জলের দরে বাড়িটা পেয়ে গেছিস বুঝলি। কথাটা মাস সাতেক আগে বলেছিল নির্ণয়।
সঙ্কল্প একগাল হেসে বলেছিল তোর মত বন্ধু থাকলে জল কেন বিনামূল্যেও আস্ত বাড়ি পাওয়া কোনও ফ্যাক্টর নয়। কী করে যে পেলি এত সস্তায় এমন বাড়ি কে জানে?
সে তোকে ভাবতে হবে না। একটা সামান্য খিট রয়েছে বাড়িটায়, সেজন্য এত কম দামে ব্যবস্থা হয়ে গেল।
খিট আবার কীসের? এই মরেছে ডিসপুটেড অ্যাসেট নয় তো? উদ্বেগ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল সঙ্কল্প।
আরে না না ওসব কিছু না।
তাহলে?
তাহলে নিয়ে তোকে কিছু ভাবতে হবে না। আমি তো রয়েছি নাকি? তেমন বেগরবাই কেস হলে আমি সব জেনেও তোদের ফালতু সেখানে গুঁজে দেব ভেবেছিস?
না না তা নয়।
কিছুই না, ভালো বাড়ি পেয়েছিস, এবার চুটিয়ে সংসার কর। কোনও অসুবিধা হলে আমি তো রয়েছি রে ভাই।
কথাটা খুব একটা মিথ্যে নয়। বিয়ের ঘটকালি থেকে সস্তায় বাড়ি, বেস্ট ইঁদুর মারার ওষুধ থেকে বসিরহাটের কোন তান্ত্রিক অব্যর্থ দৈব মাদুলি দেন সবকিছু নির্ণয়ের নখদর্পণে। সেজন্যই বিদিশার সঙ্গে বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সঙ্কল্প যখন ট্রান্সফার পেয়ে আসানসোলে চলে এসেছিল তখন প্রায় ককিয়ে উঠেছিল সঙ্কল্প। কোথায় কলকাতা আর কোথায় আসানসোল। গড়িয়ায় এতদিন যে ফ্ল্যাটে ওরা ছিল সেখানটা বেশ জমকালো। দোতলার ফ্ল্যাট থেকে সারাদিন নিচের রাস্তার বাস লরির প্যাঁ প্যাঁ লোকজনের হৈ হৈ-তে সারাদিন মনে হত বাজারের মধ্যে বসে রয়েছে। আর সেখান থেকে আচমকা যেন কেউ ওদের তুলে নিয়ে এসে নির্জন চাঁদে বসিয়ে দিয়েছে। এই ফেব্রুয়ারিতে সঙ্কল্প একচল্লিশে পড়েছে আর বিদিশা আটত্রিশে। বিয়ের আড়াই বছর পর ফ্যামিলি প্ল্যানিং করতে গিয়ে বিদিশা আর সঙ্কল্প জানল স্পার্ম কাউন্ট এতই কম যে বেবি হওয়ার অলমোস্ট নো চান্স। আর যেটুকু চান্স নেওয়া যেতে পারে তার জন্য যা খরচ সেই তুলনায় হওয়ার গ্যারান্টি খুব কম। সুতরাং সে আশায় ছাই দিয়ে দুজনই দুজনের জন্য হয়ে আবার জীবন শুরু।
সংকল্পর সেলসে কাজ। সময়ের কোনও ঠিকঠিকানা থাকে না। কখনোও দু এক দিনের জন্য বাইরেও যেতে হয় ওকে। বিদিশাকে একা থাকতে হয় সেই সময়টায়। একা একা একেকসময় অসহ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু কিছু করার নেই। বই ম্যাগাজিনের পৃষ্ঠা উলটে কিংবা টিভিতে সিনেমা সিরিয়াল দেখে ল্যাপে ফেসবুক করার পরেও মাঝে মাঝে অনেকটা করে সময় থেকে যায়। সেটাকে কী করে কাটাবে বুঝে পায় না বিদিশা। তখনই হয় বিপদ, কিছুটা হতাশা, মনখারাপ, জীবনের প্রতি বিরক্তি আরও নানাকিছু এসে ওকে মশার মতো ছেঁকে ধরে হুল ফোটাতে থাকে, তিষ্ঠোতে দেয় না। বাড়ি ফিরেও শান্তি থাকে না সঙ্কল্পর। কানে মোবাইল হাতে ল্যাপটপ ননস্টপ অফিসের বস কিংবা ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছে, সেলস স্টেটমেন্ট আরও কীসব হাবিজাবি বানাতেই থাকে। একা আর একাই থেকে যায় বিদিশা। আড়াই বছরের দাম্পত্যটাকে কেমন যেন পঁচিশ বছর পার করা মনে হয়। কোনওমতে ঠেলে এগিয়ে যাওয়া। শরীরের সম্পর্কটাও যেন মনের সঙ্গে সঙ্গে বুড়িয়ে গেছে অনেকটা। আর জায়গাটাও এমন নির্জন টাইপের যে প্রথমদিকে ভালো লাগলেও আস্তে আস্তে মনে হতে লাগল যেন জঙ্গলের মধ্যে থাকা। জায়গাটার নাম রিভারসাইড। বাড়ির ব্যালকনি থেকে খানিকটা দূরেই দামোদর নদী। জল প্রায় নেই বললেই চলে। লোকেরা ওইটুকু জল মাড়িয়েই ওপারে চলে যায়। ওপারে একটা গ্রাম রয়েছে। আর এপারে ইতস্ততঃ কিছু অফিস কোয়ার্টার।
পুরো এলাকাটাই নিঃশব্দ-একাকী। অভ্যাস করার বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ব্যর্থ হয়েছে। প্রথম দিকে বেশ কয়েকবার সঙ্কল্পর কাছে অনুনয় অভিযোগ করে শেষ পর্যন্ত বিদিশা বুঝেছিল কোনও লাভ নেই। সংকল্প বেচারা কাজের চাপে সত্যিই হিমসিম খায়। আর তাছাড়া মানুষের জীবনের এই বয়েসটাই কেরিয়ার তৈরির। এখন না খাটলে আজীবন খাটতে হবে। বিদিশা বোঝে সঙ্কল্প চেষ্টা করে যাতে ওর সঙ্গে যতটা সম্ভব সময় দেওয়া যায়, কিন্তু হয়ে ওঠে না। অগত্যা... অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ, কেউ কাউকে খামোকা দোষ দেওয়ার নেই। পাত্রী চাই বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল ঘরোয়া/চাকুরিরতা উভয়ই চলিবে। বিদিশা বাঙলা অনার্স। দু-একবার এসএসসি-তে ট্রাই করে দেখেছিল ওর দ্বারা এসব হবে না। সুতরাং ঘরোয়া হওয়াই ভাল। বরের রোজগার থাকলে খামোকা চাকরি ঠ্যাঙাতে গিয়ে লাভটা কি?
কিন্তু এখন মনে হয় কিছু একটা করলেই ভালো হত। দু-একবার সঙ্কল্পকে বলেওছে সে-কথা। প্রথম প্রথম সঙ্কল্প হেসে উড়িয়েছে, তারপর বলেছে ওর কাজের চাপটা একটু কমুক তারপরে কোথাও একটা ব্যবস্থা করে দেবে। সে চাপও আর কমল না, ব্যবস্থাও হল না। মাঝখান থেকে অনেকটাই চুপ হয়ে গেল বিদিশা। মাঝেমাঝেই মনে হয় একটা কুকুর বিড়াল পুষলেও ভালো হত। অন্তত আরেকটা প্রাণের উপস্থিতি তো টের পাওয়া যেত। সঙ্কল্পকে যেদিন এই কথাটা বলবে ভাবল ঠিক সেদিনই ঘটল ঘটনাটা।
এক একটা রবিবারেও সঙ্কল্পর কাজ পড়ে যায়। বেরোতে হয় ওকে। তবে আজ বেরোয়নি। কারণ আজ নির্ণয়ের আসার কথা, সস্ত্রীক। সারাদিন কাটিয়ে সন্ধেবেলা ফিরে যাবে ওরা। নির্ণয় যেচেই নিমন্ত্রণ নিয়েছিল, কী রে ভাই এত ভালো একটা বাড়ির ব্যবস্থা করে দিলাম আর একটু পেট পুরে খাওয়ালি না?
কবে আসবি বল? জিজ্ঞেস করেছিল সঙ্কল্প।
এই রবিবার চলে আসি?
উমমম... ঠিক আছে তবে একা না এসে বৌটাকেও সঙ্গে আনিস।
নিশ্চয়।
ভোরবেলা হাওড়া থেকে ব্ল্যাকডায়মণ্ড ধরে সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে সঙ্কল্পর বাড়িতে পৌঁছে গেছিল ওরা। বাড়িতে ঢুকেই নির্ণয়ের প্রথম প্রশ্ন ছিল সঙ্কল্পর কাছে, বৌকে ঠিকমতো খেতে দিস না নাকি?
কেন?
কেন মানে? বিদিশার চেহারাটা কী হয়েছে দেখেছিস? আর কদিন পরে লোকে তো বলবে একটা কাকতাড়ুয়াকে বিয়ে করেছিস। সেটা ভাল লাগবে শুনতে?
মৌমিতা, মানে নির্ণয়ের বৌ-ও সায় দিয়েছিল সেই কথায়। সত্যি সঙ্কল্পদা তোমার কিন্তু একটু খেয়াল করা উচিত।
তারপর সারাদিনের হৈ চৈ। রান্নাবান্না। একফাঁকে মৌমিতা সকলের আড়ালে বিদিশাকে জিজ্ঞেসও করল, হ্যাঁ রে তোর শরীরটরির ঠিক আছে তো?
হ্যাঁ হ্যাঁ।
সত্যি বলছিস?
একদম।
বরের সঙ্গে অশান্তি টশান্তি হয়নি তো?
অশান্তি করার মতোও সময় নেই ওর।
হুমম বুঝলাম।
দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে আড্ডা দিচ্ছিল সকলে। কথায় কথায় নির্ণয় জিজ্ঞেস করল তারপর বল, বছর তো প্রায় ঘুরতে চলল বাড়িটায় কেমন কাটছে বল?
সঙ্কল্প বলল ফাস্টক্লাস। একদম নির্ঝঞ্ঝাট। নো টেনসন। শুধু বিদিশারই বেচারা বড্ড একা কাটে সারাদিন। তেমন সময়ই দিতে পারি না।
সময় দিতে পারি না বললে হবে? সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করেছিস, ঠিকঠাক টাইম না দিলে বুঝবি যেদিন বৌকে অন্যকেউ এসে টাইম দেবে...
আহ তোমার না মুখে কিছু আটকায় না ধমক দিল মৌমিতা।
হেসে উঠল সকলেই।
তারপর মৌমিতা বলল না গো সঙ্কল্প বিদিশাকে একটু টাইম দাও। বেচারা পুরো একা হয়ে গেছে।
বুঝি সবই। কিন্তু আমি একেবারে ফেঁসে গেছি। তবে নেক্সট ইয়ারে যদি প্রমোশনটা পেয়ে যাই তাহলে ছোটাছুটির কাজটা একটু কমবে। তখন হয়তো পারব। আর জায়গাটাও এখানে এমনই নির্জন যে এতদিনেও বিদিশার কোনও বন্ধুবান্ধব হল না। আফশোসের সুরে বলল সঙ্কল্প।
হুমম... বলে নির্ণয় জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি এখান থেকে শিফট করার কথা ভাবছিস?
সত্যি বলতে ভেবেছিলাম। একটু জমজমাট এলাকায় সিঙ্গল বেডরুমের ঘরও খোঁজ নিয়েছিলাম কয়েকটা। গড়াই রোডের দিকে পেয়েছিলাম কয়েকটা। কিন্তু সেলামি আর যা রেন্ট চাইছে আমার পক্ষে এখন সেটা বিয়ার করা সম্ভব না।
সত্যি বলতে তোরা এই যে বাড়িটা এত কম দামে ভাড়ায় পেয়ে গেছিস সেটাও কিন্তু সম্ভব ছিল না যদি না কোনও ডিসপুট থাকত। বলল নির্ণয়।
তুই এই কথা আমাকে প্রথমেও বলেছিলি। কেসটা কী রে? এবার তো বল। বলল সঙ্কল্প।
শুনবি?
অবশ্যই।
আহ থাক না ওসব ভুলভাল কথা। মৌমিতা বাধা দিতে চেষ্টা করল।
নাহ, বছর পার করতে চলল ওরা, এর মধ্যে যখন কোনও প্রবলেম হয়নি তাহলে পুরোটাই ভাঁওতা। এখন ডিসক্লোজ করাই যায়। শোন তাহলে, বেশ জমিয়ে বসে নির্ণয় বলতে শুরু করল, তুই বলার পর আমি যখন এখানে সোর্স লাগিয়ে বাড়ি খোঁজা শুরু করলাম, একবার তোর বাজেটে পছন্দ হয় তো ঘর পছন্দ হয় না আবার ঘর মনমতো লাগে তো বাজেট ছাপিয়ে যায়। মহা চাপ। এদিকে নির্ণয় ঘোষ দায়িত্ব নিয়ে ফ্লপ খাবে এমন তো হতে পারে না। খুঁজতে খুঁজতে প্রায় ফ্রাস্টু খেয়ে যাচ্ছি ওদিকে তুই লাগাতার তাড়া লাগাচ্ছিস, তখনই আমার এক কলিগের বন্ধু খোঁজ দিল এই বাড়িটার। বলল এমনিতে লোকালিটি ভাল, সামনেই দামোদর নদী। ফ্রেশ হাওয়া। বাড়িটাও খুব পুরনো নয়, কিন্তু একটু ডিসপুট বলে লোকাল কেউ ভাড়া নিতে চায় না। বেশ কিছু বছর ধরে পড়ে রয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম কিসের ডিসপুট?
সে বলল, শুনলে হাসবেন ভূতের ডিসপুট।
এই পর্যন্ত বলে কয়েক সেকেণ্ডের জন্য পজ নির্ণয়। আর সঙ্কল্প এবং বিদিশা এলিয়ে বসা থেকে সোজা হয়ে বসল। ভূতের? মানে? জিজ্ঞেস করল সঙ্কল্প।
উফফ অত টেন্স হওয়ার কিছু নেই। পুরোটা শোন আগে। বলে নির্ণয় বলল, আমি আর কথা না বাড়িয়ে তোকে কিছু না জানিয়েই সোজা চলে এলাম এখানে। বাড়িওলার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। বাড়িওলা থাকে তোর ওই এস পি গরাই রোডের ওখানে। কথা বলে যা বুঝলাম উনি রিভারসাইডে এই বাড়িটা বানিয়েছিলেন নিজেই রিটায়ারমেন্টের পর থাকবেন বলে। ফাঁকাই পড়েছিল দীর্ঘদিন। তারপর এক মধ্যবয়সি সুদর্শন আর্টিস্ট নাকি তার কাছে এসে মাস কয়েকের জন্য বাড়িটা ভাড়া চায়। ওই দামোদরের ছবিফবি আঁকবে বলে। বাড়িওলার কথায় লোকটাকে নাকি দারুণ দেখতে ছিল। যাই হোক বাড়িওলা ইমপ্রেস হয়ে কয়েক মাসের জন্য ভাড়া দিয়েও দেয়। কিন্তু মাসখানেক যেতে না যেতেই সেই আর্টিস্ট এই বাড়িতেই সুইসাইড করে।
সে কি?... কেনও?
কেন কেউ জানে না। আর্টিস্ট লোক। এদের তো অনেক ফ্রাস্ট্রেশন থাকে লাইফে।
এই পর্যন্ত শুনেই সঙ্কল্প বলে উঠল, এসব কথা তুই আমাকে আগে কিছু বলিসনি কেন?
দরকার মনে করিনি তোকে বলার। কী করতিস শুনে? ভূতের ভয় পেয়ে আসতিস না। লাভের তো কিছু হত না, মাঝখান থেকে বিদিশা বেচারি ভয় পেয়ে মরত সারাদিন। এখন এতদিন পেরিয়ে গেছে তোরা যখন কোনও ডিসপুটই দেখিসনি সুতরাং ধরে নেওয়াই যায় যে ভবিষ্যতেও আর কোনও সমস্যা হবে না। ভয়েরও প্রশ্ন নেই। কি বিদিশা? এতদিন ধরে যে প্রায় সারাদিন একা একা কাটিয়েছ ভয় লেগেছে কখনও?
বিদিশা এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল সব। গায়ের মধ্যে কেমন সিরসির করছিল এসব শুনে। গলা খাকরে বলল নন্... নাহ মানে তেমন কিছু...
আরে তেমন কেন এমন কেমন কোনও কিছুই টের পাওয়া সম্ভব নয় রে ভাই। নিজের হাঁটু চাপড়ে বলে উঠল নির্ণয়। পড়াশোনা জানা শিক্ষিত মানুষরাও যদি অশিক্ষিত গেঁয়োদের মতো ভূতপ্রেতে ভয় করতে শুরু করে তার থেকে লজ্জার আর কিছু নেই। আর এতদিন তো থাকলে, কোনওরকম প্রবলেম হয়েছে তোমাদের বলো? আর আমি তোমাদের বলিনি এখন বলছি এই বাড়িটা বুকিং করার আগে আমি নিজে এই বাড়িতে তিনরাত্রি কাটিয়ে গেছি কোনও ডিসপুট সত্যিই রয়েছে কি না জানার জন্য। কিচ্ছু নেই।
তাহলে বাড়িটা কেউ ভাড়া নিত না কেন?
সিম্পলি ভয়ে। সাধারণ পাবলিক এখনও ভয় পেতে হেব্বি ভালোবাসে। সেটা একদিক থেকে অবশ্য ভাল, না হলে এত সস্তায় এই বাড়ি ভাড়া পেতিস না। বলে হো হো করে হেসে উঠল নির্ণয়। সংকল্প আর বিদিশাও সে হাসিতে যোগ দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করল, ততটা পেরে উঠল না।
সেদিন রাত্রেই বিদিশা সঙ্কল্পকে ধরল, আমি আর এই বাড়িতে থাকব না, প্লিজ তুমি অন্য বাড়িতে চল।
এই রে... কেন?
কেন মানে? শুনলে না এই বাড়িতে কী ঘটেছিল? রীতিমতো আতঙ্ক নিয়ে কথাগুলো বলল বিদিশা।
আরে ঘটেছিল তো কী হয়েছে? এতদিন ধরে আমরা রয়েছি কিছু হয়নি তো। তুমিও কত সময় সারাদিনে একা একা কাটাও আজ পর্যন্ত কিছু কি হয়েছে বলো?
হয়নি কিন্তু হতে কতক্ষণ। তুমি প্লিজ অন্য বাড়ি দেখো। নয়ত আমি থাকতে পারব না।
বাচ্চাদের মতো কথা বলো না। এখন ইয়ার এণ্ডিং-এর সময়। টার্গেট তুলতে পাগল হয়ে যাচ্ছি। এখন কখন বাড়ি খুঁজব বলো?
বেশ খুঁজো না তাহলে।
এই তো রাগ করে ফেললে... আচ্ছা মার্চ মাসটা যাক তারপর দেখছি কী করা যায়। এখন ঘুমোও।
সকালবেলা থেকেই কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল বিদিশার। একটু বেশিই যেন একা লাগছিল। গা ছমছমে একা। সঙ্কল্প কাজে বেরিয়ে যাওয়ার পর সেই অস্বস্তিটা আরও বেড়ে গেল। কেন জানি না বারবার মনে হচ্ছিল দুটো অচেনা চোখ ওকে দেখছে। যেখানেই যাচ্ছে সেখানেই ওকে ফলো করছে চোখদুটো। আচ্ছা মুশকিল তো। এতদিনে আগে কোনওদিন এমনটা হয়নি। কিচেনে রান্না করার সময় ঘেমে স্নান হয়ে নিজের ভরাট তেলতেলে কাঁধদুটো সবে যখন শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে নিতে যাবে তখন বিদিশার স্পষ্ট মনে হল কেউ একটা ওর ঘাড়ের ওপর গরম নিঃশ্বাস ফেলছে। কাঁধে নাক ঠেকিয়ে ওর ভেজা শরীরের গন্ধ নিচ্ছে। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল বিদিশার। প্রায় একছুটে কিচেন থেকে বেডরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে হাঁপাতে লাগল প্রচণ্ড ভয়ে। একটু পরে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তারপরেও বেডরুমে সেই চোখদুটোর উপস্থিতি। বিদিশা অনুভব করছিল সেই চোখদুটো কোনও পুরুষের। ভয়ে শিটিয়ে যাচ্ছিল ও। চিৎকার করতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বেরচ্ছিল না। আর চিৎকার করলেই বা এই শ্মশানে কে শুনবে আর কে বাঁচাতে আসবে? বিছানার এককোনে বসে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে কখন যে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল নিজেও জানল না।
সঙ্কল্প বাড়ি ফিরল বেশ রাত করে। ফিরতেই ওর ওপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ল বিদিশা। হয় তুমি এই বাড়ি ছাড় আর নইলে তুমি চাকরি ছেড়ে আমার সঙ্গে থাকো। আমার পক্ষে এক মুহূর্তই বাড়িতে থাকা সম্ভব না।
কেন কী হল আবার?
নির্ণয়দা ঠিকই বলেছে এই বাড়িতে একটা গণ্ডগোল রয়েছে। কিছু একটা রয়েছে।
মানে! কী রয়েছে?
কিছু একটা... মানে কেউ একজন আমাকে আজ সারাদিন ধরে যা দেখেছে। আমাকে প্লিজ এখান থেকে অন্য কোথাও নিয়ে চল সঙ্কল্প।
আচ্ছা মুশকিল কিসের চোখ সেটা বলবে তো।
আমি জানি না, দেখতে পাইনি কিন্তু বুঝতে পেরেছি দেখছে।
বেড়ালটেড়াল ঢুকেছিল হয়তো।
না না বেড়াল না, মানুষ... মানুষের চোখ ছিল ওই দুটো।
কী পাগলের মতো বলছ ঘরে মানুষ ঢুকবে কী করে?
মানুষ না সঙ্কল্প...
তাহলে?
বিদিশা কোনও উত্তর দিল না। প্রচণ্ড আতঙ্কে ভরা মুখ নিয়ে শুধু তাকিয়ে থাকল সঙ্কল্পর দিকে। বিদিশার মুখ দেখে হো হো করে হেসে উঠল সঙ্কল্প। বুঝেছি কী ভেবেছ তুমি। নাহ তোমার মাথাটা গেছে। আরে বাবা এতদিন পর হঠাৎ ভূতের আমদানি কেন হবে? ওই শালা নির্ণয়ের গল্পর জন্য তোমার মাথায় ওসব ঢুকেছে। হয়তো দেখবে...
না না আমি ভুল দেখিনি বিশ্বাস কর... প্রায় ককিয়ে উঠল বিদিশা।
আচ্ছা আচ্ছা বেশ ঠিক আছে। বিশ্বাস করছি। তোমায় দেখে তো মনে হচ্ছে আজ স্নান খাওয়া কিছুই করনি... বলতে বলতে বিদিশার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে সঙ্কল্প বলল আমি স্নান করছি তারপর তুমিও ফ্রেশ হয়ে নাও। তারপর দেখা যাক সেই ভূতবাবাজি কী করে।
না, সঙ্কল্প একবারের জন্যও কোনও চোখ দেখতে পেল না ঠিকই কিন্তু একলা হলেই বিদিশা একজনের অস্তিত্ব টের পেতে শুরু করল। আর ভয়টা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠতে লাগল দিনে দিনে। আগে সারাদিন যেন সময়ই কাটতে চাইত না। এখন ভয়ে শিঁটিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে সময় পেরিয়ে যায় খেয়ালই থাকে না। অদ্ভুত দুটো সম্মোহনী চোখ। বিদিশা এখন বুঝতে পারে সে চোখে লোভ নেই, রয়েছে একটা অদ্ভুত মায়া... মুগ্ধতা।
নিজের বেখেয়ালেই কখন যেন ভয়টাকে ভাল লাগতে শুরু করে বিদিশার। একটা ঘোর লাগতে শুরু করে সারাক্ষণ ধরে। নিজেও ঠিক বুঝে পায় না।
তারপর একদিন সঙ্কল্প কাজে বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ। এখন আবার কে এল?
দরজা খুলতেই বিশালদেহী এক পুরুষ। পাজামা পাঞ্জাবি পরা। এক মাথা ঝাঁকড়া চুল, মুখে ঘন গোঁফদাড়ি। পিঠে একটা কিট ব্যাগ। বিদিশাকে পাশ কাটিয়ে সে সটান ঢুকে পড়ল ঘরের ভেতর।
ভীষণ ভয় পেয়ে গেল বিদিশা। কে আপনি? কী চান?
মানুষটা কিছু বলল না। সামান্য হেসে চোখ মেলে তাকাল বিদিশার দিকে। সেই চোখ দুটোকে চিনতে পেরে কেঁপে উঠল বিদিশা। ঘরের ভেতরটা পুরুষালি ঘামের গন্ধে ভরে উঠেছে।
আপনি প্লিজ চলে যান... কোনওমতে বলে ওঠে বিদিশা।
সেই শুনে লোকটা আবার দরজার কাছে আসল। ঘামের গন্ধটা আরও তীব্র হয়ে বিদিশার প্রশ্বাসের সঙ্গে ভেতরে মিশছে। অনেকটা কাছে এসে সামান্য হেসে ঘর ছেড়ে চলে গেল মানুষটা। বিদিশা দাঁড়িয়ে থাকল একা।
পরের দিন আবার আসে... চলে যায়। তারপরের দিন আবার... তারপরের দিন সকাল থেকেই যেন তার আসার অপেক্ষা করতে থাকে বিদিশা। সে আসে। অল্প কথা হয়। চলে যায়। পরের দিন তার পরের দিন কথা বাড়তে থাকে। কাছে আসতে থাকে লোকটা... একদিন বিদিশার কাঁধে হাত রাখে। রোমাঞ্চে ভিজে ওঠে বিদিশা।
সঙ্কল্প খুব অবাক হল যে বিদিশা আগে সারাক্ষণ কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করত আরও বেশি ওকে সময় দেওয়ার জন্য সে হঠাৎ কোন ম্যাজিকে ওকে বাড়িতে থাকার কথা আর বলেই না। বরং ছুটির দিনগুলোতেও জিজ্ঞেস করে কি গো তোমার আজ বেরোনো নেই? টার্গেট ফুলফিল হয়ে গেছে? যেন তাড়াতে পারলে বাঁচে। প্রথমদিকে এমন পরিবর্তন দেখে বেশ খুশি হয়েছিল সঙ্কল্প। ভেবেছিল যাক মেয়েটার মাথা ঠাণ্ডা হয়েছে। দিব্যি নিজের মনে কাজ করছিল কিন্তু কয়েকদিন পরেই বুঝতে পারল, নাহ বিষয়টা ঠিক ঠাণ্ডা হওয়ার নয়, বরং একটু বেশি বাড়াবাড়ি লাগছে। আগের থেকে যেন অনেক বেশি হাসিখুশি হয়ে উঠেছে ও। কারণ কী?
একদিন সকালে ইচ্ছে করেই টোপটা ছাড়ল, তোমার জন্য একটা খুশির খবর রয়েছে।
কী?
গরাই রোডে একটা ভালো ফ্ল্যাট দেখেছি। বেশ ভাল। এই মাসটা পেরিয়ে গেলেই ভাবছি শিফট করে যাব।
কী দরকার খামোখা চেঞ্জ করে? এখানেই তো দিব্যি রয়েছি।
যাব্বাবা তুমিই তো বলেছিলে। এখন আবার না বলছ!
তাতে কী? মানুষের সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে না? হঠাৎ ঝাঁঝিয়ে উঠল বিদিশা।
কী আশ্চর্য তুমি এমন রিয়্যাক্ট কেন করছ?
সবসময় কি তোমার কথা মতোই চলতে হবে আমাকে? আমি কি একটা পুতুল? বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত কতটুকু সময় দিয়েছ আমাকে? সারাক্ষণ শুধু কাজ আর টার্গেট আর ক্লায়েন্ট শুনতে শুনতে আমি জাস্ট পাগল হয়ে গেছি... আমি আর পারছি না। কোনওদিন আমার কথা একটু পাশে বসে শোনার সময় পেয়েছ তুমি? আমি কি চাই জানতে চেয়েছ? কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে উঠে গেল বিদিশা।
সঙ্কল্প হাঁ করে তাকিয়ে থাকল ওর চলে যাওয়ার দিকে। হঠাৎ কী হল এমন? এইসব কথা এই ক'বছরে একবারের জন্যও বলেনি তো! তাহলে...?
নির্ণয়কে বেশ কয়েকবার ফোন করবে ভেবেও করল না সঙ্কল্প। কী দরকার ঘরের সব কথা বাইরে ছড়িয়ে। কিন্তু মনের ভেতর যে সন্দেহটা সামান্য হলেও উঁকি দিয়েছিল সেটা প্রায় দৃঢ় বিশ্বাসে পরিণত হল গতকাল রাত্রে বিদিশার স্বপ্ন দেখতে দেখতে বিড়বিড় করে বলে যাওয়া কথাগুলো শুনে। কান গরম হয়ে যাচ্ছিল সঙ্কল্পর যখন এলোমেলো শুনছিল তারই বিয়ে করা বৌ তারই বিছানায় পাশে শুয়ে অন্য কোনও এক পুরুষকে স্বপ্নে দেখছে তার আদর খাচ্ছে... নরম নরম কথা বলছে। সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে ভোরবেলা সঙ্কল্প বুঝতে পারল তার মানে ওর অনুপস্থিতিতে কোনও পুরুষ এই বাড়িতে আসে... তারপর লীলা শুরু হয়... শাল্লাহহহ... এর একটা হেস্তনেস্ত আজই করতে হবে একেবারে সামনা সামনি...
সকালবেলা রোজের মতোই বেরিয়ে গেল সঙ্কল্প। যাওয়ার আগে বলে গেল ফিরতে রাত হবে। ইচ্ছে করেই বলল কথাটা।
বিদিশা যেন শুনেও শুনল না। আজ আর অফিস না, চুলোয় যাক সেলস টার্গেট। আজ অন্য টার্গেট ধরার দিন। ঠিক ঘন্টা তিনেক এদিক ওদিক রাস্তায় ঘুরে সময় কাটিয়ে আবার বাড়ি ফিরে এল সঙ্কল্প। ভেবেছিল কলিংবেল বাজানোর পর বিদিশা দরজাটা খুলতেই হুড়মুড় করে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়বে ও। হারামজাদাকে নিশ্চয়ই বেডরুমে পাওয়া যাবে। কী অবস্থায় থাকবে? ভাবনাটা ভাবতে বড্ড কষ্ট হচ্ছিল সঙ্কল্পর। মেয়েটা এত বেইমান হবে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। নিজের ব্যাগের ভেতর একটা দু ফুট লম্বা লোহার রড ভরে নিয়েছিল সঙ্কল্প। শুয়োরের বাচ্চাটাকে আগে বিদিশার সামনে গুছিয়ে ক্যালাবে তারপর লাথি মেরে বাড়ি থেকে দূর করবে। আর তারপরেই বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে ছেনালি মেয়েটাকে। ডিভোর্সে হয়তো খোরপোষের মামলা করতে পারে বিদিশা। করুক।
সবকিছু মনে মনে ঠিক করে নিয়ে কলিং বেল বাজাতে গিয়ে একটু চমকাল সঙ্কল্প। দরজাটা জাস্ট ভেজানো। নাগরের আবির্ভাবে দরজাটা লক করতেও ভুলে গেছে। খুব সাবধানে দরজাটা ঠেলল ও। পা টিপে টিপে ভেতরে ঢুকল। যা ভেবেছিল তাই... বেডরুমের ভেতর থেকে বিদিশার গলার শব্দ হচ্ছে। কিশোরী মেয়েদের মতো খিলখিল করে হাসছে মেয়েটা আর কীসব ছোটবেলার গল্প বলে যাচ্ছে একটানা।
বেডরুমের দরজাটা অর্ধেক ভেজানো। বিদিশা একটানা বলে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। শাল্লাহ সোহাগের শেষ নেই... দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাগের ভেতর থেকে লোহার রডটা বার করল সঙ্কল্প। তারপর খুব সাবধানে দরজার ফাঁক দিয়ে ঘরের বিছানায় উঁকি দিল। বিদিশা ঘরের দরজার থেকে পিছন ফিরে বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া। শাড়ির আঁচল বুক থেকে সরে গিয়ে খাটের ওপরেই অবিন্যস্ত পড়ে রয়েছে। অনেক আদর খাওয়ার পর মেয়েদের যেমন দেখতে লাগে ঠিক তেমন লাগছে বিদিশাকে। খুব হাসছে বিদিশা আর কত আপন করে গল্প করছে। আর ওর উল্টোদিকে...!
রাস্তায় বেরিয়ে লোহার রডটা নালায় ফেলে দিল সঙ্কল্প। যেমন নিঃশব্দে ঘরে ঢুকেছিল তেমনই নিঃশব্দে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। বিদিশা কিচ্ছু জানতে পারেনি। এখনও হয়তো গল্প করছে। অথচ সঙ্কল্প স্পষ্ট দেখেছে বিদিশার উল্টোদিকে কেউ ছিল না। কেউ না... মানুষ তো দূরের কথা দেওয়ালে একটা পোকাও ছিল না। তাহলে... একা একাই কথা বলে যাচ্ছিল মেয়েটা? কার সঙ্গে? বিদিশার দেখা সেই ভূত! নির্ণয়কে এক্ষুনি একবার ফোন করা দরকার।
হ্যাঁ বল। ওদিক থেকে বলল নির্ণয়।
আমাকে বল তুই যে এই বাড়িতে তিন রাত্রি ছিলিস সত্যিই কিছু দেখিসনি?
মানে?
মানে আনক্যানি কিছু...
হঠাৎ এসব কী বলছিস তুই আমি কিছুই বুঝছি না। কী হয়েছে বলবি?
আমার সব কথা বলার এখন সময় নেই নির্ণয়। যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দে শুধু। সত্যিই কিছু মিস্টিরিয়াস দেখেছিলিস কি? প্লিজ সত্যি বল। প্রায় ককিয়ে উঠল সঙ্কল্প।
তোরা শালা বর বৌ দুটোই মুরগি পাবলিক। আরে গাধা আমি পুরোটাই সেদিন ঢপ ঝেড়েছিলাম কিছুই বুঝিসনি তোরা?
মানেহ্!
ঢপ মানে ঢপ। খেয়ে দেয়ে একটা ভূতের গল্প শোনাতে ইচ্ছে হয়েছিল তোদের, শুনিয়ে দিয়েছিলাম। ব্যাস। কিন্তু তোরা যে... যাক গে কী হয়েছে বল?
নির্ণয়ের উত্তর না দিয়ে ফোনটা কেটে দিল সঙ্কল্প। ঘেমে স্নান হয়ে গেছে উত্তেজনায়। সত্যি যদি নির্ণয় মিথ্যে গল্প বলে থাকে সেদিন তাহলে কার সঙ্গে গল্প করছে বিদিশা? যে দিনের আলোতেও কোনও একা মানুষের কাছে আসে, গল্প করে, আদর করে... সে আসলে থাকে কোথায়?
(পরবাস-৫৮, নভেম্বর ২০১৪)