১৫ অক্টোবর ২০১৯
বিকেল ৪টে— আমি আর ঝুমুরকাকু চলেছি ABC—র উদ্দেশে। আমি ৩৬ বছর পর আবার; ঝুমুরকাকুর প্রথমবার। অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প বা অন্নপূর্ণা স্যাংচুয়ারি পশ্চিম নেপালে ৪১৩০ মি. উঁচুতে এক স্বর্গরাজ্য। আপাতত মিথিলা এক্সপ্রেস আমাদের রক্সৌল পৌঁছে দেওয়ার কড়ারে গা ঝাড়া দিয়েছে।
১৬ অক্টোবর
সকাল ৯.১৫ — ভারতীয় রেলের ঐতিহ্য বজায় রেখে খানিক দেরি করে মিথিলা এক্সপ্রেস আমাদের রক্সৌল এনে ফেলল।
সকাল ৯.৩৫ — বীরগঞ্জ যাবার উদ্দেশ্যে বীরদর্পে দুজনে মালপত্রসহ এক রিকশাবাহকের ঘাড়ে চাপলাম।
সকাল ১০.১৫ — অনেকখানি যাচ্ছেতাই রাস্তা পার করে রিকশাবাহক আমাদের এক এজেন্সির কাছে এনে পোখরার বাসের টিকিট আর টাকা বদলের ব্যবস্থা করল (ভারতীয় ১০০টাকা = নেপালী ১৬০ রুপিয়া), তারপর বাসের দোরগোড়ায় এনে নামিয়ে দিল। রোদ্দুর এখন ধমকাবে কিনা ভাবছে।
সকাল ১০.৪০ — বাসের গতর নড়ল।
সকাল ১১.৪০ — সিমরা। একটা সিম ঢোকাবার জায়গা নেই, তবু লোক দিয়ে লঙ্কাঠাসা চলছে।
দুপুর ১২.২২ — আধঘন্টা হলো, ন যযৌ ন তস্থৌ — সামনে কোথাও তেলের ট্যাঙ্কার গড়াগড়ি খাচ্ছে পথের ওপর।
দুপুর ১২.৪৫ — অবশেষে ট্যাঙ্কার বাবাজীবনকে পথের ধারে বিশ্রাম করতে রাজি করানো গেছে।
দুপুর ১.২০ — হেটোড়া চেক পোস্ট।
দুপুর ১.৪০ — হেটোড়া বাসস্ট্যান্ড। কলা আর ডিম দিয়ে ঝিম ধরা শরীরটাকে খানিক চাঙ্গা করা গেল।
বেলা ২.১৫ — মুংলিং বাজারে বাস সেমি-বিশ্রামে।
বেলা ২.৩২ — আবার চলন্তিকা।
বিকেল ৪.৪৫ — সেলরুটি (ডোনাটের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা বিচিত্র নয়) চা দিয়ে ‘লাঞ্চ’।
সন্ধ্যা ৭.৪৫— শেষমেশ পোখরা।
ট্যাক্সি ধরে সানন্দে Hotel Be Happy-র ৫নং ঘরপ্রবেশ।
রাত ৯.২০— ডিনারান্তে বিছানায় গাত্রক্ষেপণ।
১৭ অক্টোবর
সকাল ৬টা— আমি উঠলেও পোখরা এখনও নিদ্রামগ্ন।
সকাল ৭টা— লেকের ধারের পরিচিত চায়ের দোকানে মর্নিং-টী।
সকাল ১০.০০টা— ACAP-র অফিসে সদুদ্দেশ্যে — ট্রেকিং এবং কনজারভেশন এরিয়া পারমিট সংগ্রহ।
সকাল ১০.৫০— নতুন নিয়মমাফিক ট্রেকারদের মেডিক্যাল ইনশিওরেন্স করতে খুঁজে খুঁজে শিখর ইনশিওরেন্সের দপ্তরে। দু সপ্তাহের জন্য মাথাপিছু ১০২০ (NC) টাকা দিয়ে লাখ টাকার বীমা করা গেল।
দুপুর ১.২০— অবশেষে অনুমতিপত্র জুটল।
দুপুর ২.১৫— হোটেলে ফেরৎ। আগামীকাল ঘানদ্রুং-এর বাস ধরতে বাগলুং ‘বাসপাক’-এ ঢুকতে হবে ৭টার মধ্যে।
১৮ অক্টোবর
সকাল ৭.০৫— বাসারূঢ় হয়ে আসীন হওয়া গেল।
সকাল ৭.৩৮— বাসযাত্রার শুভারম্ভ।
সকাল ৭.৪৫— পার হওয়া হলো ইয়ামদিখোলাকে।
সকাল ৭.৪৯— ১৯৮৩-তে যে ছোট্ট গ্রামটাকে হ্যয়াংজা বলে চিনেছিলাম, আজ সে ‘প্রায় শহর’ হেমজা।
সকাল ৮.০১— ম্য়াগদী চৌক।
সকাল ৮.০৬— সুইখেত। ধানের ক্ষেতের বিস্তার আজও আছে, কিন্তু কুঁড়েঘরগুলো সব দোতলা তিনতলা পাকাবাড়ি হয়ে বসে আছে — তাদের পরিবারও আড়েবহরে বেড়েছে।
সকাল ৮.২৭— ঘট্টেখোলা পেরোলাম, ঘটল না কিছুই।
সকাল ৮.৩৫— নউদাঁড়ায় দাঁড়ালো না বাস।
সকাল ৮.৫২— ছোট্টগ্রাম কাঁড়ে এখন পাকা বাড়িঘরের দৌলতে দিব্যি নজর কাড়ে।
সকাল ৯টা— লুমলে-ও দেখলুম শহুরে সাজ পরেছে। তার মান রাখতে চা-পান।
সকাল ৯.২৭— পথ-উন্নয়নের মাশুল ট্র্যাফিক জ্যাম।
সকাল ৯.৫৮— নয়াপুল। বয়স ২৫ পেরোলেও আজও নয়া পুল।
সকাল ১০.১০— নয়াপুলের গলি দিয়ে গলতে গিয়ে হাঁসফাস।
সকাল ১০.২৯— ধোতিখোলা (কী যাচ্ছেতাই ব্যাপার!) পেরোনো।
সকাল ১০.৩৮— বিরেথাঁটে। মোদী খোলাকে টপকে অনুমতিপত্রে সীলমোহর।
সকাল ১০.৪৪— সীলমোহর পর্ব সমাপ্ত।
সকাল ১১টা— লামাখেত। ক্ষেত তেমন নজরে পড়ল না, লামা তো নয়ই।
সকাল ১১.০৮— স্যয়াউলি বাজার। জমজমাট।
দুপুর ১২.৩০— ঘানদ্রুং বাসস্ট্যান্ড। গেরাম হুই টংয়ে।
দুপুর ১.৩০— বিস্তর পাথুরে সিঁড়ি ভেঙে ঘানদ্রুং উঠে আরও বেশ কিছুটা সিঁড়িভাঙা অঙ্ক কষে Hungry Eye হোম স্টে-তে Hungry stomach নিয়ে অবস্থিতি। তিনতলার ঘরের গায়েই খোলা ছাদ। যেখানে অন্নপূর্ণা সাউথ, হিউঁচুলি আর মাছাপুছারের থাকার কথা, সেখানে এখন মেঘেদের conference. ২০২০ মি. উঁচু ঘানদ্রুংয়ে ঠান্ডার উপস্থিতি দিব্যি টের পাওয়া যাচ্ছে।
১৯ অক্টোবর
সকাল ৬.৪১— মেঘ সমুদ্দুর থেকে মাথা তুলেছে তুষারমৌলীরা।
সকাল ৮.৩৮— সচমুচকা ট্রেকিং-এর পয়লা কদম।
সকাল ৯.১৮— চড়াই চড়ে নওগাঁও।
সকাল ৯.৪৯— চা পানান্তে আবার চড়াই।
সকাল ১০.১৫— অন্নপূর্ণা সাউথ, হিউঁচুলি আর মাছাপুছারেকে দেখার বাহানায় দম-পুরণ।
সকাল ১০.৪৫— কিমরুংদাঁড়ার গোড়ায় চড়াই চড়ে। চা চাপানো।
সকাল ১১.৩৯— কিমরুংদাঁড়ায় আবার দাঁড়ানো। এবার কোল্ড লেমনে দম-পূর্তি।
সকাল ১১.৫৫— এবার উৎরাই — মানে রাম উৎরাই।
দুপুর ১.২০— টানা পাথুরে ধাপ ধরে খাড়া উৎরাই নেমে বেদম। ঝরনার ধারে ধপাস।
দুপুর ১.৩৭— চকোলেটে চাঙ্গা হয়ে আবার অবনমন।
বেলা ১.৫০— কিমরুংখোলার ধারে পেটের খোল ভরার আয়োজন।
বেলা ২.৪০— ভরাপেটে ভরপুর বিশ্রামের পর নদীতটে। ব্রিজ বাবাজী বর্তমানে হ্যাঙ্গিং।
বেলা ৩.২৪— কিমরুং গেস্টহাউসে এক রাতের পেয়িং গেস্ট।
২০ অক্টোবর
সকাল ৫.৩০— ভোরের কিমরুং খোলাকে কেমন মায়াময় লাগছে। নীলচে এক আবরণে যেন ডুবে রয়েছে প্রকৃতি। ফুল আর পাখিরা আপন করে নিল মুহূর্তে।
সকাল ৯.০৫— অরণ্যের আহ্বানে কিমরুংখোলার মায়া কাটানো।
সকাল ৯.৩০— সক্কাল সক্কাল খাড়া পাথুরে ধাপের চড়াই ভাঙার পর দম-বিরতি।
সকাল ১০টা— খাড়া চড়াই জারি। আবার থামা।
সকাল ১০.২৭— চড়াইয়ের সঙ্গে লড়াইয়ে ৩য় বিরতি।
সকাল ১০.৫৬— চড়াই চড়াই চড়াই — আব্বুলিস।
সকাল ১১.০৫— ৫ম বিরামে বাংলাদেশের দশজন তরুণ তুর্কির সঙ্গে আলাপ — তাদের মধ্যে কয়েকজনের অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প থেকে টেন্ট পীক (থারপোচুল্লি) চড়ার মতলব।
সকাল ১১.৫২— দীর্ঘ আড্ডান্তে গাত্রোত্থান।
দুপুর ১২.০১— আবার বিশ্রাম। দমেরা দমদমে যাবার তাল করছে। চড়াইয়ে অন্ত নেই।
দুপুর ১২.৬৫— কোল্ড লেমনের বাহানায় বিশ্রাম।
দুপুর ০১.০৫— দম ফেরৎ পেয়ে আবার আকাশপানে।
বেলা ২.২৪— আকাশমুখো পথ বেশ খানিকক্ষণ পাতালমুখো হয়েই ভুল বুঝতে পেরে আবার আকাশমুখো। চড়াই উৎরাই চড়াই উৎরাই করে ছোমরংয়ের টংয়ে (২২০০মি.)। আমাদের আস্তানা অবশ্য আরও এগিয়ে। এখানেই আরেকটা পথ জিনুদাঁড়া থেকে এসে মিশেছে।
বেলা ২.৪৫— কোল্ড লেমনে খানিক কোল্ড হয়ে এবার পাতালমুখী পাথুরে ধাপ ধরে নেমে চলা।
বেলা ৩.২৫— অনেক নেমে খানিক উঠে আরও অনেক নেমে এসে পড়লাম আজকের আস্তানা ছোমরং কটেজে। পা যেন পাথর। লাল চা-র লালচ দেখিয়ে তাকে প্রবোধ দেওয়া গেল। খবর পেলাম ১৯৮৩-তে যে ক্যাপ্টেনস লজে উঠেছিলাম, সেই ক্যাপ্টেন গত বছর ৯১ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি দিয়েছেন।
সন্ধ্যা ৫.৫৫— শেষবেলায় মেঘের আড়াল সরিয়ে অন্নপূর্ণা সাউথ হিউচুঁলি আর মাছাপুছারে দেখা দিয়ে গেল।
‘রাত’ ৬.৪৬— ডিনার খতম। এবার লেপের ডাক।
২১ অক্টোবর
সকাল ৫.৩০— ঘুমবাবাজী ছুটি নিলেন।
সকাল ৬টা— তুষারমৌলীদের আহ্বানে বাঁধানো উঠোনে।
সকাল ৬.৩০— সুয্যিমামা উঁকি দিলেন।
সকাল ৮.১৫— খেয়েদেয়ে পেট বাগিয়ে পা বাড়িয়ে দেওয়া গেল। আজ ‘মিশন দোবান’। সিঁড়িভাঙা অঙ্কের শুরু ফের।
সকাল ৮.২২— চেকপোস্টে ছাপ মারামারি পর্ব।
সকাল ৯.০৪— সিঁড়িভাঙার ১ম পর্বের অন্ত।
সকাল ৯.১৫— আরও অধঃপতন — সিঁড়ি সিঁড়ি সিঁড়ি। সামনে ছোমরংখোলার পুল। একটু দম নেওয়া যাক।
সকাল ৯.২৩— ছোমরং উল্লঙ্ঘনের উদ্যোগ।
সকাল ৯.২৬— চড়াই চড়াই চড়াই — আবার সিঁড়ির লড়াই।
সকাল ৯.৩৯— পয়লা বেদম। সামনে সিঁড়ির মই।
সকাল ১০.০৬— দুসরা বেদম। আরও সিঁড়ি।
সকাল ১০.১২— জলবিরাম।
সকাল ১০.২০— মাঝে মাঝে সিঁড়ির বিরতি।
সকাল ১০.৩২— লোয়ার সিনুয়ার দোরগোড়ায় এসে গেছি — বিশ্রাম তো বনতা হ্যায়।
সকাল ১১.০৫— ওরে ওঠ্ — আপার সিনুয়া আভী বহুদূর।
সকাল ১১.৩০— কোল্ড লেমন বিরতি। চড়াই জারি।
সকাল ১১.৫০— কত নম্বর বিশ্রাম? কে জানে। সুয্যিমামার রোদের চাবুক হাঁকাচ্ছেন।
দুপুর ১২.০৫— পনেরো মিনিটেই আবার বেদম।
দুপুর ১২.৪৮— আরও নাকি ঘন্টাখানেকের পথ বাকি!!
দুপুর ০১.০৫— বাপ্রে চড়াই ভেঙে আরেকবার ধপাস। চকোলেট খেয়ে শক্তিসঞ্চয়ের চেষ্টা।
দুপুর ১.২০— ওঠ মুসাফির তোল গঠরিয়া।
দুপুর ১.৩০— আপার সিনুয়া হুই দেখা যায়।
সন্ধ্যা ৬টা— মাছের লেজ রাঙানো সূর্যাস্ত।
২২ অক্টোবর
সকাল ৬টা— দুর্দান্ত সূর্যোদয়। মাছাপুছারের হাতছানি।
সকাল ৭.৫২— মিশন দোবান স্টার্ট।
সকাল ৮.২৮— সিঁড়ি পথ মিলিয়ে পয়লা পর্ব ঠিকঠাক। গরমজামা অঙ্গচ্যূত হলো। বাঁশবনের শুরুয়াত।
সকাল ৯.১০— ২য় বিশ্রাম বাঁশবনে।
সকাল ৯.৩৮— সিঁড়িভাঙায় ৩য় বিরাম। জিভ নাভি ছুঁই ছুঁই।
সকাল ১০.০২— আবার সিঁড়িভাঙার উদ্যোগ।
সকাল ১০.৫১— ব্যাম্বু লজ। ১৯৮৩ একমাত্র বন্ধ বাঁশের লজের জায়গায় চার পাঁচটা পাকাপোক্ত লজ!
সকাল ১১.০৮— কোল্ড লেমনে ঠান্ডা হয়ে আবার বাঁশবনে।
সকাল ১১.২১— আবার বেদম। যেমন চড়াই তেমনই উৎরাই।
দুপুর ১২.০২— বাঁশবনে চড়াই চড়াই — বিশ্রাম। লগে চড়ে ঝোরা পেরিয়ে।
দুপুর ১২.১৯— চড়াই — বাঁশ — বিরতি।
দুপুর ১২.২৮— চড়াই — বাঁশ — বেদম। এবার ভালোরকম।
দুপুর ১২.৪৩— বাঁশবনে জোড়া বুড়ো। ফাঁকে ফাঁকে মাছাপুছারে।
দুপুর ১.১৬— চড়াই — বাঁশবনের রেকারিং ডেসিবেল।
বেলা ৩.০৩— আমাদের দুই রুমমেটই বিদেশিনী তরুণী। একজন লাতিন আমেরিকান। অন্যজন ইওরোপিয়ান। দুজনেই একা। খুব ভালো লাগল তাদের আত্মবিশ্বাস দেখে। আমাদের মতো ওরাও কোনও পোর্টার বা গাইডের সাহায্য নেয়নি।
‘রাত’ ৭.১৮— ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ সহযোগে ডিনার। জমে গেল।
২৩ অক্টোবর
সকাল ৬.৪৭— দোবান জেগে উঠেছে। তাপমাত্রা বলছে ৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সকাল ৮.১৫— আজ দেওরালি। বংশাচ্ছাদিত পথে পরিভ্রমণ।
সকাল ৮.৩৫— একটা ঝোরা পেরোতে গিয়ে ঝরে যাওয়ার দাখিল। লগ ব্রিজটার মাঝের গাছটা মাঝে ভাঙা। শেষে চতুষ্পদ হয়ে রক্ষা।
(ক্রমশ)