“এটা নিয়ে কী হবে আবার? একরাশ খরচা করলি শুধু শুধু…”
“মোটেই শুধু শুধু নয়। অনেক কাজে লাগবে। আমাদের সঙ্গে ভিডিও কলিং করতে পারবে। তাছাড়া ফেসবুক, হোয়াটস-অ্যাপ – তোমার বন্ধুদের সঙ্গে, দেখবে, নতুন করে যোগাযোগ হচ্ছে, আড্ডা হচ্ছে।”
“তুই-ও না…তুই কি ভাবিস আমার বন্ধুরা এসব ব্যবহার করে?”
“বাবা – ইউ উইল বি সারপ্রাইজড! তোমার বন্ধুদের অনেকেই বেশ টেকস্যাভি। ওই তো সমীরকাকু – যিনি এসেছিলেন কাল – তার হাতে তো একটা সামসুং এস সিরিজের ফোন ছিল। মাঝে মাঝেই তো উনি তাতে খুটখাট করছিলেন। নির্ঘাত উনি ফেসবুকে আছেন – দেখে নিও তুমি!”
“হুম – সমীর কী সব করছিলো বটে ফোন…”
কথা হচ্ছিল দেবরাজবাবু এবং তাঁর ছেলে দীপ্তর মধ্যে।
দীপ্তর এবার বম্বে ফিরে যাবার সময় হয়েছে। মা চলে যাবার পর প্রায় তিনমাস ধরে সে এখানে রয়েছে। কী আর করা যাবে, বাবা তো কিছুতেই বম্বে যেতে রাজি হলেন না। সাময়িকভাবে প্রথম মাসকয়েকের জন্যেও নয়। অগত্যা দীপ্ত নিজেই অফিসের বস এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলে নিজের জন্যে ওয়ারকিং-ফ্রম-হোম এবং সপ্তাহে দুদিন ওদের অফিসের কলকাতা ব্রাঞ্চে রিপোর্টিং – এরকম ব্যবস্থা করে কলকাতাতেই থেকে গিয়েছিল। কিন্তু এভাবে বেশীদিন চালানো সম্ভব নয়, আর সম্ভব হলেও ঠিক নয়। এই ধরনের ফেভার কর্পোরেট জগতে খুব ভালো চোখে দেখা নয় না। তাছাড়া অনন্যা – মানে দীপ্তর স্ত্রীর দিক থেকেও চাপ আসছে অনবরত। আর মিষ্টুনিকে না দেখে দীপ্তও আর থাকতে পারছে না।
যাবার আগে সব গুছিয়ে দিয়ে যাচ্ছে দীপ্ত। কাজের লোক এবং রান্নার মাসী পুরনো, কাজেই সেদিক থেকে বেশি কিছু করতে হয় নি। দীপ্ত ওদের ফোন নম্বরগুলো নিয়ে রেখেছে – ফোন করে বাবার খোঁজ নেওয়া যাবে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নাম পাল্টানো, নমিনি পাল্টানো সব হয়ে নেটব্যাংকিং চালু করিয়ে নিয়েছে দীপ্ত। যদিও লাগবে না হয়তো – বাবা এদ্দিন তো বেশ অ্যাকটিভ ছিলেন, ব্যাঙ্কের কাজ নিজেই সামলাতেন। তবে বলা যায় না। সত্তর বছর বয়েসে স্ত্রী-বিয়োগ তো সহজ শোক নয়।
এসব গোছগাছের শেষ কাজ হচ্ছে বাবাকে স্মার্টফোনে অভ্যস্ত করে তোলা। খুব দামি কিছু কেনেনি দীপ্ত – মাঝারি মানের এবং দামের, তবে এটার স্ক্রিনটা বড়। এটাতে বাবা অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারলে সত্যিই বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটা সহজ হয়ে যাবে। কয়েকবছর আগে কিনে দেওয়া কম্পিউটারে বাবা স্বচ্ছন্দ নন – কাজেই তাতে চ্যাট করা ঠিক সম্ভব হয় না, ই-মেলও বাবা খোলেন না সময়মত।
খুব বেশি বাধা পেতে হল না। প্রথমে “না, না” করলেও পরে দেবরাজবাবু বেশ উৎসাহিত হয়ে উঠলেন। টাচ ব্যাপারটা নিয়ে একটু সমস্যা হলেও, মোটের ওপর সামলাতে পারবেন বলেই মনে হল দীপ্তর। অনেকটা নিশ্চিন্ত মনেই বম্বের প্লেনে চড়লো সে।
***
“ও আচ্ছা – মোবাইল ডাটাটা অন রাখতে হবে, তাই তো?” বললেন দেবরাজবাবু। “বুঝেছি – ওকে, ওকে। আচ্ছা – ঠিক আছে। হ্যাঁ, হ্যাঁ – সব ঠিক। তোরা ভালো তো ?”
ফোনটা রেখে দিয়ে অনন্যার দিকে তাকিয়ে দীপ্ত বলল “বাবা কিন্তু ভালোই ব্যবহার করছে ফোনটা।”
“তোমার চেয়ে অনেক বেশি”, একটু মুখ টিপে বলল অনন্যা।
“তাই নাকি?”
“হ্যাঁ মশাই। বাবা ফেসবুকে দারুণ অ্যাকটিভ। তাছাড়া হোয়াটস-অ্যাপ এও। আমার সঙ্গে তো হোয়াটস-অ্যাপ এই চ্যাট হয়। বাবা তো দেখি চ্যাট-এই বেশি স্বচ্ছন্দ।”
কথাগুলো সত্যি। দেবরাজবাবু ফেসবুকে এবং হোয়াটস-অ্যাপএ সত্যিই বেশ অ্যাকটিভ। পুরনো বন্ধু ছাড়াও বেশ অনেক নতুন বন্ধু হয়েছে। হোয়াটস-অ্যাপ এও অনেক গ্রুপে আছেন তিনি। ভালো লাগে বেশ।
সত্যি বেশ ভালো লাগে দেবরাজবাবুর। স্কুলে-কলেজে, চাকরিজীবনে, বিয়ের পরে – কোন সময়েই তিনি খুব একটা মিশুকে ছিলেন না। মানে উনি মিশতে চাইতেন, লোকেদের মিশতে ভালো লাগতো, কিন্তু কেন যেন ঠিক জমতো না। কিছুদিন পরে এই বন্ধুরা কেমন যেন দূরে সরে যেতো। স্কুলের বন্ধু, কলেজের বন্ধু, কাজিনরা, শালারা বা শালী, সকলেই।
প্রথম দিকে একটু মন খারাপ হত ওঁর। পরে ব্যাপারটা গা-সওয়া হয়ে গিয়েছিলো। কিছুটা চিন্তা করে উনি বুঝতে পেরেছিলেন যে আসলে জনপ্রিয় হবার সেরকম কোন গুণ ওঁর নেই। সেরকম নায়কোচিত চেহারা নয়, গান-বাজনা কিছু করতে পারেন না, কথাবার্তাতে তেমন তুখোড়ও নন। মানে যে কোন আড্ডা যারা জমিয়ে দিতে পারে, উনি তাদের দলে নন একেবারেই। সব আড্ডাতেই উনি আদতে শ্রোতা। শুধু শ্রোতাই নন – ম্যাদামারা শ্রোতা। কোন ব্যাপারেই ঠিক জোরালো মত প্রকাশ করে উঠতে পারেন না। তাই ওঁর থাকা-না থাকাটা কেউ খেয়ালই করে না সে অর্থে।
এই তো – বছর চারেক আগের কথা। বউয়ের সঙ্গে টিভির সামনে সিনেমা দেখতে বসেছেন। “ঝিন্দের বন্দী”। পুরনো ছবি, আগে দেখা। বউ আবার সৌমিত্রের অন্ধ ভক্ত, কাজেই ময়ূরবাহনের অভিনয়ে একেবারে মুগ্ধ। দেবরাজবাবু মিনমিন করে শুধু বললেন যে ময়ূরবাহনের রোলটা “অথর-ব্যাকড” এবং ময়ূরবাহনকে ঠিক অথেন্টিক খলনায়ক মনে হচ্ছে না। ব্যাস, ময়ূরী – মানে দেবরাজবাবুর স্ত্রী একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। সৌমিত্র যে উত্তমকুমারের থেকে কতো ভালো; সত্যজিত রায় এইজন্যেই তো উত্তমকুমারকে নেন নি ওই দুটি বাদে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। দেবরাজবাবু একটু বাদেই চুপ করে গেলেন – সৌমিত্রকে ভালো প্রমাণ করতে হলে উত্তমকুমারকে খারাপ বলতেই হবে, এটা ওঁর ঠিক রুচিশীল তর্ক মনে হল না। তাছাড়া ওঁর আবার চট করে সব সিনেমার নাম মনে পড়ে না। তাই উত্তমকুমারের শ্রেষ্ঠ কয়েকটি ছবির নামও তিনি বলতে পারেন নি। ফলে তর্কযুদ্ধে তিনি হেরে ভুত। কিন্তু শুতে যাবার আগে ময়ূরী বললেন “জানো তো, তোমার সঙ্গে ঝগড়া করে সুখ নেই। কিছুতেই তোমার উৎসাহ নেই – কেমন ম্যাড়ম্যাড়েভাবে তর্ক করো। ধুর!” দেবরাজবাবু একটা খিন্ন হাসি হেসেছিলেন শুনে। অভিযোগটা পুরনো, এবং এতটাই সত্য, যে সত্যিই এ নিয়ে কিছু বলে লাভ নেই।
এই বোকা, মুখচোরা দেবরাজবাবু কিন্তু নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন এই ফেসবুক-হোয়াটস-অ্যাপএর জগতে। এখানে তিনি আছেন স্ক্রিনের আড়ালে – ওঁর বোকা বোকা মুখটা কাউকে দেখতে হয় না। কেউ কিছু লিখলে বেশ ভেবেচিন্তে উত্তর দেবার সময় থাকে ; বেশ সুন্দর সাজিয়ে, গুছিয়ে-গাছিয়ে উত্তর দেওয়া চলে। দরকার পড়লে গুগল করে এদিক ওদিক তথ্য তুলে নিয়ে এসে দিব্যি মন্তব্য করা চলে। মুখচোরা আনস্মার্ট দেবরাজবাবু তাই ফেবু-হোয়াতে হয়ে উঠেছেন ঝকঝকে, স্মার্ট, প্রতিভ, বলিয়ে-কইয়ে, বুদ্ধিদীপ্ত। ঠিক যেরকমটা হতে চেয়েছেন চিরকাল।
***
টুং করে একটা নোটিফিকেশন এলো। “কে আবার মেসেজ করলো” ভাবতে ভাবতে মোবাইলটা তুলে দেখলেন তুলিকার মেসেজ। অবশ্য অবাক হবার কিছু নেই – এটাই স্বাভাবিক। এই ক’মাসে দেবরাজবাবুর সঙ্গে ওঁর আলাপটাই বেশি। ফেসবুকে যিনি “হলুদ বসন্ত”।
আলাপ হয়েছিল একটা বইয়ের গ্রুপে। তারপর ফ্রেন্ডস রিকোয়েস্ট। তারপর টুকটাক গল্পগাছা। তারপর হোয়াটস-অ্যাপএর নম্বর বিনিময়। তারপর…
তারপর কিছু না। মেসেজ বিনিময় হয় নিয়মিত। তাতে নানান কথা হয়। নানা রকম।
আজকের মেসেজে একটা ছবি পাঠিয়েছেন তুলিকা। সঙ্গে একলাইন। “এর গন্ধ কতদিন শুঁকে দেখেন নি, সেকথা ভেবে দেখেছেন ?”
দেবরাজবাবু একটু ভাবলেন। ছবির ফুলটা চেনা, নাম মনে পড়ছে না। লিখলেন “ফুলের নাম মনে রাখি না আমি – তার রূপ-গন্ধ উপভোগ করি।” লিখেই তারপর মনে হলো – বাজে কথা। সত্যিই কি উপভোগ করেন? মনে থাকে গন্ধটা? ওই তখনকার মতো একটু ভালো লাগে, ওই অব্দি।
ভাবতে ভাবতেই তুলিকার মেসেজ এলো “মানে নামটা জানেন না তো?” সঙ্গে একটা স্মাইলি।
লজ্জা পেলেন দেবরাজবাবু। টাইপ করলেন “না, সত্যিই চিন্তে পারছি না। কী ফুল এটা?”
“দেবেন্দ্রনাথ যে গাছের তলায় বসে শান্তিনিকেতনে বাড়ি বানাবেন ভেবেছিলেন।” মেসেজটা এলো প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।
গুগল করে খুঁজতে একটু সময় লাগলো দেবরাজবাবুর। উত্তরটা দেখে একটু লজ্জা করলো। স্কুলে থাকতে পড়েছিলেন এটার নাম।
উত্তর দেবার আগেই পরের মেসেজটা চলে এলো “গুগলকাকা কী বললো?”
একটা স্মাইলি দিলেন দেবরাজবাবু। তারপর টাইপ করলেন “পেয়েছি।”
“এবার নিচে নেমে খুঁজুন তো গাছটাকে। আপনাদের কমপ্লেক্সের মধ্যে আছে নিশ্চয়ই। নইলে বাইরে থাকবে। খুঁজুন। খুঁজে গন্ধটা পাঠান তো!”
“এখন বেরবো?” লিখলেন দেবরাজবাবু। “এখন তো চান করতে যাব।”
“চান করার আবার টাইম কিসের? যান, নিচে গিয়ে ফুলটা খুঁজে আসুন।”
দোনোমোনো করতে করতে গেঞ্জির ওপর একটা পাঞ্জাবি চাপিয়ে নিচে গেলেন দেবরাজবাবু। সিকিউরিটি গার্ডকে ছাতিম ফুল জিগ্যেস করাতে সে হাঁ করে রইলো। শেষে পাশের বাড়ির ভট্টাচার্যদা দেখিয়ে দিলেন গাছটা। অবশ্য একটা “তোমার-তো-এসবে-ইন্টারেস্ট-আছে-বলে-জানতাম-না” দৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে এবং তাকে আপাদমস্তক মাপার পর। গাছটা অনেকক্ষণ ঘুরে ঘুরে দেখে তারপর বাড়ি এসে উত্তর দিলেন “দেখে এলাম এই মাত্র।”
ছায়ামূর্তি উত্তর দিল না।
***
রাতে মেসেজ করলেন দেবরাজবাবু “ছাতিম ফুলের ছবি পাঠালাম তো।”
“গন্ধটা আর পাঠালেন কই?” মেসেজ এলো অমনি। তারপর এলো একটা গানের লিঙ্ক - “লিখন তোমার ধুলায় হয়েছে ধুলি”। সুচিত্রা মিত্রের কণ্ঠে।
দেবরাজবাবু শুনলেন। অনেকদিন বাদে শুনে বেশ লাগলো। “কি সুন্দর!” লিখে মেসেজ করলেন।
উত্তরে আরেকটা গানের লিঙ্ক এলো। একই গান। এবার বিক্রম সিংহের গলায়। সেটাও শুনে ফেললেন দেবরাজবাবু।
“কোনটা বেশি ভালো?” তুলিকা প্রশ্ন করলেন।
এই রে! আবার সেই সব প্রতিযোগিতা! দেবরাজবাবু আবার এসব ভালো বোঝেন না। মিনমিন করে লিখলেন “আমার তো দুটোই ভালো লাগলো।”
উলটোদিক থেকে এলো একটা হাসির ইমোজি। তারপর তুলিকার মেসেজ “গানদুটো আবার শুনুন। এবার সামনে গীতবিতান খুলে রেখে। তারপর কালকে বলবেন কোনটা বেশি ভালো লাগলো আপনার। গুড নাইট।”
সেই রাতে শুতে একটু দেরি হয়ে গেল দেবরাজবাবুর।
***
পরদিন সকালে দেবরাজবাবু গুছিয়ে টাইপ করছেন এমন সময় মেসেজ এলো “আজ সকালে কী খেলেন?”
“কাজের মেয়েটা লুচি করেছিল আজ। অনিয়ম যদিও।”
“লুচিতে কালো জিরে ছিল? সঙ্গে কি সাদা তরকারি?” প্রশ্ন এলো ওদিক থেকে।
দেবরাজবাবু খেয়াল করেন নি। একটু চিন্তিতভাবে বললেন “তা তো মনে নেই। ছিল কি?”
“পরেরবার বলবেন সঙ্গে হলুদছাড়া তরকারি করতে। তার ঝোলটা হবে পাতলা। আর শেষ লুচিটা খাবেন একটা দরবেশের লাড্ডু দিয়ে। গান শুনলেন?”
হাঁপ ছেড়ে দেবরাজবাবু নিজের জবাবটা লিখলেন। এটা আগেই ভাবা ছিল। “আমার সুচিত্রা মিত্রের গাওয়া গানটা বেশি ভালো লেগেছে। বিক্রম সিংহের গানটা খুব ভালো গেয়েছেন – কিন্তু মনে হয়েছে নিজেকে একেবারে টুকরো টুকরো করে ফেলছেন। সুচিত্রা মিত্র যেন তীব্র শোকেও নিজেকে সম্পূর্ণ মিশিয়ে দেন নি।”
“বাঃ। সুন্দর বললেন তো! আমি এভাবে ভাবি নি।”
“আপনি তাহলে…”
চলতে থাকলো কথোপকথন।
***
“সিনেমা দেখেছেন? একটা নতুন সিনেমা এসেছে।”
“কী সিনেমা?”
“অনুষ্কা শর্মার সিনেমা। দেখে আসুন। দিব্যি। ওর এনএইচ টেন-ও আমার বেশ ভালো লেগেছিল। আর আপনার তো বেশিই ভালো লাগা উচিৎ - অনুষ্কা তো বেশ সেক্সি।”
নেহাত হোয়াটস-অ্যাপএ “অ্যাঁ” বলা যায় না (মানে যায়, কিন্তু সেটা ভেবে চিন্তে বলা “অ্যাঁ”, স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলা নয়), তাই দেবরাজবাবু কিছু বলতে পারলেন না। তবে থুম মেরে থাকলেন। থাকতে থাকতেই পরের মেসেজটা এসে গেল
“জ্ঞান ফিরেছে? তাহলে টিকিটটা কাটুন। বুক-মাই-শো আছে তো?”
“করছি” লিখে দেবরাজবাবু টিকিট কাটতে লাগলেন। অমনি মেসেজ এলো
“জিগ্যেস করলেন না তো আমিও যাব কিনা?”
দেবরাজবাবুর জিভটা শুকিয়ে গেল। ভয়ে ভয়ে টাইপ করলেন “আপনি তো দেখেই ফেলেছেন বললেন, তাই বলি নি। যাবেন? “
“থাক। টিকিটটা কাটুন।”
***
“পার্কস্ট্রিটে মামাগাতোর নতুন রেস্তোরায় খেয়ে আসুন।”
“সে আবার কি?” জিগ্যেস করলেন দেবরাজবাবু।
“সাউথ এশিয়ান খাবার। মুলত চিনে, তবে কিছুটা ফিউশন। খেয়ে দেখুন। একটা ডিশ আছে – নাম সম্ভবত ব্যাংকক বোল বা ওইরকম কিছু। খেয়ে দেখুন।
***
কোনদিন জানবাজারের রানী রাসমনীর বাড়ি দেখতে গেছেন?
***
এবারের দেশের সুবিমলবাবুর লেখা উপন্যাসটা পড়লেন?
***
আজকে টিভিতে একটা ডিবেট আছে – সন্ধ্যে সাতটায় দেখবেন তো?
***
লোকে যাই বলুক, স্মরণজিতের লেখা কিন্তু আমার ভালই লাগে।”
***
“আচ্ছা – একবার একসঙ্গে কফি খেলে হয় না?” লিখলেন দেবরাজবাবু।
উত্তরটা একটু দেরিতে এলো। “বাব্বা – আপনার তো সাহস খুব!”
দেবরাজবাবু গুটিয়ে গেলেন। “আপনি কিছু মনে করলেন না তো?”
“ধুর বাবা। এক মহিলাকে প্রথমবার ডেট করতে ডাকছেন, আর এতো ভয় পেলে চলে?”
“ওরে বাবা – ডেট!”
“নয়তো কী?” তুলিকার মেসেজ এল। “ভয়টা কাকে আপনার এখন?”
“ভয় তো আপনাকেই!”
“অতো ভয়াবহ নই মশাই।”
***
ব্যারিস্তার কফিশপটা বেশ বড়ো। দুটো কাঁচের দরজা – সামনেরটা একটা বড় রাস্তায় পড়ে, পেছনেরটা একটা সরু গলিতে। দেবরাজবাবু ওই পেছনের কাঁচের দরজাটার সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন প্রায় দশ মিনিট ধরে। কাঁচের মধ্যে দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দোকানের সবাইকে। কফি মেশিনের সামনে থাকা ইউনিফরম পরা ছেলেগুলোকে, কেবিল মুছে দেবার ছেলেটাকে, কফি খেতে আসা লোকেদেরকে। দেখতে পাচ্ছেন তুলিকাকে। পাশ থেকে দেখা যাচ্ছে ওকে – প্রোফাইলটা। মেনুটা দেখছে মন দিয়ে – ওর চশমায় আলো ঠিকরোচ্ছে।
দেবরাজবাবু আস্তে আস্তে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলেন। কফির তীব্র মাদক গন্ধটা ধাক্কা মারল তক্ষুনি। একটু সামলে নিয়ে ঠিক দরজার পাশেই একটা দুজনের টেবিল আছে, সেটাতে বসে পড়লেন। খুব আস্তে আস্তে। তুলিকা যেন দেখতে না পায়! তারপর মোবাইলটা বের করলেন।
টুং করে তুলিকার ফোনে একটা মেসেজ এলো। “আচ্ছা – আমরা যদি দুজনে দুটো টেবিলে বসি? দূরে দূরে? আর দূর থেকে মেসেজ করতে থাকি?”
তুলিকা চোখ তুলে তাকালো। একটু এদিক-ওদিক তাকিয়ে খুঁজে নিল ওই দুরের টেবিলের লোকটাকে। একটা আলো-ঝলমল হাসি খেলে গেল লিপস্টিকের কোলে।
টুং করে পাল্টা মেসেজ গেল। “মন্দ কি?”