প্রভাসবাবু প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। সল্টলেকে তাঁর বাড়ি থেকে সেন্ট্রাল পার্ক বেশি দূরে নয়, তিনি হাঁটতে হাঁটতে সেখানেই চলে আসেন। কয়েকটা চক্কর মেরে সাতটার মধ্যে বাড়ি ফিরে যান।
আজ পার্ক থেকে বেরনোর সময়ে সাদা কাগজে মোড়া একটা জিনিষ ঠক করে তাঁর পায়ের কাছে এসে পড়ল। ঠিক যেন তাঁর জন্যই কেউ পাঠিয়েছে। তিনি নীচু হয়ে জিনিষটা তুলে নিয়ে দেখলেন একটা কাঠের টুকরোর উপর সাদা কাগজে লাল কালি দিয়ে কীসব লেখা। কাগজটা ছাড়িয়ে নিয়ে পড়ে তিনি চমকে উঠলেন।
"তোমার কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্তের জন্য তৈরি হও।"
আঁকাবাকা অপটু হাতে লেখা। উপরে বা নীচে কারও নাম নেই।
প্রভাসবাবু ক্রিমিন্যাল লইয়ার ছিলেন, অনেক দুঁদে আসামী চরিয়েছেন। ঘাবড়ে না গিয়ে তিনি চারিদিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখলেন। না, আশেপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
প্রভাসবাবু কর্মজীবনে সফল ছিলেন। আলিপুর কোর্টে তাঁর ভাল নামডাক ছিল। তবু সব কেস জেতা যায় না। সাজা পেয়ে আসামীরা রাগ পুষে রাখে। ইনি কি সেরকমই কেউ?
"কে হতে পারে" ভাবতে ভাবতে প্রভাসবাবু বাড়ি ফিরে দেখলেন বাড়িতেও হুলুস্থুল পড়ে গেছে। কে যেন পাথর ছুঁড়ে দোতলার জানালার কাঁচ ভেঙ্গেছে এবং পাথরের গায়ে কাগজে জড়ান সেই হুমকি চিঠি। প্রভাসবাবুর ছেলে কর্মসূত্রে বাইরে, তাঁর স্ত্রী ও পুত্রবধূ দুজনেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বসে আছেন।
ব্যাপারটা আর উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। প্রভাসবাবু পরামর্শ করার জন্য বন্ধু সুধাংশুবাবুকে ডেকে পাঠালেন। ইনিও উকিল, তবে দেওয়ানি কেস করেন। কোর্টেই আলাপ, এখন পারিবারিক বন্ধু হয়ে গেছেন।
সুধাংশুবাবু আধঘন্টার মধ্যেই চলে এলেন। দুটো কাগজই খুঁটিয়ে দেখে বললেন, হুঁ, একই হাতের লেখা। কর্মজীবনে শত্রু তো অনেক করেছো, তাদেরই কেউ। এসব উড়ো কেসে পুলিশ বিশেষ কিছু করবে বলে মনে হয় না। তোমাকেই সাবধানে থাকতে হবে।
স্ত্রী সবিতা সায় দিয়ে বললেন, আমার কিন্তু বাপু ভীষণ ভয় করছে।
সুধাংশুবাবুর পরামর্শমত প্রভাসবাবুর মর্নিংওয়াক বন্ধ হল, ছাদে হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। বাড়িতে চব্বিশ ঘন্টার সিকিউরিটি গার্ড একজন করে দু-শিফটে কাজ করে, সেটা বাড়িয়ে প্রতি শিফটে দুজন করা হল। এতটা বাড়াবাড়ি প্রভাসবাবুর পছন্দ না হলেও স্ত্রী ও পুত্রবধূর চাপে মেনে নিতে বাধ্য হলেন।
ফোনটা এল পরের দিন সকালে। প্রভাসবাবু কাগজ পড়ছিলেন, পাশের ঘরে ফোন বাজতে সবিতা উঠে এসে ফোন ধরলেন। তারপর আর সাড়াশব্দ নেই। প্রভাসবাবু গলা তুলে বললেন, "কার ফোন?" সাড়া না পেয়ে উঠে গিয়ে দেখলেন স্ত্রী ফোন নামিয়ে ভয়ার্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। জিগ্যেস করাতে কোনরকমে বললেন, "একটা লোক। কাল চিঠিতে যা লেখা ছিল সেই কথাটাই বলে তোমার নাম করে হুমকি দিল।”
সবিতা ফোন নামিয়ে রেখেছেন, তবু অকারণেই প্রভাসবাবু মাউথপিসটা তুলে কানে লাগালেন। ডায়ালটোন ছাড়া কিছু নেই। প্রভাসবাবু ক্রুদ্ধস্বরে বললেন, “ঠিক কী বলল তোমাকে?”
সবিতা এখনও সামলে উঠতে পারেননি। থেমে থেমে বললেন, "বলল তোমাকে ফল ভোগ করতে হবে।"
প্রভাসবাবু ঠিক করলেন যথেষ্ট হয়েছে, এবার পুলিশকে জানানো দরকার। ড্রাইভার কার্তিককে নিয়ে তিনি থানায় গেলেন। ছেলেটি বিশ্বস্ত ও অনেকদিন কাজ করছে। থানার ও সি তাঁর পূর্বপরিচিত, খাতির করে বসালেন। সব শুনেটুনে বললেন, দেখুন ইনি যতক্ষণ না সামনে আসছেন কিছু করা তো মুশকিল। আপাতত আমি এ এস আই-কে বলে দিচ্ছি আপনার বাড়ির উপর নজর রাখতে। আর হ্যাঁ, আপনি আপনার বাড়ির ফোনে একটা সি এল আই মেশিন লাগিয়ে নিন। ফোন আবার আসতে পারে।
বিকেলের মধ্যে টেকনিশিয়ান এসে ফোনে সি এল আই মেশিন লাগিয়ে দিয়ে গেল। এই যন্ত্রে যে ফোন করছে তার নম্বর দেখা যায়।
কিন্তু ফোন আর এল না। যেটা এল সেটা প্রভাসবাবুকে আরও চিন্তায় ফেলল। সকালে তিনি ছাদে হাঁটছিলেন, ঠক করে কিছু একটা এসে পড়ল। প্রভাসবাবু দৌড়ে কিনারায় গিয়ে দেখলেন, একটি বাচ্চা ছেলে দৌড়ে পালাচ্ছে। তাঁর চিৎকার শুনে সিকিউরিটির লোকদুটি দৌড়ল বটে, কিন্তু ছেলেটি ততক্ষণে হাওয়া। অবশ্য ওকে ধরেও বিশেষ লাভ হত বলে মনে হয় না।
প্রভাসবাবু ফিরে এসে কাগজের টুকরোটা পাথর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পড়লেন। আগের মতই লাল আঁকাবাঁকা অক্ষরে লেখা, "পুলিশ বাঁচাতে পারবে?"
প্রভাসবাবু পোড় খাওয়া ক্রিমিনাল লইয়ার, সহজে ভয় পাবার লোক নন। তবু এই মুহূর্তে ছাদে দাঁড়িয়ে তাঁর গলা শুকিয়ে আসছে, হৃৎস্পন্দন দ্রুত হচ্ছে। ছাদ থেকে নেমে তিনি সবিতাকে কাগজটা দেখালেন। সবিতা ভয়ে শিউরে উঠলেন।
সুধাংশুবাবুকেও ফোন করা হল। তিনিও স্তম্ভিত। বললেন, "এর মানে থানায় বা বাড়ির কারও সঙ্গে ওদের যোগসাজশ আছে।"
প্রভাসবাবু ক্লান্ত গলায় বললেন, "কিম্বা হয়ত যখন থানায় গেছিলাম, ফলো করেছে। আমি বুঝতে পারিনি।"
সুধাংশুবাবু বললেন, “তবু তুমি এজেন্সিকে বলো সিকিউরিটি গার্ডদের পাল্টে দিক।”
প্রভাসবাবু এজেন্সিতে ফোন করলেন, থানায় ফোন করে ওসি-কেও জানালেন।
দুদিন নির্বিঘ্নে কাটল। তারপর আক্রমণ এল ডাকপথে। দুপুরবেলা ক্যুরিয়ার এসে একটা এ-ফোর সাইজের এনভেলপ দিয়ে গেল, প্রেরকের নাম নেই। খাম খুলে প্রভাসবাবু আঁতকে উঠলেন। সবিতা ছুটে এলেন। প্রভাসবাবু কাঁপাহাতে কাগজটা বাড়িয়ে দিলেন।
জলরঙে আঁকা একটি ছবি। অল্পবয়সি একটি যুবক, প্রায় কিশোরই বলা যায়, ফাঁসিকাঠ থেকে ঝুলছে। নীচে সেই রক্তলাল রঙে আঁকাবাঁকা হরফে লেখা, "মনে পড়ছে?"
সবিতা ভয়ের শব্দ করে মুখে হাত চাপা দিলেন। তারপর কান্নার গলায় বললেন, "চলো, কিছুদিনের জন্য এখান থেকে চলে যাই।"
প্রভাসবাবুর ভয়কে ধীরে ধীরে ছাপিয়ে উঠছে বিস্ময়। এ ছেলেটি কে? তিনি কোনদিন একে দেখেছেন বলে মনে হয় না। তাছাড়া এই বয়সি ছেলেদের ফাঁসি তো দূরস্থান, জেল পর্যন্ত হয় না, এদের জন্য আলাদা সংশোধনাগার আছে। তিনি এরকম কোন কিশোর অপরাধীর জন্য কেসও লড়েননি।
সন্ধ্যাবেলা সুধাংশুবাবু এসে ছবিটা দেখে উত্তেজিত হয়ে বললেন, "এ তো সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, তুমি কাউকে সাজার হাত থেকে বাঁচাতে পারোনি, তার ঘনিষ্ঠ লোকেরা এখন এইসব করছে।"
প্রভাসবাবু সুধাংশুর ভুল ভাঙাতে চেষ্টা করলেন না। সুধাংশু দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখে বললেন, "প্রভাস, আমি বলি কী, তুমি এবার কোন ভাল প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সিতে খবর দাও।"
প্রভাসবাবু সংক্ষেপে বললেন, "দেখি।"
আরও দুদিন কেটে গেছে। ইতিমধ্যে প্রভাসবাবুর শরীর ভাল না লাগায় তাঁদের হাউস ফিজিসিয়ানকে ডাকতে হয়েছিল, তিনি এসে প্রেসারটেশার মেপে ওষুধ দিয়েছেন ও কিছুদিন বিশ্রাম নিতে বলেছেন। গোটা বাড়িতে একটা নিরানন্দের ভাব। অবশ্য ইতিমধ্যে সব শুনে বাঙালোর থেকে ছেলে রঞ্জন এসে পড়ায় সবাই কিছুটা ভরসা পেয়েছেন।
আজ রাত্রে দমদমে প্রভাসবাবুর পিসতুতো বোনের মেয়ের বিয়ের নেমন্তন্ন। সবাই মিলেই যাবার কথা ছিল কিন্তু প্রভাসবাবুর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। অগত্যা অগতির গতি সেই সুধাংশু। তিনি এসে রঞ্জনরা ফেরা অবধি থাকবেন।
সুধাংশুর আসতে একটু দেরি হওয়ায় ছটা নাগাদ প্রভাস জোর করে সবাইকে পাঠিয়ে দিলেন। সুধাংশু একটু পরেই আসছেন।
শীত আসছে, এখনই সন্ধ্যা প্রায় নেমে গেছে। প্রভাসবাবু ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালেন। এখান থেকে বাস রাস্তা অবধি দেখা য়ায়।
এই বাড়িতে তাঁদের অনেক দিন হয়ে গেল। সরকারের কাছ থেকে জমি পেয়ে তাঁর বাবা কাজ শুরু করেছিলেন, শেষ করে যেতে পারেননি। প্রভাসবাবু একতলা শেষ করে উঠে আসেন, তাও বছর কুড়ি হয়ে গেল। ধীরে ধীরে দোতলাও করে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে মা গত হয়েছেন। রঞ্জন পড়াশুনো শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছে, সম্প্রতি বিয়েও দিয়েছেন। পুত্রবধূ আপাতত এখানে, রঞ্জন বাঙালোরে কোয়ার্টার পেলেই নিয়ে যাবে।
জীবনের কাজ প্রায় শেষ। এরপর যে চিন্তাটা মাথায় এল তাতে প্রভাসবাবু নিজের উপরই বিরক্ত হলেন। এ সময় মনের জোর রাখা খুব দরকার কিন্তু কদিন ধরে তিনি যেন কেমন উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি ভিতরে এসে খাটে হেলান দিয়ে বসলেন।
চাবি দিয়ে দরজা খোলার শব্দ হল। সুধাংশুকে পরশুদিনই একটা চাবি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রভাসবাবুর উঠে বাইরের ঘরে যেতে ইচ্ছে করছিল না। তিনি গলা তুলে বললেন, সুধাংশু, ভিতরে এসো।
পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে। প্রভাসের বুকটা হঠাৎ কেঁপে উঠল।
মানুষটা দরজার ফ্রেমে এসে দাঁড়াল। আর কেউ নয়, সুধাংশুই।
কিন্তু সুধাংশু ভিতরে না ঢুকে দরজায় দাঁড়িয়ে পড়লেন কেন? তিনি ধীর শান্ত গলায় বললেন, “তোমার সঙ্গে কটা কথা ছিল, প্রভাস।"
প্রভাসবাবু বিস্মিত হয়ে বললেন, "হ্যাঁ, কিন্তু তুমি এভাবে দাঁড়িয়ে কেন? ভিতরে এসে বসো।"
সুধাংশু ঘাড় নাড়লেন। তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, "তোমাদের স্কুলে অংশু বলে একটি ছেলে পড়ত, মনে পড়ছে?"
প্রভাসের মনে পড়ল। হ্যাঁ, অসম্ভব বদমাইশ ছিল। সবার পিছনে লেগে থাকত। ক্লাস টেনে একটা ঘটনায় তাঁকে টি সি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ তার কথা কেন?
সুধাংশু শান্ত গলায় বললেন, "আমিই সেই ছেলেটি। আমাকে অংশু বলে ডাকতে ডাকতে আমার আসল নামটা তোমরা ভুলেই গেছিলে।"
প্রভাসবাবুর হঠাৎ শীত করে উঠল কেন? তিনি সুধাংশুর দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে রইলেন।
সুধাংশু আবার বললেন, "তোমার সঙ্গে কয়েক বছর আগে আলিপুর কোর্টে যখন দেখা হয় তুমি আমাকে চিনতে না পারলেও আমি তোমাকে ঠিকই চিনেছিলাম। আমি ইচ্ছে করেই স্কুলের পরিচয় দিইনি। ঘটনাচক্রে আমাদের নতুন করে বন্ধুত্ব হয়।
প্রভাসবাবু তাকিয়ে রইলেন। সুধাংশু জিগ্যেস করলেন, "আমাকে স্কুল থেকে কেন তাড়ান হয়েছিল সেই বৃত্তান্ত আশা করি তোমার মনে আছে?"
অংশু ক্লাস-টিচারের কাছে মার খেয়ে পরের দিন তাঁর বসার চেয়ার সরিয়ে এক পা ভাঙা একটা চেয়ার রেখে দিয়েছিল। বয়স্ক শিক্ষক বসতে গিয়ে হুড়মুড় করে পড়ে যান। কোমরে চোট লাগে।
এনকোয়ারি হয়েছিল, কিন্তু অংশুর বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অবশেষে হেড স্যার প্রভাসকে ডেকেছিলেন। অংশুর উপর প্রভাসের রাগ ছিল, তিনি তার নাম বলে দিয়েছিলেন। অংশু অস্বীকার করেছিল কিন্তু ক্লাসের ফার্স্টবয়ের সাক্ষ্যের উপর কথা চলে না। অংশুকে আগেও সতর্ক করা হয়েছিল, এবার স্কুলকমিটি দ্বিধা না করে তাকে টি সি নিতে বাধ্য করে।
সুধাংশুবাবু বললেন, "বছরের মাঝখানে কোন স্কুল আমাকে নিতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত প্রাইভেটে মাধ্যমিক দিতে হয়েছিল। রেজাল্ট অবশ্যই ভাল হয়নি। আমার কেরিয়ার প্রায় নষ্ট হতে বসেছিল।"
প্রভাস চুপ করে শুনছেন। সুধাংশু বলে চললেন, "তুমি একই সঙ্গে দাম্ভিক ও স্বার্থপর ছিলে। পড়াশুনোয় ভাল ছিলে কিন্তু কখনও কাউকে সাহায্য করোনি। বন্ধুরা কেউই তোমাকে বিশেষ পছন্দ করত না। "
"যাই হোক, এতদিন পরে মানুষ পুরোনো কথা মনে রাখে না। তোমার সঙ্গে নতুন করে যখন আলাপ হল ভেবেছিলাম তোমাকে ক্ষমা করে দেব।
“কিন্তু ধীরে ধীরে দেখলাম তুমি মানুষটা বিশেষ বদলাওনি। ফেসবুকের কল্যাণে আমাদের পুরোনো বন্ধুদের একটা গ্রুপ হয়েছে। মাঝে মাঝে কফিহাউসে দেখাসাক্ষাৎও হয়। আমাদের এক ক্লাসমেট প্রসাদ আমাদের কাছে এসেছিল। বেচারি সামান্য চাকরি করে, মেয়ের বিয়ের টাকা যোগাড় করতে পারছিল না। আমরা সবাই যথাসাধ্য দিয়েছিলাম। সেইসঙ্গে আমি ওকে তোমার ঠিকানাও দিয়েছিলাম।“
সুধাংশুবাবু একটু থেমে প্রভাসের দিকে তীব্রদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, “সাহায্য করা তো দূরের কথা তুমি তার সঙ্গে ভাল করে কথাও বলনি।”
প্রভাসবাবুর মাথা মাটির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। সেইসঙ্গে বিদ্যুচ্চমকের মত তার মাথায় অন্য চিন্তা ঝলসে উঠল। "তাহলে কি....?"
সুধাংশু ঘাড় নেড়ে বললেন, “প্রসাদের কাছে সব শোনার পর আমরা বন্ধুরা মিলে ঠিক করি তোমাকে একটা শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। কিশোর সল্টলেকে থাকে। দুটো বাচ্চা ছেলেকে দিয়ে হুমকির চিঠি পাঠানোর ব্যবস্থা ওই করিয়েছিল। হাওড়া স্টেশন থেকে ফোনটা করেছিল ধুর্জটি। আর ছবিটা এঁকে পাঠিয়েছিল জয়দীপ। তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই, থার্ডবেঞ্চে বসত, চমৎকার ছবি আঁকত।"
একটু থেমে সুধাংশু বললেন, "এত সব তোমাকে খুলে বলছি যখন বুঝতেই পারছো তুমি কিছুই প্রমাণ করতে পারবে না।"
প্রভাসবাবু সেটা ভালই জানেন। সুধাংশু এবার বললেন, “প্রভাস, আমার মনে হয় তোমার যথেষ্ট শাস্তি হয়েছে। তুমি আয়নায় নিজেকে দেখলে বুঝতে পারবে।"
প্রভাসবাবু শূন্যদৃষ্টিতে শুনে যাচ্ছেন। সুধাংশু বললেন, "আজ থেকে তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো। যদিও ধাক্কাটা সামলে নিতে তোমার কিছুটা সময় লাগবে।"
তিনি এগিয়ে এসে প্রভাসের পিঠে হাত রাখলেন। বললেন, "এই বাড়িতে আর আসা হবে না। তবে ইচ্ছে হলে যে-কোন দিন কফিহাউসের আড্ডায় চলে এসো।"
সুধাংশু দরজা টেনে দিয়ে চলে গেলেন। প্রভাসবাবু অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থেকে মোবাইলটা হাতে নিলেন।
সুধাংশুকেই ফোন করতে হবে। একজনের নম্বর তাঁর খুব দরকার। প্রসাদ সমাদ্দারের।
(পরবাস-৭৯, ৯ জুলাই, ২০২০)