Sensation
Jibanananda Das


Translated from the Bangla by
Clinton B. Seely



Into the half light and shadow go I. Within my head
Not a dream, but some sensation works its will.
Not a dream, not peace, not love,
A sensation born in my very being.
I cannot escape it
For it puts its hand in mine,
And all else pales to insignificance—futile, so it seems,
All thought—all times of prayer,
Seem empty,
Empty, so it seems.

Who can go on, like the simple folk?
Who can stop within this light and darkness
Like the simple people? Who can speak
Like them today? Who can know
For certain anymore? Who seeks to understand
The carnal savors anymore? Who apprehends the joys
Of life anymore, like everyman?
And sows seeds anymore like everyman?
Where is that relish? And who, hungry for the harvest,
Has smeared himself with scents of earth,
Is anointed with the scents of water,
Has gazed toward light with rapt attention
And gained a peasant heart—
Who would anymore remain awake upon this earth?
Not a dream—not peace—but some sensation is at work
Within my head.

When I walk along the beach, or cross from shore to shore,
I try to ignore it.
I seize it like I would a dead man's skull
And wish to smash it on the ground. Yet it spins like a living head
All around my head,
All about my eyes,
Encircling my chest.
I move, it too comes along with me.

I stop—
It halts also.

As I take a seat among other beings
Am I alone becoming estranged
Because of my mannerisms?
Is it just my eyes that are bedazzled?
Is it just my path that's blocked?

Those born into this world
As children,
Those who spent much time
Giving birth in turn to children,
Or those who must produce today
The children, or they who come to the sown fields of this world
To give birth—to give birth—
Is not my heart
Like theirs, their heart and head? Is not their mind
Like my mind?
Then why am I so alone?
Yet I am all alone.

Did I not raise my hand to see it hold a peasant's plough?
Have I not drawn water by the pail?
Have I not, time and again, gone with sickle to the fields?
How many wharves and rivers have I been to
Like fisherfolk?
Algae from a pond, the smell of fish
Engulfed my body.
—All these tastes.
—All these I've had. My life has flowed
Like unchecked winds.
My mind slept as I lay beneath the stars
One day.
All these desires
I knew once—unchecked—unbounded.
Then I left them all behind.
I've looked at women lovingly.
I've looked with apathy at women.
With hate I've looked at women.

She has loved me,
And come near.
She has paid no heed to me.
She has hated me and gone away—though I called her time and time again,
Adoring her.
Yet it was actually practiced one day—this love.
I paid no heed to her words of contempt,
No attention to the anger of her hate,
And went my own way. I forgot
That star—whose sinister influence
Blocked my path of love, over and over and over again.
Still this love—dust and mud.

Within my head
Not a dream, not love, but some sensation is at work.
I leave all gods behind
And come close to my heart—
I speak to this heart.
Why does it grumble to itself, alone, like churning waters?
Is it never weary? Does it never have a moment's peace?
Will it never ever sleep? Will it not enjoy just
Resting calmly? or not know the joy
Of gazing at the face of man?
Of gazing at the face of woman?
Of gazing at children's faces?

This sensation—only this desire
What does it gain, immense—profound?
Does it not wish to leave the beaten paths
And seek the starry span of sky? Has it vowed
To look upon that man's face?
To look upon that woman's face?
To look upon those children's faces?
Those sickly shadows under eyes,
The ears that cannot hear,
The hunchback—a goiter that arose upon the flesh,
A spoiled cucumber—chancred pumpkin,
All that came to be within the heart of man
—All that.



বোধ


আলো-অন্ধকারে যাই—মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন্‌ এক বোধ কাজ করে;
স্বপ্ন নয়—শান্তি নয়—ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়;
আমি তারে পারি না এড়াতে,
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাজ তুচ্ছ হয়—পণ্ড মনে হয়,
সব চিন্তা—প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়।

সহজ লোকের মতো কে চলিতে পারে!
কে থামিতে পারে এই আলোয় আঁধারে
সহজ লোকের মত; তাদের মতন ভাষা কথা
কে বলিতে পারে আর? শরীরের স্বাদ
কে বুঝিতে চায় আর? প্রাণের আহ্লাদ
সকল লোকের মতো কে পাবে আবার!
সকল লোকের মতো বীজ বুনে আর
স্বাদ কই! ফসলের আকাঙ্ক্ষায় থেকে,
শরীরে মাটির গন্ধ মেখে,
শরীরে জলের গন্ধ মেখে,
উৎসাহে আলোর দিকে চেয়ে
চাষার মতন প্রাণ পেয়ে
কে আর রহিবে জেগে পৃথিবীর 'পরে?
স্বপ্ন নয়—শান্তি নয়—কোন্‌ এক বোধ কাজ করে
মাথার ভিতরে।

পথ চ'লে পরে—পারাপারে
উপেক্ষা করিতে চাই তারে;
মড়ার খুলির মতো ধ'রে
আছাড় মারিতে চাই, জীবন্ত মাথার মতো ঘোরে
তবু সে মাথার চারিপাশে,
তবু সে চোখের চারিপাশে,
তবু সে বুকের চারিপাশে;
আমি চলি, সাথে-সাথে সেও চ'লে আসে।

আমি থামি—
সেও থেমে যায়;

সকল লোকের মাঝে ব'সে
আমার নিজের মুদ্রাদোষে
এমি একা হতেছি আলাদা?
আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমার পথেই শুধু বাধা?

জন্মিয়াছে যারা এই পৃথিবীতে
সন্তানের মতো হ'য়ে—
সন্তানের জন্ম দিতে-দিতে
যাহাদের কেটে গেছে অনেক সময়,
কিংবা আজ সন্তানের জন্ম দিতে হয়
যাহাদের; কিংবা যারা পৃথিবীর বীজখেতে আসিতেছে চ'লে
জন্ম দেবে—জন্ম দেবে ব'লে;
তাদের হৃদয় আর মাথার মতন
আমার হৃদয় না কি? তাহাদের মন
আমার মনের মতো না কি?
—তবু কেন এমন একাকী?
তবু আমি এমন একাকী।

হাতে তুলে দেখিনি কি চাষার লাঙল?
বাল্‌টিতে টানিনি কি জল?
কাস্তে হাতে কতোবার যাইনি কি মাঠে?
মেছোদের মতো আমি কতো নদী ঘাটে
ঘুরিয়াছি;
পুকুরের পানা শ্যালা—আঁশ্‌টে গায়ের ঘ্রাণ গায়ে
গিয়েছে জুড়ায়ে;
—এই সব স্বাদ;
—এ-সব পেয়েছি আমি; বাতাসের মতন অবাধ
বয়েছে জীবন,
নক্ষত্রের তলে শুয়ে ঘুমায়েছে মন
একদিন;
এই সব সাধ
জানিয়াছি একদিন—অবাধ—অগাধ;
চ'লে গেছি ইহাদের ছেড়ে;
ভালোবেসে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
অবহেলা ক'রে আমি দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
ঘৃণা করে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে;

আমারে সে ভালোবাসিয়াছে,
আসিয়াছে কাছে,
উপেক্ষা সে করেছে আমারে,
ঘৃণা ক'রে চ'লে গেছে—যখন ডেকেছি বারে-বারে
ভালোবেসে তারে;
তবুও সাধনা ছিলো একদিন—এই ভালোবাসা;
আমি তার উপেক্ষার ভাষা
আমি তার ঘৃণার আক্রোশ
অবহেলা ক'রে গেছি; যে-নক্ষত্র—নক্ষত্রের দোষ
আমার প্রেমের পথে বার-বার দিয়ে গেছে বাধা
আমি তা ভুলিয়া গেছি;
তবু এই ভালোবাসা—ধূলো আর কাদা—।

মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়—প্রেম নয়—কোনো এক বোধ কাজ করে।
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চ'লে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরেঃ
সে কেন জলের মতো ঘুরে-ঘুরে একা কথা কয়!
অবসাদ নাই তার? নাই তার শান্তির সময়?
কোনোদিন ঘুমাবে না? ধীরে শুয়ে থাকিবার স্বাদ
পাবে না কি? পাবে না আহ্লাদ
মানুষের মুখ দেখে কোনোদিন!
মানুষীর মুখ দেখে কোনোদিন!
শিশুদের মুখ দেখে কোনোদিন!

এই বোধ—শুধু এই সাধ
পায় সে কি অগাধ—অগাধ!
পৃথিবীর পথ ছেড়ে আকাশের নক্ষত্রের পথ
চায় না সে? করেছে শপথ
দেখিবে সে মানুষের মুখ?
দেখিবে সে মানুষীর মুখ?
দেখিবে সে শিশুদের মুখ?
চোখে কালো শিরার অসুখ,
কানে যেই বধিরতা আছে,
যেই কুঁজ—গলগণ্ড মাংসে ফলিয়াছে
নষ্ট শসা—পচা চাল্‌কুমড়ার ছাঁচে,
যে-সব হৃদয়ে ফলিয়াছে
—সেই সব।


Notes:

বোধ/"Sensation," published in Pragati (প্রগতি, "Progress"), August, 1929; included in Gray Manuscripts (ধূসর পাণ্ডুলিপি).

 


Illustrated by Nilanjana Basu. Nilanjana has been illustrating regularly for Parabaas. She is curently based in California.

 

Translation published in Parabaas: December, 2011