্মার্থ বা বিশ্লেষণ একপ্রকার নয়: একটি কবিতার একাধিক অর্থ বা যুক্তিগ্রাহ্য বিশ্লেষণ থাকতেই পারে যার কোনোটিই অপরটির থেকে ‘অধিকতর’ সত্য নয়। আমার এই বিশ্বাস দৃঢ়তর হতে থাকে পেশাগত কারণে ভিলফ্রেদো প্যারিটো (১৮৪৮-১৯২৩) নামক এক প্রাজ্ঞ, প্রাচীন এবং রাজনৈতিক ভাবে প্রায় নৈরাজ্যবাদী ইটালীয় গণিতজ্ঞের তত্ত্বের সঙ্গে অবিরল সহবাসে। গাণিতিক জটিলতা এড়িয়ে খুব শিথিল করে বলতে গেলে প্যারিটো আমাদের শেখান যে একাধিক পরস্পরবিরোধী প্রয়োজনীয়তার নিরিখে আমরা যদি আমাদের শ্রেষ্ঠতম সিদ্ধান্তটির তল্লাশ করি সেক্ষেত্রে ‘শ্রেষ্ঠতম’ আখ্যায় আমাদের একাধিক সিদ্ধান্তকে ভূষিত করতে হবে, আর তার থেকে যেকোনো একটিকে আমরা নিজ নিজ বিবেচনাক্রমে বেছে নিতেই পারি। এই প্রমাণিত গাণিতিক প্রতিপাদ্য কবিতার ক্ষেত্রেও যদি আমরা অনায়াসে প্রয়োগ করি সেক্ষেত্রে একই কবিতার একাধিক যুক্তিগ্রাহ্য পাঠে আমাদের অনীহা থাকেনা। আর মোটামুটি এইরকম চিন্তাগত পটভূমিতে আমি পরবাস সম্পাদক মহাশয়ের একটি সাম্প্রতিক আদেশ শিরোধার্য করি; আর তার ফলশ্রুতি এই নিবন্ধ।
সম্পাদক মহাশয় জানান যে কবিতার বিশ্লেষণ বিষয়ক কিছু রচনা তিনি একত্রে ছাপতে চান যেখানে প্রতিটি নিবন্ধ একটি কবিতার বিশ্লেষণ করবে – সেইসব কবিতার, যার প্রথম পাঠ আমাদের কিছু আপাত দুর্বোধ্যতার সম্মুখীন করবে, আর তার নিরসন ঘটবে এইসব নিবন্ধে লিপিবদ্ধ আলোচনায়। এই পরম দুরূহ কর্মকাণ্ডে ডাক পড়ায় আমি ভাঙি কিন্তু মচকাইনা, অতি সন্ত্রস্ত ভাবে নানা কবিতার কথা ভাবতে ভাবতে পরিশেষে একটি অতি প্রিয় গ্রন্থের একটি অপরিসীম সৌন্দর্যশালী কবিতাকে সনাক্ত করি। কবিতাটি সম্পূর্ণ উদ্ধৃত করলাম:
সে কোন বাটিতে কও দিয়াছিলা এমন চুমুককবিতাটি বাংলাদেশের সম্প্রতি প্রয়াত কবি সৈয়দ শামসুল হক-এর কাব্যগ্রন্থ 'পরানের গহীন ভিতর' থেকে নেওয়া। অসামান্য ক্ষমতাশালী এই কবি ভাষার বিশুদ্ধতার নিরিখে নির্মমভাবে স্থিতিশীল ও বিশুদ্ধিপন্থী ছিলেন: তাঁর অন্যান্য কবিতা যেটুকু আমার পাঠকৃত, তা নিপুণ, পরিশীলিত চলিত সাহিত্যিক বাংলায় লেখা। এই একটি গ্রন্থেই ওপার বাংলার সুতীব্র মৌখিক আঞ্চলিক রূপটিকে তিনি অতি সচেতনভাবে তাঁর সেই ভাষাগত স্থিতিজাড্য ভঙ্গ করে, প্রবল প্লাবনে সঞ্চালিত করেন। গ্রন্থটি গ্রামবঙ্গকেন্দ্রিক শিরোনামবিহীন কিন্তু ক্রমিকসংখ্যা বিশিষ্ট মোট তেত্রিশটি কবিতার সমষ্টি; যেখানে এটি তৃতীয় কবিতা।
নীল হয়া গ্যাছে ঠোঁট, হাত পাও শরীল অবশ,
অথচ চাও না তুমি এই ব্যাধি কখনো সারুক।
আমার জানতে সাধ, ছিল কোন পাতার সে রস?
সে পাতা পানের পাতা মানুষের হিয়ার আকার?
নাকি সে আমের পাতা বড় কচি ঠোঁটের মতন?
অথবা বটের পাতা অবিকল মুখের গড়ন?
তুঁতের পাতা কি তয়, বিষনিম, নাকি ধুতুরার?
কতবার গেছি আমি গেরামের শ্যাষ সীমানায়
আদাড় বাদার দিয়া অতিঘোর গহীন ভিতরে,
কত না গাছের পাতা কতবার দিয়াছি জিহ্বায়,
এমন তো পড়ে নাই পানি এই পরানে, শিকড়ে।
তয় কি অচিন বৃক্ষ তুমি সেই ভুবনে আমার,
আমারে দিয়াছো ব্যাধি, নিরাময় অসম্ভব যার?
আমি এই কবিতাটি পড়তে চাই, বাবু শ্রী ভিলফ্রেদো প্যারিটোর আজ্ঞানুসারে, একাধিক সম্ভাব্য পাঠপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে! প্রথম পাঠে আমরা বলতেই পারি এটি একটি অবিস্মরণীয় নির্মাণ, ভাষার প্রয়োগ অনবদ্য, এবং এই ডায়লেক্টের প্রয়োগগুণে কবিতাটিতে একটা রহস্যময়তার বাতাবরণ সৃষ্টি হয়। কবিতাটি গ্রামবাংলার একটি অনবদ্য নিসর্গচিত্র, যা রূপসী বাংলার মতোই মর্মগ্রাহী। এও বলা যেতে পারে যে এর অতিরিক্ত বিশ্লেষণে, এই কবিতার রসভঙ্গ ঘটবে!
রসসৃষ্টি কবিতার কাজ আর সেই নিরিখে এই কবিতাটি সর্বাঙ্গসুন্দর এটা মেনে নিয়েও আমরা একটি দ্বিতীয় তথা বিকল্প পাঠের সন্ধান করতে প্রবৃত্ত হবো।
প্রথম পাঠের প্রায় সবকটি বক্তব্য মেনে নিয়ে আমরা যদি দ্বিমত হোই কবিতার বিশ্লেষণ তথা ব্যবচ্ছেদ প্রসঙ্গে, সেক্ষেত্রে আমরা বলতেই পারি যে এই কবিতার রহস্যময় বাতাবরণটি শুধু এর ঐন্দ্রজালিক ভাষা প্রয়োগে নয়, বরং তা নিহিত আছে ওই ‘অচিন বৃক্ষ’ ও তার প্রদত্ত নিরাময় বিহীন ‘ব্যাধি’টির সন্ধা প্রয়োগে। এই কবিতাটিকে বুঝতে হোলে তাই ওই দুটি শব্দের অর্থ নির্ণয় করা অত্যাবশ্যক; কবিতার তাতে রসভঙ্গ হয়না, বরং তাতে কবিতা আরও প্রস্ফুটিত হয়।
এই কাজে প্রবৃত্ত হোতে গিয়ে আমরা আবার স্মরণে রাখবো জনাব প্যারিটো প্রদত্ত চেতাবনি। যে অর্থে শ্রী সৈয়দ শামসুল হক এটিকে স্বয়ং প্রয়োগ করেছিলেন তা আজ জানবার উপায় নেই, জানবার একান্ত প্রয়োজনও নেই, কেননা পাঠক যদি নিজগুণে এ’দুটি শব্দের কোনো যুক্তিসঙ্গত মর্মোদ্ধার করেন, তা হবে এ কবিতার রহস্যের অন্যতম প্যারিটো সমাধান, এই কবিতাটির অর্থভেদের একটি স্বতন্ত্র এবং স্বীকৃত অবতারণা, এবং দ্বিতীয় কোনো বিদগ্ধ পাঠকের অবলোকন এর থেকে ভিন্ন হোতেই পারে।
সংশয়াতীতভাবে কবিতায় বর্ণিত এই ‘ব্যাধি’টি সর্বজনীন নয়। জীবনানন্দীয় অভিধা আত্মসাৎ করে ধরে নিতেই পারি এটিতে সকলেই নয়, কেউ কেউ আক্রান্ত! এভাবেও ভাবতে পারি যে আনন্দ যন্ত্রণার যুগপৎ সঞ্চালনে যে কবিত্বের সৃষ্টি, এটি তার চরম সিদ্ধির রূপক মাত্র: সেই সৃষ্টিপ্রদানকারী আনন্দ ও যন্ত্রণার, বিজ্ঞানের ভাষায়, থার্মোডাইনামিক ইকুইলিব্রিয়াম; কবিতার এই দুটি নিয়ন্তার চূড়ান্ত স্থিতি তথা সহাবস্থান। তাই, ‘নীল হয়া গ্যাছে ঠোঁট, হাত পাও শরীল অবশ’; যন্ত্রণা উত্তীর্ণ হয়েছে তার প্রান্তিক স্থিতিতে, কিন্তু আনন্দ তাকে আলিঙ্গন করে ওতপ্রোত ভাবে! অতএব: ‘অথচ চাও না তুমি এই ব্যাধি কখনো সারুক’! রবীন্দ্রনাথ হোলে হয়তো বলে উঠতেন: ‘আমার প্রাণে গভীর গোপন মহা-আপন সে কি’!
এইবার আসুক ‘অচিন বৃক্ষটির’ প্রসঙ্গ। ওই প্রাগুক্ত দ্বিতীয় বিশ্লেষণে ওই বৃক্ষটিকে যদি, প্রতীকরূপে, কাব্যিক সৃজনশীলতার প্রেরণার উৎসমুখ হিসেবে গণ্য করি, সেক্ষেত্রে এই বীক্ষণটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হোয়ে ওঠে। এই চালিকাশক্তি কবিভেদে, কবিতাভেদে ভিন্ন প্রকার হোতেই পারে। এই কবিতাটি যেহেতু গ্রাম বাংলার চিত্ররূপময় পটভূমিতে আবদ্ধ, এই ‘উৎসমুখ’টিও সেই নিসর্গে নিহিত: প্রকৃতির প্রায় অনির্বচনীয় সৌন্দর্য শুধু নয়, তার মধ্যে নিহিত অমঙ্গলও এর অন্যতম উপাদান, অনায়াসে যার উৎস হোতে পারে এই নিসর্গের মর্মস্থলে থাকা, এই কবিতায় অনুল্লেখিত, সামাজিক জীবন যা পরানের গহীন ভিতর এর বহু কবিতায় নিজ অবয়বে প্রকাশিত; যেমন চতুর্থ কবিতাটিতে:
আমি কার কাছে গিয়া জিগামু সে দুঃখ দ্যায় ক্যান,যে সূত্রেই আসুক না কেন, যে কোনো কবির কাছে কবিতার এই উৎসমুখটি অপরিহার্য। পুনরায় জীবনানন্দীয় প্রত্যয়ে বলা যায় যে এই সে বস্তু যা কবিতার ‘ধনুকের ছিলা রাখে টান’। এর সম্যক রূপটি বুঝতে কবিকেও দীর্ঘদিন তাঁর কাব্যের গহীনে নিমগ্ন থাকতে হয়। আমরা বলতেই পারি যে এই বৃক্ষ সেই অর্থে ‘অচিন’।
ক্যান এত তপ্ত কথা কয়, ক্যান পাশ ফিরা শোয়,
ঘরের বিছান নিয়া ক্যান অন্য ধানখ্যাত রোয়?
অথচ বিয়ার আগে আমি তার আছিলাম ধ্যান।
আছিলাম ঘুমের ভিতরে তার য্যান জলপিপি,
বাঁশির লহরে ডোবা পরানের ঘাসের ভিতরে,
এখন শুকনা পাতা উঠানের পরে খেলা করে,
এখন সংসার ভরা ইন্দুরের বড় বড় ঢিপি। ….
কবিতাটির দ্বিতীয় পাঠটিকে অনুধাবন করতে এর চেয়ে দীর্ঘ কথকতার আবশ্যকতা দেখিনা।
এইবার প্রয়াস পাওয়া যাক কবিতাটির একটি তৃতীয় পাঠ নির্মাণের। এক্ষেত্রে আমরা কবিতাটিকে বুঝবার চেষ্টা করবো একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। এক্ষেত্রে আমাদের মূল বক্তব্য হবে যে এই কবিতা যে শ্রীময়ী পটভূমিতে তার চিত্ররূপটিকে উপস্থাপিত করেছে তা একটি কল্পবিশ্ব, কবির স্বনির্মিত একটি কবিতার মেটা-জগৎ যাতে গ্রামবাংলার পটচিত্র নিপুণ হাতে প্রক্ষেপিত। যেহেতু কবিতার এই নিজস্ব পৃথিবী আমাদের পরিচিত গ্রামবাংলার একটি অভিক্ষেপ মাত্র, এর অবয়বে আমাদের পরিচিত জগতের নিয়মাবলীর প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে, এ জগতের নিয়মাবলী বা জাগতিক সূত্রসমূহ কবির আজ্ঞাক্রমে আমাদের পরিচিত বস্তু-বিশ্বের থেকে স্বতন্ত্র হোতেই পারে। এই জগতের ‘তুঁতের পাতা’, ‘বিষনিম’ বা ‘ধুতুরা’ যে আমাদের বিশ্বের উদ্ভিদ বিদ্যার ব্যাকরণ মেনে চলবে, সেই প্রত্যাশা থেকে বিযুক্ত হয়েই আমাদের এই কবিতাটিকে পড়তে হবে। এখানে কবিতা কল্পনালতা; এখানে এই ‘অচিন বৃক্ষ’টি তাই কবির একটি কপোলকল্পিত নির্মাণ, যা তার নিজস্ব মেটা-জগতে একটি রহস্যময় ব্যাধির আধারস্বরূপ স্থিত, আর যদি ভাবি সেই ব্যাধির অন্তঃস্থলে আমাদের পরিচিত রোগবাহী বীজাণুগুলি কেন্দ্রীভূত, তবে আমাদের সেই প্রত্যাশা অবশ্যম্ভাবী ভাবে ব্যর্থ হবে। আমরা পাঠকেরা যেহেতু সেই মেটা-জগতে উৎক্ষেপিত নই, তাই তার ঘটনাবলীর ইহজাগতিক বিশ্লেষণেও আমরা পারঙ্গম নই, আমাদের সে কারণে কবিতাটির নান্দনিক সৌন্দর্যের আস্বাদনেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। অর্থাৎ কবিতাটির প্রথমপাঠে যে বিশ্লেষণে আমরা অনীহা দেখিয়েছিলাম, এই তৃতীয় পাঠে তা অক্ষমতায় পর্যবসিত!
এই তিনটি পাঠ ভেদের মধ্যে আমরা কোনটিকে বেছে নেবো, বা এর সঙ্গে যদি আরও কিছু সম্ভাব্য যুক্তিগ্রাহ্য পাঠ যুক্ত হয়, সেক্ষেত্রেই বা কোনটিকে বাছবো? মহামতি প্যারিটো এর উত্তরে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলবেন যে এ প্রসঙ্গে তাঁর কোনও অভিমত নেই, তাঁর তত্ত্বে এই প্রতিটি সমাধানই সমমাত্রায় সংগত! প্রযুক্তিবিদ্যার জগতে এই কাজটির জন্য আমরা যাদের শরণাপন্ন হোই, তাঁদেরকে এই বিষয়ের পরিভাষায় সিদ্ধান্ত নির্মাতা বলে ডাকা হয়। এই সিদ্ধান্ত নির্মাতারা হলেন আলোচিত বিষয়টির সংগে নিবিড়ভাবে পরিচিত কোনো ব্যক্তি, যিনি সবকটি প্যারিটো সমাধানের মধ্য থেকে নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনের নিরিখে একটিকে বেছে নেবেন।
এই কবিতাটির ক্ষেত্রে সেই গুরুদায়িত্ব আমি পরবাসের বিদগ্ধ পাঠককুলের হাতে সমর্পণ করলাম!
পরিশিষ্ট
আমাদের আলোচনা শেষ; তবু অত্যুৎসাহী পাঠকদের জন্য (জানিনা সেরকম কেউ আছেন কিনা!) কয়েকটি কথা বলে রাখি, যা মূল নিবন্ধে অন্তর্ভুক্ত করিনি তা তার পাঠযোগ্যতাকে আহত করবে ভেবে। এই অংশটি পাঠ করবার জন্য আদৌ কোনো বাধ্যবাধকতা নেই!
গাণিতিকভাবে যেকোনো একটি সমস্যার প্যারিটো সমাধানগুলি সৃষ্টি হয় একাধিক পরস্পরবিরোধী প্রত্যাশা বা লক্ষ্যবস্তুর যুগপৎ রূপায়ণের প্রচেষ্টা থেকে। এই কবিতাটির ক্ষেত্রে এই তিনটি সম্ভাব্য সমাধান নির্মাণের ক্ষেত্রে আমি যা অর্জন করতে চেয়েছি, তা হোলো কবিতাটির সর্বনিম্ন ব্যবচ্ছেদে তার সর্বোত্তম নিহিত অর্থের বিশ্লেষণ! যদি ধরে নিই যে ব্যবচ্ছেদের মাত্রাবৃদ্ধির সঙ্গে কবিতার এই বিশ্লেষণের মাত্রাও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, সেক্ষেত্রে, আমাদের এই দুটি প্রত্যাশা, অর্থাৎ সর্বনিম্ন ব্যবচ্ছেদ এবং সর্বোত্তম বিশ্লেষণ, পরস্পরবিরোধী প্রক্রিয়া হোয়ে দাঁড়ায় — একটির রূপায়ণে দ্বিতীয়টি বাধাপ্রাপ্ত হয়, এবং আমরা প্রবেশ করি ভিলফ্রেদো প্যারিটোর নিজস্ব সাম্রাজ্যে! এই প্রস্তাবিত তিনটি সমাধানকে প্যারিটো সমমানের বলেন কেননা এক্ষেত্রে যে সমাধানটিতে ব্যবচ্ছেদের মাত্রা তুলনামূলক ভাবে কম, সেখানে বিশ্লেষণের মাত্রাটিও অবধারিত ভাবে স্বল্প। অর্থাৎ, এরমধ্যে যেকোনো দুটি সমাধানকে তুলনা করলে দেখবো যে আমাদের যেকোনো একটি সমাধান যদি একটি প্রত্যাশার নিরিখে অধিকতর গ্রহণযোগ্য হয়, তবে দ্বিতীয় প্রত্যাশাটির নিরিখে তা অবশ্যই নিম্নমানের; কাজেই একটিকে অপরটির থেকে ভালো বা খারাপ বলাটা অসম্ভব হোয়ে পড়ে! অজস্র আলোচনা হোয়েছে এই প্রসঙ্গে, যা এই সাহিত্যকেন্দ্রিক সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে উত্থাপন না করাটাই বাঞ্ছনীয় হবে।