মাথার পেছনে হাত রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে আধো অন্ধকারে। ঝিলমিল করা তারা-নক্ষত্রর মেলা। মনে হয়, এখানে আকাশটা কত বড়। আলসে শরীরটাকে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতেই সামনে দিগন্ত প্রসারিত সমুদ্র, দূরে জ্বলে উঠেছে টিনসেল টাউনের নীল নিয়নের আলোকরেখা। এ শহর মুম্বই, দেশের বাণিজ্য নগরীর তকমা ছাপিয়ে সে তো রূপোলি পর্দার এক রোম্যান্টিক পৃথিবী।
সিনেমা বড় খুঁটিনাটিময় খটমট ব্যাপার। পরিচালকের সীমাহীন কল্পনা তো কোনও বাধ মানে না! কিন্তু কিছু একটা ভাবা, তাকে সঠিকভাবে প্রকাশিত করা — রূপায়ন শিল্পের বিভিন্ন স্তরে নানান লোকের ভাবনাগুলো প্রবাহিত শাখা-নদীর মতো মূল স্রোতে মিশে যায়। আর যারা সামগ্রিকভাবে এই শিল্পের সাথে যুক্ত থেকে যায়, তাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ স্তরের ভাবনা-বিকাশকে সঙ্গী করেই তৈরী হয়ে যায় এক বিস্ময়কর উপস্থাপনা। ভালোবেসে লোকে তাকে নানান নামে ডাকে — বায়োস্কোপ, মুভি, সিনেমা, ছবি, ছায়াছবি, বই।
মুম্বই-প্রেমে পড়েন নি, অথচ সিনেমাকে ভালোবেসে ফেলেছেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। গুরু দত্তের CID ছবিতে ও. পি. নাইয়ার-এর সুরে মহঃ রফি ও গীতা দত্তের যুগল কন্ঠের গান — “ইয়ে হ্যায় মুম্বই মেরি জান”, বোম্বে শহরের প্রতি সিনেমা প্রেমের এক দুর্বার চিত্রপট।
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল যশ চোপড়া পরিচালিত ‘দিওয়ার’ ছবির একটি দৃশ্য, যেখানে ফ্রেমের অর্ধেকটা জুড়ে ছবির প্রোটাগনিস্ট জয় (অমিতাভ বচ্চন অভিনীত) আরব সাগরতীরের মুম্বই শহরের কোনও এক বহুতল বাড়ির কাচের জানলার আড়াল থেকে তার জীবন কাহিনী বিধৃত করছিল, ফ্রেমের আরেক পাশে ছোট্ট দুটি শিশুকে নিয়ে মাকে (নিরূপা রায় অভিনীত) দেখা গেল মেরিন ড্রাইভের পাশ দিয়ে নতুন জীবনের সন্ধানে হেঁটে যাচ্ছে। দৃশ্যটি খুবই মর্মস্পর্শী। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত মা ও তাঁর ছোট্ট পরিবার যন্ত্রণাক্লিষ্ট শরীরী-ভাষাকে সঙ্গে নিয়ে ধীরে ধীরে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সন্ধানে মুম্বইয়ের পিচঢালা রাস্তায় সীমাহীন পথ হাঁটছেন। অথচ দৃপ্ত। তৃপ্ত। শহরের প্রতি অনুরক্ত। যেন জানা ছিল, এ শহরেই লুকিয়ে থাকতে পারে নতুন জীবনের জিয়ন-কাঠি।
আসলে এই দৃশ্যটির রূপকার তো আর অভিনেতারা নন। সেলিম জাভেদ চিত্রনাট্য রচনা করেছেন তো আগেই। পরিচালকের মনে হয়েছিল — জীবনের সবচেয়ে বেশি হতাশাগ্রস্ত জীবনটাকে আবার রঙের টান দিতে পারে হয়তো এই শহর। সৃষ্টিশীলতার মূল পর্বে এই লড়াই, এই যন্ত্রণা তো সব শিল্পীদেরই মনের অন্তঃস্থলে নিঃশব্দ — সাগরীয় ঢেউ। সিনেমার অবগাহনে স্নান করতে গেলে হারিয়ে যাওয়া নাম না জানা অপ্রকাশিত শিল্পী-কলাকুশলীদের স্মৃতিহীন স্মৃতি। সেখানে মিশেল ক্যামেরার নাটবল্টু তৈরী করার দক্ষ কারিগর থেকে সিনে-ল্যাবরেটরীর প্রিন্টার, মুভিওলা সম্পাদনা মেশিনের ২৪-ফ্রেমিয় ঠিকঠাক sync-sound-এর যোগ্যতামান নির্ণায়ক কারিগর থেকে ছবির প্রথম প্রচার-সঙ্গী পোস্টার শিল্পীরা। কোনও সিনেমা পরিচালকরা কি বলতে পারবেন — এই সমস্ত সঠিক মানুষজনদের সন্ধানে তাঁরা কখনও গ্রান্ট রোড ঘোরেন নি? কলকাতার চাঁদনি চক বা ম্যাডান স্ট্রীট ঘোরেন নি?
তখন দেখি নি। কিন্তু পরে অনেকবার দেখেছি। আমার খুব প্রিয় ছবির একটা — বাসু চ্যাটার্জী পরিচালিত “ছোটি সি বাত”। পরিচালকের মুম্বই-রোম্যান্স ছবিটিকে নিঃসন্দেহে একটা অন্যমাত্রা দিয়েছিল। গ্ল্যামারহীন চরিত্রগুলোরও নিজস্ব পৃথিবীতে মুম্বই শহর ধরা দেয় এক এক ভাবে। চলতি পথের প্রেম কেমন ভাবে যেন মিশে যায় ভালোবাসার উপাখ্যানে। রোজের অফিস যাত্রার বাস স্টপ যেন হয়ে ওঠে তার প্রেক্ষাপট। ছবিটি ১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত। বাস স্টপেজের পেছনে একটা বড় হোর্ডিং — সেটা অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘জমীর’ ছবির। সুতরাং এক নিমেষেই আমরা ছবিটির রচনাকাল ধরে নিতে পারি। ‘জমীর’ — ১৯৭৫। অর্থাৎ, পরিচালক গল্পের সময়কাল বোঝানোর জন্য এই দৃশ্যটি সংযোজন করেছেন এক নতুন আঙ্গিকে।
স্কুল জীবনটা কখন যেন কেটে গেছিল সিনেমা না দেখে। শুধু পোস্টার দেখে। বাড়িতে অমৃত বাজার পত্রিকা রাখা হতো। দ্বিতীয় পাতায় থাকতো সিনেমার বিজ্ঞাপন — ছোট ছোট বক্স-ডিজাইনে সাদাতে কালোতে সিনেমার ব্লক, তাতে থাকতো নায়ক-নায়িকার নাম, আর অজস্র সিনেমা হলের নাম। আজ অনেক সিনেমা হল আর নেই। লোটাস, ক্রাউন, ম্যাজেস্টিক, গ্রেস, টকি শো হাউস--এমন সব সুন্দর নামের সিনেমা হলগুলো ছোটবেলার সাথে সাথে হারিয়েও গেছে। একটা স্ক্র্যাপবুক করেছিলাম। তাতে ঐ বিজ্ঞাপনগুলো কেটে কেটে লাগিয়ে রাখতাম। কে জানে, পরবর্তীকালের সিনেমা-প্রেমের বীজ বোনা তখন থেকেই শুরু হয়েছিল কিনা!
ভারতীয় সিনেমার পোস্টার শিল্প একটা ব্যতিক্রমী শিল্পমাধ্যম। দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রীট আর্টিস্ট ফ্যালকো বলিউডের পুরনো পোস্টার ম্যানের সন্ধানে মুম্বাই এসেছিলেন বছরখানেক আগে। গ্র্যান্ট রোড স্টেশানে নেমে জে. জে. হাসপাতালের গা ঘেঁষে রাস্তা বেশ ভেতরদিকে চলে গেছে। সেখানেই সন্ধান পেয়েছিলেন বলিউডের প্রাক্তনী পোস্টারম্যান আখতার শেখ-এর। ঘিঞ্জি গলি। শুকনো গরম মশলার গন্ধে বাতাস ম’ ম’ করছে। এদিককার স্থানীয় মানুষগুলো পুরনো শহরের বাসিন্দা, বড় দু:স্থ। তবু রঙীন। এমন বায়োস্কোপীয় সংস্কৃতি বাহকরা বোধহয় এমন পরিবেশেই নীরবে থেকে যান। কেন জানি না, আমাদের কলকাতার ম্যাডান স্ট্রীট বা চাঁদনীর মতো। পুরনো রেকর্ড-এর সন্ধান করতে গেলে মনে হয় চাঁদনীতে পাবো, গ্রামাফোনের পিন ঝুঁজতে গেলে মনে হয় চাঁদনীতে পাবো, আবার ১৬ মি. মি. প্রোজেক্টর খুঁজতে গেলেও মনে হয়, এখানেই যাই। যেখানে সিনেমা যুগের কারিগরেরা আন্তরিক ভালোবাসা নিয়ে পরম যত্নে গুছিয়ে রেখেছেন হারিয়ে যাওয়া অনেক কিছু। পোস্টারও।
মসজিদে প্রার্থনা সেরে আখতার বাড়ি ফিরে দেখে তারই সন্ধানে সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছেন ফ্যালকো। আনন্দের সেরা স্বীকৃতি তো অশ্রু। সেদিন আখতার ড্রয়ার খুলে দেখিয়েছিল তার আঁকা পোস্টার স্কেচ। আশা পারেখ, মধুবালা, দিলীপ কুমার। মুঘলে আজম, কাটি পতঙ্গ। আর বাড়ির বাইরে পাঁচিলের ওপর আখতার এঁকে রেখেছেন তার স্মৃতি। তিনটি শুধু হাতির ছবি। সাদা দেওয়ালে লাল কালিতে। আর পাশে হিন্দীতে লেখা — ‘মেরে সাথী’। মসজিদে তখন প্রার্থনা চলছে। আকাশের নীচে তারের জটলা। রঙীন রিক্সা। রঙীন রঙীন পৃথিবী। আর কত রঙীন স্বপ্ন দেখানো নীরবে থেকে যাওয়া সিনেমার অজস্র হারিয়ে যাওয়া মুখের সারি। ফ্যালকোর মনে হয়েছিল- এটাই জীবন। আর এটাই সিনেমা।
১৯৭০এর দশকে পুরোনো বোম্বের অলিতে গলিতে ছোট-বড় এমন বেশ কিছু পোস্টার স্টুডিও তৈরি হয়েছিল। এদের মধ্যে নাম করেছিল জলি আর্ট স্টুডিও, কালারাস, এম স্টুডিও--এসব। এই সব স্টুডিওর তখন রমরমা ব্যবসা অন্তত শ’দুয়েক শিল্পী নিয়োজিত ছিলেন সিনেমার পোস্টার-ব্যানার আঁকার কাজে। এই ছোট্ট ছোট্ট শিল্প-ঘরের মধ্যে থেকেই প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছিল আধুনিক ভারতীয় শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম — এম. এফ. হোসেন। মকবুল ফিদা হোসেন।
যদিও, ভারতে নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র দাদা সাহেব ফালকে নির্মিত ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ (১৯১১) ছবিটির কোনও পোস্টার পাওয়া যায় নি। পাওয়া যায় নি ১৯২৪ সালের আগে পর্যন্ত নির্মিত কোনও ভারতীয় সিনেমার পোস্টারও। ইদানীংকালে শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ — মুম্বইয়ে নির্মিত ‘National Museum of Indian Cinema’. ভারত সরকারের উদ্যোগে ভারতীয় ছবির এক অসাধারণ সংগ্রহশালা। তাতেও কিন্তু এই পোস্টারগুলোর কোনও সন্ধান মেলেনি। অর্থাৎ, আমরা কি এটা ধরে নিতে পারি, সেই সময়ের ভারতীয় ছবির কোনও পোস্টার নির্মিত হত না? ১৯২৪ সালে মধুরাও পেন্টার নির্মিত ‘কল্যাণ কাজিনা’ ছবিটির পোস্টার সবচেয়ে পুরোনো দেশী ছবির পোস্টার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাবুরাও নিজে একজন শিল্পী ছিলেন। তাই, তাঁর নিজের তৈরি সিনেমায় তাঁর আঁকা পোস্টার থাকবে না — তা কি করে হয়? ১৯৩১ সালে আর্দেশির ইরানি পরিচালিত ভারতীয় প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘আলম আরা’ ছবিটিরও পোস্টার পাওয়া যায় না। পরবর্তীকালে, ছবিটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুঝে ছবির প্রযোজক, পরিবেশকেরা দু একটি বিভিন্ন পোস্টার বানিয়েছিলেন। কিন্তু – সেটা আদিও না। অকৃত্রিমও না। অনেক পরে, কোনও একটা বিশেষ কাজে পুরনো হ্যান্ড মেড সিনেমা পোস্টার-এর প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। ম্যাডান স্ট্রীট আর চাঁদনী চক জেরবার করে বেশ কিছু বের করেছিলাম। কত রং! কত যত্ন! আর শিল্পীদের কত না কল্পনা!
এখন তো ডিজিট্যাল পোস্টার হয়। তাই, বৈচিত্র্যময়ও। অনেক চিত্তাকর্ষক। ছোট, ফ্রেমের মধ্যে ছবিটির সার্বিক মূল্যায়নের প্রতিচ্ছবির নানান কোলাজ অনায়াসে করে দেওয়া যায়। ইদানিংকালে পোস্টার ডিজাইন তো ডিজিট্যাল শিল্প। সঞ্জয় লীলা বনসালির ‘রামলীলা’ বা গুলশান কুমারের ‘এয়্যার লিফ্ট’-এর পোস্টারগুলোতে মুভমেন্টকে খুব সুন্দর ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। Space টাকে খুব কার্যকরী করে তোলা হয়েছে। বেশ চিত্তাকর্ষক। ভারতীয় সিনেমার পুরনো পোস্টার গুলোতে শিল্পীর তুলির টানে গল্পের উপস্থাপনা কিন্তু বেশ প্রাণবন্ত হয়ে উঠতো। সুন্দরী মধুবালাকে শিল্পী তাঁর রঙীন রেখায় আরো মোহময়তার সাথে উপস্থাপনা করতেন। পোস্টারের এই movement আগেও দেখেছি — তপন সিংহর ‘কাবুলীওয়ালা’। পোস্টারটির ফ্রেমও একটা শিল্প ছিল। ফোরগ্রাউন্ডে ডান ও বাঁ দিক ফিরে দুটো পাহাড়ের ব্লক। আর তার ফাঁক দিয়ে, আফগান পটভূমিকায় উটের সারি।
ভারতীয় পোস্টার শিল্পে বিপ্লব এনেছিলেন নি:সন্দেহে সত্যজিৎ রায়। ঐতিহ্যশালী অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশানের বর্তমান কর্ণধার প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক অঞ্জন বসু বলেছিলেন, ‘অপরাজিত’ ছবিটির প্রযোজনা-পরবর্তীকালে সত্যজিতবাবু প্রযোজক অজিত বসুকে বলেছিলেন, ছবিটির পোস্টার তিনি নিজেই করতে চান। বাধা দেন নি, প্রযোজক। তিনি জানতেন, সত্যজিৎই পারবেন। সত্যজিৎবাবুর ক্যালিগ্রাফিক sense এতটাই উচ্চমাত্রায় ছিল, পোস্টারগুলোতে লেখা ছবির নামগুলোর লেখনীর মধ্যে দিয়েই বেরিয়ে আসতো ছবিটির বিষয়বস্তু ও প্রেক্ষাপট। ‘দেবী’ ছবির পোস্টারটিতে মূখ্য চরিত্রের মুখাবয়বের লাইট আর শেড-এর প্রয়োগ চরিত্রের জীবনের প্রতিচ্ছবির বহি:প্রকাশ। অনেক পরে, হাল আমলে, বিধু বিনোদ চোপড়া প্রযোজিত ও বিজয় নাম্বিয়ার পরিচালিত অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘ওয়াজির’ ছবির পোস্টারটিতে এমন কোড-এর বিভিন্ন পার্সপেক্টিভ পাই। ছোট ছোট ব্লকে, অমিতাভর মুখাবয়বের ছোট ছোট ব্লক বিভাজনে বিভিন্ন শেড-এর তারতম্য। এই পোস্টারটি ডিজিট্যাল গ্র্যাফিক্স-এ হয়েছে, তাই এর বিস্তৃতি অনেক আধুনিকতার মনন পেয়েছে।
কানাডার টরেন্টো শহরের ‘হট ডক্স্’ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ORIGINAL COPY বলে একটি তথ্যচিত্র খুব আলোড়ন ফেলেছিল। জার্মান ছবি। নির্মাতাদ্বয় — পিতা-পুত্র। গিয়র্গ হাইনজেন ও ফ্লোরিয়ান হাইনজেন জিওব। মুম্বইয়ের ঐতিহাসিক ‘Alfred Talkies’ এর ওপর। গিয়র্গের কথায়, ২০১১ সালের কোনও এক বসন্ত-মধ্যাহ্নে তিনি যখন অ্যালফ্রেড টকিজ-এর ভেতর পা দিলেন, এক ভদ্রলোক তাঁকে একটি সিগারেট দিতে যাচ্ছিলেন। গিয়র্গ তা নেন নি। কারণ, অনেক আগেই সিগারেট ছেড়েছেন তিনি। কিন্তু যখন ভদ্রলোকের সাথে তাঁর স্টুডিওর ভেতর ঢুকলেন, হাঁ-করা পরিবেশে শত-আলোকিত জ্যোৎস্নায় সার সার রঙীন মধুবালা, ওয়াহিদা, দিলীপ কুমার, দেবানন্দেরা তখন রঙে-রেখায় উদ্ভাসিত, এক মোহময় স্বপ্ন বন্ধনে গিয়র্গের হাত অজান্তেই ভদ্রলোকের দিকে প্রসারিত হল। একটা সিগারেট। ভদ্রলোক পকেট থেকে প্যাকেট বের করে আনন্দের সাথে তাঁকে দিলেন। কারণ, তিনি তো তখন বুঝতে পারছেন – গিয়র্গের মনের অবস্থা! স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন শিল্পী ভদ্রলোক। সেই স্বপ্নে বিভোর হলেন গিয়র্গে। তথ্যচিত্র তৈরির মুখড়াটা তিনি পেয়েই গেলেন সেখানে। স্বপ্ন দেখানো শিল্পী মানুষটি আর কেউ নন, যার টানে আফ্রিকা থেকে ফ্যালকোও এসেছিলেন স্বপ্ন সঙ্গী হতে। শেখ রহমানের স্টুডিও এখনও এমন। সদা দীপ্তমান। রঙেতে রঙীন।
সিনেমা মানুষের জীবনে আড়ি পাতা ছোটবেলা থেকেই। সামনে ঘটে যাওয়া জীবনের নানান গতিপ্রকৃতির চলমান রূপটাই তো এক একটা সিনেমা! ছটফটে মনগুলোকে নাড়াচাড়া দেওয়ায় প্রথম দৃষ্টি — আমার মনে হয় — রাস্তায়, গলিতে, মোড়ে, দেওয়ালে টাঙানো, ঝোলানো বা সাঁটা সিনেমার রং-বেরং-এর নানান চিত্তাকর্ষক পোস্টার। সিনেমার সাথে মানুষকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেওয়া অনুঘটক।
(ক্রমশ)