১
উলু উলু উলু উলুলুলু....
আশ্বিন মাসের কৃষ্ণাষ্টমী তিথির বিকেলে এই উলুধ্বনির বিস্তার, কেননা এখানে গা ম্যাজমেজে হাওয়ার আনাগোনা। রক্ষণশীল সিংবাড়ির দোতলার জানলার গরাদ ধরে উদাসীন, সংশয় একটা দৃষ্টি চেয়ে আছে এই আওয়াজের উৎসের দিকে। নির্লিপ্ত সে দৃষ্টি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে যেন হাওয়ায়, 'এই বউগুলো যা করছে, যা ভাবছে তা কি সত্যি হতে পারে!' এ দৃষ্টি সিংবাড়ির একমাত্র বৌমা সুধার।
"সুধা সুধাআআ... আমার পারফিউমটা কোথায় গেল? ড্রেসিং টেবিলে দেখছি না যে!"
বিয়ে হওয়া ইস্তক এর চেয়েও কড়া টিপ্পনী গা সওয়া সুধার। সে একমনে গ্রাম্য বৌগুলোর পড়ন্ত চলমান ছায়ার দিকে চেয়ে থাকে। দোতলার জানলার ঠিক নীচ দিয়েই এঁকেবেঁকে চলে গেছে রাস্তা, সিংবাড়ির সাবেকি ঘাটবাঁধানো পুকুরের দিকে। সুধা অবশ্য এই বাড়ির বৌ হওয়া সত্ত্বেও জলে পায়ের আঙুলটুকুও ডোবায়নি কস্মিনকালে। আপাদমস্তক শহুরে, আধুনিক সুধা এসবে একেবারেই অভ্যস্ত নয়।
* * * *
মিত্রপুরের বনেদী সিংবাড়ি। সারাবছর কড়ি বরগার ছাদ, দেওয়াল, জানলার খড়খড়ি গুমরে, গুটিশুটি মেরে থাকলেও বৎসরান্তে পাঁচ- সাতদিন আলোর রোশনাই, লোকজনের সমাগমে ঘরদুয়োর গমগম করে। মা দুর্গা বাপের বাড়ি আসেন। কিন্তু মায়ের আসার প্রস্তুতি শুরু হয় রথের দিন থেকে। ঐদিন প্রথম মাটি পড়ে মায়ের গায়ে। তাই বর্তমানে শহুরে কত্তা-গিন্নী রথ আর আশ্বিনের কৃষ্ণাষ্টমী তিথিতে তদারকিতে আসেন, যদিও সুধার পা পড়ে ষষ্ঠীকীর্তির সন্ধ্যায়। বছর চারেকের বিবাহিত জীবনে এই প্রথম নিয়মভঙ্গ করে সুধা এসেছে এখন।
"কই গো....কথা কানে গেলো না! বললাম যে পারফিউমের শিশিটা খুঁজে পাচ্ছি না। "
মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানির বড়সড় পোস্টের সফটওয়্যার ম্যানেজার তাপস সিনহা। আরেকটি পরিচয় সুধার স্বামী। তিনশ ষাট দিন ঘাড় গুঁজে গাধার খাটনি খেটে চলা তাপসবাবু, গ্রামের মুক্ত বাতাস পেলেই জমিদারীর রাজসিক মেজাজ ঘাড়ে চেপে বসে তাঁর। গন্ধ ছড়িয়ে, কোঁচা দুলিয়ে তাপসবাবু যান সন্ধেকালীন তাসের আড্ডায়।
সুধা নিঃশব্দে জানলা থেকে সরে এসে কাঠের ভারী আলমারির পাল্লায় টান দেয়।। বিদেশী দামী পারফিউমের শিশিটা তাপসের দিকে বাড়িয়ে দেয় ভাবলেশহীন মুখে। কড়া চোখে বউ-এর দিকে তাকায় তাপস। আস্ফালনের ছোঁয়া বাঁচিয়ে বউ সরে গেলে জুতো মসমসিয়ে সে বেরিয়ে যায়। চেঁচিয়ে মাকে জানিয়ে যায়, ফিরতে রাত হবে।
* * * *
উলুলুলু.... উলুলুলু..... দিনের শেষ আলো মেখে ফিরতি সমবেত উলুধ্বনি ভেসে আসে আবার। আকাশের গায়ে আবছা ছেঁড়া ছেঁড়া কালো বুলিয়ে দিয়েছে কেউ দু চার পোঁচ। দূর থেকে দোতলার জানলার কাছে আওয়াজের স্রোত এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। স্রোতের দমক বাড়ে। সামনে অমাবস্যা পেরোলেই দেবীপক্ষের সূচনা হবে। আকাশের চিরাচরিত আলো, ঝিমঝিমে অন্ধকারে অবশ এখন। উলুধ্বনির সাথে গলা মিলিয়েছে একটানা মহিলা যৌথ গ্রামীন সুর। সুরের দোলায় দুলছে টিমটিমে সারি বাঁধা প্রদীপেরা।
সুধা শাশুড়ির মুখে সকাল থেমেই শুনছে আজ ওদের জিতিয়া পুজো। জীতাষ্টমী। এরকম কোনও পুজোর নাম আগে কোনওদিন শোনেনি বলেই সুধার আগ্রহের পারদ আরো চড়ছে। কৌতূহল আর সুরের অদম্য টানে সুধা পায়ে পায়ে সদর দরজায় এসে দাঁড়ায়। পুবমুখী সদর দরজার সামনেই পুকুর। পুকুরের বাঁধানো ঘাট থেকে সিংবাড়ির উত্তরে বেড় দিয়ে রাস্তা চলে গেছে, আরো উত্তরে গ্রামের মধ্যবিত্ত লোকালয়ে।
২
"সারাটি দিন উপ্যাস যা
ডাগোর ডোগর ছেল্যার মা।
জিতিয়ার বাতি সাঁঝে জ্বেলে
শেউলা শিউলি কাঁখে এলে
মরা পুকুর জলে ভরে
পুণ্যবতী মায়ের তরে।
অষ্টমীতে রাত পোহালে
জিতার ডালায় বোধন আসে...."
একদল গ্রাম্য মহিলার হাসি, কলবলানি, গান তাদের সারাদিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সিংবাড়ির দরজায় বাবুদের বৌটা দাঁড়িয়ে কেন!
"ও রাধুর মা! ওটো বাবুদের বাড়ির বউ লয়! ভর সন্ধ্যেকালে বার দরজায় এলোচুলে দাঁড়িয়ে কি করছে গো! "
"তোমার তাতে কি শ্যামলী! অরা বড়লোক মানুষ! তাই তো এতদিন বিয়ে হলেও বৌটো বাচ্চাকাচ্চার মুখ দেখলে না কো! তবু ওদের হেলদোল নেইকো! "
সিংবাড়ির আশেপাশে কথা ঘুরঘুর করে। কিন্তু এড়িয়ে যেতে পারে না। সুধার রিনরিনে মিষ্টি গলা সবার পায়ে যেন বেড়ি পড়ায়।
"জিতিয়া অষ্টমী কি পুজো গো দিদি? ও দিদিরা! তোমাদের গলায় কি সুন্দর সুর!"
সোজাসাপটা গ্রাম্য স্বভাব পরস্পরের গা ঠেলাঠেলি করে। দলের মধ্যে কমবয়সী বধূটি হেসে বলে....
" না বৌদিমণি! গান নয়কো! ও আমাদের মন্ত্র। কোন ভোরে সূয্যের মুখ দেখার আগেই মাছ, শাক, ওলসিদ্ধর পঞ্চবন্যনে চাট্টি ভাত পেটে পড়েছিল। আর এই এখন গিয়ে ফলমূল, চিনির বাতাসা, নাড়ু এট্টু মুখে দেব! "
এরকম তাজা খিদের ইঙ্গিত সুধার মন মুষড়ে দেয়। মৃদুস্বরে মুখ থেকে বেরিয়ে যায় কটি শব্দ!
" এত কষ্ট করে তোমাদের কী উপকার হয়!"
শ্যামলী হাঁ হাঁ করে ওঠে ---
"এসব একদম বলবেন না বৌদি। ঘরের ছেলেপিলের....."
এক হাত জিভ কাটে! --- "এই দ্যাখেন! ডালার তেল, সিঁদুর, হলুদ, কাজল ছুঁইয়ে দেব ছেলে পিলের গায়ে। মা ষষ্ঠী তুষ্ট হবেন। যাকে পেটে ধরেছি, তার মঙ্গলের জন্য এ কোনও কষ্টই নয়! আর যার হয়নি, শেউলা ও শিউলি কোল আলো করে দেবে তার!" --- চোখ মটকে সর্বকনিষ্ঠ বধূটির দিকে তাকায়। সবার চোখের ইশারায় ছোঁয়া লেগে হাসি এলিয়ে পড়ে চরাচরে।
"তাই বুঝি! এই পুজো করলে মা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়!!!..."
নেতৃস্থানীয়া বয়স্কা সব সন্দেহ ঝেড়ে সস্নেহে সুধাকে বলেন---
"হ্যাঁ গো মা! ঐ যে ঘাটের পাশে গোট গাঁড়া হইছে ওখানে শেউলা শিউলি শুয়ে আছেন। বড় জীয়ন্ত মা! বড় জীয়ন্ত! এবার বর্ষা ভালো হয়নি তো। পুকুরের জল তলানিতে, তাই ঘাটের পাড়ে ছোটো পুকুর কেটে জল বেঁধে রেখেছি আমরা। এই গোট গাঁড়ার পাড়েই পোতলা পুতলি শুয়ে আছেন। উনারা পেসন্ন হলে সতী লক্ষ্মীর কোল আলো হবে। পুকুরের গর্ভ উথলে উঠবে মা! --- এ আমাদের বাপ পিতিমের আমলের কথা! এ কথায় অবিশ্বাস যেতে নাই! ---
সস্নেহে সুধার কপালে সিঁদুর, গালে হলুদ ছুঁইয়ে হাতে একটি শালুক ফুল দেন তিনি।
" ও খুড়িমা, ঐ বাঁজা মেয়েমানুষটাকে পুজোর ফুল দিতে গেল্যা কেনে!"
"আরে! তাতে কি হইছে। ঠাকুরের কাছে সবাই সমান। "
গুঞ্জন তুলে জটলা অন্ধকারে দৃশ্যমানতা হারায় ক্রমে।
* * * *
"বৌমা! এই ভর সন্ধেয় ধূপপ্রদীপ দেখানোর সময় বারদরজায় গিয়ে না দাঁড়ালেই নয় তোমার! 'মা' হতে পারলে না এখনও! এসব মঙ্গল -অমঙ্গলের কিই বা বুঝবে!" --- সুধার শাশুড়ী, সিংবাড়ির দাপুটে গিন্নির নাতি নাতনির অভাব বৌমার প্রতি শ্লেষে গিয়ে ক্ষান্ত হয়।
সুলক্ষণ দেখে ঠিকুজি কুষ্ঠি মিলিয়ে ঘরের বৌ করে আনলেন যাকে, সে মেয়ে এমন অফলন্ত হবে কে জানত! মা মনসা, জাগ্রত কালী, ঘরের মা দুর্গা, ভোলাচন্ডীর থান, কোথাও মানত করতে বাকি রাখেন নি তিনি। তাবিজ-কবজের পাহাড় তৈরি হলো, কিন্তু মেয়ের ঐ এক গোঁ। উনি নাকি এসব বিশ্বাস করেন না! তাই পরবেন না! সুতরাং দুবেলা দাঁতে দাঁত পেষা ছাড়া তাপসী দেবীর দুর্বার রাগ সংবরণ সম্ভব নয়। তপস্যা করে তবেই তার ছেলে তাপস! তা যদি হতচ্ছাড়ী মাগি বুঝত!
* * * *
খুব ছোটো থেকেই সুধার রক্তস্রোতে মিশেছিল গান, বাবার দৌলতে। পড়াশোনার পাশাপাশি গান যেন তাকে সমস্ত দৈনন্দিন ক্লেদ থেকে মুক্তি দিয়ে এসেছে বরাবর। নির্ভার, নির্ঝরিনীর মতো সুধা। সহজ কথা সহজে বলতে পারা সুধা। স্কুল কলেজের অতি জনপ্রিয় হাস্যমুখী সুধা, চিরকাল প্রতিবাদী, দরদী। স্কুল, কলেজের টিফিনের পয়সা থেকে বাঁচানো তার দু-চার টাকায় তাই গরীব, খেতে না পাওয়া বাচ্চাদের অধিকার ছিলো। মন্দির, মসজিদের নয়।
মুখ নামিয়ে থাকা সময় ও মানুষকে হাসিয়ে দেওয়ার অদৃশ্য যাদুদন্ড সাথে নিয়ে ঘুরত যে সুধা, সময়ের চাপে সে আজ গভীর দীঘির মতো অন্তর্মুখী। নিজের অন্ধকার ঘরে এসে এসব ভাবছিলো সে। বাইরের নিবিড়, নিঃসীম অন্ধকার গর্ভের আরো গভীর অন্ধকার গর্তে গোটগাঁড়ার পাশে শেউলা-শিউলি শুয়ে আছে। তারা কি আজ জেগে উঠবে! ডাকলে তারা সাড়া দেবে!
"এই সন্দেহবাতিক আর সংশয়ের জন্যই তুমি ঈশ্বরের দয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছ বৌমা"-- চারবছর ধরে অনবরত বলে যাওয়া শাশুড়ির অসংগত প্রলাপ, আজ সুধাকে ভাবতে বাধ্য করায়! সত্যিই কি তার মাতৃত্বহীনতা অবিশ্বাসের ফল। আকাশ, বাতাস, মাটি যেমন করে মানুষকে বোঝে! তেমন করে নির্বাক ধাতু, পাথর, ইঁট কাঠের মূর্তিগুলি যদি জীবন্ত হয়ে তার যন্ত্রণার মনে হাত বুলিয়ে যেত! 'মা' ডাক শোনার তারও বড় সাধ যে!
৩
গাঁ গঞ্জের রাত্রি ন'টা, চারদিক সুনশান। সন্ধে থেকে শাশুড়ির একটানা অভিযোগের বর্ষণ বিনিয়ে বিনিয়ে সুধার স্নায়ুতন্ত্রকে বিক্ষিপ্ত করে তুলেছে ক্রমাগত। গুমোট ঘরের সাথে তাল মিলিয়ে আকাশের মেঘে আজ একটু বেশিই ঘোর ধরেছে। সুধা জানে এরপর কি হবে! আরো গভীর রাত্রে স্বামী ফিরে এলে, মা-ছেলের যৌথ অভিযোগের তীর গেঁথে গেঁথে সুধার সামনে ধরা হবে ভাতের থালায় সাজিয়ে। ঠিক যখন সুধার তুচ্ছ, বাহ্যিক হয়ে যাওয়া খিদে তেষ্টার অনুভূতি বাড়ির দেওয়ালে ঠোক্কর খেয়ে ঘুরে ঘুরে উঠবে! গা গুলিয়ে ওঠে সুধার। অস্বস্তি কাটাতে খোলা আকাশের নীচে, ঘাটের পাড়ে গিয়ে বসতে ইচ্ছে করে, আফিমের নেশায় বুঁদ হয়ে রাত কাটানো শ্বশুরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে।
* * * *
আরো রাত বাড়লে, মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দেওয়া দু চারটে তারা, সিকিফালি চাঁদকে সাক্ষী রেখে একটা নারীর ছায়াশরীর পায়ে পায়ে নেমে আসে খিড়কির ছিটকিনি খুলে। পুকুরের জল এখন তলানিতে। পাড়ের দিকে উঠে যাওয়া অজস্র বলিরেখার মত ফাটল পাতলা অন্ধকারেও হাঁ করে আছে। শানবাঁধানো সিঁড়ি ধাপে ধাপে যেখানে পুকুরের গর্ভে নেমে গেছে, সেখানে কয়েকধাপ নেমে বাঁহাতে পুকুরের গায়ে চতুষ্কোণ জায়গাটি মাটির প্রাচীরে ঘেরা। প্রাচীরের গায়ে শেউলা শিউলি হেলান দিয়ে শোয়ানো। পাশের আঙার হওয়া নিভন্ত প্রদীপের সলতের পোড়া গন্ধ বাতাসে লেগে আছে।
পাতলা হয়ে আসা অন্ধকারে শেউলা শিউলি দুটো হাতে তুলে দেখে ছায়ামূর্তি। কেমন সুন্দর ছোটো হাত! পিটপিটে চোখ! সামনে পাতার থালায় দুধ-ভাত দেওয়া। কি অপূর্ব গড়ন পিটন পুতুলগুলোর। বাতাস ফিসফিসিয়ে বলে যায় যেন--- " শেউলা শিউলির পুজো করলে কোল আলো হয়!..…" মনটা হা হা চীৎকার করে হাসতে গিয়ে থমকে যায়। পূব পানের মেঘে বিদ্যুৎ গর্জন করে ওঠে। ঝটিতি উঠে দাঁড়ায় নারী, ' এবার তো বাড়ি ফিরতে হবে! নাহলে ভিজে চুপড়ি হয়ে যাবে যে....'
".... আর আমরা ভিজে যাব যে!...."
আধো আধো কচি স্বর কোথা থেকে ভেসে আসছে! নিঃশ্বাস দ্রুত হতে থাকে ছায়াশরীরের। মাটির পুতুলগুলো কথা বলছে নাকি! এই অন্ধকারে কোনও বাচ্চা কিকরে আসবে! নাকি সেই কানে ভুল শুনল!
'তোমার এই সন্দেহবাতিক আর সংশয়ের জন্যই তুমি ঈশ্বরের দয়া থেকে বঞ্চিত '--- ভারী মহিলা কণ্ঠ গমগম করে ওঠে...
'আমরা মরে গেলে মুখে আর জল পাবো না'--- বৃদ্ধ মানুষটার আক্ষেপ....
'ছেলে মেয়ে নিয়ে মা সাজা তোমার আর হলো না'--- স্বামীর ব্যঙ্গ....
কতকালের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথারা
পাকে পাকে পেঁচিয়ে ধরে নারী শরীরকে। মাটিতে ঝুঁকে পড়ে ছায়ামূর্তি। একঝলক বিদ্যুতের আলোয় দুটি কচি হাত আকুল এগিয়ে আসছে তার দিকে।
'আমাদের বাড়ি নিয়ে চলো না গো!... '-- এখনও পা তৈরি হয়নি যে তাদের।
উলু উলু উলুলু লু.....
'ঐ বাঁজা মেয়েমানুষ টাকে পুজোর ফুল দিতে গেল্যা কেন গো খুড়ি!....'
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বিড়বিড়ায় অবয়বটি। হাত বাড়িয়ে কচি হাত দুটোর ছোঁয়া নেয়। স্তনের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে নরম মাটির তালের মতো শরীরদুটো। খুব চুমু খায়। 'আর তোদের ছেড়ে যাবো না! আয় বাছা!'
গলায় তেতো জল উঠে আসে। মাথায় শিরা ছিঁড়ে যাওয়ার অসহ্য যন্ত্রণা। অঝোর বৃষ্টি দুচোখের জল ধুয়ে দেয়।
* * * *
সেদিন রাত্রে অবিশ্রান্ত বর্ষণ একটু ধরে এলে, অনেক খোঁজাখুঁজির পর অসম্বৃত জামাকাপড়ে, মুখে- বুকে মাটি লেগে প্রায় অর্ধচৈতন্য অবস্থায় পুকুরঘাটের পারে সিং বাড়ির দাপুটে গিন্নীকে পাওয়া যায়। দুচোখ লাল। মুখে একটানা নিঃশব্দ বিড়বড়ানি।
বনেদি সিং বাড়ির কত্তা উদাস দৃষ্টিতে পালিত পুত্র তাপসের দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন-- ' আরো বহুদিন আগেই যদি তাপসীকে বলে দিতে পারতেন! অনাথ তাপস তাঁর বীর্যজাত সন্তান নয়!'
(পরবাস-৭৭, ১০ জানুয়ারি ২০২০)