A Day Eight Years Ago
Jibanananda Das


Translated from the Bangla by
Clinton B. Seely



It was heard
They took him to the morgue.
Last night in the February dark
When the crescent moon, five days toward full, had set
He'd had the urge to die.

A wife had lain beside him—a child, too.
There had been love, hope, in the moonlight.
Then what ghost did he see? why was his sleep disturbed?
Or maybe he hadn't slept for days. Now, lying in the morgue, he sleeps.
He had sought this sleep perhaps.
Like a plague rat, mouth smeared with frothy blood, neck slack
In the bosom of a dingy cranny, now he sleeps.
Never again will he wake.

"Never again will you wake
Never again will you know
The unremitting, unrelenting grievous
Pain of waking."
As though some stillness stretched its camel's neck
Through his window
And said these words to him
When the moon had sunk into strange darkness.

But the owl is awake,
And the decrepit, putrefying frog begs a few moments more
Among anticipated warm affections—beckoned by another dawn.

I sense all around me the unforgiving opposition
Of my mosquito net, invisible in the swarming darkness. The mosquito stays awake within his
      blackened monastery, in love with life's flow. Flies alight on blood and filth, then fly
      again to sunlight.
How many times have I watched the play of winged insects on waves of golden sunshine.

An intimate sky, it would seem—some pervasive life force
Controls their hearts.
The grasshopper's constant twitching, caught in the mischievous child's grasp,
Fights death.
Yet in that foremost darkness after moonset, you, a coil of rope in hand,
Had gone alone to the ashvattha tree,
Knowing that the grasshopper's life, or the doyel bird's, never meets with
That of man.

The ashvattha limb,
Did it not protest? Did not the fireflies in a cordial throng
Appear before you?
Did not the blind and palsied owl come and
Say to you: "Old lady moon has sunk in the flood, has she?
Marvelous!
Let's now catch a mouse or two!"
Did not the owl screech out that raucous news?

This taste of life—the scent of ripe grains in an autumn afternoon—
You could not tolerate.
In the morgue, is your heart at ease,
In the morgue, in that suffocating stillness
Like a flattened rat, bloody lipped!

Listen,
However, to this dead man's tale. He lacked
Not love of woman,
Nor did married life's expectations
Go unfulfilled.
From time's churnings emerged a wife
And honey, the mind's honey
She let him know.
Never in this life did he shiver
In the cold of hunger's draining pain.
And so,
In that morgue,
Flat out he lies upon a table.

I know, yet I know,
A woman's heart—love—a child—a home—these are not everything,
Not wealth nor fame nor creature comforts—
There is some other perilous wonder
Which frolics
In our very blood.
It exhausts us—
Fatigues, exhausts us.
That exhaustion is not present
In the morgue.
And so
In that morgue
Flat out he lies upon a table.

But every night I look and see, yes,
A blind and palsied owl come sit upon the ashvattha branch,
Blink her eyes and say: "Old lady moon has sunk in the flood, has she?
Marvelous!
Let's now catch a mouse or two!"

Oh profound grandmother, is still today so marvelous?
I too, like you, shall grow old—I shall cast old lady moon across the flood, into the whirlpool.
Then we two together shall empty life's full store.



আট বছর আগের একদিন


শোনা গেল লাসকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে—ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হ'লো তার সাধ;

বধূ শুয়েছিলো পাশে—শিশুটিও ছিলো;
প্রেম ছিলো, আশা ছিলো—জ্যোৎস্নায়—তবু সে দেখিল
কোন্‌ ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেল তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল—লাসকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।
এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি!
রক্তফেনামাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি
আঁধার ঘুঁজির বুকে ঘুমায় এবার;
কোনোদিন জাগিবে না আর।

'কোনোদিন জাগিবে না আর
জানিবার গাঢ় বেদনার
অবিরাম—অবিরাম ভার
সহিবে না আর—'
এই কথা বলেছিলো তারে
চাঁদ ডুবে চ'লে গেলে—অদ্ভুত আঁধারে
যেন তার জানালার ধারে
উটের গ্রীবার মতো কোনো এক নিস্তব্ধতা এসে।

তবুও তো পেঁচা জাগে;
গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে
আরেকটি প্রভাতের ইশারায়—অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে।

টের পাই যূথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে
চারিদিকে মশারির ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা,
মশা তার অন্ধকার সঙ্ঘারামে জেগে থাকে জীবনের স্রোত ভালোবেসে।

রক্ত ক্লেদ বসা থেকে রৌদ্রে ফের উড়ে যায় মাছি;
      সোনালি রোদের ঢেউয়ে উড়ন্ত কীটের খেলা কতো দেখিয়াছি। ঘনিষ্ঠ আকাশ যেন—যেন
      কোন্‌ বিকীর্ণ জীবন
অধিকার ক'রে আছে ইহাদের মন;
দুরন্ত শিশুর হাতে ফড়িঙের ঘন শিহরণ
মরণের সাথে লড়িয়াছে;
চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বত্থের কাছে
এক গাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা-একা;
যে-জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের—মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা
এই জেনে।

অশ্বত্থের শাখা করেনি কি প্রতিবাদ? জোনাকির ভিড় এসে সোনালি ফুলের স্নিগ্ধ ঝাঁকে
করেনি কি মাখামাখি?
থুরথুরে অন্ধ পেঁচা এসে
বলেনি কি; 'বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনোজলে ভেসে?
চমৎকার!
ধরা যাক দু-একটা ইঁদুর এবার!'
জানায়নি পেঁচা এসে এ তুমুল গাঢ় সমাচার?

জীবনের এই স্বাদ—সুপক্ব যবের ঘ্রাণ হেমন্তের বিকেলের—
তোমার অসহ্য বোধ হ'লো;
মর্গে কি হৃদয় জুড়োলো
মর্গে—গুমোটে
থ্যাঁতা ইঁদুরের মতো রক্তমাখা ঠোঁটে।

শোনো
তবু এ মৃতের গল্প; কোনো
নারীর প্রণয়ে ব্যর্থ হয় নাই;
বিবাহিত জীবনের সাধ
কোথাও রাখেনি কোনো খাদ,
সময়ের উদ্বর্তনে উঠে এসে বধূ
মধু—আর মননের মধু
দিয়েছে জানিতে;
হাড়হাভাতের গ্লানি বেদনার শীতে
এ-জীবন কোনোদিন কেঁপে ওঠে নাই;
তাই
লাসকাটা ঘরে
চিৎ হ'য়ে শুয়ে আছে টেবিলের 'পরে।

জানি—তবু জানি
নারীর হৃদয়—প্রেম—শিশু—গৃহ—নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়—
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে,
ক্লান্ত—ক্লান্ত করে;
লাসকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই;
তাই
লাসকাটা ঘরে
চিৎ হ'য়ে শুয়ে আছে টেবিলের 'পরে।

তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি, আহা,
থুরথুরে অন্ধ পেঁচা অশ্বত্থের ডালে ব'সে এসে
চোখ পাল্‌টায়ে কয়; 'বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনোজলে ভেসে?
চমৎকার!
ধরা যাক দু-একটা ইঁদুর এবার—'
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মতো বুড়ো হবো—বুড়ি চাঁদটারে আমি ক'রে দেবো কালীদহে বেনোজলে পার;
আমরা দু'জনে মিলে শূন্য ক'রে চলে যাবো জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার।


Notes:

আট বছর আগের একদিন /"A Day Eight Years Ago," published in Kavita, March 1938; included in The World at Large. Again, there is mention of the ashvattha tree, Jibanananda's favorite tree; the doyel is bird not unlike the magpie.

 


Illustrated by Nilanjana Basu. Nilanjana has been illustrating regularly for Parabaas. She is curently based in California.

 

Translation published in Parabaas: May, 2012