ISSN 1563-8685




চিল্কা

চিল্কা—১

এখন আমি ফিরছি।
ফাঁকফোকর গলে ক্রমাগত আলোর ঝাপটায়
ধুয়ে যাচ্ছে বিপ্রতীপ প্রতিবিম্বগুলো।
ক্যানভাসগুলো দ্রুত উড়ে আসছে আর যাচ্ছে।
কিছুতেই জমছেনা আলাপ।
যেমন সেবার দশ হাজার মিটার উচ্চতায়
ট্রেসপাসার এক ফালি রোদ্দুর
পার্মাফ্রস্ট ফুঁড়ে উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল ডানায়
তেমন এরা নয়।
তেমন মায়াটান এদের নেই
যতটা ছিল সে রোদে।
যতটা এলাম চিল্কার বুকে ছেড়ে।
ওকে বলেছিলাম যদি চাও নিয়ে যেতে পারো
ডানা পালক—সব কিছু।
এইটুকু দেখতেই অপেক্ষায় থাকে চোখের পাতা
পৃথিবীর সব গুমটির ঝাঁপি।
চিল্কার পেটের ভেতর রুপোলি ঢেউএর শিষে গাঁথা
বৈদুর্য ঝিলিক আর যত ডানা মেলে ওড়া প্রজাপতি।
না হলে ওখানে কোন ফুল কোন মধু?
যা খায় তারা?

পৃথিবীর যত ফাঁস ঝুলেছিল ফাঁসিকাঠে
কখন তা হয়ে গেছে বোনা ভালোবাসা
বাবুই ঠোঁটে ঠোঁটে।
চোখের জোড়ে জোড়ে যে ঝুলন্ত সেতু
হুহু হাওয়ায় দুলে প্রতিদিন ছেঁড়ে,
রিপু হয়ে যায় রোজ।
হে চিল্কারূপসী তোমার এমনই যাদুটান।
কত বায়োডাইভারসিটি কত অজানারে দাও ঠাঁই।
কত বালিহাঁস উড়ে আসে তোমার অঙ্গে রোদ পোয়াতে।
হে নলবন আজীবন রেখো তোমার অঙ্গীকার।
আমি যাচ্ছি ফিরে।
আমি ফিরছি অনিকেত দণ্ডিতে,
কাঁধে মাধুকরীর ঝুলি ভরা পূর্বাশার চিঠি।
চিল্কা ভুলোনা তোমার অঙ্গীকার
ওকে কথা দিলে কখনো হবেনা ফিকে
দিন শুরুকারী ভোরের আরক্তিম।
কখনো শুকোবেনা
কোনো সীমন্তে বহা উদয়ী ধারা।


চিল্কা—২

নলবনের প্রবেশিকার দুপাশে দুই বাঁশের খুঁটি
বসে ছিল দুটি বিশালাকায় পেলিক্যান।
নৌকোকে ঘনাতে দেখেই ডাঁয়া উড়ে গেল।
বাঁয়াটি হয়ত সাহসী অতি অথবা উৎসুক অথবা অলস
তাই উড়ল তখন যখন ডাঁয়া গিয়ে ডেকে এলো।

বন বিভাগের আধিকারিক যথারীতি রাখেনি কথা।
সেই কথাটিই গোচরের বাইরে থেকে উড়ে এসে চওড়া ডানার
সাইবেরিয়ান ক্রেন বলে গেল আমাদের,
এ সবই জৈবিকতা পক্ষীকুলের
সুন্দর গাঁথা হতে পারত বুদ্ধদেবের কবিতার সুতোয়।

আমি যে সীমিত জীব ওসব দেখিনি,
শুধু দেখেছি জলজীবী পাখিদের পেটের ভিতর
                           মাছের ঠাণ্ডা চোখ।



(পরবাস-৫০, ফেব্রুয়ারি, ২০১২)