Subscribe to Magazines




পরবাসে পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর
আরো লেখা




ISSN 1563-8685




লর্ড ডালহৌসী ও ভারতীয় রেলের গোড়ার কথা

ভূমিকা: ভারতীয় রেলের সঙ্গে আমার যোগাযোগটা আক্ষরিক অর্থেই প্রাত্যহিক। শিয়ালদহ মেন শাখার অতি ব্যস্ত একটি স্টেশন থেকে প্রতিদিন সকালে ট্রেন ধরে যাত্রা করি শিয়ালদহ অভিমুখে অফিসের উদ্দেশ্যে। এক একটি ট্রেন স্টেশনে ঢোকে আর হাজার হাজার নিত্যযাত্রী ঝাঁপিয়ে পড়েন সেই গাড়িতে ওঠার জন্য, প্রবল খণ্ডযুদ্ধের পরে কিছু মানুষ সেঁধিয়ে যান ট্রেনের পেটের মধ্যে আর বাকিরা অপেক্ষা করেন পরবর্তী ট্রেন এবং তৎপরবর্তী যুদ্ধের প্রস্তুতিতে। অথচ, ২২শে ডিসেম্বর ১৮৫১ সালে যেদিন রুকরী থেকে পিরান কইল্যার মধ্যে এই দেশের প্রথম ট্রেন চলেছিল সেইদিন (যদিও পরীক্ষামূলক ভাবে ১৮৩৭ সালেই মাদ্রাজের Red Hills থেকে Chintadripet ব্রীজ পর্যন্ত চলেছিল এই দেশের প্রথম ট্রেন) কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পাননি যে একদিন এই ভারতীয় রেল পরিণত হবে এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল পরিষেবায়, প্রতিদিন চলবে ১১,০০০ ট্রেন, যার মধ্যে ৭,০০০ ট্রেনই যাত্রীবাহী। যা বলছিলাম, ভারতবর্ষের প্রথম রেলযাত্রার কথা, রুকরীতে কৃষিকার্যে সহায়তার জন্যই সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের পিরান কইল্যার থেকে প্রচুর পরিমাণে কাদামাটি যা নাকি ছিল অতি উর্বর তা রুকরীতে নিয়ে আসার জন্য চলেছিল এদেশের প্রথম ট্রেন। যা ছিল ভারতবর্ষের মতন কৃষিপ্রধান দেশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই রেলযাত্রার কথা অনেকের অজানা। জনপ্রিয় ধারণা হলো ভারতে প্রথম ট্রেন চলেছিল এরও দু’বছর বাদে।


আমেরিকায় তুলো চাষের মন্দা ও লর্ড ডালহৌসি: ১৮৪৬ সালে আমেরিকার তুলোচাষে প্রবল মন্দার কারণে ম্যানচেস্টার এবং গ্লাসগো শহরের ব্রিটিশ সুতো ব্যবসায়ীদের ভারতে উৎপন্ন উৎকৃষ্ট তুলোর ওপরে নজর পড়ে। এই দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের তুলোচাষীদের থেকে তুলো সংগ্রহ করে সেই তুলো বন্দরে এনে ইংল্যন্ডে পাঠাতে বহু সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়ে যাচ্ছিল। ইংরেজদের মাথায় ঘুরতে থাকে রেল ব্যবস্থা চালু করতে পারলে একমাত্র এর সুরাহা সম্ভব। ১৮৪৩ সালে লর্ড ডালহৌসি প্রস্তাব দেন কলকাতা, বম্বে এবং মাদ্রাজ বন্দরকে রেলপথে যুক্ত করতে। তার প্রথম উদ্দেশ্য যদি হয় ইংল্যান্ডে তুলো আমদানির দ্রুততা বৃদ্ধি তবে দ্বিতীয়টি ছিল দ্রুত সেনা সমাবেশের সুবিধা। রেলপথের মাধ্যমে সেনা পল্টনকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠানো অনেক সুবিধের, এই বিশাল ভূখণ্ডকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে রাখতে তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে ধুরন্ধর লর্ড ডালহৌসির অসুবিধা হয়নি। সেই বছরই ডালহৌসি, জর্জ টি ক্লার্ক নামক একজন ইঞ্জিনিয়ারকে রেলওয়ে ট্র্যাক পাতার সম্ভাবনা সরেজমিনে খতিয়ে দেখার জন্য বম্বেতে পাঠান। যদিও ১৮৩০ সালেই (মতভেদে ১৮৩২ সালে) মাদ্রাজের কিছু বিশিষ্ট অধিবাসী ইংল্যান্ডে রেল ব্যবস্থার সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ভারতে রেল পত্তনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তা সীমাবদ্ধ ছিল পূর্বে উল্লিখিত ১৮৩৭ সাালের রেল চলাচলেই। এই রেল তখন ব্যবহৃত হতো মাদ্রাজে রাস্তা তৈরির কাজে গ্রানাইট পাথর বহন করবার জন্য। এবং ডালহৌসির কাজটাও কিন্তু মোটেই সহজ হলো না। বহু বিশিষ্ট ব্রিটিশ এবং ভারতীয় নাগরিক ভারতবর্ষের বিস্তৃত জঙ্গল, পাহাড়, মরুভূমি এবং নানা প্রাকৃতিক অসুবিধার কথা উল্লেখ করে তার প্রস্তাবকে অবিবেচক, বিপজ্জনক ও অতি ব্যয়বহুল বলে তীব্র বিরোধিতা করলেন।

ওদিকে ১৮৪৫ সালে আর্থার কটন দোলেশ্‌শরমে তৈরি করলেন গোদাবরী ড্যাম কনস্ট্রাকশন রেলওয়ে। গোদাবরী নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণের পাথর সরবরাহ করা ছিল এই রেলওয়ের কাজ। ১৮৩৭ সালে মাদ্রাজে Red Hills থেকে Chintadripet bridge এর ম়ধ্যে চলা ভারতের প্রথম রেলের ইঞ্জিন তৈরি করেছিল উইলিয়াম আভেরী। যার নেপথ্যেও ছিলেন এই আর্থার কটন। ১৮৪৫ সালেই স্যার জামশেটজী জিজিবয় এবং জগন্নাথ শঙ্কর শেঠ মিলে তৈরি করলেন ইন্ডিয়ান রেলওয়ে অ্যাসোশিয়েশন।


প্রথম ভারতীয় রেল কোম্পানি: ১৮৪৭ সালের মার্চ মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে, ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে কোম্পানি (জি . আই. পি. আর.) গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বিল পেশ করা হয়, কিন্তু তৎকালীন ভারতে শাসন কার্যে লিপ্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিলের কয়েকটি ধারা নিয়ে আপত্তি তোলায় বিলটি খারিজ হয়ে যায়। ১৮৪৯ সালে রেল বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং ভারতে রেল ব্যবস্থা চালু করবার প্রধান পৃষ্ঠপোষক লর্ড ডালহৌসি যখন ভারতের গভর্নর জেনারেল পদে অভিষিক্ত হন, তখন আর এই বিলকে রোখা সম্ভবপর হয়নি। ১ই অগস্ট, ১৮৪৯ পাশ হয়ে যায় সেই বিল এবং ঐ বছরের ১৭ই অগস্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সাক্ষর হয়ে যায় জি.আই.পি.আর.-এর। কোম্পানির মূলধন ধার্য হয় ৫ লক্ষ পাউন্ড।


প্রথম যাত্রীবাহী রেলযাত্রা: বম্বে এবং থানের মধ্যে রেললাইন পাতার কাজ শেষ হয়ে যায় ১৮৫২ সালের নভেম্বর মাসেই, ঐ বছরের ১৮ই নভেম্বর কিছু রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়র ও জিআইপিআর কোম্পানির ডিরেক্টররা মিলে ট্রায়াল রান দেন সেই রেলপথে। ১৮৫৩ সালের ১৬ই এপ্রিল বম্বের বরি বন্দর থেকে থানে স্টেশনের উদ্দেশ্যে ৪০০ জন যাত্রী নিয়ে ২১ মাইল ঐতিহাসিক যাত্রাপথে রওনা দিয়ে ১৪ কোচ বিশিষ্ট ভারতের প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন প্রায় ৪৫ মিনিট বাদে যখন গন্তব্যে পৌঁছোলো, তখন থানে স্টেশনে উৎসবের চেহারা। সাহিব, সিন্ধ এবং সুলতান নামের তিনটি বাষ্পচালিত ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছিল প্রথম সেই যাত্রীবাহী ট্রেনে। দেশের প্রথম রেলযাত্রাকে ঘিরে বিপুল উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছিল, বম্বে সরকার ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে সেইদিন ছুটি ঘোষণা করেন। দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে কোম্পানি প্রস্তুতিতে কোনও ত্রুটি রাখতে চাননি সেদিন, ইংল্যান্ড থেকে আনানো হয়েছিল আটটি ইঞ্জিন আর শেষ পর্যন্ত তাদের ভেতর থেকে তিনটিকে বেঝে নেওয়া হয়েছিল। ৪০০ যাত্রীকে থানে স্টেশনে অভ্যর্থনাতেও ব্যাপক সমারোহে কোনও কার্পণ্য করেনি জি.আই.পি.আর.। মরসুমের শ্রেষ্ঠ খাদ্যসামগ্রীর ঢালাও সমারোহে, সেদিন ব্যাপক খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

চোখ দুটি বোধহয় নিজের অজান্তেই সেদিন চিকচিক করে উঠেছিল একজনের। তিনি দোর্দণ্ডপ্রতাপ লর্ড ডালহৌসী, ভারতীয় রেলের জনক। কম বিরোধিতা, ব্যঙ্গবিদ্রুপ তো তাকে সহ্য করতে হয়নি ভারতবর্ষে রেল ব্যবস্থা চালু করতে। কিন্তু তিনি অন্য ধাতুতে গড়া, বিরোধিতায় দমবার পাত্র ছিলেন না; হাল ছাড়েননি একবারের জন্যও।

পূর্ব ভারতে প্রথম রেল চলাচলের কৃতিত্ব এই রাজ্যের। ১৮৫৪ সালে হাওড়া থেকে হুগলী অবধি চলে এই রাজ্যের প্রথম ট্রেন, যাত্রাপথ ছিল ২৪ মাইল আর ঘটনাচক্রে সেই দিনটি ছিল ১৫ই অগস্ট।

প্রসঙ্গত ট্রামের ক্ষেত্রে কিন্তু এই শহর প্রথম স্থান অধিকার করবে বম্বেকে দ্বিতীয় স্থানে ঠেলে দিয়ে। ১৮৭৩ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি এদেশে প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলে শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়াম ঘাট স্ট্রীট অবধি, যার দূরত্ব ছিল ২.৪ মাইল আর বম্বেতে প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলে ১৮৭৪ সালের ৯ই মে কোলাবা এবং পারেলের মধ্যে। সে এক অন্য ইতিহাস।

অথচ কলকাতাই পেতে পারত ভারতবর্ষের প্রথম রেলযাত্রার গৌরব। তখন তিলোত্তমাই তো এদেশের রাজধানী। কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে ইংল্যান্ড থেকে প্রায় একই সময়ে বম্বে এবং হাওড়ার জন্য জাহাজে করে ইঞ্জিন ও কোচ পাঠানো হলেও, হাওড়ার জন্য ইঞ্জিন বহনকারী জাহাজ ‘এইচ এম এস গডউইন’ ভুল করে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া আর যে জাহাজটি কোচ নিয়ে আসছিল সেটি আটকে যায় বালির চড়ায়।

আর একটি বড় সমস্যা ছিল চন্দননগরের মধ্যে দিয়ে রেললাইন পাতা, কেননা চন্দননগর ছিল ফরাসি অধিকৃত শহর। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ফরাসি শাসকদের অনুমতি আদায় করতে অনেকটা সময় চলে যায় ও অবশেষে ১৮৫৪ সালের ১৫ই অগস্ট সম্ভবপর হয় পূর্ব ভারতের প্রথম রেলযাত্রা।


ইলেকট্রিক সিগন্যাল ব্যবস্থা: ১৮৫৩ সালে এ’দেশের যাত্রীবাহী ট্রেনের যাত্রা শুরু হলেও ইলেকট্রিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করতে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ ৬৭ বছর, ১৯২০ সালে বম্বের দাদার এবং কারে রোডের মধ্যে ব্যবহৃত হয় প্রথম ইলেকট্রিক সিগন্যাল। যদিও ১৮৯৭ সাল থেকেই রেল কোম্পানি শুরু করে দেয় ট্রেনের কামরায় আলোর ব্যবহার আর ১৯০২ সালে যোধপুর রেলওয়ে প্রথমবার ব্যবহার করে রেল কামরায় ইলেকট্রিক আলো।

জি.আই.পি.আর. ১৮৫৫ সালে বাইকুলাতে শুরু করে তাদের প্রথম রেলওয়ে ওয়ার্কশপ।


ভারতীয় রেলের বিভিন্ন গেজ: বর্তমানে ভারতীয় রেলে চারটি গেজ ব্যবস্থা চালু আছে। দুটি রেলওয়ে ট্রাকের অন্তর্বর্তী দূরত্বকেই গেজ বলে উল্লেখ করা হয়।

১) ব্রড গেজ – ৫’৬”
২) মিটার গেজ- ৩’৩”
৩) ন্যারো গেজ- ২’৬”
৪) ন্যারো গেজ- ২’

আরও একটি গেজের কথা উল্লেখ্য, সেটি হল, স্ট্যান্ডার্ড গেজ – ৪’৮.৫”

এটি শুধুমাত্র মেট্রো রেল, মনোরেল এবং ট্রামের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

ভারতীয় রেলের জনক লর্ড ডালহৌসী চেয়েছিলেন একটি গেজ ব্যবস্থাই সারা দেশে চালু থাকুক। ডালহৌসী প্রস্তাব দেন চার ফুট সাড়ে আট ইঞ্চি থেকে সাত ফুট দূরত্বের মধ্যবর্তী যেকোনো গেজই এই দেশের রেলের পক্ষে উপযুক্ত। রেলওয়ে বোর্ডের ডিরেক্টররা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চির ব্রড গেজের পক্ষে রায় দেন এবং ভারত সরকার ১৮৫১ সালেই এই ব্রড গেজকে ভারতীয় রেলের স্ট্যান্ডার্ড গেজ বলে মান্যতা প্রদান করেন।

এই ব্যবস্থাই চালু থাকে ১৮৬২ সাল অবধি। কিন্তু লর্ড মেয়ো ভারতের ভাইসরয় পদ গ্রহণ করার পর থেকে চিত্রটা বদলাতে থাকে। মেট্রিক সিসটেম নিয়ে মেয়ো প্রবল উৎসাহী ছিলেন, মেয়োর উৎসাহেই শুরু হয় মিটার গেজ এবং ন্যারো গেজের লাইন। মেয়োর দৃঢ় অবস্থান ছিল, যে সব ক্ষেত্রে যাত্রী সংখ্যা কম এবং রেলের লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা কম, সেইসব ক্ষেত্রে মিটার গেজ এবং ন্যারো গেজের মাধ্যমে হালকা ইঞ্জিন ব্যবহার করে রেল চালানো হবে এবং তাকে ব্যস্ত জনপদে জুড়ে দেওয়া হবে ব্রডগেজ লাইনের সঙ্গে।

যদিও মেয়োর পূর্বসূরি স্যার জন লরেন্সই চালু করে দিয়েছিলেন গেজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের কাজ, যাকে সার্থক রূপ দান করেন লর্ড মেয়ো।

ব্রড গেজের যাত্রাপথ হয় সবথেকে বেশি এবং স্বভাবতই ভারী ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

১৮৮৯ সালে ব্রডগেজের যাত্রাপথ হত ৮০০০ মাইল, মিটার গেজের ৫,০০০ মাইল আর ন্যারো গেজের ক্ষেত্রে ২৫০ মাইল।


উপসংহার: লর্ড ডালহৌসীর মানসপুত্র সেদিনের সেই নবজাতক ভারতীয় রেল আজ পত্র পুষ্পে শোভিত এক মহীরুহে পরিণত হয়েছে। দেশের প্রথম রেল বাজেট পেশ হয়ে গেছে সেই ১৯২৫ সালেই, আর সেই বছরেরই ফেব্রুয়ারি মাসের তিন তারিখে ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস এবং কুরলার মধ্যে চলেছে দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক যাত্রীবাহী ট্রেন। ধীরে ধীরে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। আজকের ভারতীয় রেলের সামনে সবথেকে বড় পরীক্ষা সঠিক সময়ে ট্রেন চালানো, যাত্রী পরিষেবা এবং সুরক্ষা প্রদান। ভারতীয় রেলের ব্যাপক ব্যাপ্তি এবং বিশাল কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণে রেখেও বলা যায় যে উন্নত দেশের রেলওয়ে ব্যবস্থার থেকে ভারতীয় রেলের অনেক কিছু শেখার আছে। প্রতি বছর রেল দুর্ঘটনায় এদেশে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, এখনও রয়েছে অগণিত কর্মীবিহীন লেভেল ক্রসিং। ট্রেন সঠিক সময়ে না চলার জন্য যাত্রী সাধারণের দুর্দশা নিত্যকার ঘটনা।

তবু নিঃসন্দেহে বলা যায় কর্মসংস্থান ও সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে ভারতীয় রেল উল্লেখযোগ্য কাজ করে চলেছে। সমগ্র দেশের জীবনযাত্রার ওপর এত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব সারা বিশ্বেই নজিরবিহীন। শুধু প্রয়োজন যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তার দিকে আরো নজর বাড়ানো। যাত্রী সাধারণেরও উচিত সচেতন হওয়া এবং নিয়মনীতি মেনে চলা। অহেতুক রেললাইন পারাপারের বদলে রেলওয়ে ওভারব্রীজ ব্যবহার বা ট্রেনের কামরা ও স্টেশন চত্বরে ধূমপান না করার মাধ্যমে এড়ানো যায় বহু দুর্ঘটনাই। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং যাত্রী সাধারণের পারস্পরিক সহযোগিতাতেই বহু পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ ভারতীয় রেল অগ্রসর হতে পারে সোনালি ভবিষ্যতের দিকে এবং এ দেশের সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানকেই তা সমৃদ্ধশালী করতে পারে বলে বিশ্বাস।

তথ্যসূত্র:

Indian Railways one hundred years by J. N. Sahni.

A short history of Indian Railways by Rajendra B. Aklekar.

Internet.

*বম্বে - অধুনা মুম্বাই। মাদ্রাজ - অধুনা চেন্নাই।



(পরবাস-৮১, ১২ জানুয়ারি, ২০২১)