আজ তোকে খুবই সাধারণ অথচ আবার একটু ঘুরিয়ে দেখলে বেশ মনে রাখার মতন দুটো চায়ের দোকানের কথা লিখছি।যখন আমরা এন, এইচ, ৬ দিয়ে খড়্গপুর কলকাতা যাতায়াত করতাম, খড়্গপুরমুখো থাকলে বাঁদিকে দেউলিবাজারে পড়ত লালুর চপের দোকান। লালুর বিক্রির তখন কী রমরমা-- যত দূরগামী উড়িষ্যার বাস, খড়্গপুর আই, আই, টির মাস্টারমশাইদের নিজস্ব গাড়ি, কিছু ট্র্যাভেল এজেন্সির রেন্টাল কারদের এমন লাইন পড়ে যেত যে অনেক সময় গাড়ি পার্ক করা দুষ্কর হয়ে উঠত। আড়াই-তিন ঘণ্টার সফরে বেশ ভাল লাগত ব্রেক দিয়ে গলা ভিজিয়ে নেওয়া, আর চেনা পরিচিত মাস্টারমশাইদের সাথে চায়ের গ্লাস হাতে অল্প খানিক হা-হা হো-হোতে মেতে ওঠা।
তেলেভাজার লিস্টে থাকত খুব বড় বড় হাতের চেটোর মাপের বেগনি, হিঞ্চে শাকের ফুলুরি, ফুলকপির বড়া, পিঁয়াজি, ডিমের চপ, গোটা লঙ্কা বেসনে লেপ্টে ভাজা আর ঝুরঝুরে কুড়মুড়ে মুড়ি। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রির মধ্যে ছিল বোধহয় পেঁয়াজ বড়া আর বেগনি। মিষ্টি বলতে ছিল চকোলেট বোমার থেকে কিছু বড় সাদাসাপ্টা কমলাভোগ আর ল্যাংচা।
দূর পাল্লার বাসের খালাসিরা বাসের মাথায় তুলত দেউলির ফুলপট্টি (পাশেই) থেকে গাঁদাফুলের মালার বিশাল বোঁচকা, গোলাপি গ্ল্যাডিওলি, জারবেরার মত জাত্যভিমানসম্পন্ন ফুলের তোড়া--তাদের পাশে অবশ্যই জায়গা করে নিত সাধারণের বিচ্ছেদ মিলন-এ দুয়েরই অভিব্যক্তি প্রকাশ করার শ্বেতশুভ্র মাধ্যম--নম্র রজনীগন্ধা। বাংলাটা বেশ কঠিন আর গম্ভীর গম্ভীর হয়ে গেল তাই নারে আনু? বড় নাহয় তুই হয়েছিস আগের থেকে তাহলেও তো তুই আমার সেই ছোট্ট আনুই, কি বলিস? কি জানিস এত বড় বড় কথার মানে বেশি কিছু না--রজনীগন্ধা ঘরোয়া মানুষের বড় প্রিয়, বাকিগুলো একটু যারা খুঁতখুঁতে, খুব বেশি বাছবিচার করেন, তাদের জন্যই চলে বোধহয়। আচ্ছা বাবা একটু নাহয় ভুলেই খেয়েছি আমার ছোট্ট আনুর কথা, তবে শক্ত শক্ত শব্দ লেখার আর একটা দিক তো আছেই--সেই যে একেবারে গোড়ায় গোড়ায় যে খেলাটা আমরা শুরু করেছিলাম, সেই যে রে, বাংলা শিখব বাংলা লিখব তবেই তো ভাষাটা বাঁচবে, শক্ত শব্দ তো তাই জন্যই শেখা।
যাত্রীরা বাসে বসেই সারত মুড়ি ফুলুরি সহযোগে (দিয়ে) বিকেলের জল খাবার। খুব খিদে না থাকলেও আমরা গাড়িতে বসেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কখন চা গড়িয়ে পড়া স্টিলের থালায় চায়ের রং ধরা ছোট ছোট কাঁচের গ্লাসে চা আসবে। তার আগে ঠোঙা-ভরা মুড়ি, বেগনি, হিঞ্চে ফুলুরি লঙ্কার বেসন ভাজা দোকানের ছেলেরাই দিয়ে যেত--খাওয়ার ইচ্ছে তো কমই ছিল, আনন্দটাই বেশি, তাই মুড়িটা সব সময়ই আমরা কমিয়ে দিতাম।
আলো বলতে ওই হ্যাজাক বাতি, কোথাও কোথাও নীল এল,ই,ডি, ল্যাম্প। আজও যেন দেখতে পাই সেই আধো আলোছায়ায় লালু মহানন্দে লুংগি হাফ গুটিয়ে দুহাত উইন্ডমিলের মত ঘুরিয়ে গাড়ি পার্কিং সামলাচ্ছে। চা খাওয়া শেষ হলে খানিক মুড়ি কেনা হত, এই ধর মাস খানেকের জন্য, কারণ তার মধ্যেই হঠাৎ কলকাতায় কাজ পড়ে যেত প্রায়শই (প্রায়ই)। কেনাকাটির মধ্যে আরো থাকত পনেরো-কুড়ি টাকা ডজন টুকটুকে লাল টেবল রোজ, আর লোভ বেশি বাড়লে কিছু কমলাভোগ।
এখন আর লালুদার সে দোকান নেই রে আনু। হাইওয়ে চওড়া করার জন্য দোকান রাস্তার ওপারে গেছে, বিক্রিবাটাও তেমন নেই। কারণ কলকাতা থেকে কাজ সেরে খড়্গপুর যেতে বিকেলের দিকেই সবার চা তেষ্টা পেত, আর উল্টোদিকে সবাই কলকাতা সাধারণত সকালেই যেত বাড়ি থেকে ভরপেট ব্রেকফাস্ট খেয়ে, চায়ের তাগিদ আর কোত্থেকে হবে বল?
তোকে যে লালুদার দোকানের একটা ছবি পাঠাব তা হওয়ার নয়, কিছুই নেই আমার কাছে, আসল কথা কি জানিস সব কিছুই চোখের পাতা ফেলতে না ফেলতেই পালটে যায়, আমরাই ভাবি কই সবই তো এক আছে আর থাকবেও। কথা দিতে পারছি না তবু একবার চেষ্টা করে দেখছি আঁকতে পারি কিনা মন থেকে।
আমার আদর জেনো--দিম্মা
স্নেহের
আনাই বানাই,
তুই বড় হচ্ছিস দিনে দিনে, তবু কেন জানি না তোকে কিছু বলতে পারলেই মনটা কেমন যেন টান টান হয়ে যায়।খড়্গপুর ছেড়ে এসেছি সেই কবে কিন্তু সেন্ট্রাল স্কুলের দিকের পেট্রল পাম্পকে পাশে ফেলে রাস্তার ওপারে টিক্কার চায়ের দোকানকে ভুলতে পারি না, নাকি ভুলতে চাই না?
বট গাছের নীচে রংচটা প্রায় ভাঙা লাল প্ল্যাস্টিকের চেয়ার টেবিল, জলের দরে গুলাবজামুন, বেশি সুজি কম ছানার (নেই বললেও চলে) রসগোল্লা, আলু বোন্ডা, সামোসা, রবারের মত টান মোটা মোটা দোসা, ডালহীন সাম্বার, নামমাত্র নারকেলের নারিয়েল চাটনি, চিনি গোলা চা বা চায়ের সরবত--এ ভোলা যায় না, আর ভুলবই বা কেন বল আনাই! এটাই তো টিক্কার বিশেষত্ব (প্রিয়জন ভাল-মন্দ গুণ মিলিয়েই যেমন প্রিয় হয়, টিক্কার দোকানও বোধহয় আমার কাছে তা)। বিকেলের ইভনিং ওয়াক সেরে এক কাপ চা আর একটা সামোসা প্রায়ই মেরে দিতাম, নিজেকে খেটে চা বানাতে হয়নি বলে তা যেন অমৃত মনে হত। চায়ের জন্য অপেক্ষা করে এদিক-ওদিক আই,আই,টি,-র মাস্টারমশাই, দিদিমণিদের সাথে দেখা হওয়া (তারাও সারাদিনের ক্লান্তি কাটিয়ে নিতে আসতেন ওই টিক্কায়; আর ছাত্রছাত্রীদের ভিড় তো লেগেই থাকত, ওদের জন্যই তো ওই জলের দাম) ভারী মন ভাল করার ম্যাজিক ছিল যেন। শুধু বসার সময় বট গাছের ঠিক নীচের চেয়ারগুলোয় না বসলেই হল, কাকের বাসা তো মাথার ওপরই থাকত বরাবর। সে যাহোক, ওই যে বললাম প্রিয়জনের ভাল গুণ তো থাকেই তাই এত সত্ত্বেও টিক্কার বেলা বারোটার রাধাবল্লভীর সাথে আলুর ঘাঁটা ঘাঁটা তরকারির প্রশংসা করতেই হয়। বাড়িতে ভাত আছে জেনেও আমি গিন্নীমা মেরে দিয়েছি চুপচাপ দু-এক খান। আর একটা সুবিধাও ছিল--সেটা সেন্ট্রাল স্কুলের ইলেভেন টুয়েলভের ছাত্রছাত্রীদের। ওরা কত সময় টিক্কার দোকানের পাশে সাইকেল রেখে টিফিন আওয়ারেই স্কুলের পাঁচিল ডিঙিয়ে বাড়ি পালিয়েছে নিজেদের মত পড়াশোনা করতে, ওরা তো অন্তত তাই বলত। তোমার মায়ের মুখেই এ গল্প শোনা।
টিক্কা আর তার ভাইদের ছোটোবেলার কথা বেশ অন্য রকম। (এখানেই বলি টিক্কার পোশাকি নাম দুলাল নন্দী। চেষ্টা করে এঁকে একটা স্কেচ পাঠিয়েছি, খেয়াল করে দেখিস দোকানের মাথায় দুলাল নন্দী লেখা। কিন্তু সবাই ওকে টিক্কা বলেই ডাকে।) বাবা হিজলি স্টেশনে হঠাৎই মারা যান। ওরা বড় হয় এক সাপুড়ের কাছে। তার ছবিও আমরা টিক্কার দোকানে ক্যাশবাক্সের ঠিক মাথায় দরজার ওপর টাঙ্গানো দেখেছি। যখন টিক্কা ছোট ছিল কাগজ বিলি করা, রদ্দি কাগজ কিনে নিয়ে যাওয়ার কাজও ও করেছে। আর পরে পরে ওর চারতলা বাড়িও আমরা দেখেছি।
‘টিক্কা’ কিন্তু আজ অতীতের গল্পকথা। খড়্গপুর ছেড়ে এসেছি বলে নয়। তাকে জায়গা করে দিতে হয়েছে সেখানে ইতিহাসবিহীন অতিকায় এক ফুড কমপ্লেক্স উঠবে বলে। ও সরে গেছে আড়ালে। অন্তত তাই শুনেছি। খড়্গপুর বেড়াতে গিয়ে চা খাব ভেবেছিলাম ওখানে, গিয়ে দেখি ওর ভাঙা ছাউনি।
দেখ আনাই, যা আগে ছিল এখন নেই তা সবই যে মন খারাপ করে দেয় তা না, কত কি মজার কথা তাদের সাথে জড়িয়ে থাকে—লালু লুংগি হাফ গুটিয়ে দু হাত নাড়িয়ে গাড়ি সামলাচ্ছে, বা আমি টিক্কায় বসে রাধাবল্লভী সাবড়াচ্ছি বেলা বারোটায় এসব মন-ছবিই আমার কাছে বাঁচিয়ে রাখার মতই জরুরি। আমার মনের ক্যাশবাক্সে ওদের দামি গহনার মতই চাবি তালা দিয়ে রেখেছি, তোর আমার গল্পের মাঝে আর তো কেউ নেই তাই ওদের কথা তোকে বলা।
সেইজন্যই আবার লিখি ‘টিক্কা’ বা ‘লালুর চপের দোকান’ নেই বলে মন খারাপ করিস না যেন, একদিন তো ওরা আমাদের হাত ভরে খুশিই দিয়ে গেছে কি বলিস?
ভালবাসা রইল --দিম্মা
আনুরাম
ইউরেকা!—দিম্মা'ভাল্লাগে না' তাড়াবার একটা দারুন ওষুধ পেয়েছি। মনে পড়ে গেল মুম্বাইতে থাকা তোর মতো এক ছোট্ট মানুষের কথা। সে নিয়ম করে প্রতি বুধবার হ্যারির পিছনে ছোটে—ছোটার ফল? ঝোপেঝাড়ে পড়ে হাত পা ছড়ে যাওয়া আর রাশি রাশি দু-হাত উপচে পড়া খুশির রাজা হওয়া। হ্যারিটা কে--তাই তো? সে ছোটদের আদর খাওয়া নেহাতই এক দেশি কুকুর। তাহলে তো তার থাকার জায়গাটার কথাও বলতে হয়। মুম্বাইতে টি, আই, এফ, আর, নামে এক গবেষণাগার ও কলেজ আছে, সেখানকার ক্যাম্পাসও সমুদ্রের ধারে--ফ্ল্যাটের নীচেই ভারী সুন্দর এক এনক্লেভে ছোটরা খেলে বেড়ায় শীত গ্রীষ্ম বর্ষার তোয়াক্কা না করে । সেখানেই হ্যারির বাস। ওর কাজের মধ্যে একটাই। সকালে যখন ছোটরা বাসে করে স্কুলে যায় ও নিয়ম করে ক্যাম্পাস গেটের কাছে এসে লেজ নাড়ায় আর তারপর সারাদিন এনক্লেভে আসাযাওয়া করা ছোটদের আদর খায়। কেউ দেয় বিস্কুট, কেউ ব্রেড, তাতেই ওর পেট ভরে যায়। আদর খেলে ওর চোখ নাকি কালো কুচকুচে মার্বেলের মত দেখায়, আমি দেখিনি--ছোটদেরই একজন এটার খোঁজ পেয়েছে। তা যে ছোটটির কথা লিখছি (ছোটই বলছি, পড়ে তো সবে ক্লাস ফোরে) তার মা একদিন জানালে সে নাকি পড়ে গিয়ে তার হাত পা খুব ছড়ে গেছে। ব্যস্ত-সমস্ত হয়ে জিগেস করেছিলাম কারণটা। সেটা হ'ল প্রথম বুধবারের 'হ্যারি ফলোইং' খেলার ফলাফল। ফলো করতে করতে সটান কাঁটা ঝোপে গিয়ে সেঁধোনো। আহা আনু এর থেকে মন ভালো করার দাওয়াই আর কী হতে পারে বল? হাসছিস আর ভাবছিস দিম্মাটা যেন কী হয়ে যাচ্ছে দিন কে দিন। নারে সত্যি আমরা কেন পারি না অমন ছুটতে। আচ্ছা বেশ, লোক হাসার ভয়ে নাহয় মনে মনেই ছুটব। ভেবেই তো আমার মন ঝলমলিয়ে গেল। ভাবলাম এক্ষুনি তোকে মেল করি। কেমন লাগল জানাবি কিন্তু!
আদরের পোস্ত বড়া,
মনে পড়ে গেল এ নামে ডাকলে তুই কত খুশি হ'তিস--আমরা দুজনেই যে পোস্ত বড়ার ফ্যান!—ইতি তোর ক্ষেপি দিম্মা।লিখেছিস 'হ্যারি ফলোইং'এর কথা ভেবে তুইও খুব মজা পেয়েছিস, অবাকও হয়েছিস ভেবে এমনটা করা যায় নাকি? যায়-ই তো-- কেউ তো ভেবেছিল অমন করে, আর যেমন ভাবা তেমন কাজও করে দেখে নিয়েছিল।
আচ্ছা, কখনো বর্ষার জলে সোজা চিৎপটাং হয়ে শুয়ে দেখেছিস? তাতে অবশ্য কানে জল ঢুকে কান পাকতেই পারে, যেমনটা সেই মুম্বাইএর ক্ষুদের হয়েছিল কিন্তু আনন্দটাও তো কম হয়নি। জানি না বর্ষার দিনগুলো তোর কেমন কাটে—মাম নিশ্চয় হাজারটা না-এর জালে বেঁধে ফেলে, তাই তো? 'বরষার জলে পা দিও না, বাইরের খাবার খেও না, ফুচকা তো নয়ই। হাত ধোবেই ধোবে খাবার আগে' এমনি আরো কত কী। আর আমার তো জানলা-দরজা বন্ধ করা, ভিজে কাপড়ের ডাঁই শুকোতেই দিন যায় আর তার সাথে মন ভার মাথা ভারের দাপটে কাহিল হওয়া; বরষার জলে চিৎপটাং হয়ে শোয়া আর হয় কোথায় বল? কান নাহয় পাকে না, কিন্তু কতটা আনন্দ বাদ যায় বল্ তো?
আচ্ছা এ নাহয় করা গেল না। কিন্তু যদি রেনি ডে হয়ে স্কুল বন্ধ হয়ে যায় যেমন সেবার মুম্বাই-এ হয়েছিল আর আমাদের ছোট্ট কল্পনাবাগীশটি মহানন্দে রঙিন ছাতাকে তাঁবু ভেবে নিয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে তার তলায় সেঁধিয়েছিল, তেমনটা যদি আমরা করি তাহলে কেমন হয়? এমন খুশি কি তুই আমি হতে পারি না? রঙিন ফুলছাপ ছাতা তো থাকেই বাড়িতে, কিন্ত তার তলায় চাদর মুড়ি দিয়ে শোওয়া কোথায় হয় রে। ভাবছি করে দেখব, ইচ্ছে হলে তুইও করে দেখতে পারিস। সব ভাল্লাগে না গুলো ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যাবেই যাবে।
আনু,
লিখেছিস বর্ষার জলে চিৎপটাং হয়ে শোওয়া হয়নি তবে স্কুল বাস থেকে নেমে জুতো মোজা হাতে জমা জলে একটু পা ছপছপিয়ে নেওয়া গেছে। তা বেশ করেছিস, ওইটুকুই ঢের—বড় শহরে বৃষ্টির জল তো আর খুব পরিষ্কার হবে না—বাড়ি এসে হাত ধুতে ধুতে সেই 'ডেটল হি ডেটল হো' গানটা গেয়ে নিয়েছিস নিশ্চয়।—দিম্মাজানিস আনু, আমি একটা জিনিস আবিষ্কার করেছি। তেতলার ছাদে বেশ থোকো থোকো সবুজ মখমলের মত শ্যাওলা জমেছে, প্রায় ভরে গেছে ছাদ। হঠাৎ দেখলে মনে হচ্ছে সেই টিভিতে ওয়েদার রির্পোটে দেখানো রঙিন গ্লোবের গা, তাতে অবশ্য দেশ চিহ্ন করার জন্য অন্য রং ও থাকে।
আনাই, আজ কিন্তু তোকে 'কিং অফ মুনা'র গল্পটা বলবই বলব। কে এই কিং? সেই আমাদের আগের জানা ছোটটি। একদিন দেখি হঠাৎ চানঘর থেকে নাংগা বেশে (তোয়ালে নিতে ভুলে যাওয়ার ফল আরকি) লাফ দিয়েই খাটে উঠে চাদরে সর্বাঙ্গ ঢেকে শুধু পা বার করে খানিক তিড়িং বিড়িং নাচ আর তার সাথেই ফরমান জারি 'আই এম দ্য কিং অফ মুনা'। মুনার রাজ্য খাড়া হল। তাতে লোক লস্কর, পাইকপেয়াদা তো চাই। কদিন ধরে বিচার বিবেচনা করে এল 'কুইন অফ মুনা'--তার মাসি, মাদার অফ দ্য কিং—আমি, আরো অনেকে। যোগ্যতা প্রমাণের কোনো ব্যাপার ছিল না, রাজা শুধু আমাদের হাতে একটি করে রুপোলি তারা স্টিকার আটকে দিলে—সেই আমাদের নতূন রাজ্যের সদস্য পরিচয়পত্র। তুই যদি সেনাপতি-টতি হতে চাস বলে দেখব'খন। রাজ্য সামলাতে সেনাপতি তো নেহাতই জরুরি তাই না। একটা ছবি তাড়াতাড়ি এঁকেছিলাম 'কিং অফ মুনা'র। দেখি খুঁজে পাই কিনা। আমার অনেক আদর জেনো--
পুনঃ- চিঠি তোমার কেমন লাগল জানিও—ভাল লাগলে ঝুলি হাতড়াতে বসে যাব তোমার জন্য।–-দিম্মু।
(পরবাস-৮৪, ১০ অক্টোবর, ২০২১)