Parabaas Moviestore




Parabaas Musicstore




Subscribe to Magazines





পরবাসে
নিরুপম চক্রবর্তীর

লেখা

বই


ISSN 1563-8685




চারটি কবিতা

লীলাবতী ও বিশুদ্ধ গণিত

লীলাবতী, তোমার বিশুদ্ধ অবয়বে ঘুরছে পিঁপড়ের ঝাঁক
ধীরে ধীরে ক্রমে ক্রমে তুমি এক নিরাসক্ত বল্মীকের স্তূপে
আপাদমস্তক ঢেকে গেলে।
লীলাবতী, তোমার ওই নিজস্ব গণিত আজও
পিতৃপুরুষের ঋণে ঢেকে আছে,
যেন কোনো গভীর জ্যামিতি তুমি লালন করেছো কিছু
ভুলে যাওয়া উপপাদ্যে
বঞ্চিত নিজস্ব জঠরে।

এখন সুরেলা রাতে যেন কোনো দূর নেবুলাতে
ঝড় ওঠে
পাটিগণিতের সূত্র জ্বলে ওঠে,
ধারণ করেছো যত পুরুষালী অভিশাপ
কায়মনবাক্যভরে, সবকিছু দগ্ধ হয়
তোমার ওই সুন্দর গণিতে লীলাবতী
মুগ্ধ হোয়ে দেখে নাও অরব আকাশ ভরে জেগে ওঠো আজ তুমি
আজ এই রাতে
তোমার নিজস্ব এক নক্ষত্রের জন্মের সময়।।



বেকুব

কে এক বেকুব কাকভোরে
নিজস্ব যাদুটোনা নাকি ব্ল্যাক ম্যাজিকের ঘোরে
হেঁটেছে স্বপ্নে স্মৃত কাঁটাঝোপে শিহরিত
কবিতার চোরাপথ ধরে।

কী হবে এসব খোঁজ পেয়ে?
আমরা যাইনি সাথে
উলঙ্গ রাজপথে
হাত পেতে দাঁড়িয়েছি
নিরাপদ গল্পগুলো চেয়ে।।



বিচ্ছিন্ন শব্দের গল্প

বিচ্ছিন্ন শব্দের কাছে যেন কিছু ঋণ পড়ে আছে।
যেসব শব্দকে আমি একদিন হেলাভরে কবিতার গ্রাসে
নিয়ে এসে তারপর সবকিছু ভুলে গিয়ে চলে গেছি চুপচাপ
দূর পরবাসে,
সেসব শব্দেরা আজ কেন যেন বারবার ফিরে ফিরে এসে
ঝমাঝম বেজে ওঠে মাথার ভেতরে এক ক্লান্ত দিন শেষে,
যেন অন্ধকার থেকে কিছু কান্না ঝরে ঝরে পড়ে
যেন কিছু ম্লান শব্দ দাঁড়িয়ে থেকেছে শুধু সার সার
বিনা ব্যবহারে;
তাদের যে মুখ নেই, নাক নেই, চোখ নেই
শুধু তীক্ষ্ণ নখের বাহার,
খালি কবিতার পাতা শিরশির করে ওঠে
আঁচড়ে আঁচড়ে,
সদ্য জবাই হওয়া মুণ্ডহীন মোরগেরা ঝটপট করে যায় ডানা
(আমরা আহ্লাদে আটখানা!)
আমাদের এই গল্পে অঙ্গহীন, মৃত্যুহীন
কবিতারা প্রহর জেগেছে।



টেবিল পাহাড়ে রাত: অথবা কলোরাডো ২০১৭

না চাইলে নীরবতা কোনোদিন এখানে এসোনা।
পাহাড়চূড়ার কাছে সব শব্দ স্তব্ধ হোয়ে আছে
পাহাড়চূড়ার কাছে ঈশ্বরের নিজস্ব আবাসে
আলোর কণার মতো শব্দহীন কবিতারা
ভাসতে ভাসতে আর জানিনা যে কত দূরে যাবে।
যেটুকু মালিন্য ছিলো ভাসিয়ে দিলাম আজ
সবটুকু ভালোবাসা হেলায় হারিয়ে ফেলে,
যে কটা কবিতা ছিলো তারা সেই কবে ছেড়ে গেছে!

আমি এই অন্ধকারে আকাশের মতো ভরহীন
মৃত তারাদের মতো রাতের চীনাংশুক সর্বাঙ্গে জড়িয়ে
জেগে আছি, বেঁচে আছি
কোথায় যাবার ছিলো ভুলে গেছি
তবু দ্যাখো ভালো আছি বেশ।

চন্দ্রাহত কারা যেন দেখেছিলো ঈশ্বরের কেশ
মেঘের সীমানা ছুঁয়ে উড়ে যায় পাহাড় চূড়ায়।
পাহাড়ের গায়ে গায়ে পাকদণ্ডী বেয়ে বেয়ে কারা যেন হেঁটে যায়
এই রাতে ঈশ্বরের খোঁজে।
আমি জানি, তারা জানেনাতো, টেবিল পাহাড়ে আজ
নিরুদ্দেশ ঈশ্বরের ভাঙা সিংহাসনে
মৃত কবি বসে একা তাস খেলে সারারাত ধরে;
তার তো বলার কিছু নেই।
ঈশ্বরের সলিলকি সেই কবে থেমে গেছে,
রাতের বাতাসে শুধু র‍্যাটল স্নেকের গান:
পাহাড়ের সাপেদের নিরন্তর অশ্রুত বিলাপ।।



(পরবাস-৬৭, জুন ২০১৭)