শ্রেয়ান উঠে অন্য ঘরে চলে গেল। এই হয়েছে এক সমস্যা। সংসারের কোনও কথাই ওর শুনতে ভালো লাগে না। সারাদিন কলেজের পর পৃথা আজকাল হাঁপিয়ে ওঠে। ছোট ছোট জিনিসের জন্য বারবার বাজার যেতে কারই বা ভালো লাগে। দীপ্তিমাই বা আর কত দিক সামলাবে? বাড়ির সব কাজ তো ওই করে। তাছাড়া বয়সও তো ওর কম হল না। শ্রেয়ানের জন্মের পর থেকে ওকে দেখাশোনা করার জন্য ওকে এ বাড়িতে আনা হয়েছিল। পৃথা মাঝে মাঝে ভাবে কপাল না করলে এরকম বেবিসিটার পাওয়া যায় না। দীপ্তিমা ওর নিজগুণে পৃথার বড়দি হয়ে উঠেছে। গতমাসেই বাষট্টি পূর্ণ হল দীপ্তিমার। এখন একটু অল্পতেই যে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ে তা ওর মুখ দেখলেই বোঝা যায়।
এই নিয়ে শ্রেয়ানকে ওরা দুজন মিলে ছয় সাত বার বলেছে বাথরুমের বাল্বটা লাগাতে। দীপ্তিমা টুলের উপর দাঁড়িয়েও নাগাল পায় না আর পৃথার উপরের দিকে তাকিয়ে কাজ করলে মাথা ঘোরে। কিন্তু এসব বলা বৃথা। কে শোনে এ সব?
এখন কি যে সব বাতিক হয়েছে সকাল সন্ধ্যা স্নান করে ঘর অন্ধকার করে বসে থাকে। দীপ্তিমা তো সেদিন খুব ভয় পেয়ে গেছিল, ভোরবেলা টয়লেটে যাবার জন্যে উঠে দেখে শ্রেয়ান বাইরের ঘরের জানালার পাশে বসে আছে, চোখের দৃষ্টি স্থির। নিস্তব্ধ ঘরে দুবার ডাকার পরেও সাড়া দেয়নি। ওর পিঠে হাত রাখতেও নাকি ও বুঝতে পারেনি, অথচ চোখ খোলা, ঘুমোচ্ছেও না, জোরে ধাক্কা দিতে তবে সাড়া দেয়।
এসব শুনলে পৃথার কেমন যেন ভয় করে, সব পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে যায়। যখন শ্রেয়ানের বাবা দুদিনের জ্বরে এক রকম বিনা চিকিৎসায় ওদের ছেড়ে চলে যায়, তখন শ্রেয়ানের খুব অল্প বয়স, মাত্র দশ আর পৃথার পঁয়ত্রিশ। সিদ্ধার্থ অল্প জ্বর নিয়ে দুদিন অফিস করেছিল। তৃতীয় দিন সকালেও যখন জ্বরটা কমল না তখন সারাদিন বিশ্রাম নেবে বলে আর অফিস গেল না। সেদিন পৃথার আবার কলেজে পরীক্ষার গার্ড ছিল। বিকেলে বাড়ি ফিরে দেখে সিদ্ধার্থ দিব্যি সুস্থ। শ্রেয়ানের সাথে বসে সুডোকু খেলছে। মাঝরাত থেকে জ্বরটা সামান্য বেড়েছিল, সিদ্ধার্থর কথা বলতে একটু কষ্টও হচ্ছিল। জ্বরের ওষুধে কাজ না হওয়ায় পৃথার বেশ চিন্তাই হচ্ছিল। রাত ভোর হতেই ওকে নার্সিংহোমে নিয়ে যায় পৃথা। সাধারণ জ্বরে ডাক্তার কি দেখলেন কে জানে কিছু টেস্ট করার জন্যে তখনই ওকে ভর্তি করে নিলেন। কিন্তু চিকিৎসা শুরু হবার আগে দুপুরের মধ্যেই সব শেষ হয়ে গেল। কোনো মানসিক প্রস্তুতি ছাড়াই অর্ধেকটা দিনের মধ্যে ঠিক কি হয়ে গেল পৃথা ভালো মনে করতে পারে না। জীবনটা যেন কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। সেই দুঃসহ দিনগুলোতে পৃথা কোনো পুরুষকে সহ্য করতে পারত না, এমনকি শ্রেয়ানকেও। শ্রেয়ানকে রাখা হয়েছিল ওর মামাবাড়িতে প্রায় তিন মাস। পৃথা একটু একটু করে সুস্থ হয়। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন যেটা হয় পৃথার নরম মনটা যেন প্রয়োজনের থেকে বেশি কঠিন হয়ে যায় অথচ পৃথা সেদিনের মনের অবস্থায় পারেনি শ্রেয়ানকে এসব থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে। সদ্য পিতৃহারা একটি অসহায় বালককে পারেনি মনের জোর দিতে। দশ বছরের একটি বালককে তার আত্মীয়েরা শ্মশানে নিয়ে গিয়ে বাবার মুখাগ্নি করায়। পৃথা একটু শক্ত হয়ে শ্রেয়ানকে এসব থেকে দূরে রাখতে পারত কিন্তু সেদিন ও কিছুই করেনি, আজও তাই এসবের জন্য অপরাধবোধে ভোগে, আত্মগ্লানিতে কষ্ট পায়।
প্রায় তিনমাস বাদে শ্রেয়ান যখন মায়ের কাছে ফেরে পৃথা কেমন অবাক হয়ে গিয়েছিল, শ্রেয়ান যেন সম্পূর্ণ অন্য কেউ, ও আগের মতন দুষ্টুমি করে না, অনর্গল কথা বলে না, বায়না করে না, হাসে না, কাঁদে না, সবকিছু যেন ও ভুলে গেছে। পৃথা আরো অবাক হয় যখন শ্রেয়ান আগুন দেখে ভয় পায়। রাতে লোডশেডিং-এর সময় অন্ধকারে বসে থাকতে হবে মোমবাতি জ্বালানো যাবে না। রান্নাঘরে গ্যাস জ্বললে ঢুকবে না, পুজোর সময় হোমের আগুন দেখলে চোখ বন্ধ করে মাকে জড়িয়ে ধরে। চিৎকার করে আগুন নেভাতে বলত, নাহলে সব পুড়ে যাবে। ওর কাছে সব আগুনের একটাই মানে ছিল 'চিতার আগুন'।
শ্রেয়ান রাতে ঘুমের মধ্যে যখন বলে উঠত 'বাপি সুডোকু খেলাটা শেষ হল না যে?'— একথা শুনে ভীষণ অসহায় লাগত পৃথার। শ্রেয়ানকে ডাক্তার দেখানো হয়, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, কিন্তু ওর শৈশবটা নষ্ট হয়ে যায়। পৃথা দেখতে পায়নি শ্রেয়ানের একটু একটু করে বড়ো হয়ে ওঠা, ও যেন কেমন শিশু থেকে যুবক হয়ে গেল।
শ্রেয়ানের মানসিক যন্ত্রণার সেবা করতে করতে পৃথা নিজের অজান্তেই ভুলে গেছিল ওর নিজের কষ্টটা, কেমন যেন কঠিন হৃদয় হতে হয়েছিল। অনেকেরই বাবা থাকে না একথা প্রতিনিয়ত শ্রেয়ানকে বোঝাতে বোঝাতে নিজেই একটা সময় সহজভাবে মেনে নিয়েছিল অনেকেরই স্বামী থাকে না। একটু একটু করে বড়ো হয়ে ওঠে শ্রেয়ান, কিন্তু ছোটোবেলার সেই হারানোর যন্ত্রণা যে পুরোপুরি ওর মন থেকে মুছে যায়নি সেটা আবার বোঝা যায় যখন সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ করা এক যুবক বারবার হারানো স্মৃতি মনে করতে চাইত। এবারও পৃথা প্রথমে বুঝতে পারেনি এ আবার পুরোনো সমস্যার পুনরাবৃত্তি। এবারের ধরনটা ছিল একটু অন্যরকম, দুঃখ কম, আনন্দটাই বেশি। বারবার বাবার কথা জানতে চাওয়া, বাবার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোর গল্প করা— এভাবেই অতীতকে কবর থেকে খুঁড়ে বার করত। সন্ধ্যাবেলা পৃথা ক্লান্ত হয়ে কলেজ থেকে ফিরে একটু বিশ্রাম নিত, শ্রেয়ান ঠিক সেই সময়ে ওর গল্পের ঝুলি নিয়ে বসত। দিনের পর দিন এক কথা বলতে বলতে পৃথার কান্না পেত। মধ্যে মধ্যে ভাবত এসব কি শ্রেয়ানের পাগল হবার লক্ষণ? নিজেকে ব্যর্থ লাগত বাবার অভাব পূরণ করতে না পারার জন্য। তাই তো হারিয়ে যাবার কষ্টটা শ্রেয়ানের মধ্যে এত প্রবল। যে ক্ষতস্থান সাময়িক ঠিক থাকলেও তার নিরাময় যে পুরোপুরি হয়নি পৃথা তা ভালই বুঝতে পেরেছিল। পৃথার মনে হয় আবার বিয়ে করার সিদ্ধান্তটাই হয়ত ঠিক ছিল। প্রবীর যে রাজি ছিল পৃথা কেন অনেকেরই বুঝতে বাকি ছিল না। সে সময় বয়স কম ছিল, একটা সামাজিক বন্ধনকে সমূলে উপড়ে ফেলে অন্য একটা বন্ধনের কথা ভাবলেই তখন ভয় করত পৃথার। এখন মনে হয় সেটা করলেই শ্রেয়ানকে একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন দিতে পারত। প্রবীর নিজের সর্বস্ব দিয়ে থাকতে চেয়েছিল পৃথার সাথে। কিন্তু পৃথার কঠোরতা প্রবীরকে অনেকটা দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। পৃথা মনে মনে জানে প্রবীর এখনো ওকেই ভালোবাসে, সবসময় ওর সাথেই আছে। শুধু বয়স বাড়ার কারণে প্রবীরের কাছে থাকার ধরনটা পাল্টেছে মাত্র। হয়ত দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটিতে ও নেই, কিন্তু আজও মানসিকভাবে ভরসার প্রথম জায়গাটা প্রবীরই। তাই তো শ্রেয়ানের প্রথম জীবনের পাগলামিতে প্রবীরই বলেছিল ওকে নিয়ে কিছুদিন পন্ডিচেরীর বাড়িতে থাকতে চায়। পৃথাও রাজি হয়ে গিয়েছিল। পুজোর ছুটির একমাস শ্রেয়ানকে প্রবীরের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল। প্রবীর দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করে এখন বিভিন্ন এন জি ও-র সাথে যুক্ত। বিয়ে না করে দিব্যি জীবনটা কাটিয়ে দিল। প্রবীর কতটা বাবার ভূমিকা পালন করতে পেরেছিল পৃথা সেটা নিজের চোখে দেখেনি বটে, কিন্তু টেলিফোনে শ্রেয়ানের কথা শুনে বুঝতে পেরেছিল মায়ের সাথে না থাকার কোন অভাব বোধ ওর হয়নি। শ্রেয়ানের মনের ভারটা যে কমেছে সেটা দূরে বসেই বুঝতে পেরেছিল পৃথা। প্রবীরও শ্রেয়ানের একাগ্রতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। যখন আশ্রমে বসে ও ধ্যান করতো প্রবীর অবাক হয়ে চেয়ে থাকত। প্রায় বিকেলে সমুদ্রের ধারে বসে ও বলত 'কাকু আমি শান্ত হয়ে যাচ্ছি, আমাকে অসীম শান্তি স্পর্শ করছে, আমি যেন একটু একটু করে বদলে যাচ্ছি'। প্রবীরের খুব ভালো লেগেছিল এই প্রথমবার পৃথার জন্য কিছু করতে পেরেছে বলে। পন্ডিচেরী থেকে ও ফিরেছিল ধীরস্থির শান্ত যুবক হয়ে। বুকের মধ্যে জমে থাকা দুঃখের ভারটা ও যেন বঙ্গোপসাগরের জলে নিক্ষেপ করে এসেছে।
কলেজ থেকে ফিরে পৃথা এক কাপ চা নিয়ে বসেছিল সেদিন। শ্রেয়ান দুদিন হল বাড়িতে নেই। পরীক্ষা থাকলে ও এখন কলেজের হোস্টেলে দু একসপ্তাহ থাকে। কলেজে ভর্তি হবার পর থেকে ওর বাইরে মেলামেশার জগৎ কিছুটা বেড়েছে। আগে শ্রেয়ানের বন্ধুবান্ধব কিছুই ছিল না, বাড়িতে সারাদিন বইতে মুখ গুঁজে বসে থাকত। হোস্টেলে থাকার জন্যে দুপাঁচ জনের সাথে একটু মেশে, কথা বলে। দু একজন বন্ধু কখনো সখনো বাড়িতেও আসে। পৃথার বেশ ভালো লাগে ওর বন্ধুরা বাড়িতে আসলে, বাড়িটা বেশ গমগম করে। শ্রেয়ান হোস্টেলে যাবার সময় বারবার বলে গেছে পৃথা যেন রোজ রোজ ফোন না করে, যেদিন পরীক্ষা থাকবে ও নিজেই ফোন করে জানিয়ে দেবে পরীক্ষা কেমন হয়েছে। ছেলের কথা শুনে পৃথা দুদিন ফোন করেনি, যদিও একবার ফোন করে শ্রেয়ানের গলাটা যে শুনতে ইচ্ছে করেনি তা নয়। হিসেবমত আজই শ্রেয়ানের ফোন করার কথা কারণ আজই ওর প্রথম পরীক্ষা ছিল। পৃথাও জানত ও ফোন করবেই। গত দশ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার এই দিনটিতে শ্রেয়ান ওর মার সাথে নেই, এইদিনে সিদ্ধার্থের মৃত্যুর দশ বছর পূর্ণ হল। পৃথা ঠিক করেই নিয়েছে শ্রেয়ান নিজে থেকে ফোন করে যদি এ প্রসঙ্গ না তোলে তাহলে ও আর কিছু মনে করিয়ে দেবে না। এসব এলোমেলো ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যার অনেকটা সময় কাটিয়ে দিল পৃথা। দীপ্তিমা এরই মধ্যে খাবার গরম করে ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে, আজকাল বড্ড তাড়াতাড়ি ও খাবারের পাট চুকিয়ে ফেলে। দীপ্তিমাকে কিছু বলতে হয় না, এ দিনটায় ও সিদ্ধার্থের পছন্দের দুএকটি পদ রাঁধবেই। পৃথার প্রথম প্রথম খুব অবাক লাগত, জন্মদিনে পছন্দের রান্না করা একটা স্বাভাবিক আচরণ, কিন্তু মৃত্যুদিনে কেন এমন করে? দীপ্তিমা নিজের মত করে এর ব্যাখ্যাও করে। সারা বাড়িতে সিদ্ধার্থের কোন ফোটোফ্রেম নেই তাই এই একটা দিন দীপ্তিমা সিদ্ধার্থের পছন্দের রান্না ভগবানের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে।
রাতে খাবার পরে ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করেছিল পৃথা কিন্তু শ্রেয়ান ফোন করেনি। অন্য কোনোদিন হলে হয়তো পৃথা নিজেই ফোন করে নিত সেদিন আর ইচ্ছে হয়নি কথা বলতে। পরের দিন ঘুম থেকে উঠেই শ্রেয়ানকে ফোন করল, অদ্ভুতভাবে শ্রেয়ানের ফোন 'নট রিচেবল' বলছে বারবার। কলেজ হোস্টেলের ল্যান্ডলাইনে ফোন করে ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলে পৃথা একেবারে হতভম্ব, শ্রেয়ান নাকি হোস্টেলে যায়ই নি এমনকি গতকালের পরীক্ষাও দিতে আসেনি। কাল ওর বন্ধুরাও ফোনে যোগাযোগ করতে পারেনি। কয়েক মুহূর্তের জন্য পৃথার স্নায়ুগুলোর মধ্যে যেন রক্তসঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। ও কল্পনাও করতে পারেনি এমন কিছু শুনতে হবে। স্থির হয়ে বসে আছে ঘরের মধ্যে, দুঃখকষ্টের অনুভূতিও যেন হারিয়ে গেছে। যে ছেলে মা ছাড়া এ পৃথিবীতে কারও সাথে মন খুলে কথা বলতে পারে না সে কোথায় যেতে পারে পৃথার কল্পনাতেই আসছিল না। দীপ্তিমা পৃথার বিহ্বলতা দেখে যে সব আত্মীয়স্বজনদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ আছে তাদেরকে ফোন করে জেনে নিয়েছে যে শ্রেয়ান ওসব জায়গায় যায়নি। প্রবীর কলকাতায়, তাই পৃথা শুধু ফোন করে প্রবীরকে জানিয়েছে ঘটনাটা, ও এসে পৃথাকে থানায় নিয়ে যাবে। পৃথার অন্তর যেন বারবার বলছে শ্রেয়ানের অন্তর্ধানটা পূর্বপরিকল্পিত। একটু জোর করে দুচার দিন আগের কথা ভাবার চেষ্টা করছিল পৃথা যদি কোন অস্বাভাবিকতা মনে পড়ে। হঠাৎ করে বেল বাজায় পৃথা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখে প্রবীর এসে গেছে, পিছনে একজন ডাকপিওন লেটার বক্সে কিছু ফেলার চেষ্টা করছে কিন্তু ভিতরে ঢুকছে না, তাই পৃথার হাতে দিয়ে দিল। ওটা পৃথার নামে আসা একটা ম্যাগাজিন। পৃথা তৈরি হয়েই ছিল, চটিটা পায়ে গলিয়ে বেরুতে যাবে এমন সময় দীপ্তিমা এসে লেটার বক্সটা খুলল। একটা ভারী মোটা খাম, কোন ঠিকানা লেখা নেই। প্রবীর টান দিয়ে খামটা ছিড়ে ফেলল, চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল প্রচুর ডায়েরির পাতা। পৃথার চোখের সামনে একসাথে কত ডায়েরির পাতা, ধরতে চেষ্টা করছে, পারছে না। দীপ্তিমা চিৎকার করে কাঁদছে, ও দেখেছে শ্রেয়ানকে খামটা সিল করতে। প্রবীর গুনে বলল বাষট্টিটা চিঠি। ডেট দেখে সাজালো, তারপর দেখল সবকটা চিঠি বাবাকে লেখা। পৃথা কিছু দেখতে পাচ্ছে না — সব কেমন ঝাপসা, শুধু একরাশ কাগজ ওর সামনে সাজানো। ওর কান্না পাচ্ছে না, দুঃখ হচ্ছে না, ভয় চিন্তা কিছুই না, নির্বিকার হয়ে বসে আছে। প্রবীর শেষ চিঠিটা পৃথার হাতে গুঁজে দিল, শেষ লাইনে লেখা 'মা আমাকে ছেড়ে দাও, দোহাই তোমার'। প্রবীর সবকটা চিঠি পড়েছিল, মায়ের কথা কোথাও এক লাইনও লেখেনি শ্রেয়ান।