নিরুপম চক্রবর্তীর আরো লেখা :




For Books visit


ISSN 1563-8685




তিনটি কবিতা

ওরান: আলজেরিয়া

সিরোক্কো বাতাস বয় বালুকণা বুকে নিয়ে
ভূমধ্যসাগর পারে ওরান নগরে;
দীনারজাদীর ছবি, তারসাথে আমারওতো,
আঁকা থাকে ডিজিট্যাল ফ্রেমে ৷
দীনারজাদীর ছবি: স্মিতহাসি চপলা বালিকা
অবগুন্ঠিত কেশে হঠাৎই আমারই পাশে
কেন যেন দাঁড়িয়ে ছবিতে!

তখনই ওরানময় জেগে ওঠে তীব্র উলুধ্বনি
বধূবরণের এক অশ্লীল উৎসবে আজ
জাঁহাপানা গল্প শোনাবার সময় হয়েছে বলে
ডেকে নেন তাকে কাছে
দীনারজাদীকে যার ডিজিট্যাল স্মৃতি আজও
ভেসে ওঠে কারও ফেসবুকে!

এইখানে, ওরান নগরে আমি পদযাত্রী ৷
ঘুরিফিরি, মার্কিন মসজিদে দেখি
আরবীয় স্হাপত্যের স্নিগ্ধ রূপ;
তার সাথে
অপেরাভবন ঘিরে শহরের ফরাসী অতীত
পায়েপায়ে হেঁটে আসে
এখন আমার কাছে ৷

তবু
আচমকা মুছে যায় স্মৃতি;
প্রবল সন্ত্রাসে দেখি ধেয়ে আসে মরুভূমি
ফিরে আসে সিরোক্কো বাতাস,
দীনারজাদীর গল্প শেষ হ’লো, হয়তো হ’লো না:
বাতাসে গুলির শব্দ ভাসে।।


টাওস, নিউ মেক্সিকো

আরও একটু পরে কলোরাডো এসে যাবে, ইন্টারস্টেট টোয়েন্টিফাইভ
তোমাকে বিদায় দেবো, আমি আর মিস্টার ওয়াং ওদিকে যাবোনা।
নিয়েছি ডিট্যুর এক
সমস্ত অরণ্য জুড়ে ছন্দপতনের শব্দে কেঁদে ওঠে কবিতারা
আমাদের বেতোঘোড়া প্রস্তর যুগের এক ফোর্ড মাসট্যাং
ককিয়ে ককিয়ে উঠে ছুটেছে পাহাড়ী পথে,
টাওস শহরে তার পরিশেষে অন্তিম সমাধি!
পিছুটান শেষ হ’লো অবশেষে, আমি আর মিস্টার ওয়াং
অসীম রাত্রির দিকে খালি হাতে চলে যাবো, সেই রাত স্বপ্ন খোঁজার।

অনন্ত পুয়েব্লো ঘিরে ড্রিম ক্যাচারের সারি
এখানে বাতাসে দোলে, হোহো হাসে চীফ টিকিটাকা
(হয়তোবা তার নাম অন্য কিছু হ’তে পারে
আমি তাকে এ নামে জেনেছি!)
ঠিকই তো চিনেছি আমি তাকে
শতাব্দী পেরিয়ে এসে আজও সেই রহস্যের
প্রাঞ্জল বাতাস
এলোমেলো চুলে তার, তার ভাষা এখনও বুঝিনা,
দূর ছায়াপথ পার হ’য়ে
তাকে নিয়ে আসে আজও পক্ষীরাজ পেগাস্যাস
আদিগন্ত ডানার বিস্তারে
সমস্ত স্বপ্নের স্মৃতি ভ’রে,
জ্বলন্ত তর্জনী তার কৃষ্ণাকাশে নক্ষত্র ছুঁয়েছে!

মিস্টার ওয়াং তুমি কোনোকালে কবিতা পড়োনি!
এসব স্বপ্নের কোনো মানে নেই, এই স্বপ্ন তুমিতো দ্যাখোনি।
বলা যায় এই গল্প তাই বুঝি একটু অন্যভাবে:
টাওস শহরে এসে বিগড়েছে ভাঙাগাড়ি
পুয়েব্লোতে সাততাড়াতাড়ি
নামছে শীতের রাত,
কপর্দকহীন দুটি প্রাণী
(একটি চৈনিক আর দ্বিতীয়টি ভারতীয়!)
টাওস তোমার কাছে এই রাতে আশ্রয় ভিখারী!


তাতরা পাহাড়: পোল্যাণ্ড

কে যেন আকুল হাতে হিম হিম হিম কুয়াশায়
পাহাড়ের চূড়া ছুঁয়ে, পাহাড়ের চূড়া ছুঁয়ে
বিষাদের কাছাকাছি যায়।

কে যেন সকাল হ'তে নীল নীল নীল পাহাড়েতে
শিখরে তুষার ছুঁয়ে, শিখরে তুষার ছুঁয়ে
ভুল ক'রে নিজেকেই পায়।

বুঝি এ শিখর ছোঁয়া নিজে নিজে নিজে জেনে নিতে
কতটুকু ভালোবাসা, কতটুকু ভালোবাসা
চেঁছে নেবে মৃত জ্যোছনায়।

ফ্যাকাশে রোদেতে কিছু ভুল ভুল ভুল হাতছানি
জটিল ক্রিভাসে তাকে, জটিল ক্রিভাসে তাকে
চুপিসাড়ে টেনে নিয়ে যায়।

এসব কবিতা মুছে অযাচিত আভালান্চ
তাতরা পাহাড়ে আজ, তাতরা পাহাড়ে আজ
হিম হিম হিম কুয়াশায়।।



(পরবাস-৫০, ফেব্রুয়ারি, ২০১২)