সব যাত্রা সব সময় শুভ হয় না। অনেকসময় সবকিছু প্ল্যান করে চললেও অঘটন ঘটেই যায়। প্লেন, ট্রেন মিস করা, লাগেজ হারানো ইত্যাদি তো সবার ভাগ্যেই হয়। কখনো কখনো অচিন দেশে হঠাৎ অভাবিত বিপর্যয়ও সামলাতে হয়। আমার কপালেও কয়েকবার হয়েছে, এর একটি গল্প আগেও পরবাসে লিখেছি (“যাত্রা শুভ নয়”), এখানে আরও তিনটি কাহিনী দিলাম। আজকাল করোনাদেবীর কল্যাণে নতুন কোথাও বেড়ানো অসম্ভব, তাই স্মৃতিচর্চাই করি না হয়। সুখস্মৃতির সঙ্গে সঙ্গে যদি কিছু অ-সুখও মনে পড়ে যায় তো যাক।
প্রথম কাহিনী নেপালে বেড়াবার সময় (সাল ২০০০)। দুই কন্যা নিয়ে সপরিবারে যাচ্ছিলাম কাঠমান্ডু থেকে পোখারা। একটা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করেছিলাম। বেশ চারদিকের পাহাড় জঙ্গল দেখতে দেখতে যাচ্ছি। সরু খাড়াই রাস্তায় বাঁক নিতে গিয়ে পড়লাম এক দৈত্যের মতো বিরাট টুরিস্ট বাসের সামনে। নিচু ঢালে বেশ স্পিডে নামছিল বাসটা। পাশ কাটাবার আগেই লাগলো মোক্ষম ধাক্কা। গাড়ির পুরো ডানদিকটা দুমড়ে বসে গেল। পেছনের সীটে আমি ও মেয়েরা বাঁদিকের দরজা খোলার চেষ্টা করছি আর ডানদিকে বাসের সামনেটা গাড়ির দরজা বাঁকিয়ে আমাদের গায়ে এগিয়ে আসছে। যতই কুঁকড়ে যাই ততই বাসটা এগিয়ে আসে। শেষে শরীর থেকে দু-ইঞ্চি দূরত্বে বাসটা থামল। আমরাও দরজা খুলে হুড়মুড় করে গড়িয়ে পড়লাম। ভাগ্যি ভালো সামনের সীটে ড্রাইভার ও আমার স্বামী অক্ষত ছিলেন। কিন্তু ড্রাইভার-এর দরজাও চিঁড়েচ্যাপ্টা। বাসটার অবশ্য কোন ক্ষতিই হয়নি।
মাঝরাস্তায় দুটো গাড়ি জড়াজড়ি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বাসটা থামতেই একদল বিদেশি টুরিস্ট — পূর্ব ইউরোপীয় কোনও দেশের, চেক বা পোলিশ — নেমে মেয়েদের জড়িয়ে ধরে নিজেদের ভাষায় গলগল করে কিছু বলছিল, না বুঝলেও আন্দাজ করলাম “কী সৌভাগ্য তোমরা কেউ আহত হওনি”, “আমাদের তো ভয়ে রক্ত হিম...” ইত্যাদি বলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রত্যেকের গলায় ঝোলানো ক্যামেরায় ক্লিক ক্লিক। ব্যস, অগুনতি পোলিশ অ্যালবাম-এর পাতায় আমাদের হতভম্ব মুখচ্ছবি চিরকালের জন্য ধরা রইল।
নেপালে হয়তো এরকম দুর্ঘটনা আকছার হয়। এ যেন আগে থেকেই প্রস্তুতি করা ছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে আশেপাশে স্থানীয় লোকেদের ভিড় জমে উঠল। এমনকি একটা আস্ত চায়ের স্টল পর্যন্ত লেগে গেল, গরম গরম চা আর তেলেভাজা সমেত। ওদের বোধহয় আগে থেকেই জানা ছিল এসব ঝামেলা মিটতে কতক্ষণ লাগে। কাছাকাছি একটা প্রাইমারি স্কুল বাচ্চাদের ছুটি দিয়ে দিল, যাতে তারাও মজাটা মিস না করে। রোজ রোজ কি বাসসুদ্ধু বিদেশিদের এত কাছে থেকে দেখা যায়?
আমাদের গাড়িটা এত কাণ্ডের পরেও সচল ছিল। ইঞ্জিন ও চাকাগুলি ঠিকঠাক। আমরা যত শীগগির সম্ভব বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু ইতিমধ্যে দুই ড্রাইভারের মধ্যে ঝগড়া লেগে গেছে, কার দোষ তাই নিয়ে। গ্রামের লোকেরাও এতে মাথা গলিয়েছে। বেশি স্পিডে কেন যাচ্ছিল, হর্ন কেন দেয়নি, কে কার লেনে এসে পড়েছিল এইসব নিয়ে বচসা। পুলিশ আসতে ঘণ্টা দুই লাগল, তারা খুব যত্ন করে চকখড়ি দিয়ে দৃশ্যটা আঁকল রাস্তার ওপর, তারপর গেল তাদের ওপরওয়ালাকে খবর দিতে। তাঁর আসতে আসতে আরও এক ঘণ্টা।
অবশেষে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত আমরা যাবার অনুমতি পেলাম। গাড়িটার ডানদিকের দরজা দুটো একেবারে তোবড়ানো, আমরা বাঁদিক দিয়ে ওঠানামা করতাম। সেই অবস্থায় পোখারায় পৌঁছে তারপর গাড়ি বদলাতে পারলাম।
সে যাত্রায় আরও কিছু দুর্ভোগ বাকি ছিল। আমরা যখন নেপালে, ওমাহা আমেরিকায় তখন জানুয়ারির প্রচণ্ড শীত। তার মধ্যেই মাঝ রাত্তিরে আমাদের বাইশ বছরের পুরোনো ফার্নেস (বাড়ি গরম রাখার জন্য) ফেটে গেল। একেবারে আগুন না ধরলেও ধোঁয়ায় বাড়ি ভর্তি। স্মোক-অ্যালার্ম-এর কল্যাণে তক্ষুনি দমকল এসে গেছিল। তাদের প্রথম কাজ বাইরে থেকেই শোবার ঘরের জানলাগুলো ভেঙে ভেতরের লোকজনদের উদ্ধার করা। বাড়ি তো খালি। পাশের বাড়ির প্রতিবেশী বন্ধুর কাছে আমরা চাবি রেখে গেছিলাম, ওদের কাছে দিল্লীর ফোন নম্বরও ছিল। ওরা তক্ষুনি ফোন করেছিল কিন্তু আমরা তখন নেপালে, তাই দিল্লী ফেরার পরেই খবরটা পেলাম। ততদিনে আমাদের বাড়ি মাইনাস টেম্পারেচারে জমে হিম। আমার সাধের ইনডোর ফুলগাছগুলি মরে ভূত। শোবার ঘর ভাঙা কাঁচে ভর্তি। আমাদের বন্ধু ভাঙা জানলায় প্লাস্টিকের পর্দা আটকেছে কিন্তু তাতে ঠান্ডা আটকায় না। বেচারারা অনেক চেষ্টায় ফায়ারপ্লেস ও ইলেকট্রিক হিটার জ্বালিয়ে বাড়িটা একটু গরম রেখেছিল, তাতে কলের জলটা জমে যায়নি, আমাদের সৌভাগ্য। নইলে পাইপ ফেটে দেয়ালে জল ঢুকে খুবই বিচ্ছিরি অবস্থা হত। সেসব সারাতে অনেক সময় ও খরচের ধাক্কা।
এগারো ঘণ্টার জেটল্যাগ ও প্রায় চল্লিশ ঘণ্টার যাত্রাশেষে, ক্লান্ত, অবসন্ন আমাদের বাড়ি পৌঁছে প্রায় কান্না পাবার অবস্থা। তারই মধ্যে সবকিছু পরিষ্কার করে, নতুন ফার্নেস আর জানলার কাঁচ লাগিয়ে তবেই একটু বিশ্রাম করতে পারলাম।
বিদেশে বিপদে পড়ে কখনসখনো এমন কাজ করতে হয় যা পরে ভাবলে খুবই ‘রিস্কি’ মনে হতে পারে। যে সময় (১৯৯২) আমি পেরু গেছিলাম, সন্ত্রাসবাদী ‘সেন্দেরো লুমিনোসো’দের তখন খুব জাঁক। সবাই যেতে বারণ করেছিল কিন্তু আমি যাচ্ছিলাম অপেক্ষাকৃত নিরাপদ আমাজন জঙ্গলে, সেখান থেকে এত কাছে মাচুপিচু, কুসকো ও লিমা-র মিউজিয়ামগুলি না দেখে ফিরে আসা যায় নাকি? আমার সঙ্গে এক শ্বেতাঙ্গিনী বন্ধু লিয়ানা। আমি তাকে খ্যাপাতাম যে বিপদে পড়লে আমি সোজা বলে দেব যে ‘এই গ্রিঙ্গা-কে আমি একেবারেই চিনি না।’ (বাদামী চামড়ার মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকাবাসীরা শ্বেতাঙ্গী উত্তর আমেরিকাবাসীদের অবজ্ঞাভরে গ্রিঙ্গো বা গ্রিঙ্গা বলে থাকে।)
আমাজন জঙ্গল থেকে নদীপথে ইকিতস, সেখান থেকে প্লেনে রাজধানী লিমা। এয়ারপোর্টে সশস্ত্র মিলিটারির দল, বিদেশী টুরিস্টদের পিঠে ব্যাকপ্যাকগুলো ধারালো কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা যাতে কেউ কাছে ঘেঁষে ব্যাগ কাটতে না পারে। সন্ধ্যা থেকে সকাল সারা শহরে কারফ্যু। আমরা সন্ধ্যাবেলা এয়ারপোর্টে পৌঁছে আটকে গেলাম। বাইরে বেরুবার রাস্তা নেই। এয়ারপোর্ট বন্দুকধারী পুলিশে ভর্তি। আমাদের কুসকো যাওয়ার প্লেন সকালে ছাড়বে। ততক্ষণ কোথায় কাটাই? এরই মধ্যে একটি লোক এসে বলল সে আমাদের গাইড, হোটেলে যাবার কোনও উপায় নেই। ওর বিচারে সবথেকে নিরাপদ যদি একটি ঘরে বন্দি থাকা। ভয় নেই, সকালবেলা ও নিজে এসে খুলে দেবে। আমরা ভালমন্দ কিছু ভেবে ওঠার আগেই তাড়াহুড়ো করে একটা খালি ওয়েটিং রুমে ঢুকিয়ে বাইরে তালা দিয়ে দিল।
ঘরটায় দুটো সোফা আর কয়েকটা চেয়ার। কোন জল, খাবার, ফোন বা বাথরুম জাতীয় কিছু নেই। আমি আর লিয়ানা মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি। এটা কি ভালো হোল না আরও বিপদে পড়লাম? লোকটা কি সত্যিই আমাদের গাইড? চোরছ্যাঁচড় নয়তো? যদি বাইরে দাঙ্গাটাঙ্গা শুরু হয়? যদি আগুন লেগে যায়? কাকে ডাকব? কেউ তো জানে না যে আমরা এরকম আটকে আছি। ভেবে কোন সমাধান না পেয়ে আমরা দুজনেই গাইডের ওপর নির্ভর করে ক্লান্তি ও নির্জলা উপোস নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন আমাদের সব চিন্তা ভুল প্রমাণ করে ভোরবেলা সেই গাইডই এসে দরজা খুলে দিল ও খুব যত্ন করে কুসকোর প্লেনে তুলে দিল।
এরকম বিশ্বাস করা বা না করার দ্বন্দ্ব পরেও ঘটেছে কেনিয়ায় ও উড়িষ্যাতে। সব জায়গাতেই আমি অন্যের ওপর নির্ভর করে নিরাপদ থেকেছি। আমি দেখেছি সাধারণ মানুষেরা — কোন বিশেষ কারণ না থাকলে — সবসময়েই সৎ ও উপকারী হয়।
চীনে বেড়াবার সময় আমি একটা অলিখিত ট্রাফিক আইন খেয়াল করেছিলাম। রাস্তায় কোনোরকম অ্যাকসিডেন্ট হলে যে সাইজে বড়ো তার ওপর সব দোষ পড়ে। এ একেবারে ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’-এর মতই। ছোটোর সাত খুন মাফ। এই নিয়মে বাস-এর সঙ্গে প্রাইভেট গাড়ির টক্কর লাগলে সব দোষ ও দায়িত্ব বাসের, আবার গাড়ির সঙ্গে সাইকেলের ধাক্কায় দোষ সর্বদা গাড়ির, সে কেন দেখে চালায়নি আর সাইকেল আর পদাতিক মোকাবিলায় সব দোষ সাইকেলের, এমনকি পদাতিক হঠাৎ সামনে এসে পড়লেও।
আমরা যাচ্ছিলাম বাসে সাংহাই থেকে উহান, সেখান থেকে স্টিমারে ইয়াংজি নদীতে পাড়ি (১৯৯৪)। স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম থেকে কুড়ি-বাইশ অভিজ্ঞ আমেরিকানদের মধ্যে আমি একা অনভিজ্ঞ, অ-শ্বেতাঙ্গী এশিয়ান। ভারতের মতই চীনেও রাত্তিরে গ্রামের রাস্তায় গাড়ি চালানো বিপজ্জনক। তবু সাংহাইয়ের যানজট কেটে বেরুতে বেরুতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। উহানে স্টিমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। সামনে অন্ধকার গ্রামীণ রাস্তায় আরও দু-তিন ঘণ্টা।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কী ঘটনার কথা বলতে যাচ্ছি। ঠিক বুঝেছেন। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাস্তায় গাড়ির সামনে পড়ল সাইকেল সমেত এক বৃদ্ধা মহিলা। সামনে, ডানদিকের চাকার ওপর আমি বসেছিলাম, একটা অদ্ভুত অনুভূতি হোল, একটা নরম কিছু মাড়ালে যেমন লাগে। তক্ষুনি বুঝলাম কোন মানুষের শরীর চাকার নিচে! (চীনা রাস্তায় ভারতের মতো গরু-ছাগল নেই।)
তক্ষুনি বাস থামানো হল। ড্রাইভার সিগমণ্ডের তো কাঁদোকাঁদো অবস্থা। ও তো জানত এরকম দুর্ঘটনার গুরুত্ব। ওর একেবারেই কোন দোষ ছিল না (শুধু সাইজ ছাড়া)। সাইকেলে কোন ঘণ্টি বা আলো ছিল না। অন্ধকারে রাস্তা ক্রস করতে গেছিল, হয়তো ভেবেছিল বাসটাই থামবে।
আমাদের প্রথম চিন্তা মহিলার আঘাত নিয়ে। আমাদের গাইড অল্পবয়সি আমেরিকান ছেলে অ্যাটম (ওরফে অণু) খুব ভালো মান্দারিন বলতে পারে আর ফার্স্ট এইড-এও দক্ষ। ভদ্রমহিলা খুব জোর বেঁচে গেছিলেন। অজ্ঞান হননি, রক্তপাতও হয়নি শুধু পিঠে বেশ জোরে লেগেছিল। হাড়টাড় ভেঙে থাকতে পারে। সাইকেলটার অবশ্য দফা রফা।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গ্রামের লোকেরা চারপাশে ভিড় জমাল। এ কিন্তু নেপালের মতো নিরীহ ভিড় নয় মোটেই। একটা গোমড়ানো সুর ক্রমশই জোরালো হয়ে উঠছিল। এমনিতেই চীনারা শ্বেতাঙ্গদের ভালো চোখে দেখে না, তার ওপর অন্ধকারে তড়িঘড়ি চলেছি আমাদের বিলাসী নৌকাবিহারে, গরিব দেশের লোকেদের কোন পাত্তা না দিয়ে। এদের একটু শিক্ষা দেওয়াই উচিত। বেচারা অণু যথাসম্ভব নরম সুরে ওদের বোঝাবার চেষ্টা করছিল। আমিও অণুকে সাহায্য করতে গেছিলাম, আশা করেছিলাম হয়তো আমার ডাক্তারি পদবী ও কালো এশিয়ান মুখ দেখে লোকেরা একটু নরম হবে কিন্তু ভাষা না বোঝায় বিশেষ কিছু করতে পারলাম না। তার ওপর অণুরও আমার নিরাপত্তা নিয়ে ভয়, তাই বাসেই ফিরে এলাম।
বাসে ততক্ষণে ভয়টা ছড়িয়ে পড়েছে। ভাষা না জানলেও চেঁচামেচির ভাবটা বেশ পরিষ্কার। আমরা বাসটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়েছিলাম যাতে কেউ ঢুকতে না পারে। কয়েকজনের পরামর্শে ভেতরের আলোটাও নিভিয়ে রেখেছিল যাতে বাইরের লোকেরা আমাদের গায়ের রং দেখে আরও উত্তপ্ত না হয়। এতে কিন্তু উলটো ফল হল। অন্ধকারে দেখতে না পেয়ে আরেকটা সাইকেল পেছনে গোঁত্তা মারল। কারুর কোন ক্ষতি হয়নি তবু সাবধানতার জন্যই বাতিটা জ্বালিয়ে রাখতে হল।
আমরা প্রায় ঘন্টা খানেক দাঁড়িয়ে আছি। অণু কয়েকজন লোকের সাহায্যে আহত মহিলাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে কিন্তু জনতা আমাদের ছেড়ে দিতে রাজি নয়। এদিকে বাসের ভেতরে ভয়ের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে দেখলাম কয়েকজন বয়স্ক চীনা-এক্সপার্ট মহিলা কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন, এমনকি চৈনিক সরকারি মহিলা গাইডেরও (যদিও তিনি নিচে নামেননি একবারও) শুকনো মুখ, চোখে জল। বয়স্ক পুরুষরাও অনেকে ভগবানের নাম জপছেন।
পুলিশটুলিশ কিন্তু কেউ ডাকেনি, সব বিচারই গণমতে। অনেকক্ষণ রাগারাগির পর অণু হাতেপায়ে ধরে অনেক অনুরোধ করায় শেষমেশ ওরা আমাদের ছেড়ে দিল। এতক্ষণ ধরে একা উত্তেজিত ভিড়ের ধাক্কা সামলাতে অণু একেবারে ঘেমে নেয়ে কাহিল।
অবশেষে মাঝরাত্রে আমরা স্টিমারে চড়লাম। আমাদের অভ্যর্থনার প্রভূত আয়োজন করা ছিল, সেসব বাতিল হল। শুধু একবাটি গরম চাইনিজ স্যুপ খেয়ে যে যার কেবিনে ঘুম।
অণুর মতে এরকম অভিজ্ঞতা যে কোন পাকা চীনা গাইড-এর জীবনে অন্তত একবার হয়েছে। ওর কপালে এত অল্পবয়সেই ঘটে গেল।
আমাদের বাকি যাত্রায় আর কোন গোলমাল হয়নি। সাংহাই-এ ফিরে এসে আমরা খবর পেলাম যে আহত মহিলা তখনো হাসপাতালে, তবে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, পিঠের চোটও তেমন মারাত্মক নয়। কিন্তু ড্রাইভার সিগমণ্ডের চাকরি গেছে। আমরা সবাই ওর হয়ে কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছিলাম, বুঝিয়েছিলাম দোষটা ওর নয় মোটেই, কিন্তু কোনো লাভ হল না।