Parabaas Moviestore




Parabaas Musicstore




Subscribe to Magazines






পরবাসে নিবেদিতা দত্তর লেখা



ISSN 1563-8685




ত্রিধারা

|| মঙ্গলদীপ জ্বেলে ||

রোজারিতে গাঁথা ক্রুশবিদ্ধ যীশুর রেপ্‌লিকা-টা এ-কদিন সমস্ত আকুতি দিয়ে মুঠিতে ধরে রেখেছিলেন মাদার — মাদার অ্যান বার্নার্ড। অন্তত পরে পরে সবাই তো তাই বলেছিল ওনাকে। আজ তিনদিন বাদে চোখ খুলেছেন তিনি। প্রথমে অস্পষ্ট—পরে ধীরে ধীরে ফুটে উঠেছে সিস্টার জোভিয়েনের ঝুঁকে থাকা স্নেহভরা উদিগ্ন মুখ। জ্ঞান হারিয়েছিলেন সেই বীভৎস রাত্রির পর। পরে জেনেছিলেন রেপ্‌লিকা ধরে থাকা ওঁর মুঠিটা খোলানো যায়নি — সেই অর্থহীন নিদারুণ লজ্জাদায়ক যন্ত্রণার মূহূর্ত থেকে ওটা হাতের বজ্রকঠিন মুষ্টিতে ধরা ছিল। হাতের চেটো কেটে যেতে পারে জেনেও ডক্টর সেন কী ভেবে একবারের বেশি সে চেষ্টাও করেননি।

সিস্টার জোভিয়েন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। যে ছোট করে কাটা চুল এতদিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল নান্‌স হুডে ঢাকা তা অসুস্থতার কারণে পুনঃ আব্রুহীন। এত দুঃখের মাঝে মাদার বার্নার্ডের হাসি পেল। একেই কি বলে ‘রোল রিভার্সাল’? এতদিন উনি সবার মা ছিলেন —এই ছেলেমানুষ সিস্টার জোভিয়েন — মিশনারির সকলে ছিল ওর সন্তান — আজ উনি ওদের কৃপাপ্রার্থী — না না তা হবে কেন — জোভিয়েনের চোখে মাদার মেরীর স্নেহ দেখেছেন উনি।

মনে পড়তে লাগল জ্ঞান না থাকলেও কি ভীষণ চাপ চাপ অন্ধকারের মধ্যে ওঁর সারা অন্তঃকরণ আটকে থেকেছে। তার মাঝে মাঝে কেন যেন সেই চল্লিশ বছর আগে ফেলে আসা ফ্রান্সের ছোট গ্রাম — জীবনের প্রথম কুড়ি বছর কাটানো ঘরবাড়ি — মা বাবা, ছোটভাই জোশুয়ার কথা স্বপ্নের মত মনে এসেছে — নিদারুণ কষ্টে মাকেই বোধহয় মনে পড়ে। মনও আজব। তা না-হলে সন্ন্যাসিনী তো সর্বত্যাগী।

বাইরে সমাহিত থাকলেও মনে যেন ঝড় বইছিল। শয়তানের উস্কানিতে এও ভেবেছেন শেষ করে দেওয়া তো কত সহজ — সারা জগৎ সংসারকে কী ভাবে মুখ দেখাবেন, — সাইড টেবলেই তো ফল কাটার ধারালো ছু্রিটা রয়েছে — কাটবে না কব্জির শিরাটা? কিন্তু — কিন্তু তা কেন — এইই তো এতদিনের ব্রতের চরম পরীক্ষা। সেই ক্যাটাক্লিজমের ক্লাসে ফাদার বলতেন ‘ডিয়ার চাইল্ড, যীসাস বোর দ্য ক্রশ টু রিডিম ম্যা্নকাইন্ড, সো ইচ ওয়ান অফ আস মাস্ট বেয়ার এ ক্রশ ফর ম্যানকাইন্ড এন্ড অলসো টু আন্ডারস্ট্যান্ড শেম এন্ড পেএন।' এতদিন কত নিগৃহীতাকে বুকে টেনে নিয়েছেন, কত অসহায় কুমারী মা পিতৃপরিচয়হীন শিশুকে ওঁর কাছে দিয়ে গেছে — মা মেরীর স্নেহে তাদের আপন করেছেন। প্রথমেই প্রশ্ন জেগেছে ওদের কে দেখবে উনি না থাকলে —। এতদিন বলেছেন ‘এরাইজ, এওয়েক’; আজ নতুন করে সে পাঠ ওনার নেওয়ার দিন। নির্ভয়ার ব্যথা এমন করে মরমে মরমে বুঝতে হবে তা কি জানতেন?

হসপিটাল কেবিনের বেডে আধশোয়া হয়ে বড় জানলাটা দিয়ে শাল গাছটার দিকে তাকিয়েছিলেন — এবড়ো খেবড়ো লোম গজানো সদ্য ফোটা কাকছানারা লালচে গোলাপী হাঁ খুলে আছে — তর সইছে না কখন মা মুখ থেকে পোকাটা পুরে দেয় ওদের হাঁ-তে। চোখ নামিয়ে পাশে রাখা ডায়রিতে নোট করে রাখলেন জোভিয়েনকে ইন্সট্রাকশন দিতে হবে যেসব শিশুদের পোলিও ড্রপস্‌ দিতে হবে তাদের নামের তালিকা যেন তৈরি থাকে। ছোটদের মাঝে বাঁচার ইচ্ছে — এও যেন বড় লোভ — এক মিষ্টি আস্বাদন —। মাদার মনে মনে বললেন ‘প্রভু ক্ষমা করো আমায়’।

হঠাৎ বেল দিয়ে হসপিটাল বেয়ারা এসে ট্রেতে একটা চিঠি দিয়ে গেল — (বেয়ারাকেও মুখ দেখাতে যে অসম সাহসের প্রয়োজন হয় কে জানত) — লোক্যাল পোষ্ট-অফিসেরই ছাপ — কোথা থেকে এসেছে সেটা অস্পষ্ট — জানার ইচ্ছাও যেন ওঁর নেই। ক্লান্ত হাতে ছুরিটা দিয়ে খাম কেটেই ধাক্কা খেলেন। নোংরা কাগজে অনভ্যস্ত আঁকাবাঁকা হাতে লেখা ‘মাদার যে পাপ আমি করেছি তার কি কোন মাপ নেই?’ — নামহীন দু'লাইন — বুঝতে অসুবিধা হ’ল না কে সে। আরও ক্লান্ত এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুড়ে রাখলেন চিঠিটা বালিশের তলায়। ওটা কি ইনভেস্টিগেশন টিমের হাতে তুলে দেবেন? ছিঁড়ে ফেলবেন না কি পুড়িয়ে ফেলবেন? এভিডেন্স লুকোনোর দায়ে দ্বিগুণ টানাহ্যাঁচড়া — অন্য ধরনের নিগ্রহ। আর এক ঢোঁক তিতো নাহয় পান করলেন — না তুলে দেবেন না চিঠিটা ওদের হাতে। বাহ্যিক শাস্তি — সে তো তার আছেই, হয়তো কারাদণ্ড — যাবজ্জীবন। কিন্তু রেজারেকশন — মনে মনে জ্বলে নিখাদ সোনা হওয়া? তা তো ওর শুরু হয়েই গেছে— তবে তাই হোক — মঙ্গলদীপ প্রভু কখন কার অন্তরে জ্বেলে দেন কে জানে!

মাদারের মনে পড়ল দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রে নববর্ষ পালনের কথা। কিছুদিন সেখানে থাকাকালীন দেখেছিলেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়ীর সকলে নূতন বছরের সকালে গৃহদেবতাকে উৎসর্গ করে একধরনের তিতো মিষ্টি টক পানীয় মুখে দিত। কৌতূহলবশত উনি জিজ্ঞাসা করে জেনেছিলেন ওই পানীয় জীবনের সব ধরনের অভিজ্ঞতার প্রতীক — সবই যেন গ্রহণযোগ্য হয়, সেই কঠিন প্রার্থনাই ওদের নূতন বছরে। মাদারও তাই জানালেন প্রভুকে।

|| শুদ্ধ ||



বুড়ো আঙুলের নখটার দিকে চোখ পড়ে গেল স্নানের পরে পাটা মুছতে গিয়ে। রোজই পড়ে — তবে আজ চোখে পড়ল বিশেষভাবে। বছরটা যে আজ ঘুরে বারোটা মাস কাটিয়ে পূর্ণ হল।

সেদিন (আর অন্য অন্য দিনগুলোর মতোই) সবে তো চাপাটিগুলো সেঁকে ওরা রাতের খাবারে বসেছে তখন। ও (মানে লামডিং গ্রামের মেয়ে কাঞ্ছি, মাই-তো এই নামেই ডাকত, ভাল নাম যদিও একটা ছিল — সীতা), মাই, বাবুজি আর লখনা। সে খাবার মুখে ওঠে নি। বিষম দোলানি আর গোঁ গোঁ আওয়াজের সাথে সাথে লন্ঠনটা ছিটকে কাঠের দেওয়ালে আগুন ধরে গিয়েছিল। শেষ ডাক দিয়েছিল মাই — ‘কাঞ্ছি-ই-লখনা-ভাগ — ভা-আ-গ’। আর তারপর কাঠ পাথর মাটির তলায় চাপা হয়ে থাকা — কে জানে কতক্ষণ, কতদিন —

কারা যেন পাথর বালি সরিয়ে ওকে তুলেছিল। আধো কি তার থেকেও কম জ্ঞান ছিল ওর। নিজের শরীর যে একটা আছে বোঝা যায়নি। শুধু নড়লে বিষম ব্যথায় সেটা তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছিল। বেঁচে আছে সেটা জানার পর আর যেন কিছু না জানলেও সব ঠিকই ছিল। কিন্তু ঠিক তো ছিল না। অন্ধকার, ঘুপচি এক গুদোমে কে জানে কদিন পড়েছিল কাঞ্ছি — ধীরে, খুব ধীরে ওর কানও সজাগ হয়ে উঠছিল — ওর নিজের ভাষাতেই কথাবার্তা চলছিল কাদের — ও দশ নমবর, সে রাতেই চালান হয়ে যাবে — পেটে হাত দিয়ে কুকরিটা আছে কিনা ও দেখে নিয়েছিল। নাহ্‌ আছে; তাহলে পশুপতিনাথজীও আছেন — আন্দাজে মনে হয়েছিল ওর শরীরে হাত পড়েনি তখনও।

নিকষ কালো রাত লন্ঠনের আলো চিরে ফেলছিল — একটা যেন লরি মত কিছু স্টার্ট দিল। কাঞ্ছি বজ্র মুঠোয় চেপে ধরল কুকরি — গুদোমের ভাঙা দরজা খুলতেই শুয়ে শুয়েই সজোরে জোড়া পায়ে লাথ মেরে দিল কুকরি বসিয়ে পেটে — কার পেটে দেখেনি ফিরে। তারপর পিছনের জানলা দিয়ে লাফ মেরে শুধু ছোটা। শরীরের আর কোনো অঙ্গের অস্তিত্ব নেই — শুধু দুটো পা — ছুটছে-ছুটছে — পরে, অনেক পরে দেখেছিল বুড়ো আঙুলের নখটা উপড়ে গেছে। বিভীষিকার ভয়, ব্যথা, যন্ত্রণা বোধহয় হাতে সময় থাকলেই অনুভব করা যায়। তার মধ্যে দিয়ে যখন যাওয়া হয় শরীর মন এমন এক হিম শীতলতায় চাপা থাকে যে ভাল মন্দ কিছুই বোঝা যায় না। হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে পঞ্চ ইন্দ্রিয় এক জোট হয়ে একটা সিগন্যালেই কাজ করে — যা কেবল বলতে থাকে যা করার এখনই করো করো করো —। সেই আদেশই মেনেছিল পা দুটো। ভূকম্পে যত যাই ভাঙুক আন্দাজে ঠাউর করে পাকদণ্ডি বেয়ে বেয়ে সারা রাত ছুটেছিল কাঞ্ছি। ধাওয়া করে আসা টর্চের আলোর তীব্র ঝলকানি এক সময় অন্ধকারে ডুবে গেল, ক্ষীণ হতে হতে শেষে থেমে গেল অশ্রাব্য গালিগালাজ — তারা বোধহয় শেষপর্যন্ত হারই মেনেছিল।

ভোরের আবছা আলোয় দূরে চার্চটা দেখা যাচ্ছিল — তাহলে অন্ধকারে শ্বাপদের মত ওর রাস্তা ও ঠিক চিনে নিয়েছে — মন তো কাজ করছিল না কিন্তু কেমন একটা হাওয়া যেন ওকে টেনে নিয়ে চলেছিল। সূর্য ওঠার অনেক আগে চার্চের দরজার বড় ঘণ্টা বাজিয়ে ও জ্ঞান হারিয়েছিল।

জ্ঞান ফিরে দেখেছিল মাদারকে — সস্নেহে তাকিয়ে আছেন। তারপর কতবার যে জ্ঞান হারিয়েছে আর বিকট চিৎকার করে জেগে উঠেছে ও জানে না। কিন্তু তারও তো শেষ আছে। মাদার ওকে বুকে তুলে নিয়েছিলেন। ষোলো বছরের কাঞ্ছি আজ সতেরো। এও জেনেছিল রেহাই ও পায়নি — শুকনো রক্ত লাগা সালোয়ার তার সাক্ষ্য দিয়েছে। কিন্তু কুকরিটা তো খোয়া যায়নি সেটাই ভাবিয়েছে কাঞ্ছিকে বারবার — হয়তো বা মদ্যপ ছিল, খেয়াল করেনি।

কাঞ্ছি গিয়েছিল সেই ধ্বংসস্তূপের কাছে যেখানে ওদের গ্রাম; ঘরবাড়ি আর কিছু নেই — লখনা, মাই, বাবুজি — কারো ঠিকানা মেলেনি, কিন্তু মোহন ছিল। ওর নাম তখন মোহন না — ভীতু ঝাবলা একটা কুকুরছানা — পিঠটা কালো, পেটটা সাদা, মাথায় একটা সাদা সিঁথি — ওর পিছু ছাড়েনি। সেই অব্দি কাঞ্ছির মোহন ও।

বছর ঘুরে গেছে কিন্তু স্নানের পর প্রতিদিন পা মুছতে গিয়ে চোখ আটকে গেছে নখহীন বুড়ো আঙুলটায়। ঘৃণা, মরমে মরে যাওয়া দুঃখ, নিজেকে শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছে — সবের মধ্যে দিয়ে মাদারের হাত ধরে কাঞ্ছি পার হয়েছে এই এক বছর। অদ্ভুত দৃঢ়তার সাথে মাদার বলে গেছেন ‘তোমার রক্তপাত তোমাকে শুদ্ধ করেছে। রক্তমাখা নবজাত শিশুর মতই তুমি পবিত্র। ওঠো, ঘুরে দাঁড়াও।’ সমস্ত অন্তরাত্মা দিয়ে বিশ্বাস করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কাঞ্ছি — আজ শুধু কাঞ্ছি না — আজ ও চার্চ স্কুলের হাসিমাখা জুনিয়র টিচার সীতা ম্যাডাম।

|| তেজস্বিনী ||



র একটু হলেই মৌ খুকির দুধে এক খাবলা নুন ফেলে দিচ্ছিল আর কি। এমনি মনের হাল হয়েছে বেশ কিছুদিন হ’ল। সাঁঝের বেলা একই সাথে দুমুখো উনানে দুধ আর রাতের তরকারি চাপিয়ে আনমনে দুয়োর দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়েছিল ও।

উঠোনে মেলা কাপড়গুলো হাওয়ায় ফাঁক হয়ে গেলেই মৌয়ের কেবলই মনে হয় ওই যেন সই ফিরল কলেজ থেকে, ঘর যাওয়ার পথে শাড়ীগুলো একটু সরিয়ে বলে গেল ‘মৌ আসছি রে এখনই, তোকে একটা ভারি মজার কথা বলার আছে’। চমকে ঘোর ভেঙে যায়, ওর সই — সারা গেরামের গর্বের মানুষ — প্রথম কলেজে পড়া মেয়ে — সে তো নেই। নিথর দেহটা, বা বলা যেতে পারে দোমড়ানো মোচড়ানো দেহের কিছুটা (যা খাল-ধারে পাওয়া গিয়েছিল), এই তো দিন পনেরো আগে ওরা দাহ করে এসেছে, মর্গে কাটাই ছেঁড়াইয়ের পর।

কত রাত কেটে গেছে, ভাল ঘুমিয়েও (যদি সেদিনের পর ভাল ঘুম বলে কিছু থাকে) উঠে মনে হয়েছে কি কান্নাই না কেঁদেছে সারা রাত অথচ চোখ তো শুকনো; কান্না তো জমে পাথর হয়ে গেছে সেই কবে। তারপর — তারপর জমা কান্নাই বোধহয় পথ দেখিয়ে চলেছে। এ দরজা থেকে ও দরজা, অবিশ্বাস, চোখ রাঙানি, প্রাণহানির শাসানি, লোভ — সব দরজা পেরিয়ে সেই আদালতের দরজায় পৌঁছেছে মৌ-রা।

রায় দিয়েছেন মহামান্য বিচারক। কেউ শাস্তি পেয়েছে, কেউ পৃষ্ঠপোষকতায় ফসকে বেরিয়ে গেছে। তারপর — তারপরও আরও আছে, — সাংবাদিক, পত্রকারদের দ্বারা ঘিরে থাকা, তেজস্বিনী আখ্যা পাওয়া, টি ভি পর্দার চৌখুপীতে বসে বারবার একই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।

মৌ ভাবে সত্যিই কি ও তেজস্বিনী? সইয়ের মত লেখাপড়া শেখা হয়নি, ভীরু অভিমানী এক মেয়ে ও — এত গোঁ ও পেল কি করে? মনে পড়ে যায় এক্কা দোক্কা খেলা নিয়ে কি খুনসুটি! একে অন্যের চুলের মুঠি ধরে থাকা, — আবার সেই সইয়ের বাড়িই ঈদের সময় যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকা। চাচির তৈরি সেমুই খাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকা — ঘরে তৈরি গাওয়া ঘিয়ে ভাজা রসে ফেলা শুকনো সেমুই, দুধের সেমুই অল্প খেজুর কিসমিস দেওয়া। চাচি আর বেশি কোথায় পাবে! সবেরাতের হালুয়া — ডালের, সুজির — আহা কি লোভই না হত মৌদের। কবে সই নেমন্তন্ন করে যাবে — যেন নেমন্তন্নর ধার ধারে ওরা! আজ খাবারগুলোর যেন পেটে মোচড় দিয়ে উঠছে, গা গুলিয়ে যাচ্ছে — সত্যি কি ও তেজস্বিনী?

ভয় করে ওর, ভীষণ ভয়, রাতে হাতড়ে খুকিকে জড়িয়ে ধরে ও। ফের চিৎ হয়ে অন্য হাতে খেটে খাওয়া, ঘুমে অচেতন বংশীকে ছুঁয়ে থাকে। কিছুদিন এমনিই চলছিল, কিন্তু একদিন যেন নিছকই চোখে পড়ে গেল মাচায় তোলা দা-টা — ওটা তো আছে, দরকারে ওটাই কাজে দেবে। হ্যাঁ, সত্যিই ও তেজস্বিনী।



(পরবাস-৬৪, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬)