Parabaas Moviestore




Parabaas Moviestore




Subscribe to Magazines




পরবাসে
সারোয়ার রাফি-র

লেখা


ISSN 1563-8685




উৎপাত

(১)

দুই হাঁটুর উপরে দুই হাত রেখে আমি ৬০ওয়াটের বাল্বের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। খুব গরম, বিশেষত এই উপরতলায়। ফ্যানের প্রতিটি ঘূর্ণন যেন নরকের যন্ত্রণা নিয়ে পুরো শরীরে গেড়ে বসে আছে। বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছছি তারই নিদর্শন হিসেবে। আমার পেছনে এমন অসংখ্য স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ, গল্পের প্লট হৈ-হুল্লোড়ে মেতে আছে। পুরো ঘরে দৌড়াদৌড়ি, এ কোণ থেকে ঐ কোণ, চিৎকার, ৬০ওয়াটের সেই বাল্বটিকে একবার জ্বালানো-নেভানো, কেউ সোজা হয়ে দাঁড়ালে পেছন থেকে তাকে ঠেলে দেওয়া, একেকটা লাফের শব্দ, অজান্তেই মানুষের সামনে দিয়ে দৌড় দেওয়া---এ সব কিছুই আমি নিজেকে সে জায়গায় রেখে অনুভব করছি। অন্ধকারে বসে অদৃশ্য আয়নায় নিজের সে চেহারা দেখার চেষ্টা করছি---নাহ, সব আলোড়ন সেই ছোট ছোট ছেলেপেলেদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এখানে এই ঘরে, মানুষদের মধ্য থেকে কোনো বুড়ো অথবা প্রৌঢ় এসে তাদেরকে ডাক দেয়। গালগালি করে। শুয়োর-হারামজাদা, কোনো ভালো মানুষের সন্তান হতে পারে না--এসব কথা বলে। শাসকের ভূমিকা পালন করে। তারা চুপসে যায় তবে ক্ষণিকের জন্যেই।

(২)

আমি যদি শেষের অবস্থাটুকু ঘুরিয়ে ভাবি তবে স্পষ্ট দেখতে পাই সেইসব বুড়ো কিংবা প্রৌঢ়রা গালাগাল দেয় কারণ তারা আর ছেলেপেলেদের অবস্থানে ফিরে যেতে পারবেনা। তারা বয়সের ভারে আর লাফাতে পারবেনা, চিৎকার করতে পারবেনা, কাউকে ঠেলা দিতে পারবেনা, হৈ-চৈ তাদের কাছে এখন শাসনের স্বরূপ। ভেতরে ভেতরে তারা সেইসব স্মৃতির কথা ভাবে। শৈশবকালীন আনন্দে এভাবে সময় পার করা। তারা এখন বর্তমানে নিজেদের বয়সের উপরে দাঁড়িয়ে তাই ছেলেপেলেদেরও নিজেদের শাসনে দাঁড় করিয়ে রাখতে চায়। আহা--তাদের প্রতিটা শব্দ আমার শরীরে এসে বেঁধে। ছেলেপেলেদের শোরগোলে নিজেকেও আবিষ্কার করি, তাদের শরীরে এ উৎপাত কাঁটার মতন ফুলে ওঠে।

(৩)

আমি এখনো দুই হাঁটুর উপরে দুই হাত রেখে ৬০ওয়াটের বাল্বের দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি বয়সটা পেরুচ্ছে। আমাকেও হয়ত কেউ ঠিক ২০ বছর পর এমন শাসকের ভূমিকায় খুঁজে পাবে। তারাও আজকের মতো এই সাময়িক উৎপাত বন্ধ করার ভেক ধরবে, ধরতেই থাকবে। পরক্ষণে বুঝতে পারি, ৬০ওয়াটের সরকারি বাল্বটি ফিউজ হয়ে গেছে।



(পরবাস-৭৫, ৩০ জুন ২০১৯)