শুধু তুমি সুস্থ হবে।কবিতা, আরোগ্য, নবনীতা দেবসেন
আমি দিয়ে দেবো আমার কোজাগরীর চাঁদ,
শাদা দেয়ালের ময়ূরকণ্ঠী আলো,
দিয়ে দেবো বিগত বছরের মরা পাখির মমতা,
আর আগামী বছরের কলাগাছটির স্বপ্ন।
চ'লে যেতে যেতে সবাই তো তাই বলে গেলো।
কুন্তী নদীর গেরুয়া জল তার সবুজ ছায়া-কাপা ঠাণ্ডা গলায়
আমাকে বলেছে,
শুকনো সোনালি গোরুর গাড়িগুলো
ক্লান্ত কাদাটে গলায় আমাকে বলেছে,
শেষ হেমন্তের বুড়ো সবুজ পাতারা
আসন্ন মৃত্যুর খস্ খসে গলাতে বলেছে
তুমি সুস্থ হলেই ওরা আবার ফিরবে।
এমন কি
তুলসীতলার যে-প্রদীপটি ধ'রে
তুমি আমার মুখ দেখেছো, তাকেও ভাসিয়ে দিয়ে,
একটি শুভ্র স্তব হয়ে জ্বলবো তোমার শিয়রে
আসুক, ওরা ফিরে আসুক, যারা চিরকাল
শুধুই চলে যাচ্ছে, এখান থেকে অন্যখানে
উৎপাটিত একগুচ্ছ কচি সবুজ দূর্বার মতো
তুচ্ছ, উষ্ণ, কাতর
আমি তোমার যন্ত্রণা মুছে নেবো :
তার বদলে, ঈশ্বর, তার বদলে আসুক
তোমার কাঙ্ক্ষিত আরোগ্য।
একটি উজ্জ্বল প্রাণবন্ত হাসি ও দুই মেধাবী চক্ষুর ছবিটি রয়ে গেল পাঠকের চিত্তে। এই লেখা যখন লিখছি তার ঠিক ঘন্টা তিনেক আগে জেনেছি উনি নেই। উনি যে অসুস্থ সে কথাটা তার আগে থেকেই জানি। গত রবিবার, মানে ঠিক পাঁচ দিন আগে, এক পত্রিকায় তিনি লিখেছেন, আক্রামক কর্কটরোগকে নিয়ে, আই ডোন্ট কেয়ার কানাকড়ি, জানিস আমি স্যান্ডো করি! সে লেখা সামাজিক মাধ্যমে মুহূর্তে ভাইরাল। এতটা প্রাণশক্তি নিয়ে, মৃত্যুকে এতটা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে আর কারুকে লিখতে দেখিনি আমরা। না সাম্প্রতিক কালে, না অতীতে। জীবনকে একশো দশ শতাংশ বেঁচে নেবার কারিকুরি তিনি জানতেন, আমাদের শেখাবার চেষ্টা করেছিলেন। একজন কর্কটরোগীর মুখে এতটা জীবনকে ভালবাসার কথা শুনলে জীবনের প্রতি নতুন করে বিশ্বাস ফিরে আসে। এই অ্যাটিচিউডই নবনীতা দেবসেন।
হ্যাঁ অ্যাটিচিউডই ঠিক কথা। আজ যাঁরা তাঁর প্রয়াণে আত্মীয়বিয়োগের বেদনা পেলেন তাঁদের অধিকাংশের সঙ্গেই ওঁর পরিচিতি হয়ত বা কেবল ওঁর আখরগুলির মাধ্যমে। ব্যক্তিগত চেনার গণ্ডি কতটুকুই বা। আমি হয়ত ওঁকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম, আজ মনে হচ্ছে তা নিয়ে বড়াই করার আছেই বা কী। তারও বহু আগে থেকে আমি যে ওঁর পাঠক। আর এই সম্পর্কই যে চিরস্থায়ী, অমোঘ। কেননা তিনি তো অক্ষরযাত্রী।
আমি কি আজো ভুলতে পারি ইশকুল জীবনে আমার আর আমার দিদির কাড়াকাড়ি করে পড়া ট্রাকবাহনে ম্যাকমোহনে? ভুলতে পারি না আনন্দবাজারের পাতায় পড়া সেই আশ্চর্য যাদুকরী কাহিনি, ওঁদের বাড়ির কোন কার্নিশে বেড়াল চড়ে বসার পর দমকল ডেকে তাকে নামানোর কাহিনি। মধ্যরাতে পাড়ার পথে সাইকেল চালাতে শিখছেন নবনীতা, সে কাহিনিতে ফুলে ফুলে হেসে উঠিনি আমরা অনেকেই?
সরসতায় ভরা আত্মজৈবনিক গদ্যের এক অন্য ঘরানা তৈরি করেছিলেন নবনীতা। মুহূর্তে আত্মীয়তা সৃষ্টি হত পাঠকের সঙ্গে। এত রসিক, এত জ্যান্ত গদ্য ছিল তাঁর। জনপ্রিয়তার শীর্ষে তিনি তো প্রথমত এই গদ্যের জন্যই। শতবর্ষ ছোঁয়া লীলা মজুমদারের প্রয়াণের পর, নবনীতা দেবসেন বলেছিলেন, বাংলা কেন, যে-কোনও সাহিত্যেই মেয়েদের লেখায় ব্যঙ্গরস, ব্যঙ্গকৌতুক খুব কম। তাই লীলা মজুমদারের লেখা বিশেষ ভাবে ভাল লাগত, এখনও লাগে। তাঁর শাণিত, বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতা, প্রাণময়, সুস্থ রসিকতার কোনও তুলনা হয় না। যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস ছিল তাঁর, সেই কারণেই রসিকতার মধ্যে দিয়েও প্রতিবাদ করতে পারতেন।
আর সেই লীলা মজুমদার আত্মজীবনীতে অকাতর ভাবে লিখতে পেরেছিলেন ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিচ্ছেদের সব কথা। ভাবাই যায় না তার সারল্যের অভিঘাত। ব্রাহ্ম মেয়ে হয়ে হিন্দু ছেলে বিয়ে করার ফলে বাবা তাঁকে ত্যাগ করেন। তিনি লেখেন, ‘বাবা আমাকে ত্যাগ করলেন। পরদিন সকালে সব কথা ভুলে দুজনে গেলাম বাবাকে প্রণাম করতে। তিনি আমাদের দেখেই ঘর থেকে উঠে চলে গেলেন। শুধু ঘর থেকেই নয়, আমার জীবন থেকেই সরে পড়লেন। তারপর আঠারো বছর বেঁচে ছিলেন, কখনো আমার বা আমার ছেলে-মেয়ের দিকে ফিরে চাননি।... আঠারো বছর পরে যখন তিনি চোখ বুজলেন, আমি এতটুকু ব্যক্তিগত অভাব বোধ করিনি। যে অভাব, যে বেদনা ছিল, ঐ সময়ের মধ্যে তার মৃত্যু হয়েছে টের পেলাম।’
আজ আরেক মৃত্যুতে আমর অনুভব করছি মৃত্যু আসলে তুচ্ছ। মনের ভেতরে মানুষের মৃত্যু হবার হলে হয়, আর না হলে, শরীরের মৃত্যু হলেও কিছুই এসে যায়না। লীলা মজুমদারের যদি বাংলাভাষায় সার্থকতম উত্তরসূরী কেউ থাকেন তিনি নবনীতা দেবসেন। অকাতরে ব্যক্তিগত কথা তিনিও বলতে পেরেছিলেন। অনায়াসে খুলতে পেরেছিলেন কলমের ঝর্ণাধারা।
তাই তো, নবনীতা দেবসেনের কলমের যাদুটাই হল, নিজের কথাটি, নিজের পরিবারের কথাটি কী অসামান্য সততায় ধরে দিতে পারেন তিনি সর্বসমক্ষে। এত ব্যক্তিগত অথচ মজায় ভরা সে কথাগুলো। মনে পড়ে ছোটবেলায় চেটেপুটে পড়েছি ট্রাকবাহনে ম্যাকমাহনে। টীকা-টিপ্পনীতে যেভাবে ভরে দেওয়া ভ্রমণের কথা, যেভাবে থেকে থেকে নিজের মূর্খতাকে বুদ্ধিদীপ্তভাবে পেশ করা... নবনীতাকে লুফে নিয়েছিল বাংলার পাঠক।
আনন্দবাজারের পাতায় তখন পড়েছি দুই কন্যাসহ পোষা বেড়ালকে কার্নিশ থেকে উদ্ধার করার সে বিখ্যাত কাহিনি। ইস্কুল জীবনে আমি আর দিদি ফুলে ফুলে হেসেছি দমকলকে ফোন করার সেই গল্প পড়ে। তুলনাহীন গল্প ছিল নবনীতার মোপেড চাপতে শেখার। মেয়ে কিনেছে কলেজে যাবে বলে। মা বলছেন চাপবেন। গাড়ি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়ে, মোপেডে যাবেন। এজন্য মেয়েকে গাড়িটি দান করে দিতেও রাজি। শেষমেশ মাকে শেখাতে নিমরাজি মেয়ে। ট্রেনিং কেমন হয়, দিদিমা বারান্দা দিয়ে দেখছেন, মেয়েরা রাস্তায়। কাজের দিদিরাও রাস্তায় মজুদ। স্টার্ট করা শিখে নবনীতা চালু করে দিলেন মোপেড। চেপে দিলেন অ্যাক্সিলারেটর। এদিকে ব্রেক দেওয়া শেখা হয়নি। ক্রমশ গতি নিচ্ছে মোপেড। রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছেন অতি দ্রুত। ক্রমশ চিন্তা বাড়ছে। থামব কীভাবে। ওরে আমাকে থামা, আমাকে নামা। বড়মেয়ে ব্রেকের ব্যাপারটা বোঝাতে চেষ্টা করছে বিবরণ দিয়ে। শেষ পর্যন্ত তৈরি হতে থাকা বাড়ির আঙিনায় উঁচু করে রাখা বালির স্তূপে ধাক্কা এবং গতিরোধ। গোটা ঘটনার সঙ্গে মর্মভেদী ডায়ালগ। অসামান্য বর্ণনা। পাড়াশুদ্ধু শোরগোল, কাজের দিদির রানিং কমেন্ট্রি। ভিড় জমে গিয়েছে। (পরবাস-এ গল্পের ইংরেজি অনুবাদ That Terrible Midnight )
মানুষ অন্যকে নিয়ে হাসতে অভ্যস্ত। নিজেকে নিয়ে হাসতে পারার এই ক্ষমতা সকলের থাকে না। বারে বারেই নবনীতা এই ক্ষমতা দেখিয়েছেন। তুমুল রসবোধে ভাসিয়ে দিয়েছেন জীবনের গুরুগম্ভীর আড়াল। সবকিছু তুচ্ছ, হালকা হয়ে গিয়েছে। প্রজেক্ট চর্মচটিকার মতো গল্পে তিনি বাড়িতে চামচিকে সংরক্ষণ সমিতি খোলার প্রকল্পের কথা বলেন। বলেন, চামচিকে পোষার চেয়ে তিমিমাছ পোষাও ভাল। কারণ, চামচিকে দুর্ধর্ষ, বেপরোয়া, নেমকহারাম, অবিমৃষ্যকারী, স্বার্থকেন্দ্রিক, কৃতঘ্ন ও কুপোষ্য। তারপরই ব্র্যাকেটে লিখলেন, চর্মচটিকা মানে কিন্তু চামড়ার চটি নয়। কেন যে, তা আমি আজো বুঝিনি। প্রতি বাক্যে একবার করে নিজের উইটের ঝলক এভাবেই পাঠককে মাত করে রেখেছে।
"নটী নবনীতা"। এক আত্মজৈবনিক গদ্য। নবনীতা লিখছেন, "কথায় বলে, লোকটার বয়সের গাছপাথর নেই। আমার কি সেই বয়স নাকি? মোটেই না। শুধু পাথর কেন, আমার বয়সের ইঁট-কাঠ-জরি-ভেলভেট পর্যন্ত রয়েছে। দেখুন না মার ট্রাঙ্ক। কিন্তু গাছ? নেই। অন্তত আমার পাড়াতে প্রায় নেই বললেই চলে"... এ ইতিহাস শুধু নবনীতার ছোট থেকে বড় হবার ইতিহাস না। কলকাতারও ইতিহাস। কীভাবে পাড়াটা বদলে গেল, কেবল ভাল-বাসা- বাড়ির রেফারেন্স দিয়েই তিনি বলে ফেলতে পারেন। তাঁর পাড়ার কোবরেজের বাড়ি হয়ে গেল মনিহারির দোকান। আজ হয়ত তা কোন প্রখ্যাত রেস্তোরাঁ।
এভাবেই তাঁর রসের সমুদ্রের ভেতরে আমরা খুঁজে পেয়ে যাই আমাদের বাঙালি পহেচান। আমাদের আত্মপরিচয়। এই সেদিন যখন নিজের কর্কট রোগ নিয়েও মজা করেন, লেখেন "কামেন ফাইট!" লেখেন, "আই ডোন্ট কেয়ার কানাকড়ি, জানিস আমি স্যান্ডো করি!"... তাও ভিজে ভিজে হয়ে যায় সেই আশ্চর্য হিউমারে। সুকুমার রায় থেকে চুঁইয়ে আসা বাঙালির পরিচয়ের সেই নিজস্ব হিউমার, যাকে নিজ অঙ্গুরীয়তে ভরে নিয়েছিলেন। যাদু টোনার পুরিয়ার মত। যার মধ্যে মধ্যে মণিমুক্তোর মত দর্শন বসানো। "বাসনা, সে তো মিটবার নয়। বাসনার স্বভাবেই বাসনা চিরকিশোরী, চির অপূর্ণা। কিন্তু আমার তো সামনে কোন লক্ষ্য নেই যে মরবার আগে এইটে যেন করে যেতে পারি। পিরামিড না হোক, কুতুব মিনার। কুতুব না হোক, টাটা সেন্টার! নাঃ তেমন বাসনা সত্যিই নেই।" (ট্রাকবাহনে ম্যাকমাহনে)
সই নামের একটি সংস্থা তৈরি করেছিলেন নবনীতা দেবসেন। কেন “সই”? সই মানে কিন্তু সখী শুধু নয়, সই মানে আত্ম পরিচয়, সিগ্নেচার। এই দ্বিতীয় পরিচয়টিতেই জোর দিতে চেয়েছিলেন নবনীতা, যদিও আসলে এই দুই অর্থের খেলাটাও তাঁর পছন্দের ছিল খুবই।
সইএর উদ্দেশ্য প্রথমে ছিল মহিলা লেখকদের এক ছাতার তলায় আনা। পরে তা হয়ে ওঠে মহিলা কর্মী, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, সাহিত্যিক সবার জন্য আসনপাতা ছোট্ট এক ভুবন।
নবনীতাদি ডাক দিতে জানতেন। বারে বারে ডাক দিয়ে আমাদের ভর্তি করেছিলেন সই-তে। আর উনি ডাক দিলেই বৎসরান্তের সই অনুষ্ঠানে দৌড়ে আসতেন সারাভারতের কত না মহিলা ইনটেলেকচুয়াল। চিত্র পরিচালক, সমাজকর্মী, অধ্যাপক, গায়িকা। রামকথা শোনাতে আসতেন লোকগায়িকা। পাণ্ডবানীর মধ্যে দিয়ে প্রতিবাদের স্বর শোনা গিয়েছিল এই সই-এর মঞ্চেই, যেমন এক বছর ইসমত চুঘতাইয়ের ওপর আলোচনা, লেখা থেকে পাঠ থেকে শুরু করে অসামান্য নাট্য পরিবেশনাও হয়েছিল।
সইএর জন্মদিনটি ছিল ৩০ নভেম্বর, যা নাকি আবার নবনীতা মাতা রাধারাণীরও জন্মদিন। অসামান্যা নারী রাধারাণীকে নিয়ে অল্প কথা এখানে বলেই ফেলা যায়। এই নারী নিজের বৈধব্যকে অস্বীকার করেছিলেন, যদিও ১৩ বছরে বিধবা রাধারাণীর শাশুড়িও কম বৈপ্লবিক ছিলেন না, নিজের বৌমাকে থানের বদলে সরুপাড় শাড়ি ও দুটি সোনার রুলি পরার কথা তিনিই বলেছিলেন। রাধারাণী সাহিত্যচর্চা করে সে সময়ে এমনকি বাদানুবাদেও জড়িয়েছিলেন এমনকি শরৎচন্দ্রের সঙ্গে। ১৯২৯-এ স্থাপিত সাহিত্যিকদের প্রতিষ্ঠান রবিবাসর-এ মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ করেছিলেন শরৎচন্দ্র। বলেছিলেন মেয়েরা এলে পুরুষদের জিভে লাগাম পরাতে হবে। প্রতিবাদ করেছিলেন রাধারাণী।
এই রাধারাণীই নিজের লেখালেখির ঢং সম্পূর্ণ পালটে দিয়েছিলেন। যে রাধারাণী বাল্যবিবাহের পর বৈধব্য পেয়েছিলেন এবং নরেন্দ্র দেবের পত্নী হয়ে যিনি শিক্ষা দীক্ষায় অলোকসামান্য হলেন, নিজের লিরিকধর্মী কবিতার পাশাপাশি অপরাজিতা দেবী ছদ্মনামে লিখে ফেললেন ইংরেজি শব্দ বা লঘু শব্দ মেশানো ড্রইং রুম কালচারের ভাষায় লেখা কিছু চটুল প্রেমের কবিতা। তিনি লিখেছিলেন ছদ্ম হাসির আড়ালে সাবভার্সিভ এক বয়ানে পুরুষের প্রতি নারীর প্রেমের কবিতা, তাচ্ছিল্য অবজ্ঞার উত্তর দিয়েছিলেন। অপরাজিতা দেবী নামের সেই ছদ্মপরিচয়ের পেছনের কবিটি নিশ্চিতভাবেই কোন পুরুষ হবেন, রটে গিয়েছিল তখন। সবাই উৎসুক ছিলেন জানতে, কে এই অপরাজিতা দেবী। কোন পুরুষ লেখকের বলিষ্ঠ কবজি জন্ম দিচ্ছে এসব মজার অথচ চিমটিকাটা লেখার?
রাধারাণী দেবীর সঙ্গে নরেন্দ্র দেবের বিয়ে যখন হয়, বরকে নিজেই সিদ্ধান্ত করে নির্বাচন যখন করেন রাধারাণী, তখনও তা সেজন্যেই খবর। নরেন্দ্র দেব এক পাণ্ডিত্য মেধার মাইলস্টোন। এমন দম্পতি প্রায় বাংলা সাহিত্যের ফার্স্ট কাপল যেন। বুদ্ধদেব বসু-প্রতিভা বসুর মতই। দুজনেই মিলে অনুবাদ করলেন সরস ভাবে, বৈদিক বিবাহমন্ত্র। বই হল, মিলনের মন্ত্রমালা।
সেই রাধারাণীই তো নবনীতার মা।
নরেন্দ্র দেব ও রাধারাণীর নামের দুটি শ্বেতপাথরের ফলক আজো আছে ভালো-বাসা বাড়ির সামনে। নবনীতাদি যেন এইমাত্র বসেছিলেন সেই ঐতিহাসিক বাড়িতে, ঐতিহ্যশালী সেই ঘরটিতে, ওঁর প্রিয় চেয়ারটিতে। ভালো-বাসার বাড়িটির ঐ বিখ্যাত বইমোড়া বৈঠকখানায়। যে বৈঠকখানায় গেলে, বাংলার মানস ইতিহাসের একটা তীর্থস্থান বলেই তাকে নিমেষে চেনা যায়। নরেন্দ্র দেব রাধারাণী দেবীর এই সৌধ, প্রতিটি আসবাবে লেগে আছে অসংখ্য স্মৃতির ধুলো। উদার যুক্তিবাদী বাঙালির পহেচান। আমাদের আত্মপরিচিতির একটি টুকরো এ ঘরখানা। শার্সিটানা জানালা দিয়ে ফুরফুর দক্ষিণে বাতাস আসে। নবনীতাদি বসেছিলেন তাঁর প্রিয় চেয়ারে। কানাইদা ও তাঁর দলবল পাশেই আছেন। অনিবার্যভাবে যুগিয়ে দিচ্ছেন চা, খাবার।
তাঁকে ঘিরে চলছিল হাসিমশকরা। তিনি মুখ্যবিন্দু আনন্দের, গল্পকথার। গুরুগম্ভীর আলোচনায় ফিরিয়ে আনছেন সইদের মধ্যে মধ্যে বকা দিয়ে। সেলফি নেওয়ার হুড়োহুড়িতে বকছেন। তারপর হাসিমুখে রাজিও হয়ে যাচ্ছেন। সামনে একটা বিশাল পাত্রে মুড়িমাখা। সরষের তেল দিয়ে। সঙ্গে তেলেভাজা। মাটির কাছাকাছি, আপাত নগণ্য এই খাবার আমার কাছে এতটাই প্রিয়, এতটাই কাছে-টানা । মুঠো মুঠো মুড়ি তুলে নেওয়া আর কথা বলা, এই সুখ আমার কাছে এতটাই শিকড় সম্পৃক্ত। এতটা চেনা চেনা। সই-এর প্রথম অধিবেশনে গিয়েই ফলত আমি ওই ঘরটার আর এই সমস্ত কিছুর প্রেমে পড়ে গেছিলাম।
এই ঘরে বসেই আমাদের পরিকল্পনা হয়েছিল ওয়েব-ব্লগে সই-এর মুখপাত্র পত্রিকা ব্লগব্লগম বের করার। মহাশ্বেতা রায় দায়িত্ব নিয়েছিল আই টির সবটা সামলাবে। সেই মুখপাত্র প্রতিবার বের করেছে সমাজসচেতন, সময়সচেতন লেখা। যেমন তিন তালাকের সময়ে বিশেষ ইস্যু বের হয়েছিল। সদ্য বের হয়েছে অবরুদ্ধ সময়ের লেখার সংখ্যা। নবনীতাদি নেই, কিন্তু আছেন।
কেননা তিনিই শিখিয়ে গিয়েছেন, জীবনকে চূড়ান্ত ভালবাসা, তুড়ি মেরে সবকিছুকে অস্বীকারের আহ্লাদ। জীবন তো কম কষ্টবেদনা অবিচার অপ্রিয়তার ঝুলি সাজিয়ে আসেনি তাঁর কাছে। আগেও অস্বীকার করেছেন। এবারও। এই স্পিরিটই নবনীতা। "মৃত্যুই মানুষকে মহত্ব দেয়। ... চিরজীবী হওয়াটা কোন কাজের কথা নয়।" খুদা-ঈ-খিদমদগারে লিখেছিলেন নবনীতা। প্রায় প্রতিটি লেখাতেই তো তাঁর ঝরে পড়েছে এইধরনের অনায়াস সত্য, যার পেছনে আছে এক দৃঢ় প্রত্যয়।
এই গল্প হাসি মজা থেকে হঠাৎ যেন উঠে চলে গেলেন অপরিমিত প্রাণশক্তির অধিকারিণী সদা জীবন্ত নবনীতাদি। একটু আগেই যিনি বকা দিচ্ছিলেন অনুজ লেখিকাকে, মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকলে হবে? লিখতে হবে না? লেখ, লেখ।
নবনীতাদির অন্তর্ধানের পরে পরে কী ঘটল? একের পর এক সেলফি ওঁর সঙ্গে নেওয়া। সবাই নিজ নিজ সমাজমাধ্যমের দেওয়ালে পোস্ট করলেন। হু হু বেগে ছোট ছোট স্মৃতিচারণ গজিয়ে উঠল। সেই সবের অবিরাম ধারার ভেতরে ভেসে উঠতে লাগল নানা বিরূপ মন্তব্য, কেউ রসিকতা করে লিখলেন, নবনীতাদি ভক্তদের সঙ্গে এত সেলফি যদি তুলতেন, লেখার সময় বার করতেন কখন? কেউ কেউ বললেন, নীরবতাই শোক প্রকাশের মাধ্যম। এত উল্লাস, এত জাহির করা পোস্ট কেন।
এ নিয়েও ভাবলাম। মনে হল, রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে চলে যাবার পরমুহূর্ত থেকেই তো নবনীতাদি আসলে আমাদের ভার্চুয়াল আড্ডারও মধ্যমণি রইলেন। অন্তত দু তিন দিনের জন্য তাঁকে নিয়েই আলোড়িত হল সমাজমাধ্যম। এ কি তাঁর চাওয়াও নয়? তিনিই কি নিজের জীবনকে এভাবেই উদযাপন করে যেতে চাননি? ঝলমলে রঙিন শাড়ি পরে যখন এসে বসতেন তখন কি প্রতিবার তরুণীর ঔজ্জ্বল্য নিয়ে জিজ্ঞাসা করেননি সইদের, এই আমাকে ভাল দেখাচ্ছে রে? আদর কাড়া মানুষটিকে নিয়ে মাতামাতি না করে নীরব চোখের জল ফেলাটাই কি ভুল হত না তবে?
তারপর অন্য এক পরতে অন্য একটা ভাবনা জাগল। আমরা যখন এই প্রচণ্ড সেলফি-যুগের সন্তান, এ থেকে যখন আমাদের নিস্তার নেই, এর প্রতিষেধক হিসেবে কী আমরা করতে পারি? আমরা আবার পড়ার দিকে ফিরতে পারি। একজন লেখক তো অক্ষর সাধক। তাই তাঁর লিখিত অক্ষরই তো দিতে পারে আমাদের তাঁর সঙ্গ।
প্রাথমিক উন্মাদনার পরে, তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি নিয়ে কি আবার বসতে পারি না আমরা? যেহেতু রসরচনা, ভ্রমণ কাহিনি আর আত্মজৈবনিক গদ্যই তাঁকে সব মানুষের কাছাকাছি এনেছিল, এমন তো নয় যে তার বাইরে তাঁর লেখা নেই কোন। একাশি বছর বয়স খুব কম নয়। গৌরীদেবী স্মৃতি পুরস্কার, মহাদেবী বর্মা পুরস্কার, ভারতীয় ভাষা পরিষদ পুরস্কার, সাহিত্য আকাদেমি, পদ্মশ্রী, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, এই সমস্ত স্বীকৃতির পালক কখনো তাঁর সতেজ ভাবনাচঞ্চল মনকে ভারাক্রান্ত করেনি। কত কাজ করেছেন এই এত দীর্ঘ সময়ে। "আমি, অনুপম" অথবা "প্রবাসে দৈবের বশে"-র দীর্ঘ উপন্যাসের বিস্তৃতি থেকে "শীতসাহসিক হেমন্তলোক", নিরীক্ষায় ভরা "বামাবোধিনী", মেধা দিয়ে সময়কে ডকুমেন্ট করতে করতে তাঁর এগিয়ে যাওয়া।
তিনি তো মূলত এক অ্যাকাডেমিক। বুধমনস্কতায় তাঁর জুড়িও তো বেশি পাওয়া যাবে না কলকাতা শহরে। তাঁর কাজ, যা মূলত ময়মনসিংহের কবি চন্দ্রাবতীর লেখা রামায়ণ ও সারা ভারতে অন্য বিভিন্ন অংশের মেয়েদের রামায়ণ গান নিয়ে, তাকে ফিরে পড়ি না কেন আমরা? খুঁজতে খুঁজতেই উঠে এল তাঁর পেপারের অংশ। সেখানে সারা ভারতের মেয়েরা রামায়ণে আসলে নিজে আত্মীকৃত হচ্ছেন সীতা মায়ের সঙ্গে। সীতা হয়ে উঠছেন তাঁদের নিজেদের প্রতিভূ। শৈশবে বিবাহের জন্য বলিপ্রদত্ত, যৌবনে শাশুড়ির কাছে তর্জিত, তারপর বনবাসের কষ্টে জর্জরিত। কী তেলেগু গানে কী মারাঠি গানে কী মৈথিলী গানে, বাংলাদেশের গানেও, মেয়েরা রামকে প্রায় একইভাবে দোষারোপ করছেন। কখনো সীতা মাইয়ার স্বামী হিসেবে তাঁকে বার বার অগ্নিপরীক্ষা আর নির্বাসনের দিকে ঠেলে দেবার জন্য। কখনো নিজের যুদ্ধবিগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য। সীতার দিকে যথেষ্ট মনোযোগ না দেবার জন্য।
এই পড়া, এই সব গুরুতর কাজের দিকে মুখ ফেরালেই আমরা দেখতে পাব, নবনীতা সেই অনির্বাণ মেধার জ্যোতি জ্বেলে বসে ছিলেন আসলে, মেয়েদের আইডেন্টিটির নির্মাণের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে। তিনি মেয়ে লেখকদের জন্য সই বানিয়েছেন, গত বছর অষ্টাদশী হয়ে ওঠা সই শব্দটির অর্থ কেবল সখী না, তা যে সিগ্নেচারও, সেটাও নবনীতাদি স্পষ্ট বলেছিলেন। তাঁর কাছে আমি কখনো বাজেকথা গালগল্প শুনিনি। শুনিনি ভেগ, ধোঁয়া ধোঁয়া কথা। শুনিনি কাঁদুনি, নালিশ। তিনি মেয়েদের হয়ে মেয়েদের নিয়ে যাকিছু বলতেন লিখতেন সব ছিল স্পষ্ট, কাটাকাটা, নির্মেঘ আকাশের মত। আমার কাছে এসব দিক নির্দেশের মত আসত। আমার শ্রদ্ধা ছিল সেই নবনীতাদির প্রতি, যিনি যে কোন ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতেন জোরালো এবং, আবারো, স্পষ্ট। আসলে ভেতরে এক অন্য প্রত্যয়, অন্য বিশ্বাস এগুলো সম্ভব করে। মাতৃসূত্রে একইসঙ্গে উনি পেয়েছিলেন মেধা রসবোধ আর দার্ঢ্য। এই ধারাবাহিকতাকে রক্ষা করতেই নবনীতাদি ছিলেন তৎপর।
তাইই তো, নবনীতাদির বিন্দুমাত্র আলস্য কোথাও ছিল না যে, তা তাঁর সমস্ত লেখায় সমস্ত আচরণে অভ্যাসে উঠে এসেছে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে। এত বড় রোল মডেল আর কোথায়। তিনিই তো নিজেকে সে অবস্থানে উঠিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন, যেখানে দাঁড়িয়ে সওয়াল করতে পারেন আশাপূর্ণা দেবীর পক্ষে। তাঁর লেখা যে "মেয়েদের লেখা, ঘরোয়া লেখা, রান্নাঘরের লেখা" বলে দাগিয়ে পেছনের সারিতে ঠেলে রাখা যায় না, সেই প্রত্যয় নিয়ে লড়তে পেরেছিলেন তিনি।
পরে তাঁকে নিয়মিত পেয়েছেন পাঠক ভালবাসার বারান্দা নামের কলমে। সংবাদ প্রতিদিন রোববারের পাতায়। সেই এক সুর, স্বর। ব্যক্তি আর সমাজের গণ্ডিকে তোয়াক্কা না করা লেখা। অথচ কত সংবেদী আর তন্নিষ্ঠ। অবজেক্টিভ থেকে সাবজেক্টিভ অনায়াস যাত্রা তাঁর। রসে টইটুম্বুর। যখন মজা করছেন, মজা। সে এক আশ্চর্য উইট। উইট তো আসে বুদ্ধির দেদীপ্যমানতা থেকেই। তাই পরের লাইনেই যখন কঠিন বিষয়ে ঢুকবেন, সেখানেও যুক্তির যথাযথতা পাব আমরা। তখন জরুরি কঠোর প্রতিবাদ নেমে আসছে ক্ষুরধার ভাষায়। ভোলা যায় না অসামান্য অনুবাদে লাল্লার কবিতা নিয়ে একটি লেখাকে। দরদের সঙ্গে মেধার যে যোগ ছিল সেখানে তা অনিবার্য ও মোক্ষম। সঙ্গে প্রাঞ্জল অনুবাদ।
বাঙালির আবেগপ্রবণতার যে দুর্নাম আছে তা মিথ্যে করেন নবনীতা। মেয়েদের আবেগপ্রবণতার যে দুর্নাম আছে তাকে তো বহু আগেই ফুৎকারে উড়িয়েছেন। শি অলসো র্যান, মেয়েদের লেখা নিয়ে যে নীরবতার রাজনীতি থেকে যায়, তার মূর্তিমতী প্রতিবাদ তিনি। তাই তাঁর লেখা সর্বদা প্রখর বুদ্ধিদীপ্ততার আলোয় ভরা। সেটিকে মেয়েলি বা পুরুষালি বলে দাগিয়ে দেওয়া যাবে না। এক মুক্তমনার লেখা, এটুকুই বলা যায় শুধু। এক মানুষের লেখা, এটুকুই ভাবা যায়। সেখানে নরেন্দ্র দেব রাধারাণী দেবীর আলোকপ্রাপ্ত লিবারাল মনস্কতার সম্পূর্ণ উত্তরাধিকারী তিনি। তবু, জেন্ডার নিয়ে স্পষ্ট মত তাঁর, কোথাও কোন ছায়া বা অস্পষ্টতা কখনো দেখা যেত না। নারীজন্মকে নিয়ে কোন হাহাকার নয়। বরং সম্পূর্ণ সচেতন স্বীকৃতির পর যে লড়াই আসে, সেই লড়াকু অস্বীকার।
পাশাপাশি অন্য সব ধরনের কুযুক্তি, ধর্মান্ধতা, পিছু হঠা, অন্ধকারকে তাঁর মেধা যুক্তির করাত দিয়ে ফালাফালা করতেন তিনি। আর সেখানেই তিনি ছিলেন আমাদের প্রহরী। অযৌক্তিক, অবৈজ্ঞানিক ভাবনা চিন্তা আচরণের বিরুদ্ধে অ্যান্টিডোট, ঔষধসম ।
এত বড় রোল মডেল আর কোথায়। কাজের এক ক্ষেত্র হয়ত জেন্ডার বা লিঙ্গসচেতনতা। কিন্তু শুধুই নারী লেখক ও সংস্কৃতিকর্মীদের এক ছাতের তলায় এনে সই নামের গোষ্ঠী গঠন করাটা নয়। সেটা তাঁর বড় কাজ ত বটেই। সেখানেও প্রায় আন্তর্জাতিকভাবে ডালপালা মেলেছেন তিনি। ডাক দিলেই সারা ভারত থেকে কত যে নামী আলোচক-শিল্পী- লেখক ছুটে এসেছেন, যাঁদের নিজেদের কাজ জেন্ডার নিয়ে। কত মেধাবী সন্ধ্যা উপহার পেয়েছে কলকাতা তাঁর অনুপম আয়োজন সইমেলায়।
তবে তার বাইরেও অ্যাকাডেমিক নবনীতা, লেখক নবনীতা, কবি নবনীতা আরও কতভাবে ডালপালা ছড়িয়ে ছিলেন, কত মানুষের, ছাত্রের, পড়ুয়ার মেধার আশ্রয় হয়েছিলেন তার ত ইয়ত্তা নেই।
মাঝে মাঝে দুঃখ করতেন, আমাকে কবি হিসেবে তোরা পাত্তাই দিস না। যাঁর এত্তোগুলো পরিচয়, বাঘা গদ্যকার, তুখোড় রসরচনাকার, বিরাট আয়োজক-আহবায়ক, নারীবাদী, শিক্ষক, বিদ্বান, তাঁর কবি পরিচয়টি হয়ত সত্যি অনেকটাই আড়ালে চলে গিয়েছিল। কিন্তু নবনীতাদির ভাষায়, "কবিতাই আমার প্রথম প্রত্যয়"। ১৯৫৯-এ প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের নামও তাই 'প্রথম প্রত্যয়'।
নবনীতাদি মরদেহে নেই তো কী হল? তিনি তো আছেন আমাদের মননে, উত্তরাধিকারে।
(নবনীতাদির প্রয়াণের পরমুহূর্ত থেকেই ফোনের পর ফোন। আমাদের সই জন্ম, বাংলা লেখালেখির জগতের মেয়েজন্ম সবের কারণে এই প্রিয় মানুষটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ছিলাম, তাই হয়ত।
একাধিক পত্রিকায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বেশ কিছু লেখা লিখেছি। পরবাসের জন্য এই লেখাটিতে কিছু কিছু জায়গায় সেই দ্রুত হাতে লেখা অংশের ছায়া ও সেই সব নবনীতাদির লেখার উদ্ধৃতি হয়ত বা মিলে মিশে আছে। পাঠক এটিকে একটি আলাদা লেখা হিসেবেই বিচার করবেন এই প্রার্থনা রইল।)
(পরবাস-৭৭, ১০ জানুয়ারি ২০২০)