• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭৫ | জুন ২০১৯ | গল্প
    Share
  • দুই বুড়োর আখ্যান : অতনু দে


    “মেয়েটা একদম গোল্লায় গেছে কিন্তু,” বললেন মানসবাবু। “আর সেটা হয়েছে সম্পূর্ণ আপনার আশকারাতে।”

    “আহা – আমি আবার কি করলাম! আর মেয়েটাই বা কি দোষ করলো?" একটু থতমত অসহায়তা মিশিয়ে বললেন প্রসূনবাবু। উনি সবসময় এটা থতমতময় অবস্থায়ই থাকেন। স্ত্রী মারা যাবার পর সেটা আরো বেড়েছে।

    “সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, একবার জিজ্ঞেস করবে তো চা বা কফির কথা! ছোটটি তো নেই, যথেষ্ট বড়ো হয়েছে – একটা কাণ্ডজ্ঞান হবে না?”

    “তাই তো। চা তো দেবার টাইম হয়ে গেল – তাই তো।”

    পৌলমি ট্রে হাতে ঘরে ঢুকল। তাতে শুধু চা নয়, শিঙাড়াও আছে। তাছাড়া মারি বিস্কিট।

    “এই নাও। চায়ের সঙ্গে শিঙাড়া। এক্ষুনি ভাজলাম – খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে।”

    “আরে তুই করেছিস - ভালোই হবে!” হাসি হাসি মুখে বললেন প্রসূনবাবু।

    “ডিপ-ফ্রায়েড জিনিস - রাজ্যের ট্রান্সফ্যাট” বলতে বলতে একটা শিঙাড়া তুলে নিয়ে তাতে কামড় বসালেন মানসবাবু। তারপর স্তব্ধতা আর মাঝেমাঝে হুসহাস। বেজায় গরম কিনা!

    আড্ডা চললো চা-শিঙাড়া সহযোগে। পৌলমি কিছুক্ষণ বাদে উঠে পড়লো। তার মেলা কাজ।

    বিকেলের আলো মরে এলো। মশার পিনপিন আর গলির ধারে ধারে আলো জ্বলে ওঠা। মানসবাবু উঠে পড়লেন।

    “আজ আসি, প্রসূনবাবু।”

    “আবার আসবেন শিগগিরি।”

    “এসে পড়বো। দুচার দিন বাদেই।”

    মানসবাবু দরজার কাছে এসে দেখলেন পৌলমি দাঁড়িয়ে আছে।

    “ভালো থাকিস রে। তোর শ্বশুরমশাইএর ঠিকমতো খেয়াল রাখিস। এখন তো তোর শাশুড়ি নেই, ওঁকে দেখাশোনা করাটা কিন্তু তোরই কর্তব্য।”

    “আমি কি দেখি না?”

    “তাই বললাম নাকি? তবে অতো শিঙাড়া খাওয়াস না – ডিপ ফ্রায়েড জিনিস তো সব।”

    “হ্যাঁ বাবা।”

    “আর এরকম শর্টস পরে বাড়িতে ঘুরিস কেন? ওঁর তো কিছু মনে হতে পারে। এখন বিয়ে হয়েছে, এগুলো একটু খেয়াল রাখবি তো! আশ্চর্য! আজ তোর মা থাকলে...”

    “কিচ্ছু বলতো না! আর আমার শ্বশুর অত্যন্ত লিবের‍্যাল – তোমার মতো খিটখিটে নয়।”

    “তবুও -”

    “এসো বাবা।”

    দরজাটা দিয়ে পৌলমি এসে প্রসূনবাবুর কাছে বসলো। “চা খাবে আরেক কাপ?”

    “দে, যদি উনুন খালি থাকে।”

    চায়ে চুমুক দিতে দিতে প্রসূনবাবু বললেন “আজ শিঙাড়াগুলো দারুণ হয়েছিলো রে। তোর বাবা বোধহয় চারটে কি পাঁচটা খেয়ে ফেললেন।”

    হাসলো পৌলমি।

    “বারণ করবি – এই বয়েসে এতো ভাজা জিনিস খাওয়া ঠিক নয়। এখন তো এক্কেবারে একলা কিনা – তুইও নেই। আর একটু খেয়াল রাখিস – উনি তোর এই শর্টস পরাটা পছন্দ করেন না। সেকেলে মানুষ তো – রাগ করেন। ওঁর সামনে নাই বা পরলি। অন্য সময় যত খুশী পরিস – কে দেখতে যাচ্ছে।”

    পৌলমি উঠে পড়লো।

    মেলাই কাজ তার। বসে বসে দুই বুড়োর ভ্যাজর ভ্যাজর শুনলে চলবে নাকি?

    ***


    (এই সংখ্যায় অতনু দে-র আরো দুটি গল্পঃ 'ঘুষ''অন্ধকারে')




    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ রাহুল মজুমদার
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments