In Camp
Jibanananda Das
Translated from the Bangla by
Clinton B. Seely
Here on the edge of the forest I pitched camp.
All night long in pleasant southern breezes
By the moon's light
I listen to the call of a doe in heat.
To whom is she calling?
Somewhere the deer are hunted tonight.
Hunters entered the forest today.
I too seem to catch their scent,
As I lie here upon my bed
Not drowsy at all
In this spring night.
Forest wonder everywhere,
An April breeze,
Like the taste of moonlight.
A doe in heat calls all night long.
Somewhere deep in the forest—beyond the reach of moonbeams—
All stags hear her sounds.
They sense her presence,
Come toward her.
Now, in this night of wonder
Their time for love arrives.
That sister of their hearts
In moonlight calls them from forest cover—
To quench their thirst—to smell—to savor!
As if this night's forest were free of tigers!
No clear fear fills those stags' breasts tonight,
Not even the shadow of uncertainty.
There is only thirst,
Excitement.
Perhaps wonder wakes in the cheetah's breast as well at the beauty of that doe's face.
Lust-longing-love-desire-dreams burst forth
In this springtide night.In this springtide night.
Here is my nocturne.
One by one deer come from the wooded deep,
Leaving behind all water's sounds in search of another assurance.
Forgetting tooth and claw, they approach their sister there
Beneath that sundari tree, bathed in moonlight.
As man draws near his salty woman, lured by scent, so come those deer.
I sense them—
The sound of their many hooves.
In moonlight calls that doe in heat.
I can no longer sleep.
As I lie here
I hear gunshots
Again I hear the sounding guns.
The doe in heat calls once more in the light of the moon.
As I lie fallen here alone
A weariness wells within my heart
While I listen to the sound of guns
And hear that doe's call.
Tomorrow she will return.
In the morning, by daylight, she can be seen.
Nearby lie her dead lovers.
Men have taught her all this.
I shall smell venison upon my dinner dish.
Has not the eating of flesh ceased?
But why should it?
Why must I be pained to think of these deer—
Am I not like them?
On some spring night
On one of life's wondrous nights
Did not someone come into the moonlight, call me too, in the pleasant southern breezes
Like that doe in heat?
My heart, a stag,
Forgetting the violence of this world,
All caution cast to the winds—all fear of the cheetah's eyes—
Had not it yearned to possess you?
When, like those dead deer, the love in my heart
Lay caked with blood and dust,
Did not you, like this doe, live on
Through life's wondrous night
One spring night?
You too had learned from someone!
And we lie here, our flesh like that of dead animals.
All come, then fall in the face of separation—separation and death—
Like those slain deer.
By living-loving-longing for love, we are hurt, we hate and die,
Do we not?
I hear the report of a double-barreled gun.
That doe in heat calls on.
No sleep comes to this heart of mine
As I lie here, alone.
Yet one must silently forget the thunder of those guns.
Night speaks of other things upon camp beds.
They by whose barrels deer perished tonight,
Who relished flesh and bone of deer upon their dinner plates,
They too are like you.
Their hearts too wither there in sleeping bags.
Thinking—just thinking.
This pain, this love resides everywhere,
In the locust, the worm, in the breast of man,
In the lives of us all.
Like those slain deer in spring's moonlight
Are we all.
ক্যাম্পে
এখানে বনের কাছে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি;
সারারাত দখিনা বাতাসে
আকাশের চাঁদের আলোয়
এক ঘাইহরিণীর ডাক শুনি,—
কাহারে সে ডাকে!
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
বনের ভিতরে আজ শিকারীরা আসিয়াছে,
আমিও তাদের ঘ্রাণ পাই যেন,
এইখানে বিছানায় শুয়ে-শুয়ে
ঘুম আর আসে নাকো
বসন্তের রাতে।
চারিপাশে বনের বিস্ময়,
চৈত্রের বাতাস,
জ্যোৎস্নার শরীরের স্বাদ যেন,
ঘাইমৃগ সারারাত ডাকে;
কোথাও অনেক বনে—যেইখানে জ্যোৎস্না আর নাই
পুরুষ-হরিণ সব শুনিতেছে শব্দ তার;
তাহারা পেতেছে টের,
আসিতেছে তার দিকে।
আজ এই বিস্ময়ের রাতে
তাহাদের প্রেমের সময় আসিয়াছে;
তাহাদের হৃদয়ের বোন
বনের আড়াল থেকে তাহাদের ডাকিতেছে জ্যোৎস্নায়,—
পিপাসার সান্ত্বনায়—আঘ্রাণে—আস্বাদে!
কোথাও বাঘের পাড়া বনে আজ নাই আর যেন!
মৃগদের বুকে আক কোনো স্পষ্ট ভয় নাই,
সন্দেহের আবছায়া নাই কিছু;
কেবল পিপাসা আছে,
রোমহর্ষ আছে।
মৃগীর মুখের রূপে হয়তো চিতারও বুকে জেগেছে বিস্ময়!
লালসা-আকাঙ্ক্ষা-সাধ-প্রেম-স্বপ্ন স্ফূট হ'য়ে উঠিতেছে সব দিকে
আজ এই বসন্তের রাতে;
এইখানে আমার নক্টার্ন্—।
একে একে হরিণেরা আসিতেছে গভীর বনের পথ ছেড়ে,
সকল জলের শব্দ পিছে ফেলে অন্য এক আশ্বাসের খোঁজে
দাঁতের-নখের কথা ভুলে গিয়ে তাদের বোনের কাছে ওই
সুন্দরী গাছে নিচে—জ্যোৎস্নায়!—
মানুষ যেমন ক'রে ঘ্রাণ পেয়ে আসে তার নোনা মেয়েমানুষের কাছে হরিণেরা আসিতেছে।
—তাদের পেতেছি আমি টের
অনেক পায়ের শব্দ শোনা যায়,
ঘাইমৃগী ডাকিতেছে জ্যোৎস্নায়।
ঘুমাতে পারি না আর;
শুয়ে-শুয়ে থেকে
বন্দুকের শব্দ শুনি।
চাঁদের আলোয় ঘাইহরিণী আবার ডাকে;
এইখানে প'ড়ে থেকে একা-একা
আমার হৃদয়ে এক অবসাদ জ'মে ওঠে
বন্দুকের শব্দ শুনে শুনে
হরিণীর ডাক শুনে শুনে।
কাল মৃগী আসিবে ফিরিয়া;
সকালে—আলোয় তারে দেখা যাবে—
পাশে তার মৃত সব প্রেমিকেরা প'ড়ে আছে।
মানুষেরা শিখায়ে দিয়েছে তারে এই সব।
আমার খাবার ডিশে হরিণের মাংসের ঘ্রাণ আমি পাব,
... মাংস-খাওয়া হল তবু শেষ?
... কেন শেষ হবে?
কেন এই মৃগদের কথা ভেবে ব্যথা পেতে হবে
তাদের মতন নই আমিও কি?
কোনো এক বসন্তের রাতে
জীবনের কোনো এক বিস্ময়ের রাতে
আমাকেও ডাকে নি কি কেউ এসে জ্যোৎস্নায়—দখিনা বাতাসে
ওই ঘাইহরিণীর মত?
আমার হৃদয়—এক পুরুষহরিণ—
পৃথিবী সব হিংসা ভুলে গিয়ে
চিতার চোখের ভয়—চমকের কথা সব পিছে ফেলে রেখে
তোমাকে কি চায় নাই ধরা দিতে?
আমার বুকের প্রেম ঐ মৃত মৃগদের মত
যখন ধূলায় রক্তে মিশে গেছে
এই হরিণীর মত তুমি বেঁচেছিলে নাকি
জীবনের বিস্ময়ের রাতে
কোনো এক বসন্তের রাতে?
তুমিও কাহার কাছে শিখেছিলে!
মৃত পশুদের মত আমাদের মাংস ল'য়ে আমরাও প'ড়ে থাকি;
বিয়োগের—বিয়োগের—মরণের মুখে এসে পড়ে সব
ঐ মৃত মৃগদের মত—।
প্রেমের সাহস সাধ-স্বপ্ন ল'য়ে বেঁচে থেকে ব্যথা পাই, ঘৃণা-মৃত্যু পাই;
পাই না কি?
দোনলার শব্দ শুনি।
ঘাইমৃগী ডেকে যায়,
আমার হৃদয়ে ঘুম আসে নাকো
একা-একা শুয়ে থেকে;
বন্দুকের শব্দ তবু চুপে-চুপে ভুলে যেতে হয়।
ক্যাম্পের বিছানায় রাত তার অন্য এক কথা বলে;
যাহাদের দোনলার মুখে আজ হরিণেরা ম'রে যায়
হরিণের মাংস হাড় স্বাদ তৃপ্তি নিয়ে এল যাহাদের ডিশে
তাহারাও তোমার মতন,—
ক্যাম্পের বিছানায় শুয়ে থেকে শুকাতেছে তাদেরো হৃদয়
কথা ভেবে—কথা ভেবে-ভেবে।
এই ব্যথা,—এই প্রেম সব দিকে র'য়ে গেছে,—
কোথাও ফড়িঙে-কীটে,—মানুষের বুকের ভিতরে,
আমাদের সবের জীবনে।
বসন্তের জ্যোৎস্নায় ওই মৃত মৃগদের মত
আমরা সবাই।
Notes:
ক্যাম্পে/"In Camp," published in Paricay (পরিচয়, "Acquaintances"), January, 1932. This poem caused a
bit of controversy, both before and after publication. Before publication, the editor of Paricay, Sudhindranath Datta, complained of incomprehensibility. After publication,
critic Sajanikanta Das complained of obscenity. Some, but not all, of both complaints
stemmed from the expression "ghai harini," translated here as "doe in heat." "Harini" is
perfectly intelligible to Bengali speakers, meaning the female deer; "ghai," however,
comes from the Assamese language and refers to a live decoy, used to lure game.
Jibanananda, who, according to his brother, never hunted in his life, would have learned
this term as a young man from professional hunters whose staging area for expeditions
into the Sundarbans would have been in many cases Barisal, since it lies atop the
northeastern edge of that jungle. In Jibanananda's own words, the melody that pervades
"In Camp" is one "of life's helplessness—for all life, that of man, of worm, of locust."
The sundari tree figures prominently in the Sundarban jungles; see the note for
সুন্দরবনের গল্প/"A Tale of the Sundarban Jungles."
Translation published in Parabaas: December, 2011