|| প্রথম পর্ব ||
জ্ঞানোন্মেষের প্রথম শর্তটাই কি মনে কোনো প্রশ্ন জাগ্রত হওয়া? কী ছিল প্রথম প্রশ্ন? ‘কো অহম?’ কে আমি? কোথা থেকে আমরা এলাম? কী করে সৃষ্টি হল এই বিশ্ব-চরাচর— গাছপালা, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, আকাশ-বাতাস? প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকা বিভিন্ন ঘটনারাজির প্রেক্ষাপটে কী, কেন, কীভাবে, কোথায়— এই ধরনের অগণিত প্রশ্ন যখন মানবমনকে অশান্ত করে তোলে তখনই আরম্ভ হয় সত্যানুসন্ধানের। সর্বধরনের প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্যে আরম্ভ হয় বিভিন্ন ধরনের ক্রিয়াকলাপ। অহরহ চলতে থাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা। আর এই সত্য উদ্ঘাটনের মাধ্যমেই মানুষ এগিয়ে যেতে থাকে প্রগতির পথে। এই ধরনের সমস্ত রকমের ঘটনাবলির পশ্চাতে থাকা কার্যকারণ খুঁজে বের করার কাজটাই তো গবেষণা।
গবেষণা শব্দের প্রকৃত অর্থ কী? এর বুৎপত্তি হ’ল ‘গো+এষণা’— ‘গো’ মানে তো গোরু আর ‘এষণা’ মানে খোঁজা। তাহলে গবেষণা মানে কি ‘গোরু খোঁজা?’ এখানে গোরু হল রূপক— আসলে ঘটনার পশ্চাতে লুক্কায়িত সত্যজনিত সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়াটাই হচ্ছে গবেষণা। সংস্কৃতে গো শব্দের বিভিন্ন অর্থ বিদ্যমান। কোথাও এর অর্থ ‘পৃথিবী’, কোথাও বা ‘ঐশ্বর্য’ তথা ‘সমৃদ্ধি’। জ্ঞানরূপ ঐশ্বর্য খোঁজা। যাই হোক, আমরা আপাতত গো শব্দের স্থূল অর্থটাকে নিয়েই এগোই।
এখন হারানো গোরু খুঁজতে গেলে প্রথমেই গোরুটির সম্পর্কে সম্যকভাবে জানতে হবে। এটা এঁড়ে না বকনা, ছোট না বড়, এর রঙই বা কী? শিং আছে কি? আর কোনো শরীরগত বিশেষত্ব আছে কি না, ওটা চঞ্চল না শান্ত স্বভাবের— এসবও জানতে হবে। অর্থাৎ সমস্যাটা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অবগত হতে হবে। না হলে উদ্দিষ্ট গোরুর জায়গায় অন্য গোরু ধরে নিয়ে এলে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা। এরপর খবর নিতে হবে নিকটবর্তী বনজঙ্গল, মাঠ—ঘাট ইত্যাদির। খবর নিতে হবে— আশেপাশে গোরু চোরটোর থাকে কিনা, খোঁয়াড় আছে না নেই। এরপরই শুরু হবে খোঁজার পালা। ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর পশ্চাদ্ধাবন করে উদ্দিষ্টের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে আপনাকে ‘সেরেনডিপিটি’-র আশ্রয় নিতে হবে।
‘সেরেনডিপিটি’ শব্দটার মানে কী? কোথা থেকে এই শব্দের উৎপত্তি? সেরেনডিপিটি মানে হচ্ছে ‘স্বর্ণদ্বীপত্ব’। সেরেনডিপিটি>সেরেনডিপ>স্বর্ণদ্বীপ>সুবর্ণদ্বীপ, মানে সিংহল তথা শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার এক লোককথাকে অবলম্বন করে এই শব্দের সৃষ্টি। কী সেই লোককথা?
বহু জায়গায় ভ্রমণ করে দিনান্তে একটা সরাইখানায় এসে বিশ্রাম নিচ্ছেন সিংহলের তিন রাজকুমার। সরাইখানার মালিক ওদের চেনে না। নিজেদের মধ্যে নানা ধরনের কথা বলতে বলতে হঠাৎই প্রথম রাজকুমার বলল— ‘যদিও চাক্ষুস করিনি, তথাপি এটুকু বলতে পারি আমরা যে-পথ দিয়ে এখানে এলাম, ওই পথে কিছুক্ষণ আগেই একটা উট হেঁটে গেছে।’ 'হ্যাঁ, আর ওর পেছন দিকের ডান পা-টা নেই বা খোঁড়া’— দ্বিতীয় রাজকুমারের উক্তি। তৃতীয় জন বললে— ‘তোমরা ঠিকই বলেছ, ওর বাম চোখটা আবার কানা।’ প্রথমজন আবার বললে— ‘ওর তলার দাঁতপাটির মাঝখানের দুটো দাঁত নেই।’ দ্বিতীয়জন বলল— ‘ওর পিঠের বাঁপাশে মধুর ভাণ্ড আছে।’ তৃতীয়জন বেশ উত্তেজিত হয়ে বললে— ‘শুধু মধুই নয়, ওর পিঠের ডানদিকে ছোলা-মটরের বস্তাও মনে হয় আছে।’শ্রীলঙ্কার এই লোককথাকে কেন্দ্র করে ‘স্বর্ণদ্বীপত্ব’ শব্দটির উৎপত্তি। বিদেশীরা স্বর্ণদ্বীপের উচ্চারণ করল— সেরেনডিপ, আর সেরেনডিপের এই গল্পকথার মূল তিনটে কার্যাবলী বা তত্ত্বের সম্মিলিত রূপের নাম দেওয়া হল— ‘সেরেনডিপিটি’। কী সেই তিনটে কার্যাবলী? প্রথমটি হল— Keen observation বা ‘তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ’। দ্বিতীয়টি হল— Thorough and logical analysis অর্থাৎ ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ’, আর তারপর ‘সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত’ মানে ‘Probable inference. মূলত এই তিনটে কাজের দ্বারাই নিষ্পন্ন হচ্ছে প্রায় সব ধরনের গবেষণা কর্ম।এদের কথা শুনে চমকে উঠল সরাইখানার মালিক। একটু আগেই সরাইখানায় আসা এক ব্যবসায়ী ওর উট হারিয়েছে বলে ভয়ানক হুলুস্থূল করে নালিশ জানাতে গেছে পাশেই থাকা কোতোয়ালিতে। এদিকে এরাও তো উট নিয়েই কথাবার্তা বলছে। তা হলে? সরাইখানার মালিক সঙ্গে সঙ্গে খবর পাঠালো কোতোয়ালিতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে কোতোয়ালকে সঙ্গে নিয়ে সরাইখানায় ছুটে এল ওই ব্যবসায়ী। সরাইখানার মালিকের আর ব্যবসায়ীর জবানবন্দী শুনে কোতোয়াল রাজকুমারদের হাতে হাতকড়া পরায় আর কি! তাঁরা যতই বলে যে উটটাকে তাঁরা আদৌ দেখেনি, কোতোয়াল তা কিছুতেই বিশ্বাস করছে না। কারণ, তাদের বলা বিবরণের সঙ্গে ব্যবসায়ীর উটের সমস্ত কিছু মিলে যাচ্ছিল। রাজকুমাররা তখন নিরুপায় হয়ে তাদের পরিচয় দিয়ে বলল যে সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা থাকা যে কোনো কেউই তাদের বলা কথাগুলি বলতে পারবে। কোতোয়াল পড়ল ধন্দে, তার সন্দেহ যায় না।
. তোমরা যে রাস্তা দিয়ে এলে সেই রাস্তা দিয়ে একটা উট গেছে বলছ। আবার বলছ উটটাকে তোমরা দেখনি। না দেখেই ও—কথা বলছ কী করে?
. বৃষ্টি পড়ে রাস্তার মাটি যথেষ্ট নরম হয়ে আছে, ফলে খুরের দাগ দেখে।
. সেটা তো গোরু, মোষ কিংবা ঘোড়ারও হতে পারত!
. একটা পরিণত বয়সের উটের খুরের দাগ গোরু, মোষের চেয়ে আলাদা। আর এটা যারা জানে তারা ঠিকই বুঝতে পারে।
. একটা পা খারাপের কথা?
. মাটিতে সমান দূরত্বে একটু পরপরই তিনটে করে খুরের দাগ। আর একটা পা খারাপ হওয়ার সুবাদে লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছিল বলে ভেজা মাটিতে অনেকখানি সেঁধিয়ে যাচ্ছিল।
. বাঁ চোখটা যে কানা সেটা টের পেলে কী করে?
. রাস্তার দুদিকেই যথেষ্ট উঁচু উঁচু ঘাস। উটটা যেতে যেতে শুধু ডানদিকের ঘাসই খাচ্ছিল। বাঁদিকের ঘাস সম্পূর্ণ অক্ষত।
. নীচের পাটির মাঝখানের দুটো দাঁত না থাকার ব্যাপারটা?
. খেয়ে যাওয়া ঘাসের মধ্যে ঠিক দুটো দাঁতের সমান অংশ অক্ষত অবস্থায় আছে।
. ওর পিঠে থাকা মধুর ভাণ্ড আর ছোলা-মটরের বস্তা থাকার কথা জানলে কী করে?
. রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যে-কোনোভাবে ওটার পিঠ থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে মধু মাটিতে পড়েছে, আর পিঁপড়েরা জায়গায় জায়গায় দল বেঁধে তা ঘিরে ধরেছে। ঠিক একইভাবে ডানদিকে দু-চারটে করে ছোলা-মটর ইতস্তত ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।কুমারদের উত্তরে কোতোয়াল সন্তুষ্ট হয়ে চলে গেলে ওরা ব্যবসায়ীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে যে, চিন্তার বিশেষ কোনো কারণ নেই। উটটা খুব সম্ভব বেশি দূর যেতে পারেনি। এই বলে ওরা তাকে রাস্তাটা দেখিয়ে দিল।
(শ্রীলঙ্কার এই লোককথাটি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে প্রচলিত, কিন্তু এর মূল বিষয়বস্তু প্রায় একই।)
যে-কোনো ঘটনাই তার সঞ্চারপথে বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন ধরনে, বহু পদচিহ্ন রেখে যায়। তার কোনোটি স্পষ্ট আর কোনোটা বা অস্পষ্ট। আপনি গবেষক, তাই আপনার সমস্যা সংক্রান্ত কোনো ঘটনাকেই আপনি কম প্রাধান্য দিয়ে বা হেলাভরে প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না। আপনাকে হতে হবে একজন ‘ডিটেকটিভ’-এর মতো। বিভিন্ন ধরনের ‘হয়’ আর ‘নয়’-এর মধ্যে আপনি দোদুল্যমান থাকবেন। এরপর বিভিন্ন তত্ত্ব, তথ্য, যুক্তি ইত্যাদি দিয়ে ‘নয়’গুলিকে খণ্ডন করে করে সর্বশেষে আপনি প্রকৃত সত্যের সন্ধান পাবেন। অতি ক্ষীণ ধোঁয়ারেখাকে অনুসরণ করে এগোতে এগোতে একসময় হয়তো আপনি এক বিশাল ‘জ্বালামুখী’-ই আবিষ্কার করে ফেলবেন। কখনও কখনও তুচ্ছাতিতুচ্ছ কোনো একটা ঘটনা বা জিনিসও এক বিশাল রূপ ধারণ করে অন্য কোনো এক বিরাট সম্ভাবনার উৎসমুখ খুলে দিতে পারে।
স্যার হেনরি বেক্যুরেল, নতুন ধরনের একটা আকরিক (Ore, খনিজ) নিয়ে কিছু একটা কাজ করছিলেন। সন্ধের দিকে আকরিকের একটা টুকরোকে একটা কাগজে মুড়ে ড্রয়ারে রেখে বাড়ি চলে গেলেন। ওই ড্রয়ারে ছিল একটা ‘আনএক্সপোজ্ড ফটোগ্রাফিক প্লেট’। পরদিন যখন ওই ফটোগ্রাফিক প্লেটটা নিয়ে কাজ করতে গেলেন তখন তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। ‘আরে! এই ভালো ফটোগ্রাফিক প্লেটটায় দেখি হিজিবিজি অনেক ধরনের দাগ। প্লেটটা খারাপ হল কী করে! এটা তো যথেষ্ট সুরক্ষিত অবস্থায় ছিল।’ প্লেটটাকে ফেলে না দিয়ে তিনি ভাবতে লাগলেন— ‘আনএক্সপোজ্ড অবস্থায়ও প্লেটের ওই দাগগুলি নিশ্চয়ই সেই আকরিক থেকে কোনো অদৃশ্য বস্তু বেরিয়ে এসে কাগজের ঢাকনি ভেদ করে প্লেটের মধ্যে তার অস্তিত্বের জানান দিয়ে গেছে।’ ভাগ্য ভালো এই বিশ্বের আর বিজ্ঞানজগতের। নষ্ট হয়ে যাওয়া প্লেটখানা ফেলে দিয়ে ঘটনাটার ওখানেই ইতি টানলেন না বেক্যুরেল। বরঞ্চ দ্বিগুণ উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়লেন সত্য সন্ধানে। বেক্যুরেল হয়ে গেলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর ‘আলাদিন’—ওই বিশেষ আকরিকগুলো হয়ে উঠল ‘আশ্চর্য প্রদীপ’— আর তার থেকে বেরিয়ে এলো ‘দৈত্যরূপী মহাবলী আণবিক শক্তি’— এরপর! ইতিহাস। ‘দূর ছাই। বেকার ফটোগ্রাফিক প্লেটখানা নষ্ট হয়ে গেল’— বলে ঘটনাকে কোনো পাত্তা না দিয়ে বেক্যুরেল যদি হাত-টাত ধুয়ে ফেলতেন তাহলে বর্তমান মানব ইতিহাস হয়তো অন্যদিকে গতি নিত।
১৯২১-২২ সালের শীতকাল, তদানীন্তন পুরাতত্ত্ব বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলের সুপারিনটেন্ডেন্ট বিশিষ্ট পুরাতাত্ত্বিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ধু নদের প্রায় দশ কিলোমিটার উত্তর দিকে বালিময় এলাকায় ঘোড়ার পিঠে উঠে কয়েকদিন ধরে চৌদিকে সন্ধান করে যাচ্ছেন আলেকজান্ডার নির্মিত কোনো এক স্মৃতিসৌধের। একদিন ঘুরে ঘুরে পরিশ্রান্ত হয়ে একটা উঁচু বালি-পাহাড়ের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁর পায়ের কাছে অর্ধপ্রোথিত চকমকি পাথরের (flint stone) একটা ছুরি মাথা উঁচিয়ে যেন বলল— ‘কী ভায়া, কেমন আছ?’ কৌতূহল ভরে ছুরিখানা টেনে হাতে নিয়েই চমকে উঠলেন জহুরী রাখালদাস। ‘কয়েক হাজার বছরের পুরোনো এই ছুরিখানা এখানে এলো কোথা থেকে?’ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎতরঙ্গ প্রবাহিত হল পুরাতাত্ত্বিকের মনে। শুরু হল খননকার্য। বেরিয়ে এল কয়েক হাজার বছরের পুরোনো নগরসভ্যতা কেন্দ্রিক ‘হরপ্পা’ আর ‘মহেঞ্জোদারো’। সেরেনডিপিটির সুবাদেই বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত হল সুপ্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন।
এক সত্যের সন্ধানে গিয়ে আরেক সত্যের উদ্ঘাটন, এটা সম্ভব হল প্রকৃত গবেষক একজনের সদাজাগ্রত অনুসন্ধানী দৃষ্টি থাকার ফলে। আপনি গবেষক, আপনার দূরদৃষ্টি থাকতে হবে, অন্তর্দৃষ্টিও থাকা চাই। সর্বতোভাবে আপনি একজন সত্যদ্র্রষ্টা তথা দার্শনিক। অন্যে দেখতে না পাওয়া বস্তু আপনি দেখতে পান। কেউ কল্পনা করতে না পারা দৃশ্যাবলী আপনার মানসপটে উদ্ভাসিত হয়। আপনি তখন ক্রান্তদর্শী।
কোনো ঘটনা বা পরিঘটনার সত্যাসত্য জানা মানে সেটা সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞান আহরণ করা। বিশেষভাবে জ্ঞাত হতে পারাটাই তো বিজ্ঞান। কোনো আহৃত জ্ঞান বা সত্যকে অবলম্বন করে, প্রয়োজনের তাগিদে, যখন নতুন নতুন সত্যের উৎসৃজন ঘটে, তখন সেই প্রক্রিয়া হয়ে পড়ে উদ্ভাবন। ‘প্রয়োজনই উদ্ভাবনের প্রসূতি।’ মানবজীবনের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধির জন্যে আরম্ভ হল গবেষকদের নিরন্তর সাধনা, সৃষ্টি হতে থাকল নিত্যনতুন অলেখ বস্তুর। এখানে গবেষক একজন স্রষ্টা— তিনি বিশ্বকর্মা, তিনি ব্রহ্মা। তিনি দ্রষ্টাও, কেননা অন্যেরা দেখতে পায় না অথবা বুদ্ধি দিয়েও খুব সহজে তার নাগাল পায় না, এমন জিনিস তিনি মনের দৃষ্টিতে অবলোকন করে সেই উদ্দিষ্ট বস্তুর রূপায়ণ ঘটিয়ে যাচ্ছেন।
আপনি আবিষ্কারক কিংবা উদ্ভাবক, যাই হোন না কেন, আপনি আসলে একজন গবেষক। অন্ধকাররূপী বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে, নানা ধরনের অবুগুন্ঠন পরম নিষ্ঠায় সরিয়ে সরিয়ে মহাসত্যের উজ্জ্বল আলোকের ঝলকানি যখন আপনার সামনে উদ্ভাসিত হবে, একটা সত্যের আশ্রয়ে যখন অন্যান্য নতুন নতুন সত্যজনিত বস্তুর উদ্ভাবন ঘটবে, তখন আপনি লাভ করবেন অপার অনাবিল স্বর্গীয় এক আনন্দ। আপনি তখন হয়ে পড়বেন ‘সচ্চিদানন্দ’।
|| দ্বিতীয় পর্ব ||
গবেষণা হল পূজা, গবেষণা হল আরাধনা। কার আরাধনা? সত্যের— ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’। সত্যই শিব— মঙ্গলময়, সত্য— সুন্দর। হে গবেষক, আপনি সত্যের পূজারী। সত্যকে খোঁজা মানে ঈশ্বরকে খুঁজে বেড়ানো। বড় কঠিন কাজ। পথ মসৃণ নয়। ঈশ্বরকে পাবার জন্যে আপনার মন ব্যাকুল হতে হবে, নিজেকে পবিত্র রাখতে হবে। তাৎক্ষণিক লাভালাভের জন্যে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিতে পারবেন না। আপনাকে সৎ আর নিষ্ঠাবান হতে হবে। মনে রাখবেন— মিথ্যের ভিতের ওপর সত্যের প্রাসাদ গড়া যায় না, ওটা কোনো না কোনো একদিন ভেঙে পড়বেই।
গবেষণাগার আপনার মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদ্বার। এর সমস্ত যন্ত্রপাতি আপনার কোশাকুশি, পুষ্পথালি, প্রদীপ, ধূপদানি। হৃদয়-প্রদীপ জ্বালিয়ে আরাধনাস্থল আলোকিত করতে হবে, মনরূপ ধূপশলাকায় অগ্নিসংযোগ করে সেই স্থান সুগন্ধময় করে তুলতে হবে। আহরণ করতে হবে ফুল, ফল, নৈবেদ্যর নানা উপাচার। আপনার জন্যে সেগুলি হল সমাধান করার সমস্যাজনিত নানা ধরনের তথ্যপাতি, নানা ধরনের উপাদান। প্রয়োজন সাপেক্ষে আপনাকে ঘটনার উৎসস্থলীতে যেতে হবে। এরপরই আরম্ভ করতে হবে একান্ত নিবিষ্ট মনে ধ্যান তথা অধ্যয়ন। আপনার একাগ্রতা থাকতে হবে, আন্তরিকতাও থাকা চাই। ঈশ্বর তথা সত্য অবশ্যই আপনার সামনে মূর্ত হবে।
গবেষণার ইংরেজি হল ‘রিসার্চ’। পুনরীক্ষণ, পুনর্বীক্ষণ। গবেষণার প্রথম কাজটাই হল ‘সার্চ’। বলি সার্চটা ঠিকমতো না হলে রিসার্চটা এগোবে কী করে? আপনার সমস্যা সম্পর্কে প্রথমেই ভালো করে অবহিত হয়ে নিন। খবর নিন, এ-সম্পর্কে আগেই কেউ কোনো কাজ করে গেছেন কিনা। না-হলে আপনি বিপদে পড়বেন। বেশ কিছুদিন কাজ করার পর হঠাৎই একদিন দেখবেন যে বহুদিন আগেই এই সংক্রান্ত গবেষণা হয়ে গেছে। আপনি তখন হতাশ হবেন, নিরুৎসাহ হবেন। এরপর খবর নিন— আপনার সমস্যার সমগোত্রীয় আর কী কী কাজ পূর্বজনরা করে গেছেন— তাঁরা কীভাবে উপাদানগুলি আহরণ করে গেছেন— কী ধরনের পন্থা অবলম্বন করেছেন। আপনিও আপনার সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক পথের সন্ধান পাবেন। তখন এসে পড়বে সঠিক পথ নির্বাচনের সমস্যা। চিন্তা নেই, সাহায্য করবেন গুরু তথা ‘গাইড’। তিনি বিজ্ঞ, তিনি অভিজ্ঞ। উদ্দেশ্য সাধনের ক্ষেত্রে তিনি হবেন আপনার পথপ্রদর্শক। গুরু শুধু পথই দেখাবেন, আপনার হয়ে কাজ করে দেবেন না। আপনার কাজ আপনাকেই করতে হবে, সিদ্ধিলাভ হতে হবে আপনারই।
এরপর সমস্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন উপাদান খোঁজার পালা। আরম্ভ হবে সার্চের দ্বিতীয় পর্যায়। এরজন্যে আছে বইপত্র, জার্নাল, লাইব্রেরি, আর্কাইভ, ইন্টারনেট। প্রয়োজন সাপেক্ষে সমস্যা সংক্রান্ত স্থানে যেতে হবে। যোগাযোগ করতে হবে বিভিন্ন জনের সঙ্গে। খবর নিতে হবে ইতিহাস-ভূগোলের। করতে হবে নিশ্ছিদ্র তদন্ত। বিভিন্ন ধরনের সমস্যার জন্যে উপাদান খোঁজারও বিভিন্নতা থাকবে। উপাদান তন্নতন্ন করে খুঁজে খুঁজে সমস্ত পৃথিবী ওলটপালট করে ফেলতে হবে। গবেষণা শব্দের ব্যুৎপত্তি ‘গো’—শব্দটার আরেকটা মানে যে পৃথিবীও।
এরপরই আসবে অধ্যয়ন, এক্সপেরিমেন্ট তথা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বিজ্ঞানের এক্সপেরিমেন্টের ক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন, আবার নতুন কোনো পদ্ধতিও বের করে নিতে পারেন। প্রয়োজন-বোধে নতুন যন্ত্রও উদ্ভাবন করতে পারেন। পরীক্ষার সঙ্গে নিরীক্ষা শব্দটাও যুক্ত হয়ে আছে। আপনার পরীক্ষা অভিপ্রেত গতিপথ ধরে এগোচ্ছে কি না, সেটাও ভালো করে লক্ষ করে যেতে হবে। এরপর, পরীক্ষালব্ধ সব ধরনের তথ্যাদি সংগ্রহ করে নিয়ে আরম্ভ হবে এর পর্যালোচনা। তবে বিজ্ঞানের বাইরেও আরও তো অজস্র বিষয় আছে আর সেগুলি নিয়েও প্রচুর গবেষণা হয়েছে, হচ্ছে আর হবেও। এখানে আপনার এক্সপেরিমেন্ট হল উপাদানগুলির পুংখানুপুংখ অধ্যয়ন, এখানে আপনার মস্তিষ্কই হল পরীক্ষাযন্ত্র। কী ধরনের অধ্যয়ন? এটা হতে হবে সার্বিক। ডাইনে-বাঁয়ে, নীচে-উপরে, উলটেপালটে দেখতে হবে। অনুভূতির মাধ্যমে আপনাকে এর অভ্যন্তরে ঢুকে পড়তে হবে। আপনার নিরীক্ষণ হতে হবে সর্বাঙ্গীণ। তারপরই বেরিয়ে আসবে বিশাল এক তথ্যসম্ভার।
এখন আরম্ভ হবে উপলব্ধ তথ্যরাজির পর্যালোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ, এনালিসিস। বিজ্ঞান গবেষকরা এনালিসিসের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাহায্য নেবে। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে? তাঁরা ব্যবহার করবেন ‘মগজ যন্ত্র’। এর থেকে উদ্ভূত বুদ্ধি, যুক্তি ইত্যাদি শাণিত অস্ত্রের সাহায্যে তথ্যসমূহকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে, খাবলে-খুবলে’ বিভিন্ন ধরনের ‘নয়’ এবং ‘হয়’ সমন্বিত অনেক সম্ভাবনা উঁকি দেবে। এরপরই আরম্ভ হবে ‘ডিডাকশন’। পূর্বজ গবেষকদের সমপর্যায়ের কাজকর্ম আর বিশ্লেষণের সঙ্গে তুলনা এবং তারই সঙ্গে ক্ষুরধার যুক্তি ইত্যাদির সাহায্যে বিভিন্ন ‘নয়’গুলিকে খণ্ডন করে অবশেষে ‘হয়’ তথা মূল সত্যে উপনীত হতে হবে। কখনও কখনও এমনও হতে পারে যে আগের গবেষকদের উদ্ভাবিত প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বে আপনার আবিষ্কৃত সত্য যেন ঠিকমতো প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে না, অথচ যুক্তি এবং বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে আপনার আবিষ্কৃত সত্যটাকে মিথ্যাও বলতে পারছেন না। এরকম ক্ষেত্রে আপনাকেই এক নতুন তত্ত্বের উদ্ভাবন ঘটাতে হবে। সেই তত্ত্বকে ক্ষুরধার এবং অকাট্য যুক্তি ও প্রমাণের, তথা অঙ্কের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
নতুন তত্ত্ব আর তাকে অবলম্বনের মাধ্যমে উদ্ঘাটিত নতুন সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করানোটা কিন্তু সহজসাধ্য নয়। কেননা, একটা তত্ত্বের ওপর নির্ভর করে প্রচলিত কোনো এক সত্যতেই মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এইক্ষেত্রে, নতুন তত্ত্বে সমৃদ্ধ বিকল্প বা নতুন কোনো সত্য তাদের গতানুগতিক ধ্যানধারণাকে ওলটপালট করে দেয়। ফলে নতুন সত্য প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে প্রচণ্ড রকমের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এই ক্ষেত্রে কৃতকার্য হতে হলে লাগবে ধৈর্য, অধ্যবসায়, ক্ষুরধার যুক্তি আর বুদ্ধি। আপনার একনিষ্ঠতা থাকতে হবে, আপনাকে হতে হবে নিরপেক্ষ, এক দার্শনিকের মতো। কখনও বা অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে দ্বিতীয় কোনো গবেষকের, যিনি গবেষণার মাধ্যমে আপনারই আবিষ্কৃত সত্যে উপনীত হয়ে আপনার বহুমূল্য কাজকে প্রত্যয়িত করে আপনার জয়গান গাইবেন। আর আপনিও তখন বিদ্বৎসমাজে স্বীকৃতি পাবেন।
সত্য প্রতিষ্ঠার জন্যে কত জনকে যে আত্মবলিদান পর্যন্ত দিতে হয়েছে। মানবিক সত্য প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রভু যীশু হাসিমুখে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছেন। মহাজাগতিক ঘটনাবলীর পশ্চাতে লুক্কায়িত সত্যের মূল্য তৎকালীন অজ্ঞ, নিষ্ঠুর সমাজ বুঝতে না পেরে সকরুণ মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে চিরনমস্য সত্যের পূজারী সক্রেটিস, জিওর্দানো ব্রুনো আর গ্যালিলিওকে। প্রকৃতিতে প্রাপ্ত কিংবা মানুষেরই নির্মিত বিভিন্ন ধরনের বিষ যে প্রাণঘাতী, সেই সত্যও কতজন যে মৃত্যুবরণ করে মানুষকে জানিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই।
বুদ্ধি প্রয়োগ করে আবিষ্কৃত সত্যকে সুধী সমাজের কাছে প্রতিষ্ঠিত করার জ্বলন্ত উদাহরণ কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার। সুদীর্ঘ ক্লান্তিকর সমুদ্রযাত্রা— প্রলয়ঙ্করী সামুদ্রিক ঝঞ্ঝা— ভয়ংকর, হিংস্র রেড ইন্ডিয়ান— প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুভয় ইত্যাদিকে তুচ্ছ করে আমেরিকা ভূখণ্ড আবিষ্কার করে কলম্বাস যখন ফিরে এলেন, তখন তাকে নিয়ে সবার মধ্যে আনন্দ আর উল্লাস। প্রায় সকলের মুখেই কলম্বাসের নামে জয়ধ্বনি। মহাসাগরের ওপারে, আগে কখনও না-জানা, না-শোনা, অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, এক বিশাল মহাদেশ আবিষ্কার করেছেন তিনি। এটা সহ্য হল না বেশ কিছু পণ্ডিত, বুদ্ধিজীবী আর অমাত্যের। কলম্বাসকে একটা রামধাক্কা দেওয়ার জন্যে তক্কে তক্কে রইলেন। অবশেষে সুযোগ এল। কলম্বাসকে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়ার জন্যে রাজা এক সভার আয়োজন করেছেন। পণ্ডিত, জ্ঞানীগুণী, বুদ্ধিজীবী, সমাজের প্রায় সকলেই আমন্ত্রিত। সভা আরম্ভ হতেই একজন দাঁড়িয়ে বললেন— ‘মহারাজ, অন্য কোনো কাজকর্ম না থাকা এক ব্যক্তি, একটা নৌকায় চড়ে বৈঠা মেরে মেরে কোথাও গিয়ে একটা ভূখণ্ড খুঁজে পেল। এটা কী এমন সাংঘাতিক কাজ যে সেই জন্যে তাকে একেবারে রাজকীয় সংবর্ধনা জানানো হচ্ছে? এটা তো যে-কোনো মানুষ যে-কোনো দিন করতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েকজন তাকে সমর্থনও করল। সভার মধ্যে এক হুলুস্থুল পরিবেশ। কলম্বাসের আবিষ্কারকে হেয় প্রতিপন্ন করার চক্রান্তের ব্যাপারটা রাজা মনে মনে ঠিকই আন্দাজ করলেন। এরপর রাজা এই ব্যাপারে কলম্বাসের কিছু বক্তব্য আছে কি না জিজ্ঞেস করায় কলম্বাস একটু মুচকি হেসে ভালো দেখে একটা মুরগীর ডিম আনিয়ে দিতে অনুরোধ করলেন। সকলেই অবাক— মুরগীর ডিম দিয়ে কী হবে! তথাপি, কথামতো মুরগীর ডিম এলো। ডিমটা হাতে নিয়ে কলম্বাস সভার সব্বাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন— ‘আপনাদের মধ্যে যে-কেউ এই ডিমটাকে এই মসৃণ মেঝের ওপর খাড়া করে দাঁড় করিয়ে দিন।’ ভয়ানক রাগ হল পণ্ডিতদের। একজন গর্জে উঠলেন— ‘আপনি এই সভায় ছেলেখেলা করতে এসেছেন কি?’ রাজা তখন গম্ভীর হয়ে বললেন— ‘আপনারা শান্ত হউন। কলম্বাসের কথামতো কাজটা যদি করতে পারেন তো করুন, আর নয়তো পারবেন না বলে দিন।’ পণ্ডিতরা প্রমাদ গুনলেন। এরপর একজন, দু’জন করে বেশ কয়েকজন এসে চেষ্টা করলেন। যখনই ডিমটাকে মেঝের ওপর খাড়া করে দাঁড় করিয়ে হাতটা ছেড়ে দিচ্ছিলেন সঙ্গে সঙ্গে ডিমটা এদিক-ওদিকে গড়িয়ে পড়ছিল। আর তাই দেখে উপস্থিত সাধারণ মানুষেরা হো: হো: করে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। পণ্ডিতরা সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। একজন বললেন— ‘ঠিক আছে, কলম্বাস নিজেই ওটা করে দেখান দেখি।’ রাজা কলম্বাসের দিকে তাকালেন। কলম্বাস ডিমটা হাতে নিয়ে ওটাকে লম্বালম্বি ভাবে ধরে, খুবই আস্তে ‘টেস’ করে মেঝেতে একটা ছোট্ট টোকা মারলেন। সঙ্গে সঙ্গে ডিমটার নীচের দিকে একটা ছোট্ট মতন গর্ত হল। এরপর ওই গর্তটা অবলম্বন করে ডিমটাকে মেঝের ওপর আরামসে দাঁড় করিয়ে দিলেন কলম্বাস। এই দেখে সভার প্রায় সকলেই ধন্য ধন্য বলে হাততালি দিতে শুরু করলেন। দুষ্ট পণ্ডিতরা তথাপি নাছোড়বান্দা। একজন মরিয়া হয়ে দাঁড়িয়ে বললেন— ‘হো:, এটা কী এমন সাংঘাতিক কাজ? এটাতো যে কোনো একজন সাধারণ মানুষই করতে পারে।’ তখন কলম্বাস দাঁড়িয়ে বিনম্রভাবে সকলকে সম্বোধন করে বললেন— ‘হে মান্যবরেরা, আপনারা ঠিকই বলেছেন। মসৃণ মেঝের ওপর একটা ডিমকে দাঁড় করানোটা সত্যিই একটা অতি সাধারণ কাজ। এই কাজটাই আমি করে দেখানোর আগে কেউই কিন্তু করতে পারেননি। ঠিক একই ধরনে মহাসাগরের ওপারে ওই নতুন করে খুঁজে পাওয়া ভূখণ্ডটা আগের থেকেই ছিল। কিন্তু আমি সেটা প্রথম আবিষ্কার করার আগে ওই ভূখণ্ড সম্পর্কে আমাদের কেউই কিছু জানতেন না। আমি জোর গলায় আপনাদের বলতে পারি— সেই ভূখণ্ডে আমরা যেটুকু প্রাথমিক অন্বেষণ করেছি, তাতে দেখেছি যে সেই জায়গাটা অতিশয় উর্বরা, সুজলা-সুফলা আর অজস্র প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদে ভরপুর। সেই জায়গায় আমাদের লোকেরা গিয়ে বসতি স্থাপন করলে তাদের অনেক উন্নতি হবে, তথা মানবসমাজের প্রভূত মঙ্গল সাধিত হবে।’ এর পরেরটা ইতিহাস।
‘হক কথা’। আপনি আবিষ্কারই করুন কিংবা উদ্ভাবনই করুন, অর্থাৎ যে কোনো ধরনের গবেষণাই করুন না কেন তার দ্বারা মানুষ তথা সমাজের উন্নতি সাধন হতে হবে, জ্ঞানবৃদ্ধি হতে হবে। আর তখনই মানুষ প্রগতির পথে এগিয়ে যাবে। আপনার কাজের দ্বারা যখন মানবজাতি উপকৃত হবে, তখন আপনি আর কোনো গোষ্ঠী, কোনো জাতি কিংবা কোনো দেশের সীমারেখায় বন্দি থাকবেন না। আপনি তখন হয়ে পড়বেন বিশ্বনাগরিক, আপনার স্থিতি হবে সর্বজনীন।
|| তৃতীয় পর্ব ||
আশাহত হলে দু:খ হয়, রাগও ওঠে। বিষোদ্গার করার সুবিধাজনক জায়গা পেলে সেই ক্ষোভ কেউ কেউ উগরেও দেয়। একদিন সকালবেলার দিকে প্রশ্রয়প্রাপ্ত এক যুবাবন্ধু প্রচণ্ড রাগন্বিত হয়ে আমার কাছে হাজির। ‘চারদিন একনাগাড়ে কত কষ্ট করে পেপারটা লিখে পাঠালাম আর তারা কিনা একটা মাত্র বাক্য লিখে এটাকে ফেরত পাঠিয়ে দিল— "জার্নালে ছাপানোর জন্যে অনুমোদিত হয়নি"। বললেই হল? এই জনগোষ্ঠী সম্পর্কে অনেকেই ভালো করে জানে না। কত নতুন নতুন তথ্য জুগিয়ে দিয়েছিলাম। আপনি একবার পড়লেই টের পেয়ে যাবেন, আমার কথায় কতটা সত্যতা।’ —এই বলে একতাড়া টাইপ করা কাগজের একটা স্তূপ আমার দিকে ঠেলে রাগের চোটে গজ গজ করতে থাকল। (‘বড় বেশি দেমাক, বেশি বেশি পণ্ডিতি, শালারা স্বজনপোষণ করে যাচ্ছে, টাকপয়সা পেলে ঠিকই ছাপাতো, রিজেক্ট করে বাহাদুরি দেখাচ্ছে’— ইত্যাদি বহু কথাই কানে আসতে থাকলো।)
তার যন্ত্রণাটা মনে মনে আন্দাজ করে বেচারাকে একটু সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যে পেপারখানা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। ধীরে ধীরে সে-ও শান্ত হয়ে আসছে। পড়া শেষ করে খুবই ঠান্ডা গলায় যেইমাত্র বললাম যে তাঁদের মূল্যায়নটা ঠিকই আছে, এখানে রিসার্চটা ঠিকমতো আসেনি— অমনি আগুনে পড়ল ঘৃতাহুতি। ‘কী বলতে চাইছেন? আপনি জানেন— আজ দেড় বছর ধরে ওই জায়গায় কতবার গেছি, কত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তাদের ঘরে থেকেছি, মশার কামড় খেয়ে খেয়ে— খড় পেতে— কখনো বা উঠোনে শুয়েছি, কখনো কখনো উপোসও থেকেছি। কত কষ্ট করে ক্ষেত্রভিত্তিক প্রামাণিক তথ্যপাতি সংগ্রহ করেছি। এরপর এই-সংক্রান্ত অনেক বইপত্রও ‘কনসাল্ট’ করেছি—আর আপনি বলছেন রিসার্চ হয়নি। কয়েকদিন আগে একটা ন্যাশানাল সেমিনারে এই পেপারখানা পড়ে এসেছি। সেখানে উপস্থিত অনেক প্রশংসাও করেছে।’ আজকালকার সেমিনারে পেপার ‘গৃহীত’ হওয়া এবং ‘পড়া’ সম্পর্কে ‘নো কমেন্ট’। একটু সময় চুপচাপ থেকে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম— ‘খবরের কাগজ পড়?’ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল— ‘আপনি কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন? আজকালকার দিনে আমার মতো মানুষেরা কি খবরের কাগজ না পড়া কেউ আছে?’ ‘রাগ কোরো না। তোমাকে হেয় করার জন্যে নয়, কিছু একটা কারণ আছে বলেই বলছি। খবরের কাগজে প্রতিদিনই অনেক নতুন নতুন খবর নিয়মিত বেরোচ্ছে। সাংবাদিকরা বহু সময়ই জীবনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র, দাঙ্গাবিধ্বস্ত অঞ্চল, বন্যাক্রান্ত এলাকা, পাহাড়পর্বত, সমুদ্র, মরুভূমি ইত্যাদি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ক্ষেত্রভিত্তিক উপাদানগুলি সংগ্রহ করে তার বিবরণী তথা প্রতিবেদন লিখে বের করছেন, আর সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা ওগুলো জানছি। তুমিও ক্ষেত্রভিত্তিক অনেক তথ্য কষ্ট করে জোগাড় করেছ। এখন তোমার এই কাজের জন্যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি তোমাকে ডিগ্রি দেয় তাহলে বছরের পর বছর ধরে তোমারই মতো কাজ করা ওই সাংবাদিকরাও এই ডিগ্রি পাওয়ার হকদার।’ আমার এই কথা শুনে বেচারা যথেষ্ট মুষড়ে পড়ে হতাশ হয়ে বলল— ‘তার মানে, আমার এতদিন ধরে করা কাজটায় রিসার্চের কিছুই হল না!’ ‘কে বলেছে কিছুই হয়নি? তোমার রিসার্চজনিত প্রাথমিক কাজের, অর্থাৎ ‘সার্চ’-এর প্রায় নব্বই শতাংশ কাজই হয়েছে। এত কথা শুনে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল—‘আমার গাইড তো আজ পর্যন্ত আমাকে এত সব কথা বলেননি।’ ‘তোমার গাইড অভিজ্ঞ এবং বিচক্ষণ। আরম্ভেই এত কথা বললে ভয় পেয়ে অনেক আগেই পাততাড়ি গুটিয়ে তুমি পালাতে।’
‘আচ্ছা, আমার এই লেখাটা কি একটা প্রবন্ধ হয়নি?’
'এটা একটা ভালো প্রতিবেদন তথা বিবরণী হয়েছে। যে-কোনো খবরের কাগজে কিংবা ম্যাগাজিনে পাঠালে তারা এটাকে সাগ্রহে প্রকাশ করবে। প্রতিবেদন আর প্রবন্ধের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। কোনো একটা তথ্য বা বিষয়কে কেন্দ্র করে যে-কেউ একটা ভালো প্রবন্ধ লিখে ফেলতে পারেন। প্রবন্ধ লেখার কারবারটা ঠিক যেন ‘ভাব সম্প্রসারণ’-এর মতো। প্রবন্ধের মানে হল ‘প্রকর্ষেণ বদ্ধম’। তথ্য বা বিষয় একটাকে কর্ষণ করতে হবে। বিভিন্ন উৎস থেকে সমপর্যায়ের আরও বহু কথা, বহু ঘটনা সন্নিবিষ্ট করতে হবে। সঙ্গে থাকবে তোমার নিজস্ব ভাবনাচিন্তা, কল্পনা। খাপ খাওয়া ধরনের অন্য লেখকের উদ্ধৃতি আনতে পার, বিভিন্ন কবির কবিতার পঙ্ক্তিও জুড়ে দিয়ে লেখাটার মান বাড়াতে পার। প্রকৃতপক্ষে, প্রবন্ধ যেন সেই বিষয় সংক্রান্ত এক পূর্ণাঙ্গ মূর্তি। প্রাবন্ধিক এখানে একজন শিল্পী। কোনো একটা বিষয় বা তথ্যকে কাঠামো হিসেবে নিয়ে তার ওপর অন্যান্য সমগোত্রীয় ঘটনা-পরিঘটনাকে এঁটেল মাটির মতো সংস্থাপন করে একটা প্রতিমার অবয়ব গড়ে নিয়ে কল্পনা, চিন্তাভাবনা ইত্যাদির আবরণ, আভরণ পরিয়ে একটা পূর্ণরূপ দেওয়ার পরই প্রবন্ধরূপ মূর্তিটার সৃষ্টি হবে। যদি এখানে কিছু নতুন নতুন কথা থাকে, তখন এটাকে খুব বেশি ‘গবেষণা ধর্মী’ কিংবা ‘গবেষণাগন্ধী’ প্রবন্ধ বলতে পার।
'তোমার আহরণ করা তথ্যগুলোর মধ্যে রাজা-রানি, নায়ক-নায়িকা, ভিলেন, রাজনীতি, সামাজিক ক্রিয়াকাণ্ড এসব ঢুকিয়ে কল্পনার জাল বুনে বিভিন্ন ঘটনা সন্নিবিষ্ট করে একটা বড় উপন্যাসও লিখে ফেলতে পার। তখন লোকে এটাকে ‘গবেষণা সমৃদ্ধ’ উপন্যাস বলবে। কিন্তু এগুলির কোনোটিই ‘গবেষণা নিবন্ধ’ নয়।
'গবেষণা নিবন্ধ হল এক রূঢ় বাস্তবভিত্তিক লেখা। এতে কোনো বাহুল্য নেই, কোনো কল্পনারও স্থান নেই। থাকবে— কোনো একটা সত্যকে খুঁজে বের করে সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা। থাকবে কেবল তথ্য, যুক্তি আর প্রমাণ। এখানে একটা প্রতিপাদ্য বিষয় থাকবে। গবেষণাজনিত একটা সমস্যা থাকতে হবে যার সমাধান তোমার নিবন্ধে স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হবে। আরম্ভে থাকবে একটা Abstract বা ‘নির্যাস’। এখানে সমস্যাটার একটা সংক্ষিপ্ত আভাস আর তোমার গবেষণার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে যৎসামান্য একটা ধারণা দিয়ে পাঠককে প্রথমেই অবহিত করতে হবে। তারপরই আরম্ভ হবে মূল লেখা।
'প্রথমেই থাকবে ভূমিকা, আর তারপর Review. অর্থাৎ পূর্বজনদের করা এই সম্পর্কিত অথবা/ এবং সমপর্যায়ের কাজ সম্পর্কে একটা প্রতিবেদন। এরপর তোমার সমস্যা সম্পর্কিত তথ্য আহরণ প্রণালী, তারপর সেগুলিকে নিয়ে অধ্যয়ন বা experiment. এখান থেকে প্রাপ্ত ফলাফলজনিত প্রয়োজনীয় তথ্যের বিবরণ। এরপর সেগুলির পর্যালোচনা বা analysis, আর তারপর ‘ডিডাকশন’-এর মাধ্যমে প্রকৃত সত্যে উপনীত হওয়ার প্রণালীবদ্ধ বিবরণ থাকতে হবে। এখানে প্রবন্ধের মতো কল্পনাপ্রসূত কোনো কথা থাকবে না। পূর্বজদের কোনো কাজ উদাহরণস্বরূপে তুলে ধরলে তার নির্দিষ্ট তথ্যসূত্র তথা reference দিতে হবে। অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রামাণিক দলিলের উপস্থাপন চাই। তোমার গবেষণাজনিত অধ্যয়নের পরিধি কতটা বড় তা ওই তথ্যসূত্রের নমুনা দেখলেই একজন টের পেয়ে যাবেন। যে জার্নালে তোমার নিবন্ধটা পাঠাবে, তাঁদের নীতি-নিয়ম অনুসারেই তোমার কাজটা হতে হবে।
নিবন্ধটা জার্নাল একটাতে পাঠানোর পরও নিষ্কৃতি নেই। প্রয়োজন সাপেক্ষে তা অন্য কোনো বিশেষজ্ঞদের কাছেও যেতে পারে। তাঁর কাছ থেকে ছাড়পত্র পেলে তবেই তোমার নিবন্ধটা প্রকাশের জন্যে অনুমোদিত হবে।’
‘ওরে-ব্বাবা! আমার করা কাজটা আবার অন্যেরা পরীক্ষা করেও দেখবেন!’
'অবশ্যই করবে। তোমার অধ্যয়নে ঘাটতি থাকতে পারে। ‘অ্যানালিসিসে’ কোনো বিসংগতিও থাকতে পারে। তুমি যে সত্যে পৌঁছেছ, সেটা প্রকৃত সত্য না-ও হতে পারে। তোমার বলা কথাকেই শেষ কথা বলে ধরে নিও না। পৃথিবীতে কোনো সত্যই ধ্রুবসত্য নয়। গতকাল যেটা সত্য বলে পরিগণিত হয়েছিল, আগামীকালই হয়তো ওটাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে ওরই জায়গায় অন্য আরেক নতুন সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এভাবেই আমাদের জ্ঞানের উত্তরোত্তর বিকাশ ঘটছে, না-হলে প্রগতি থমকে থাকত। কারোর কোনো খুঁজে পাওয়া সত্য কখনো বা আংশিকও হতে পারে। "Six blind men and the elephant"-এর গল্পটা মনে আছে তো? একজন অন্ধ বলল— "হাতি একটা মস্ত দেয়ালের মতো", আরেকজনের উক্তি— "রশির মতো," অন্যজন বলল— "দুটো মস্ত বড় বড় পাখার মতো," আরেকজন বলল— "বিশাল একটা অট্টালিকার চারটে থামের মতো," ইত্যাদি ইত্যাদি। এককভাবে তারা সকলেই প্রায় ঠিক, কিন্তু একটা আবিষ্কারও পূর্ণসত্য নয়। আসলে আমরাও প্রায়শই একদেশদর্শী। আমরা সাধারণভাবে সচরাচর যা দেখি, তার বাইরেও যে আরও অনেক কিছু থাকতে পারে সে কথাটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। সে-জন্যেই গবেষণা নিবন্ধটা ভালো করে যাচাই করার জন্যে দু-একজন বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন। তাঁদের দেয়া পরামর্শ মতো তোমার নিবন্ধটা যদি পরিমার্জিত কর তাহলে তোমার বক্তব্যটা আরও জোরালো তথা ভালো করে জমাট বেঁধে অধিক উন্নতমানের হবে। পরিশেষে লাভ তোমারই।'
‘হুঁ। টের পেলাম। প্রকৃত রিসার্চ করাটা সব্বাই করতে পারা টাইপের কাজ নয়।’
‘ঠিকই বলেছ। শিক্ষা সবার প্রয়োজন, কিন্তু উচ্চশিক্ষা সবার জন্যে প্রযোজ্য নয়। প্রজাপতি, দেবরাজ ইন্দ্র আর অসুররাজ বিরোচনের গল্পটা শোন। ইন্দ্র আর বিরোচন ব্রহ্মবিদ্যা শিখবেন বলে গুরু প্রজাপতির কাছে গেলেন। বহুদিন পর তাঁদের শিক্ষা সম্পন্ন হল, আর সেই বিদ্যায় কিছু একটা করে জীবন কাটাতে পারবেন বলে গুরু তাঁদের বিদায় দিলেন। দুজনই হৃষ্টচিত্তে ঘরমুখো হলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর ইন্দ্রের মনে ব্রহ্মবিদ্যা সম্পর্কে আরও অনেক প্রশ্ন এসে ভিড় করতে লাগল। ওই প্রশ্নগুলির উত্তর পাবার জন্যে মন ব্যাকুল হওয়ায় তিনি আবারও গুরুগৃহে ফিরে এলেন। প্রজাপতিও মনে মনে খুবই সন্তুষ্ট হয়ে আনন্দের সঙ্গে ইন্দ্রকে উচ্চতর শিক্ষা দিতে শুরু করলেন। বিরোচনের উচ্চতর চিন্তাভাবনার ক্ষমতা নেই কিংবা প্রয়োজনও নেই; ফলে তার জ্ঞান সেই তলার স্তরেই সীমাবদ্ধ রইল। ঠিক একই ধরনে, রিসার্চ সবার জন্যে নয়। যার মন অধিক জানার জন্যে আগ্রহী, সত্যকে খুঁজে বের করার জন্যে যার প্রবল আকাঙ্ক্ষা আছে, সমস্ত বাধা-বিঘ্নকে ভ্রূক্ষেপ না করে সত্যরূপ ঈশ্বরকে পাবার জন্যে যার মন ব্যাকুল, তিনিই রিসার্চ করবেন। সেই কাজ করে তাকে তৃপ্তি এবং আনন্দ পেতে হবে। উচ্চশিক্ষা যদি সহজলভ্য হয়ে পড়ে, ওটা যদি অনায়াসে সকলের নাগালের মধ্যে চলে আসে, তখন ওই উচ্চশিক্ষার মান বিশ্বদরবারে আর উচ্চ হয়ে থাকে না, এর মান নিচে নেমে আসতে বাধ্য।’
(পরবাস-৬৪, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬)