আমি লাল মাটির দেশে, লাল ধুলোর মাঝে
মাটির রঙে রাঙানো আলখাল্লা পরা
লম্বা দাড়ি বাবরি চুল—এক বাউলকে দেখেছিলাম,
হাতে তার একতারাটি বাজে,
চোখ চলে যায় দূর অচিনের মাঝে,
আর চোখের দৃষ্টিতে যেন এক সমুদ্র,
এক অতলান্তিক গভীরতা।
তাকে শুধিয়েছিলাম, 'তোমার বাস কোথা হে পথিক?'
সে আমায় বললে, 'সব ঠাঁই মোর যেই ঘর আছে—
সেই ঘর মরি খুঁজিয়া'
তার দিকে রইলাম চেয়ে
অবাক বিস্ময়ে,
তার মনটি দেখলাম, ছোপানো গিরিমাটি,
শ্যামলে নীলে,
আর ঠিক যেন দুধ ছাঁকা ননীর মত তুলতুলে।
তার একতারায় যে সুর বাজে তা
ছড়িয়ে যাচ্ছে
মিলিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব বীণার সুরে সুরে,
প্রতিধ্বনি তুলছে অসীমের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে
কাছে দূরে।
একতারাটি ধরে তার নাচ—
'বিশ্বনাচের কেন্দ্রে যেমন ছন্দ জাগে'
তারি ছন্দে
প্রাণের আনন্দে।
তাকে বললাম, শোনাও তোমার গান,
সে সুরে মিশল, বিশ্বলোকের তান,
আমি অবাক হয়ে বললাম, 'তুমি কেমন করে
গান করো হে গুণী,
আমি অবাক হয়ে শুনি।'
গান গাইতে গাইতে সে মিলিয়ে গেল
পথের বাঁকে
দিগন্তের সূর্যাস্তের গেরুয়া সীমানায়।