• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭৬ | সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ছোটদের পরবাস | ভ্রমণকাহিনি, প্রকৃতি, বাকিসব
    Share
  • চীনে চারদিন : হৃদি কুন্ডু


    ১৬ই এপ্রিল, ২০১৯ আমরা বারোজন — দশজন ছাত্রী এবং দুজন শিক্ষিকা — নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস টার্মিনালে পৌঁছে গেলাম। সবার হাতে পাসপোর্ট এবং টিকিট। গন্তব্য — কুনমিং, চীন।

    তিন ঘন্টার ফ্লাইট শেষে যখন আমরা কুনমিঙে পৌঁছলাম তখন চীনে ভোর হয়ে গেছে। এয়ারপোর্ট থেকে তিন ঘণ্টার বাসজার্নি করে আমরা পৌঁছলাম চিংলাই স্কুলে। সেখানে চীনে ছেলেমেয়েরা গান গেয়ে আমাদের স্বাগত জানাল। তারপর যেসব ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে আমাদের থাকার কথা একে একে এগিয়ে এসে আমাদের সাথে কী এক দুর্বোধ্য চাইনিজে আলাপ করলো। আমি ও আমার বন্ধু তানিশা এগারো বছর বয়সের একটি মেয়ে ও তার দাদুদিদার সঙ্গে তাদের সাথে তাদের ঘরের দিকে রওনা দিলাম।

    ছোট সুন্দর সাজানো একটি ঘরে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। এই পরিবারটির সঙ্গেই আমরা চারদিন থাকব। ঘরে ঢুকে ফ্রেশ-ট্রেশ হয়ে আমরা নিচে খাবার খেতে গেলাম। চীনে খাবার — কি না কি হবে; বেশ ভয়েই ছিলাম আমরা। খাবার দিতে দেখলাম খাবার বাজে খেতে হওয়া তো দূরের কথা, সে খাবারে কোন স্বাদই নেই। সেদ্ধ-সেদ্ধ মাংস, কুমড়ো — না আছে কোন নুন, না কোন মশলা। একমাত্র চেনা খাবার ছিল ফ্রায়েড রাইস, তাই কোনরকমে হাসি-হাসি কাঁদো-কাঁদো মুখ করে খেয়ে নিলাম।





    বিকেলে কাছাকাছি একটু কেনাকাটা করে আমরা ঘরে ফিরে এলাম। ততক্ষণে রাত নটা বেজে গিয়েছে। রাতে ডিনার বলতে শুধু একটি করে কমলালেবু ছাড়া তারা কেউ কিছু খেল না। এদিকে সারাদিন ওই একটু ভাত আর কমলালেবু খেয়ে যে আমাদের পেট ভরেনি তা আর কি করে বলি? তাই রুমে ঢুকেই তানিশা এবং আমি আমাদের মায়েদের পাঠানো একগাদা মাফিন, ভুজিয়া, চিপস ইত্যাদি খুলে বসে পড়লাম। গভীর রাত অবধি সেইসব খাবার-দাবার খেতে-খেতে আড্ডা মেরে পরদিন ভোর সাড়ে-ছটার জন্য অ্যালার্ম দিয়ে শুয়ে পড়লাম।

    পরের দিন ভোরবেলা আমরা চিংলাই স্কুলে পৌঁছে গেলাম। সেখানে জলখাবার খেয়ে আমরা ইস্কুলটা ঘুরতে বেরলাম।

    চিংলাই স্কুলটা বিশাল বড়। চারদিকে গাছপালা, দুটো বড় বড় পুকুর, একটা কালো রাজহাঁসও দেখলাম।

    হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দেখা ইন্টারন্যাশনাল ডিপার্টমেন্টের কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে। ইংলিশ তারা খুব একটা বোঝেনা। আর তাদের চীনে ভাষা তো আমরা বিন্দুমাত্রও বুঝি না। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল আমরা সবাই ওই ভাঙা-ভাঙা ইংরেজিতেই নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছি। আমাদের প্রথম ক্লাস ছিল মাটি দিয়ে কাপ বানানো। আমাদের বিদেশি বন্ধুদের সাহায্যে আমরা সুন্দর সুন্দর কিছু মাটির কাপ বানিয়ে ফেললাম।





    পরের ক্লাস ছিল চাইনিজ ক্যালিগ্রাফি। নিজেদের নাম আমরা সবাই চাইনিজে লিখতে শিখে গেলাম। এরপর আরও নানা ক্লাস করে সেদিনের মতো স্কুল থেকে ফিরে এলাম আমরা।

    বিকেলবেলা আমরা খাওয়াদাওয়া করে নানারকমের স্যুভেনির ইত্যাদি কিনে বাড়ি ফিরে এলাম।

    পরের দিন আমরা স্কুলে চীনা দেওয়ালচিত্র ও ওখানকার স্থানীয় নাচ শিখলাম। আমাদের নতুন বন্ধুদের সাথে আমাদের দিব্যি ভাব হয়ে গিয়েছিল।

    তৃতীয় দিন আমরা ও চীনা ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের নিজেদের দেশের সংস্কৃতিকে একটি অনুষ্ঠান-এর মাধ্যমে তুলে ধরলাম। আমাদের নিজেদের দেশের কৃষ্টি ছাড়াও অন্যান্য দেশের সংস্কৃতি কতটা অন্যরকম অথচ সুন্দর হতে পারে তা আমরা এই প্রথমবার বুঝতে পারলাম।

    শেষ দিন ছিলো ঘোরাঘুরি। কুনমিং-এর নানা দর্শনীয় স্থান আমরা ঘুরলাম। বেশ কিছু উপজাতিদের গ্রামগুলিও ঘুরে দেখলাম। গোটা দিনটা হাসিঠাট্টার মধ্যে দিয়ে যে কোথায় কেটে গেল তা বুঝতেই পারলাম না।

    রাত এগারোটার যখন আমাদের প্লেন কলকাতার দিকে যাত্রা শুরু করলো, আমরা মনে মনে আমাদের সব চীনা বন্ধুদের বিদায় জানালাম, কারণ একটি কথা ততক্ষণে আমরা সবাই বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম — দেশ যাই হোক, হোক আলাদা ভাষা, দেখতেও আলাদা হতে পারি; কিন্তু মনেপ্রাণে আমরা সবাই এক। সবাই একই জগতের বাসিন্দা।






    ছবি - লেখক




    হৃদি কুন্ডু কলকাতায় থাকে। হ্যারি পটার আর গণ্ডালুর ভক্ত। ভবিষ্যতে লাইব্রেরিয়ান হবে বলে ঠিক ছিল (তাতে নাকি গল্পের বই পড়ার খুব সুবিধে হবে), এখন একটু দোটানায় আছে কারণ মনে হচ্ছে গাড়ি করে আইসক্রিম বিক্রি করাটাও মন্দ নয়।

    হৃদির আর এক শখ ডিজাইন করা। এদিক-ওদিক থেকে হৃদি শোনে যে বাঙালিদের নাকি 'ডিজাইন'-বোধটা একটু কম। তার একটা বিহিত করার জন্যেই খাতার পাতায় হৃদি কিছু ডিজাইন করেছে। আপাতত শুধু পোশাকের। আপনারাও দেখতে পারেন চাইলে।

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)