Subscribe to Magazines



পরবাসে সুনন্দন চক্রবর্তীর
আরো লেখা



ISSN 1563-8685




বাঙালের নতুন বাতিক


পাখি সন্ধান

বাঙাল মাত্রেই বাতিকগ্রস্ত। আচমকা ভিটেমাটি ছেড়ে দুদ্দাড়িয়ে সীমান্ত পেরোনোর ট্রমা তো চাট্টিখানি কথা নয়। হলই-বা সে সত্তর পঁচাত্তর বছর আগের ব্যাপার। আমরা যারা পরে জন্মেছি তাদের জিন-এও ছাপ রেখে গেছে দেশভাগ। বিশ্বাস না হলে সিদ্ধার্থ মুখার্জি-র ‘জিন’ পড়ে দেখে নেবেন। কী সুন্দর করে লেখা আছে সব। এমনকি আমার মতো বাঙালও বুঝতে পারে। বিজয়গড়ে আমাদের তিনটে বাড়ি পরে অরুণমামার শখ ছিল কাঠের কাজের। তবে উনি বাড়ির বিভিন্ন আসবাবের কাঠ দিয়ে নানা নতুন জিনিস বানাতেন বলে খুব অশান্তি হত সংসারে। প্রথমে যেমন উনি ছেলের পড়ার টেবিলটা কেটে জাল-টাল লাগিয়ে একটা মুর্গির খাঁচা বানিয়ে ফেললেন। এখন মুশকিল হল অরুণমামি দুর্দান্ত শুচিবায়ুগ্রস্ত, ওবাড়ির সাত হাতের মধ্যে মুর্গি ঢোকা বারণ। ফলে সেই মুর্গির খাঁচায় রাখা হত জ্বালানির কাঠকুটো। তখনকার দিনে আমাদের রিফিউজি কলোনিতে তো বটেই সারা রাজ্যেই রান্না হত কয়লার বা কাঠের আঁচে। আরেকবার তো শোয়ার খাট কেটে মিটসেফ বানিয়ে ফেললেন। সেই গোটা শীতকালটা অরুণমামাকে মাটিতে বিছানা করে শুতে হয়েছিল। মামি মিটসেফটা মাটিতে পেতে তাঁর ওপর বিছানা করে শুতেন। ওঁর বাবা বিয়েতে দিয়েছিলেন বলে সে মিটসেফ হয়ে যাওয়া খাটের ওপর অরুণমামার কোনো হক ছিল না। কিন্তু যেবার উনি সদর দরজা কেটে দুটো বাগানে বসার বেঞ্চ বানিয়ে ফেললেন সেরাতে ওঁকে সারারাত ওই বেঞ্চে কাটাতে হল। খোলা দরজা আগলে মামি পাশে দা নিয়ে শুয়ে থাকলেন যাতে চোর বা মামা ঢুকতে না পারেন। এরপর অরুণমামা কাঠের কাজ ছেড়ে দিয়ে টেস্টটিউবে পিঁপড়ে পোষা শুরু করলেন। কিন্তু সে সম্পূর্ণ অন্য গল্প।

Barred jungle owlet

এখন, যাদের সঙ্গে পাহাড়ে চরে বেড়িয়েছি তাদের দু-চারজনের হাবভাব ছিল খুব সন্দেহজনক। সারাদিন হেঁটে ক্লান্ত হয়ে শিবির পাতার পর চাট্টি নাকেমুখে গুঁজেই তারা হাতে দূরবীন, ক্যামেরা আর একটা ঢাউস বই নিয়ে বেরিয়ে পড়ত। তখন তাদের কথোপকথনও নিতান্ত দুর্বোধ্য হয়ে উঠত। একজন বলত ওটা স্ট্রিয়েটেড নয়। অন্যজন ততোধিক জোরের সঙ্গে বলত দূরবীনে আমি নিজের চোখে দেখেছি গলার নীচে লম্বা লম্বা দাগ। পরদিন আবার নিশুত রাত থাকতেই তারা বেরিয়ে পড়ত। আবার একটা তর্কবিতর্ক হত। কিছুদিন যাওয়ার পর মালুম হল ও হরি এরা পাখি দেখে। পাঠক, ভুল বুঝবেন না, পাখি মানে পাখি। মানে সেলিম আলির মতো করে দেখা। বা তাঁকে অনুসরণ করে দেখা। সম্বৎসর যারা পাহাড়ে ঘুরে বেড়ায় তারাও একটু খ্যাপাটেমার্কা হয়। কাজেই ও নিয়ে আর মাথা ঘামাতাম না। তারপর ভালো ছবি তোলার টোপ দিয়ে এরা আমাকেও ব্যাপারটার মধ্যে জড়িয়ে ফেলল। প্রথম প্রথম রথ দেখা কলা বেচার মতো পাহাড়ে হাঁটতে গিয়ে বেশ কিছু রঙচঙে পাখি চিনে ফেললাম। দিব্যি দেখতে তারা। ঝকমকে পালক আর ঝুঁটির বাহার, কারো ঝোলা লেজ, কেউ দীর্ঘচঞ্চু, মোটেও আমাদের কাক, চড়াই, শালিকের মতো দেখতে নয়। কিন্তু ট্রেক-এ বড়ো মালপত্র বইতে হয়। সেখানে ছোটো ছোটো পাখির ছবি তুলতে যে লম্বা লম্বা ভারী ভারী লেন্স নিয়ে যেতে হয় সেগুলো নিয়ে যাওয়া মুশকিল। তার মানে প্রকৃতি আপনাকে আপনার প্রকৃতির বিরুদ্ধে একনিষ্ঠ হওয়ার দিকে ঠেলে দেবে। হয় পাহাড়, নয় পাখি।


Great Hornbill

তো ঘোর শীতকালে ট্রেক বিশেষ করা যায় না বলে পাখি দেখার সবচে ভালো ঋতু এ-দেশে শীত। অন্তত আমাদের দলের কাছে। সেই থেকে রীতি হয়ে গেল ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে দেশের এ-কোনা ও-কোনা দাবড়ে বেরিয়ে দলবেঁধে পাখি দেখা। বাতিক ছাড়া কী-ই বা বলবেন একে! এ-দলে রয়েছে গোটা তিনেক প্রখর তরুণ-তরুণী। পাখিদের হাল হকিকত তাদের ঠোঁটস্থ। আর সে কি বাজপাখির নজর তাদের। ধূসর রঙের ঘাসের বনের মধ্যে আরও ধুসর একটা ছায়া দেখা গেলেই তারা গড়গড় করে সে-পাখির ঠিকুজি-কুলুজি সব আউড়ে দেয়। আমার কাছাকাছি বয়েসের আর যে দুজন আছে তারাও পটাপট তার ছবি তুলে ফেলে। সব হট্টগোল স্তিমিত হয়ে এলে আমি কুণ্ঠিতভাবে জিজ্ঞেস করি কোথায়? সঙ্গীরা অনেক ধৈর্য ধরে বোঝায়, ওই যে গাছের ডালের ছায়াটা ঘাসজমিটার ওপর এসে পড়েছে তার একদম শেষে চলে যাও, তারপর একটু ডানদিকে কোনা করে ওঠো, একটা হালকা নড়াচড়া দেখতে পাবে, ওটাকে ফলো করো। এই রকম পাখিপড়া করে আমাকে পাখি দেখাচ্ছে দল আজ বছর চারেক। দলের কেউ নতুন রাম-দা কিনেছে বলে জানি না।

এবার ২৭শে ফেব্রুয়ারি আমরা চললাম অরুণাচল প্রদেশ আর আসাম-এর কয়েকটা জঙ্গলে পাখির খোঁজে। কিন্তু তার জন্যে আমাদের প্রথমে টেস্ট করাতে হল। করোনা নেগেটিভ না হলে প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু যখন গুয়াহাটি বিমানবন্দরের বাইরে যারা কাগজ পরীক্ষার জন্যে বসে আছেন তাঁরা পরীক্ষার রিপোর্ট আছে শুনেই যখন হাত নেড়ে বেরিয়ে যেতে বললেন একটু হতাশ হলাম। এক ইনোভা আমাদের জন্যে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে অবশেষে আবার আমাদের এয়ারপোর্ট পৌঁছে দিয়ে তবে তার ছুটি। আজ রাতে আমরা যাব ওরাং। প্রায় দশটা বেজে যাবে আস্তানায় পৌঁছতে। আমরা ভাবছিলাম রাস্তার কোনো ধাবায় খেয়ে নেব কি না। কিন্তু মানব — যে দলে সবচেয়ে ছোটো কিন্তু আসল দলপতি — সে আমাদের হোমস্টেতে ফোন করে জানতে পারল সেখানে ইতিমধ্যেই আমাদের রাতের খাওয়ার জন্যে দেশি মুর্গি রান্না শুরু হয়ে গেছে। তাই আমরা রাস্তায় দু-চারবার চা ইত্যাদি খেতে থেমে হুড়পাড় করে চলে এলাম সেখানে। বনে প্রবেশপথের প্রায় গায়ে লাগানো এই হোমস্টে অতি মনোরম, ছোটো ছোটো ডাবল বেডওয়ালা কয়েকটা কটেজ, লাগোয়া বাথরুম। বাহুল্য নেই, কিন্তু পরিপাটি। এক পশলা বৃষ্টি হল। আমাদের ঘরে একটা লম্বা টেবিল লাগিয়ে খানা লাগিয়ে দেয়া হল। পাখি দেখার বাতিক থাকলে আপনাকে শুতে হবে তাড়াতাড়ি, কারণ উঠতে হবে কাকভোরে। সকালের পর পাখিদের তেমন সাক্ষাৎ মেলে না।


Pied Kingfisher
ওরাং তুলনায় ছোটো জঙ্গল। একবেলাতেই অনেকটা দেখে ফেলা যায়। আমাদের ইচ্ছে ছিল দু-বেলা ঘোরার। কিন্তু সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। ফলে আমাদেরও মন খারাপ। পাখিরাও এই সময়ে ঘাপটি মেরে থাকে। আর ছবি তোলার জন্যে তো এর থেকে খারাপ আলো হয় না। চাদ্দিক ঘোলাটে মেরে আছে। তবু হুড খোলা জিপসি নিয়ে বেরিয়ে পড়া হল। টিয়ার ঝাঁকের কলতান কেবল স্তব্ধ নয়। আর মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে বারবেটের ডাক। এর মধ্যে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে ছোটো ছোটো পাখির সিল্যুয়েট। একটা ওয়াচটাওয়ার-এর কাছাকাছি পৌঁছে দেখা গেল এক গণ্ডার নির্বিকারভাবে পাতা চিবুচ্ছে। তারপর খুঁজে পাওয়া গেল এক গ্রে-হেডেড ফিশ ঈগল। ছবি তোলার বিস্তর কায়দাকানুনেও যখন সে বিচলিত হল না মানব বলল কাছাকাছি নিশ্চয় বাসা আছে। হাত-পা ছাড়িয়ে নিতে নামা হল টাওয়ার-এর সামনে। জলাটার এক কোনায় দেখলাম প্র্যাটিঙ্কোল-এর ঝাঁক। একটা ওপেন-বিল স্টর্ক। আমার বুজুর্গ দোস্তরা শিখিয়েছেন পাখির নাম বলার সময় ইংরেজি নাম বলতে। কেননা স্থানীয় নামের রকমফের হয়। সবাই মিলে পরামর্শ হল এই আবহাওয়ায় এখানে আর বিকেলে রাইড না নিয়ে আমরা সোজা চলে যাব নামেরি।


Indo-Tibetan Roller
নামেরির জঙ্গল ক্যাম্প গ্রামটার শেষ প্রান্তে। নিরিবিলি, একটা চৌকোনা ঘাসের জমি ঘিরে লম্বা লম্বা ঠ্যাং-এর ওপর বসানো গোটাকয় বারান্দাওয়ালা কটেজ। ভারি শান্তির জায়গা। কয়েকটি হাসিখুশি চটপটে তরুণ এটা চলান। সবার মতো তাঁরাও দুঃখ করলেন যে একটা গোটা বছর প্রায় বৃথা গেছে। প্যানডেমিকের পর আমরাই প্রথম অতিথি। বিকেলে হাঁটতে বেরিয়ে দেখলাম থাকার অন্য জায়গাগুলোও বেশির ভাগ খাঁ খাঁ করছে। দু-চারটে সম্পূর্ণ বন্ধ। গ্রামের পথে একটা ফায়ারটেইল সানবার্ড দেখে বিষাদ কাটানো গেল খানিক।

পরেরদিন সক্কাল সক্কাল বেরোনো হল রিসর্টের গাড়ির মাথায় র‍্যাফট বেঁধে। আজ আমরা অনেক্ষণ জিয়া ভরেলি নদীতে র‍্যাফটিং করতে করতে পাখিদের বিরক্ত করব। না, না আর কিছু না, সেরেফ দেখব, পারলে ছবি তুলব। কিন্তু ধরুন রোজ যদি কিছু উজবুক এসে আপনার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে বিরক্ত আপনি হবেন কি না। তবে কিছুর যদি দেখা নাও মেলে এমন নামের নদীতে নৌকাবিহার করেই তো আপনার জিয়া ভরে যাবে। যে অংশটায় আমদের ঘোরার অনুমতি আছে সেখানে নদী খরস্রোতা নয়। হোয়াইট ওয়াটার র‍্যাফটিং-এর মতো সামাল সামাল নয় ব্যাপারটা। দু-একটা জায়গা শুধু বাড়তি স্রোতওয়ালা। মূলত রুডিশেল ডাক-এর ঝাঁক উড়িয়ে ভেসে চলল নৌকা। রয়েছে করমোরান্ট-রা। গ্রেটার করমোরান্ট-রাও ওড়াউড়ি করছে শিকারের খোঁজে। রয়েছে হোয়াইট ব্রেস্টেড কিংফিশার আর কমন কিংফিশারেরা। নদীর মধ্যে মধ্যে চরায় বা পারে রয়েছে কমন স্যান্ডপাইপার, উড স্যান্ডপাইপার, ব্রোঞ্জউইংড জাকানা। কেউ আমাদের নৌকা কাছাকাছি এলে বিরক্ত হয়ে উড়ে চলে যাচ্ছে, কেউ আমাদের পাত্তা না দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে খাবারের সন্ধানে। কিন্তু আমরাও আজ তাদের পাত্তা দিচ্ছি না। মানব বলে দিয়েছে আজ আমদের লক্ষ্য আইবিসবিল, আমাদের দলের কাছে যা অদৃষ্টপূর্ব। বড়ো লাজুক পাখি এই আইবিসবিল।

আমাদের মাঝিরা বুক বাজিয়ে বলেছিলেন আমাদের আইবিসবিল দেখাবেনই। কথাও রেখেছিলেন তঁরা। একটা বাঁক ঘুরে এক ঝলকের শুভদৃষ্টি, তারপরই বঁধুয়া উড়ে চলে গেল। ধূসর রঙের পিঠ, শাদা বুক, কাস্তের মতো লাল রঙের ঠোঁট। র‍্যাফট-এর একটা মুশকিল সে স্রোতের সঙ্গে চলে। আর এরা উড়ে গেছে আমাদের পিছন দিকে। তাহলে কি আর কোনো উপায় নেই? নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে দুই মাঝি লাফ দিয়ে নেমে পড়ল হাঁটুসমান জলে, তারপর একটু কোনাকুনি করে ঠেলে তারা চেষ্টা করতে লাগল যাতে নৌকোটা বালি আর নুড়ির যে ছোট্ট জমির ফালিটা থেকে আইবিসবিলরা উড়ে গেছে সেখানে আমাদের র‍্যাফটটাকে ভেড়াতে। বেশ শক্ত কাজ। নৌকোর ওজন কমানোর জন্যে আমি আর মানবও নেমে পড়লাম। সম্মিলিত চেষ্টায় তরী তীরে উঠল। জমিটার শেষপ্রান্ত অবধি হেঁটে গিয়ে দেখা গেল তারপর আবার খরস্রোতা একফালি নদী, তার ওপারে আরও ছোটো এক ফালি চড়া। একটা নুড়ির ঢিবির ওপারে চলে গেছে পাখিগুলো। মাঝি দুজনের পিছু পিছু আমি আর মানব নেমে পড়লাম সেই হাঁটুজলের নদীতে। উদ্দেশ্য সন্তর্পণে জলটুকু পার হয়ে গিয়ে আরেকবার যদি আইবিসবিলদের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়।

নদীতে গভীরতা নেই কিন্তু টান আছে। আর পায়ের তলায় বালি নয়, রয়েছে অসংখ্য নানা আকারের নুড়ি। তাদের কোনটি তীক্ষ্ণ, কোনটি মসৃণ এবং পিছল এদিকে হাতে ক্যামেরা। জলের মধ্যে দিয়ে আমার শম্বুকগতি দেখে সঙ্গীরা বিভিন্ন তির্যক মন্তব্য করে উৎসাহ দিতে থাকলেন। এটা একটা বাঙাল চরিত-লক্ষণ। ধরুন আপনার নিশুত রাতে সেরিব্রাল এটাক হয়েছে (সে আপনার শত্তুরের হোক) পাড়ার যে ছেলেরা আপনাকে তিন হাসপাতাল ঘুরে ভর্তি করে বাড়ি ফিরিয়ে আনল তাদেরকেই আপনি ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে বিপদে পড়বেন। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের কারণে আপনার স্বরে হয়ত সামান্য জড়িমা ছিল। ওই মিটমিটে শয়তানগুলো আপনাকে নিম্নস্বরে বলবে, মেসোমসাই, সকালবেলাই ছাইপাঁশ গিলেন না, আবার শরীর খারাপ অইব। রাগের চোটে আবার যদি মাথায় রক্ত উঠে না যায় তাহলে আপনি প্রকৃত বাঙাল নন। কিন্তু কসরত করে পরের চড়াটায় পৌঁছনো বৃথা গেল। সেখানে আমরা পদার্পণ করা মাত্র আইবিলবিসের দল আবার হুশ করে উড়ে দূরে মিলিয়ে গেল।

এবারে আমাদের এইরকম ফসকানোর কপাল। বিকেলে নদী পার হয়ে যখন হেঁটে বনের মধ্যে ঢুকলাম প্রথমেই মানব খোদায় মালুম কী করে এক লম্বাটে গাছে খুঁজে পেল এক পায়েড ফলকনকে, আমদের ক্ষুদ্রতম শিকারি পাখি। কিন্তু তারপর পরপর ওরিয়েন্টাল পায়েড হর্নবিল আর একটা রিদেড হর্নবিল আমদের প্রায় চোখের সামনে এক গাছের মাথা থেকে উড়ে বনের মধ্যে মিলিয়ে গেল। ডানার শাঁইশাঁই আওয়াজ শুধু শুনলাম আমরা। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো ট্র্যাজেডি মঞ্চস্থ হল শেষ বিকেলে। গাইডের পিছনে পিছনে একটা শুঁড়িপথ ধরে এগোচ্ছিলাম আমরা। ইশারায় সে বলছিল যথাসম্ভব নিঃশব্দে আসতে। শ-খানেক গজ যাওয়ার পর আমরা দেখলাম একটু নীচে একটা জলা। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে চোখে পড়ল তিনটে শাদা-কালো বিদ্যুৎচমক। তিনটে হোয়াইট উড ডাক জল থেকে উঠে গভীরতর বনে মিলিয়ে গেল। সারা দুনিয়া নামেরি আসে এদের দেখার জন্যে। আমাদের তারা ক্যামেরা তোলার পর্যন্ত সময় দিল না। ফাটা কপাল জোড়ার কোন মলম জানা থাকলে একটু বলবেন প্লিজ।


Bar-headed Goose



(পরবাস-৮২, ১৪ এপ্রিল, ২০২১)